ঢাকা: টানা পতনে রয়েছে দেশের পুঁজিবাজার। প্রতি সপ্তাহে পুঁজিবাজারে সূচকের সঙ্গে কমছে লেনদেনও।
একই সঙ্গে সপ্তাহটিতে বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দর কমায় উভয় বাজারে কমেছে লেনদেন। গত সপ্তাহে পাঁচ কার্যদিবসে পুঁজিবাজারে এক হাজার ১৭০ কোটি টাকার লেনদেন কমেছে। এরমধ্যে ডিএসইতে এক হাজার ১১৯ কোটি ৭২ লাখ টাকা এবং সিএসই ৫০ কোটি ৩৫ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন কমেছে।
এর আগের সপ্তাহেও (২৪-২৮ অক্টোবর) পুঁজিবাজারে লেনদেন কমেছিল। এতে করে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে কিছুটা অস্বস্তি দেখা দিয়েছে।
ডিএসই ও সিএসই সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
এদিকে পুঁজিবাজারে সূচক ও লেনদেনের টানা পতন বিনিয়োগকারীদের ভাবিয়ে তুলছে। তবে কোন ধরনের গুজবে কান না দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন বিনিয়োগকারী সংগঠনের নেতারা।
এ ব্যাপারে বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রাজ্জাক বাংলানিউজকে বলেন, বাজারে কোন তারল্য সঙ্কট নেই। তবে কেউ কেউ গুজব রটানোর চেষ্টা করছে। এদের থেকে আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। কেউ যাতে এখান থেকে সুবিধা নিতে না পারে।
২০১০ সালের অভিজ্ঞতার আলোকে বর্তমান কমিশন পদক্ষেপ নিচ্ছেন তাদের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আস্থা রয়েছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী সম্মিলিত জাতীয় ঐক্যের সভাপতি আতাউল্লা নাইম।
তিনি বলেন, দেশের অর্থনীতির আকার বড় হচ্ছে। তাই পুঁজিবাজার এখানে পড়ে থাকার সুযোগ নেই। বাজার বড় হচ্ছে সুতরাং বাজার নিয়ে অনেকে নেতিবাচক মন্তব্য করেন, সেটা থেকে দূরে থাকতে হবে। গুজব রটনাকারীদের বিরুদ্ধেও কঠোর পদক্ষেপ কামনা করেন তিনি।
অপরদিকে বাজার বিশ্লেষণে দেখা গেছে, বিদায়ী সপ্তাহে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) ছয় হাজার ৪৩০ কোটি ৪০ লাখ ৯২ হাজার ৮৫৭ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। এর আগের সপ্তাহে লেনদেন হয়েছিল সাত হাজার ৫৫০ কোটি ১৩ লাখ ২৫ হাজার ৬৫৩ টাকার শেয়ার। অর্থাৎ সপ্তাহের ব্যবধানে ডিএসইতে লেনদেন এক হাজার ১১৯ কোটি ৭২ লাখ ৩২ হাজার ৭৯৬ টাকা বা ১৫ শতাংশ কমেছে।
সপ্তাহের ব্যবধানে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ১৫৫.৬৪ পয়েন্ট বা ২.২০ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ছয় হাজার ৯০৬.৭২ পয়েন্টে। অপর সূচকগুলোর মধ্যে শরিয়াহ সূচক ১৭.২১ পয়েন্ট বা ১.১৬ শতাংশ এবং ডিএসই-৩০ সূচক ৩৭.৬৩ পয়েন্ট বা ১.৪৩ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে এক হাজার ৪৬২.১৮ পয়েন্টে এবং দুই হাজার ৬০১.২৮ পয়েন্টে।
সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবস লেনদেন শুরুর আগে ডিএসইতে বাজার মূলধন ছিল ৫ লাখ ৬৩ হাজার ৪৯৮ কোটি ৬০ লাখ ৪২ হাজার ৬৭৫ টাকায়। আর সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসের লেনদেন শেষে বাজার মূলধন দাঁড়ায় ৫ লাখ ৫১ হাজার ৫৫৮ কোটি ১২ লাখ ৩৬ হাজার ১৮৩ টাকায়। অর্থাৎ সপ্তাহের ব্যবধানে বিনিয়োগকারীরা ১১ হাজার ৯৪০ কোটি ৪৮ লাখ ৬ হাজার ৪৯২ টাকা বা ২.১২ শতাংশ বাজার মূলধন কমেছে।
বিদায়ী সপ্তাহে ডিএসইতে মোট ৩৭৮টি প্রতিষ্ঠান শেয়ার ও ইউনিট লেনদেনে অংশ নিয়েছে। প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে দর বেড়েছে ৯০টির বা ২৩.৮১ শতাংশের, কমেছে ২৭০টির বা ৭১.৪৩ শতাংশের এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ১৮টির বা ৪.৭৬ শতাংশের শেয়ার ও ইউনিট দর।
গত সপ্তাহের শুরুতে ডিএসইর পিই রেশিও ছিল ১৮.৮৯ পয়েন্টে। যা সপ্তাহ শেষে ১৮.৪৫ পয়েন্টে অবস্থান করছে। অর্থাৎ সপ্তাহের ব্যবধানে পিই রেশিও ০.৪৪ পয়েন্ট বা ২.৩৩ শতাংশ কমেছে।
বিদায়ী সপ্তাহে লেনদেনের শীর্ষ ১০ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে- বেক্সিমকো লিমিটেড, আইএফআইসি ব্যাংক, অরিয়ন ফার্মা, ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো, সাইফ পাওয়ার, আলিফ মেনুফ্যাকচারিং, ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্স, লাফার্জহোলসিম বাংলাদেশ, মালেক স্পিনিং এবং এনআরবিসি ব্যাংক।
অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) বিদায়ী সপ্তাহে লেনদেন হয়েছে ২০৮ কোটি ৬১ লাখ ৯৪ হাজার ৮৪৬ টাকার শেয়ার ও মিউচ্যুয়াল ফান্ড ইউনিট। তার আগের সপ্তাহে লেনদেন হয়েছিল ২৫৮ কোটি ৯৭ লাখ ৮৪ হাজার ৮২২ টাকার শেয়ার ও মিউচ্যুয়াল ফান্ড ইউনিট। অর্থাৎ সপ্তাহের ব্যবধানে সিএসইতে লেনদেন ৫০ কোটি ৩৫ লাখ ৮৫ হাজার ৯৭৬ টাকা বা ১৯ শতাংশ কমেছে।
বিগক সপ্তাহে সিএসইর সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ৪৩০ পয়েন্ট বা ২.০৮ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ২০ হাজার ১৯৭ পয়েন্টে।
সপ্তাহজুড়ে সিএসইতে মোট ৩৪০টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট লেনদেনে অংশ নিয়েছে। এর মধ্যে ৮৭টির দর বেড়েছে, কমেছে ২৪০টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ১৩টির দর।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৫৯ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৬, ২০২১
এসএমএকে/এমএমজেড