ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

পর্যটন

৭ বছর পর প্রাণ ফিরেছে ‘সোনামসজিদ’ পর্যটন মোটেলে

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮০৭ ঘণ্টা, অক্টোবর ১২, ২০২০
৭ বছর পর প্রাণ ফিরেছে ‘সোনামসজিদ’ পর্যটন মোটেলে পর্যটন মোটেল সোনামসজিদ

চাঁপাইনবাবগঞ্জ: নির্মাণকাজ শেষে উদ্ধোধনের আগেই বিরোধী জোটের নাশকতার আগুনে পুড়ে যায় চাঁপাইনবাবগঞ্জের পর্যটন মোটেল ‘সোনামসজিদ’। দীর্ঘ সাত বছর পর পুনঃসংস্কার শেষে আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধনের কথা থাকলেও নিরবেই পোড়া ক্ষত সারিয়ে প্রাণ ফিরেছে জেলার একমাত্র মোটেলটির।

 

গত ২৭ সেপ্টেম্বর ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সোনামসজিদ মোটেলটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের কথা থাকলেও সেটি পিছিয়ে যায়। উদ্ধোধন পিছিয়ে গেলেও থেমে নেই মোটেলের কার্যক্রম। এরই মধ্যে অতিথিদের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে মোটেলটি।

আরও পড়ুন >> চালুর অপেক্ষায় পুড়িয়ে দেওয়া সেই সোনামসজিদ পর্যটন মোটেল

জানা গেছে, ২০১৩ সালের ৩ মার্চ উদ্বোধন হবার কথা ছিল মোটেলটি। কিন্তু উদ্বোধনের কয়েকদিন আগেই ২৮ ফেব্রুয়ারি মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর ফাঁসির রায়ের দিন জামায়াত-শিবির ক্যাডারদের দেওয়া আগুন ও ভাঙচুরে ক্ষতিগ্রস্ত হয় সোনামসজিদ পর্যটন মোটেল।  

একই দিন নিহত হন পর্যটন বিভাগের একজন নির্বাহী প্রকৌশলীও। পরে মোটেলটির বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়ায় আর চালু করা সম্ভব হয়নি। তবে নানা জটিলতার পর অর্থ প্রাপ্তি সাপেক্ষে  প্রায় সাড়ে সাত বছর পর পুনঃসংস্কার কাজ শেষ হয় মোটেলটির।  

বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশন ও মোটেলের তথ্য অনুযায়ী, নির্মাণকাজের সঙ্গে যুক্ত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ‘পারিসা কনস্ট্রাকশন’ প্রায় সাত কোটি টাকা ব্যয়ে মোটেলটি নির্মাণ করে। নির্মাণকাজ সম্পন্ন করে ২০১২ সালের ৩০ ডিসেম্বর পারিসা কনস্ট্রাকশন এটি পর্যটন করপোরেশনের কাছে হস্তান্তর করে। কিন্তু তার আগেই দুর্বৃত্তরা মোটেলে আগুন দিয়ে ভবনসহ সব আসবাব পুড়িয়ে দেয়।

সোনামসজিদে ভারতে যাতায়াতের ইমিগ্রেশন ও স্থলবন্দর রয়েছে। এছাড়া বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর ও মেজর নাজমুল হকের সমাধি, মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের গণকবর, ঐতিহাসিক তাহখানা, কামেল পীর হজরত শাহ নেয়ামতুল্লাহের (র.) মাজার, ছোট সোনামসজিদ, শাহ সুজার প্রাসাদ, দারাসবাড়ি মসজিদ, মাদ্রাসা, কোতোয়াল দিঘি, টাকশাল দিঘি, দখলদরজা, চামাকাঠি মসজিদ, ধনাইচক মসজিদ, খঞ্জনদিঘির মসজিদসহ অসংখ্য পীর আউলিয়াদের মাজার। আরও আছে বিশাল এক দিঘি। যার নাম বালিয়াদিঘি। বেশকিছু ঐতিহাসিক স্থাপনা থাকায় এখানে প্রতিদিনই পর্যটক আসেন। পর্যটকদের অত্যাধুনিক সুবিধা দিতেই সরকার এখানে পর্যটন মোটেল নির্মাণ করে। কিন্তু সে স্বপ্ন ভেঙে যায়। এরপর পরিত্যক্ত পড়ে থাকে এটি।

মূলত পর্যটন কেন্দ্রিক সোনামসজিদ এলাকা হওয়ায় এবং ভারতে যাতায়াতের ইমিগ্রেশন ও স্থলবন্দর থাকায় ওই এলাকায় একটি পর্যটন মোটেল নির্মাণের উদ্যোগ নেয় আওয়ামী লীগ সরকার। সে সময় চাঁপাইনবাবগঞ্জ-১ (শিবগঞ্জ) আসনের সংসদ সদস্য ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অবসরপ্রাপ্ত) মো. এনামুল হক মোটেলটির কাজ দ্রুত শেষ করে ২০১৩ সালের ৩ মার্চ উদ্ধোধনের উদ্যোগ নেন। কিন্তু এর মাত্র দু’দিন আগে ২৮ ফেব্রুয়ারি স্থানীয় জামায়াত-শিবির কর্মীরা হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করে মোটেলটি। অর্থ বরাদ্দে বিলম্ব এবং বিভিন্ন জটিলতায় দীর্ঘদিন পরিত্যক্ত পড়ে থাকে এটি।

পরবর্তীতে মোটেলটি সংস্কার করে চালু করার লক্ষ্যে ২০১৫ সালে পর্যটন করপোরেশনের চেয়ারম্যানের কাছে চিঠি দেন চাঁপাইনবাবগঞ্জের তৎকালীন জেলা প্রশাসক (ডিসি) মো. জাহিদুল ইসলাম। এর পরেও পর্যটন মোটেলটি চালু করার উদ্যোগ নেয়নি কর্তৃপক্ষ। এর প্রায় পাঁচ বছর পর এটি সংস্কারের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ দেয় বেসামরিক ও পর্যটন মন্ত্রণালয়।

জেলা সদর থেকে পরিবার নিয়ে সোনামসজিদ ঘুরতে আসা জাহিদ হাসান বাংলানিউজকে বলেন, এর আগেও এখানে ঘুরতে এসেছি। তবে ভালোমানের কোনো খাবারের দোকান না থাকায় বাসা থেকে খাবার নিয়ে আসতে হতো। তবে পর্যটন মোটেলের কার্যক্রম শুরু হয়েছে শুনে আবারও ঘুরতে এসেছি। এবার বাসা থেকে খাবার নিয়ে আসিনি, মোটেলে খেলাম এবং খাবারের মানও ভালো।

ঢাকা থেকে সোনামসজিদ ঘুরতে আসা ব্যবসায়ী ফজলুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, আগে ব্যবসায়ীক কাজে অনেকবার আসতে হয়েছে সোনামসজিদে, কিন্তু এখানে রাত যাপনের কোনো ব্যবস্থা না থাকায় জেলা সদরে গিয়ে থাকতে হতো। এখানে সব থেকে বড় সমস্যা ছিল, রাতে থাকার। কিন্তু এবার মোটেলে থেকেছি।

ফজলুর রহমান আরও বলেন, দেশের দ্বিতীয় স্থলবন্দর সোনামসজিদ হওয়ায় বিভিন্ন স্থান থেকে ব্যবসায়ীরা এসে থাকা ও খাবারের সমস্যায় পড়তেন। কিন্তু এখন মোটেল চালু হয়ে যাওয়ায় দীর্ঘদিনের সে সমস্যার সমাধান হয়েছে।

মোটেলের নির্বাহী কর্মকর্তা মনোয়ার ফেরদৌস খন্দকার বাংলানিউজকে বলেন, গত ২৭ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রীর ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে মোটেলটির আনুষ্ঠানিক উদ্ধোধনের কথা থাকলেও তাঁর সিডিউলজনিত কারণে তা সম্ভব হয়নি। তবে আনুষ্ঠানিক উদ্ধোধন না হলেও পর্যটকদের স্বার্থে মোটেলটির সব কার্যক্রম শুরু হয়েছে।

নির্বাহী কর্মকর্তা মনোয়ার আরও বলেন, তিন তলা বিশিষ্ট পর্যটন মোটেলটিতে রয়েছে- ১৮টি ভিআইপি কক্ষ, ১২টি সাধারণ কক্ষ, ইকোনমি কক্ষ ও সাধারণের জন্য ১২টি ডরমিটরি কক্ষ এবং একটি করে অভ্যর্থনা কক্ষ, ক্যান্টিন, রান্নাঘর। এছাড়া সার্বক্ষণিক বিদ্যুৎ সুবিধা রাখতে রয়েছে একটি বৈদুতিক সাবস্টেশন।  

এ ব্যাপারে বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশনের নির্বাহী প্রকৌশলী নজরুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, তিন কোটি ৫০ লাখ টাকা ব্যয়ে সোনামসজিদ মোটেলটি সংস্কার করা হয়েছে। করা হয়েছে আধুনিকায়ন। পাশাপাশি এটি দৃষ্টিনন্দনও করা হয়েছে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জের নবনিযুক্ত জেলা প্রশাসক (ডিসি) মো. মঞ্জুরুল হাফিজ বাংলানিউজকে বলেন, গত মাসের শেষের দিকেই আনুষ্ঠানিকভাবে সোনামসজিদ মোটেলটির কার্যক্রম শুরু হবার কথা থাকলেও তা সম্ভব হয়নি। তবে আনুষ্ঠানিকতা ছাড়াই পর্যটকদের স্বার্থে কার্যক্রম শুরু হয়েছে। মোটেলটি চালুর মধ্য দিয়ে জেলার পর্যটন শিল্প আরও বিকশিত হবে।  

বাংলাদেশ সময়: ১৭০৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ১২, ২০২০
এসআরএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।