ঢাকা: জমে উঠেছে বাংলাদেশের বৃহত্তম পর্যটন মেলা এশিয়ান ট্যুরিজম ফেয়ার। দিনভর পর্যটক, দর্শনার্থীদের পদচারণায় মুখর হয়ে উঠেছে রাজধানীর বসুন্ধরা আন্তর্জাতিক কনভেনশন সেন্টার (আইসিসিবি)।
সদ্য বিবাহিত একটি বহুজাতিক কোম্পানির ব্যবস্থাপক শরিফুল ইসলাম। মেলায় এসেছেন পছন্দের হানিমুন প্যাকেজ দেখতে। আলাপচারিতায় বাংলানিউজকে তিনি বলেন, কিছুদিন আগেই বিয়ে করলাম। প্রেম করে বিয়ে করেছি (হাসি)। আগে কথা দিয়েছিলাম স্ত্রীকে বিয়ের পর নেপাল নিয়ে যাব। মূলত তাই এখানে আসা। মনমতো প্যাকেজ পেলে বুকিং দিয়ে যাব৷
বন্ধুদের নিয়ে এই মেলায় ঘুরতে এসেছেন নর্থ-সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবিএ অনুষদের শিক্ষার্থী জিসান। জানতে চাইলে বাংলানিউজকে তিনি বলেন, বন্ধুরা মিলে থাইল্যান্ড ভ্রমণের পরিকল্পনা আছে। তাই ট্যুর প্যাকেজ দেখতে এলাম৷ পছন্দ হয়ে গেলে বুকিং দিয়ে যাব।
এর আগে, বৃহস্পতিবার (২৯ সেপ্টেম্বর) তিন দিনব্যাপী এ মেলার উদ্বোধন করেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সচিব মোকাম্মেল হোসেন।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশনের চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের প্রধান নির্বাহীসহ ঢাকাস্থ নেপালের রাষ্ট্রদূত, থাইল্যান্ডের রাষ্ট্রদূত, মালেয়শিয়ার হাইকমিশনারসহ অন্যান্য দূতাবাসের প্রতিনিধি এবং দেশ-বিদেশের সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তারা।
পর্যটন বিচিত্রার আয়োজনে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশন ও বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের সার্বিক সহযোগিতায় এ মেলা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। তিন দিনব্যাপী এ মেলা শেষ হবে শনিবার (১ অক্টোবর)।
প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত দর্শনার্থীদের জন্য মেলা খোলা থাকবে। কোভিড পরবর্তী এ মেলার আয়োজন পর্যটনের দুয়ার খুলবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
এবারের মেলায় বাংলাদেশ, নেপাল, থাইল্যান্ড, ভারত, ভুটান, মালেয়শিয়া, শ্রীলঙ্কা ও লিথুনিয়াসহ প্রায় ১৩০টি দেশের বিভিন্ন পর্যটন সংস্থা অংশ নিয়েছে।
এর মধ্যে ৫০টির বেশি বিদেশি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। মেলায় রয়েছে পর্যটন মৌসুমে দেশ-বিদেশে বেড়ানোর বিভিন্ন আকর্ষণীয় ভ্রমণ অফার, হোটেল, রিসোর্ট বা প্যাকেজ বুকিংসহ বিশেষ ছাড়ের ব্যবস্থা। মেলায় অংশগ্রহণকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে রয়েছে হোটেল, মোটেল, রিসোর্ট, ক্রুজলাইন্স, এয়ারলাইন্স, ট্যুর অপারেটর ও থিমপার্কসহ বিনোদনের আরও অনেক প্রতিষ্ঠান।
এছাড়া মেলায় বৈচিত্র্যময় আয়োজনের মধ্যে রয়েছে পর্যটন বিষয়ক সেমিনার, শিশুদের জন্য চিত্রাংকন প্রতিযোগিতা ও বিজনেস টু বিজনেস মিটিং। মেলায় থাকবে শ্রীলঙ্কা ও বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
এ মেলার মাধ্যমে পর্যটন শিল্পের একটি পূর্ণাঙ্গ চিত্র দর্শনার্থীদের মাঝে তুলে ধরার প্রচেষ্টা থাকবে বলে জানিয়েছেন আয়োজকরা।
মেলার এয়ারলাইন্স পার্টনার বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স, হসপিটালিটি পার্টনার ইন্টারকন্টিনেন্টাল ঢাকা ও প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও, অ্যাডভেঞ্চার ডাইনিং পার্টনার ফ্লাই ডাইনিং, ক্রুজ পার্টনার ঢাকা ডিনার ক্রুজ, এন্টারটেইনমেন্ট পার্টনার ফ্যান্টাসি কিংডম ও ট্রান্সপোর্ট পার্টনার কনভয় সার্ভিস ও নেটওয়ার্কিং ইভেন্ট পার্টনার-বোটোফ।
এবারের মেলায় প্রাইম পার্টনার কান্ট্রি নেপাল, পার্টনার কান্ট্রি থাইল্যান্ড, ফিচার কান্ট্রি-ভারত, ভুটান, মালয়েশিয়া, শ্রীলঙ্কা ও লিথুনিয়া এবং মেলার হোস্ট (আয়োজক) কান্ট্রি বাংলাদেশ।
মেলার প্রবেশ ফি ৩০ টাকা। শুধু তাই নয়, প্রবেশ কুপনের বিপরীতে র্যাফেল ড্র বিজয়ীদের জন্য থাকবে এয়ারলাইন্স টিকিটসহ বেড়ানোর আকর্ষণীয় গিফট ভাউচার। বিজয়ীরা পাবেন বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের সৌজন্যে ঢাকা-টরেন্টো-ঢাকা রিটার্ন টিকিট, ঢাকা-ব্যাংকক-ঢাকা রিটার্ন টিকিট ও ঢাকা-দিল্লি-ঢাকা রিটার্ন টিকিট।
এছাড়া প্রতিটি টিকিটেই থাকবে মেলার এন্টারটেইনমেন্ট পার্টনার ফ্যান্টাসি কিংডমে প্রবেশে ৫০ শতাংশ ছাড়।
পর্যটন উন্নয়ন সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, এ মেলার মাধ্যমে পর্যটন সংস্থাগুলো প্রচার-প্রচারণার এক বিশেষ সুযোগ পাবে। এ মেলার মাধ্যমে বাংলাদেশে পর্যটন শিল্পের এক নতুন সম্ভাবনার সৃষ্টি হবে এবং পর্যটন মৌসুমে ভ্রমণ প্রেমিকদের বেড়ানোর খোঁজখবর পেতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। দেশের পর্যটন শিল্প কোভিড পরবর্তী সময়ে আরও জোরালোভাবে ঘুরে দাঁড়াবে এবং টেকসই উন্নয়নে সহায়তা করবে।
পর্যটন বিচিত্রার সম্পাদক এশিয়ান ট্যুরিজম ফেয়ারের চেয়ারম্যান মো. মহিউদ্দিন হেলাল বলেন, আসন্ন পর্যটন মৌসুমকে সামনে রেখে এ মেলায় পর্যটকদের জন্য নানা রকমের বৈচিত্র্যময় অফার রয়েছে। পর্যটকরা সাশ্রয়ী মূল্যে তাদের ভ্রমণের আগাম বুকিং দিতে পারবেন। আশা করছি, দেশ ও আঞ্চলিক পর্যটন শিল্পের জন্য এ মেলা একটি সেতুবন্ধন তৈরি করবে এবং সব গন্তব্যে পর্যটকদের আনন্দমিছিল ছড়িয়ে পড়বে। কোভিড পরবর্তী এ মেলা আয়োজনের ফলে নতুনভাবে পর্যটনের দুয়ার খুলবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৪১ ঘণ্টা, ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০২২
এমকে/এমএমজেড