ঢাকা: টানা পতনে অস্বস্তিতে আছেন পুঁজিবাজারের সাধারণ বিনিয়োগকারীরা। বিদায়ী সপ্তাহে (১৭-২১ অক্টোবর) দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ও অপর বাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) সূচক কমেছে।
একই সঙ্গে সপ্তাহটিতে বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দর কমায় উভয় বাজারে লেনদেন কমেছে। গত সপ্তাহে চার কার্যদিবসে পুঁজিবাজারে তিন হাজার ১১৫ কোটি টাকার শেয়ার লেনদেন কমেছে। এরমধ্যে ডিএসইতে তিন হাজার ১৯ কোটি এবং সিএসই ৯৬ কোটি টাকার লেনদেন কমেছে। এর আগের সপ্তাহেও (১০-১৪ অক্টোবর) পুঁজিবাজারে লেনদেন কমেছিল। এতে করে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে কিছুটা অস্বস্তি দেখা দিয়েছে।
ডিএসই ও সিএসই সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
এদিকে বাজার বিশ্লেকরা বলেছেন পুঁজিবাজারে সূচক ও লেনদেন অনেক বেড়েছিল, সেটি সংশোধন হয়েছে। সে অনুযায়ী বাজারে সূচক ও লেনদেন কমেছে। বাজার আবার তার নিজস্ব জায়গায় ফিরবে। এখানে আতঙ্কিত হওয়ার কোন কারণ নেই। তবে কোন ধরনের গুজবে কান না দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন বিনিয়োগকারী সংগঠনের নেতারা।
এ ব্যাপারে বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রাজ্জাক বাংলানিউজকে বলেন, টানা কয়েক সপ্তাহ উত্থানের পর গত দুই সপ্তাহ বাজারে মূল্য সংশোধন হয়েছে। এতে করে বিনিয়োগকারীদের আতঙ্কিত হওয়ার কারণ নেই। বিনিয়োগকারীরা প্রফিট ট্রেকিং করায় বাজার কিছুটা নেতিবাচক ছিল।
তিনি বলেন, বাজারে কোন তারল্য সঙ্কট নেই। তবে কেউ কেউ গুজব রটানোর চেষ্টা করছে। এদের থেকে আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। কেউ যাতে এখান থেকে সুবিধা নিতে না পারে।
২০১০ সালের অভিজ্ঞতার আলোকে বর্তমান কমিশন পদক্ষেপ নিচ্ছেন তাদের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আস্থা রয়েছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী সম্মিলিত জাতীয় ঐক্যের সভাপতি আতাউল্লা নাইম।
তিনি বলেন, দেশের অর্থনীতি আকার বড় হচ্ছে, তাহলে পুঁজিবাজার এখানে পড়ে থাকার সুযোগ নেই। বাজার বড় হচ্ছে সুতরাং বাজার নিয়ে অনেকে নেতিবাচক মন্তব্য করেন সেটা থেকে দূরে থাকতে হবে। গুজব রটনাকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে।
বাজার বিশ্লেষণে দেখা গেছে, বিদায়ী সপ্তাহে ডিএসইতে ছয় হাজার ৪৩ কোটি ৩ লাখ ৩৩ হাজার ৯৩৫ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। আগের সপ্তাহে লেনদেন হয়েছিল ৯ হাজার ৬২ কোটি ১১ লাখ ৫৩ হাজার ১৫৩ টাকার শেয়ার। অর্থাৎ সপ্তাহের ব্যবধানে ডিএসইতে লেনদেন তিন হাজার ১৯ কোটি ৮ লাখ ১৯ হাজার ২১৮ টাকা বা ৩৩ শতাংশ কমেছে।
সপ্তাহের ব্যবধানে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ১৬৭ পয়েন্ট বা ২.৩১ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে সাত হাজার ৭৬ পয়েন্টে। অপর সূচকগুলোর মধ্যে শরিয়াহ সূচক ৪৯ পয়েন্ট বা ৩.১৪ শতাংশ এবং ডিএসই-৩০ সূচক ১৯ পয়েন্ট বা ০.৭৩ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে এক হাজার ৫১৮ এবং দুই হাজার ৬৯৯ পয়েন্টে।
সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবসে লেনদেন শুরুর আগে ডিএসইতে বাজার মূলধন ছিল ৫ লাখ ৮০ হাজার ১১২ কোটি ৮১ লাখ ৩ হাজার ৪০ টাকা। সপ্তাহের শেষ কার্যদিবস শেষে বাজার মূলধন দাঁড়ায় ৫ লাখ ৬৯ হাজার ৮৫১ কোটি ২৪ লাখ ৬১ হাজার টাকায়। অর্থাৎ সপ্তাহের ব্যবধানে ১০ হাজার ২৬১ কোটি ৫৬ লাখ ৪২ হাজার টাকা বাজার মূলধন কমেছে।
বিদায়ী সপ্তাহে ডিএসইতে মোট ৩৭৮টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট হাতবদল হয়েছে। এর মধ্যে দর বেড়েছে ৩১টির, কমেছে ৩৩৮টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ৯টির শেয়ার ও ইউনিট দর।
গত সপ্তাহের শুরুতে ডিএসইর পিই রেশিও ছিল ১৯ দশমিক ৫২ পয়েন্টে। যা সপ্তাহ শেষে ১৯ দশমিক ১৫ পয়েন্টে অবস্থান করছে। অর্থাৎ সপ্তাহের ব্যবধানে পিই রেশিও ১ দশমিক ৯০ শতাংশ কমেছে।
বিদায়ী সপ্তাহে লেনদেনের শীর্ষ ১০ প্রতিষ্ঠান হচ্ছে- ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্স, ফরচুন সুজ, এনআরবিসি ব্যাংক, লাফার্জ-হোলসিম বাংলাদেশ, ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো, জিনেক্স ইনফোসিস এবং বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস।
অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) বিদায়ী সপ্তাহে লেনদেন হয়েছে ২২৮ কোটি ৯৮ লাখ ১২ হাজার ২৪৮ টাকার শেয়ার ও মিউচ্যুয়াল ফান্ড ইউনিট। আর আগের সপ্তাহে লেনদেন হয়েছিল ৩২৪ কোটি ৯৯ লাখ ৬৯ হাজার ০১৩ টাকার শেয়ার ও মিউচ্যুয়াল ফান্ড ইউনিট। অর্থাৎ সপ্তাহের ব্যবধানে সিএসইতে লেনদেন কমেছে ৯৬ কোটি ১ লাখ ৫৬ হাজার ৭৬৫ টাকা বা ৩০ শতাংশ।
সপ্তাহটিতে সিএসইর সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ৪২৩ পয়েন্ট বা ২ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ২০ হাজার ৬৯৩ পয়েন্টে।
এ সময় সিএসইতে মোট ৩৩৫টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে দর বেড়েছে ৪১টির এবং কমেছে ২৮৬টির। আর অপরিবর্তিত রয়েছে ৮টির দর।
বাংলাদেশ সময়: ১৬১৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৩, ২০২১
এসএমএকে/এমএমজেড