সরেজমিনে দেখা গেছে, মনিরামপুর উপজেলার ঝাঁপা বাওড়ের উপর নির্মিত ভাসমান সেতু দুইটি দর্শকদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে উঠেছে, কোথাও যেন তিল ধারণের ঠাঁই নেই। যশোরসহ আশপাশের জেলা থেকেও বিভিন্ন যানবাহন রিজার্ভ করে কৌতুহল মেটাতে সেতু দেখতে আসছেন দূর-দূরান্তের মানুষ।
আগত এসব দর্শকদের কেন্দ্র করে বাওডের পাশে গড়ে উঠেছে মোটরসাইকেল, গাড়ি পার্কিং এলাকা, নাগরদোলা, বিভিন্ন ধরনের খাবার হোটেল, বাচ্চাদের খেলনা ও ফুলের দোকান। এছাড়াও মনোরম পরিবেশের বিশালাকৃতির ঝাঁপা বাওড় ঘুরতে ট্রলার ও নৌকা ভাড়া দেওয়ার জন্য রয়েছেন শতাধিক মাঝি-মাওলা।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ঈদের দিন নামাজ আদায় ও কোরবানির ব্যস্ততা থাকায় তেমন লোকসমাগম না হলেও পরের দিন বৃহস্পতিবার (২৩ আগস্ট) সকাল থেকে ভাসমান সেতুকে ঘিরে যেন জনস্রোত নেমেছে। দুইটি সেতুতে নারী-পুরুষ, শিশু-কিশোরের পদচারণায় মুখরিত গোটা এলাকা।
সেতু দেখতে আসা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ছাত্র রায়হান কবীর বাংলানিউজকে বলেন, নিজের এলাকার ভাসমান এই সেতুর খবর বিভিন্ন মিডিয়ায় দেখেছি, কখনো আসা হয়নি। কিন্তু ঈদের ছুটিতে বাড়ি এলে মামাতো-ফুফাতো ভাই-বোনদের আবদার মেটাতে ঘুরতে এসেছি, খুবই ভালো লেগেছে।
যশোরের কেশবপুর উপজেলার কাটাখাল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মলয় কুমার ব্রহ্ম বাংলানিউজকে বলেন, ঈদের ছুটিতে দুই মেয়েকে নিয়ে ভাসমান সেতুতে ঘুরতে এলাম, খুবই ভালো সময় কাটলো।
যশোরের একটি বেসরকারি সংস্থায় কর্মরত সাইদুল ইসলাম সদ্য বিবাহিত স্ত্রীকে নিয়ে ঘুরতে এসেছেন। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, রাজশাহীর মানুষ হলেও প্রায় তিন বছর কর্মের তাগিদে যশোরে থাকি। সরকারি ছুটিতেও সময় কাটানোর মতো কোন বিনোদন কেন্দ্র যশোরে নেই, তবে জেলা শহর থেকে দূরে হলেও এখানে এসে ভালো লেগেছে।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে আরও জানা গেছে, দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তর উপজেলা যশোরের মনিরামপুর উপজেলার একটি গ্রামের নাম ঝাঁপা। ১৫ হাজার জনসংখ্যার এ গ্রামটির তিনপাশ জলমগ্ন বাওড়ে ঘিরে রাখায় সাগরের মধ্যে তৈরি হওয়া উপ-বদ্বীপের মতো রূপ পেয়েছে। ফলে ঝাঁপা গ্রাম থেকে পাশ্ববর্তী অন্য কোন গ্রামে কিংবা জেলা-উপজেলায় যেতে হলে পৌনে এক কিলোমিটার প্রস্থের বাওড়টি নৌকায় পাড়ি দিতে হয়। রাত ১০টার পরে কিংবা প্রাকৃতিক দুর্যোগে গ্রামটি আশপাশের এলাকার সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়তো। তবে চলতি বছরের প্রথমে স্থানীয়দের উদ্যোগে ৬০ লাখ টাকা ব্যায়ে ‘জেলা প্রশাসক’ সেতু নামকরণ করে প্লাস্টিকের ড্রামের উপর লোহার রড ও পাত দিয়ে এক হাজার ফুট লম্বা ভাসমান সেতু চালু করা হয়। তবে, সেতুটি দুই লেনের হওয়ায় পর্যটকদের ভিড়ে স্থানীয় জনগণের তেমন উপকারে আসছিলো না। এমনকি, সেতু কর্তৃপক্ষ পুরোপুরি বাণিজ্যিক মনোভাব সৃষ্টি হলে গত ৮ মাসে খরচের টাকা উঠে কয়েক লাখ টাকা লাভ শুরু হয়।
এরপর একই বাওড়ের মোবারকপুর প্রান্তে স্থানীয় বেশ কিছু ব্যক্তি একত্রিত হয়ে আরও বৃহৎ আকারে ‘বঙ্গবন্ধু ভাসমান সেতু’ তৈরি করেছেন। সম্প্রতি ওই সেতুটিও সাধারণের জন্য উন্মুক্ত হয়েছে। নতুন এই সেতুটিতে অনেক বেশি বড় এবং উন্নত অবকাঠামো। যার ফলে, প্রাইভেটকার, ইজিবাইক, মোটরসাইকেল, ভ্যান, অ্যাম্বুলেন্সসহ হালকা যানবাহন নির্বিঘ্নে চলাচল করতে পারছে। একইসঙ্গে স্থানীয় জনগণের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে অগ্রণী ভূমিকা রাখছে।
বাংলাদেশ সময়: ১২০০ ঘণ্টা, আগস্ট ২৪, ২০১৮
জেডএস