ঢাকা: থাইল্যান্ডের ব্যাংকক, মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুর, সিঙ্গাপুর এবং এশিয়া ও অস্ট্রেলিয়ার ছয়টি দেশে ভ্রমণের বিশেষ প্যাকেজ ঘোষণা করেছে মালিন্দো এয়ার। অভিযোগ উঠেছে, মালয়েশিয়াভিত্তিক এয়ারলাইন্সটির এই অফার শুধু ঘোষণায়ই সীমাবদ্ধ, আসলে কোনো টিকিটই মিলছে না।
গত ৫ অক্টোবর রাত ৯টায় বাংলাদেশের বেসরকারি খাতের সিটি ব্যাংক লিমিটেডের ফেসবুক পেজে প্যাকেজটির ঘোষণা দেওয়া হয়। যদিও টিকিট বুকিং শুরুর তারিখ দেখানো হয় ১ অক্টোবর। ঘোষণা অনুযায়ী এ বুকিং চলবে ১৫ অক্টোবর পর্যন্ত।
ঘোষণায় বুকিং দিতে মালিন্দো এয়ারের ওয়েবসাইটে প্রবেশের কথা বলা হলেও এখন পর্যন্ত হতাশ হতে হচ্ছে সবাইকে। আগ্রহীদের বলা হচ্ছে, এরইমধ্যে সব টিকিট বিক্রি শেষ হয়ে গেছে। এ নিয়ে সরাসরি মালিন্দোর সঙ্গে যোগাযোগ করতে চাইলেও কর্তৃপক্ষের মোবাইল নম্বর বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে অথবা কল গেলেও রিসিভ করা হচ্ছে না।
অভিযোগের বিন্দুতে থাকা এই অফারে ঢাকা-সিঙ্গাপুর-ঢাকা টিকিটের মূল্য বলা হচ্ছে ১৭ হাজার ৮৪০ টাকা। আর ঢাকা-ব্যাংকক-ঢাকা টিকিটের মূল্য বলা হচ্ছে ১৯ হাজার ২০০ টাকা।
লোভনীয় অফার হলেও মালিন্দো এয়ারের ওয়েবসাইটে গিয়ে ব্যর্থ হতে হচ্ছে সবাইকে। অভিযোগের সত্যতা জানতে বৃহস্পতিবার (৬ অক্টোবর) বিকেলে ঘোষণায় দেওয়া মালিন্দো এয়ারের চারটি অফিসিয়াল নাম্বারে (০১৭৬২৬৮৪০৯৫-৯৮) ফোন দিয়ে দেখা যায় প্রথম তিনটি নাম্বারই বন্ধ। শেষ নাম্বারটি খোলা থাকলেও সেটি কেউ রিসিভ করছেন না।
এই কাগুজে অফারে প্রতারিত হয়ে সিটি ব্যাংকের ফেসবুক পেজেরই সেই ঘোষণায় ক্ষোভ প্রকাশ করছেন মালিন্দো এয়ারে ভ্রমণকারী যাত্রীসহ অনেকে।
মালিন্দো এয়ারে নিজের ভ্রমণের বাজে অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরে নাউসাদ এহসানুল হক বলেন, “এই এয়ারলাইন্স নিয়ে আমার পরিচিত কয়েকজনের খারাপ অভিজ্ঞতা আছে। এসি চলে না, দম আটকানো অবস্থা। এগুলো (অফার) বিচ্ছিন্ন ঘটনাও হতে পারে, একটু খোঁজ নিয়ে তারপর সিদ্ধান্ত নেবেন। ”
হান্নান রানা নামে একজন বলেন, “আমি যাবো, কিন্তু কন্টাক্ট করতে কাউকে পাচ্ছি না। ”
আরমান ভূঞা হিমেল ও সাজ্জাদ সামির বলেন, “টিকেট পাওয়া যায় না, এমনি বিজ্ঞাপন দেয়। ভুয়া টিকিট কাটার আগেই শেষ। ”
ফারহানা শারমিন ইমু মালিন্দো এয়ারে হংকং থেকে কুয়ালালামপুরে নিজের বাজে ভ্রমণ অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরে বলেন, “দয়া করে একটু সাবধানে মালিন্দোয় চলাফেরা করবেন। ”
তিনি বলেন, “আমি গত ২ তারিখে হংকং থেকে মালয়েশিয়া হয়ে ঢাকা এসেছি এই এয়ারলাইন্সে। শেষ তিন ঘণ্টা এয়ার কুলারের পরিবর্তে হিটার কাজ করছিল। যাত্রীরা অনেকেই অসুস্থ হয়ে যান, বিশেষ করে বাচ্চারা। ”
ফৌজিয়া আবেদিন তানি নামে আরেকজন বলেন, “মালিন্দো এয়ার থেকে বলা হচ্ছে এই টিকেট অনলাইনে করতে হবে। অনলাইনে আবার সিটি ব্যংকের কোনো সর্ম্পক নেই। বালির টিকেট কাটতে গিয়েছিলাম। বলেছে তাদের কিছুই করার নেই। এটা বিজ্ঞাপন ছাড়া কিছুই নয়। ”
তিনি বলেন, “তারা আমাকে বেশি দামেই টিকেট কিনতে বলেছেন। তারা বলছেন রিটার্ন টিকিট সব বিক্রি হয়ে গিয়েছে। এটা সত্যিই অদ্ভুত!”রেহানা চৌধুরী মালিন্দো এয়ারে নিজের প্রথম ভ্রমণের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে বলেন, “প্রথম ভ্রমণ ছিল হতাশাজনক। ফ্লাইট ছাড়তে সবসময় দেরি করে। ”
শফিকুর রহমান নামে একজন জানান এই এয়ারলাইন্সে খাবার না মেলার কথা। ডা. রাজিব শাহরিয়ার বলেন, “এটা ভুয়া অফার যেখানে সব বিক্রিত দেখাচ্ছে। ”
হান্নান নামে একজন অভিযোগ করে বলেন, ‘ফালতু, মালিন্দো এয়ারে কেউ ফোন ধরে না। ” ইন্দোনেশিয়ার কোনো মাসের টিকিটই নেই বলে জানান হাসান তানভীর।
আবুজার গাফফারি অভিযোগ করে বলেন, “আমি মালিন্দো এয়ারের অফিসে ১২ বার ফোন দিয়েছি। এক নারী ফোন রিসিভ করে আমাকে অনলাইনে টিকিট করতে বললেন। গত দুই দিন ধরে খোঁজ করেও অনলাইনে টিকিট পাচ্ছি না। কারা এই টিকেট কিনলো আমাদের জানাতে হবে। ”
শাহজালাল খান নামে একজন বলেন, “কাস্টমার সেবা খুবই দুর্বল। ” জাকির হোসেন রনি নামে একজন মালিন্দো এয়ারকে বলেন ‘পৃথিবীর সবচেয়ে বাজে এয়ারলাইন্স’।
বাংলাদেশ সময়: ০৮৩২ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৬, ২০১৬/আপডেট ২১৩৭ ঘণ্টা
এমএন/এইচএ/