তথ্য প্রযুক্তি মানুষের কল্যাণ বয়ে আনলেও মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহার শিক্ষার্থীদের পড়ার ইচ্ছা কমিয়ে দিচ্ছে। ইন্টারনেটভিত্তিক পড়াশোনায় জ্ঞানার্জন থেকে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।

২৮ জানুয়ারি বসুন্ধরা শুভসংঘ গভ. কলেজ অব এপ্লাইড হিউম্যান সায়েন্স শাখার উদ্যোগে ক্যাম্পাস প্রাঙ্গণে বইপ্রেমীদের নিয়ে সাহিত্য আড্ডা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

আড্ডায় প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক ইমদাদুল হক মিলনের সাহিত্যকর্মের ওপর আলোচনা করা হয়। শিক্ষিত উচ্চবর্গের ড্রয়িং রুম থেকে কথাসাহিত্যকে বের করে এনে সাধারণ মধ্যবিত্তের কাছে জনপ্রিয় করে তোলার পেছনে কিংবদন্তিতুল্য লেখক ইমদাদুল হক মিলনের রয়েছে দীর্ঘ প্রচেষ্টা। তিনি সেই প্রচেষ্টায় স্বার্থক একজন ব্যক্তিত্ব। দীর্ঘদিন সৃজনশীলতার কঠিন পথে হেঁটে তিনি বাংলা গদ্যে  এনেছেন নতুন সংযোজন, প্রকাশভঙ্গিতে দিয়েছেন ভিন্ন স্বর। গ্রামীণ পটভূমিতে কথাসাহিত্যের বিষয় নির্মাণে তার ভাষার ওপর অধিকারের স্বাক্ষর সুস্পষ্ট।

বসুন্ধরা শুভসংঘ এপ্লাইড হিউম্যান সায়েন্স শাখার সভাপতি মুসলেমিনা সুলতানা ইমদাদুল হক মিলনের গল্প-উপন্যাস রচনায় শিল্পমান নিয়ে আলোচনা করেন। তিনি বলেন, ইমদাদুল হক মিলনের লেখায় নতুন নতুন পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও শিল্পগুণসম্পন্ন সাহিত্যের বিকাশ অব্যাহত রয়েছে। আঞ্চলিক ভাষা ব্যবহার ও বিষয় বিন্যাসে তিনি সমাজের নানা স্তরের মানুষের জীবনকে রূপায়ণ করেছেন। লেখকের অভিনবত্ব আবিষ্কারের জন্য তার আত্মজৈবনিক রচনা ‘কেমন আছ, সবুজপাতা’ (২০১২) পাঠ করে কথাসাহিত্যে প্রবেশ করতে হবে বলে জানান আলোচক মুসলেমিনা সুলতানা। তার প্রথম উপন্যাস ‘যাবজ্জীবন’ এ গ্রামীণ প্রেক্ষাপটে সংলাপ ও বর্ণনায় আঞ্চলিক শব্দ অবলীলায় উপস্থাপিত হয়েছে।

চরিত্র রূপায়ণের ক্ষেত্রে ইমদাদুল হক মিলন সহানুভূতিশীল, হৃদয়বান, ভাষা সচেতন ও অনুভূতিশীল আখ্যান নির্মাতা। একদিকে গ্রামীণজীবন, মানুষ, প্রকৃতি অন্যদিকে আধুনিক নগর জীবন, প্রেম তার কথাসাহিত্যের মৌল উপজীব্য। আবার মুক্তিযুদ্ধ তার কথাসাহিত্যের অন্যতম অনুষঙ্গ। গ্রামীণ জীবনে নারীর অবস্থান চিত্রিত করেছেন দরদের সঙ্গে। প্রকৃতিময়তা ও দ্রোহ নারীর অবস্থান রূপায়ণে তার অনন্যতার স্বাক্ষর রয়েছে ‘নূরজাহান’ উপন্যাসে। তার লেখায় চিত্রিত হয়েছে নারীদের বেঁচে থাকার লড়াইয়ের অভিব্যক্তি।

সাহিত্য বিষয়ক সম্পাদক লাবণ্য মল্লিক তার আলোচনায় বলেন, ইমদাদুল হক মিলনের ছোটগল্পে জীবনকে দেখার পর্যবেক্ষণ তাৎপর্যবহ। জীবনের হিসেব- নিকেশের নানা খুঁটিনাটি উঠে এসেছে তার গল্পে। গল্পের বিষয়বস্তু বিচিত্র, চরিত্রের রূপায়ন ও পেশা নির্বাচনেও রয়েছে বৈচিত্র্য। জীবনের অনুভূতি ও উপলব্ধির ভাষা পাঠকের নিজস্ব সম্পদ করে তুলেছেন তিনি।

কার্যকরী সদস্য বিপাসা বিথী বলেন, বই হলো জাতিগঠনের অন্যতম হাতিয়ার। আমাদের পাঠাভ্যাস গড়ে তুলতে হবে নয়তো মেধাহীন বিচারবুদ্ধিহীন সার্টিফিকেটধারী প্রজন্ম রাষ্ট্রের জন্য ভয়ংকর হয়ে দাঁড়াবে।  

বসুন্ধরা শুভসংঘ কলেজ শাখার বন্ধুদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে সমাজ ও মানুষের ইতিবাচক পরিবর্তন, সমাজের জন্য মানুষের দায়িত্ব সম্পর্কে আলোচনার মাধ্যমে সাহিত্য আড্ডাটি শেষ হয়।

বাংলাদেশ সময়: ১৫১১ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৮, ২০২৫
নিউজ ডেস্ক