ফেনী: ভারতের মহারাষ্ট্রের তরুণ রোহান আগারওয়াল। চেহারায় এখনও কৈশরের ছাপ।
রোহান মাত্র ২০ বছর বয়সেই বিশাল স্বপ্ন নিয়ে বেরিয়ে পড়েছেন ঘর থেকে। ৮০০ দিন আগে যাত্রা শুরু করা এ তরুণ এখন পর্যন্ত অতিক্রম করেছেন প্রায় ১৫ হাজার কিলোমিটার পথ।
ভ্রমণ করেছেন ভারতের ২৭টি রাজ্য। রোহান হাঁটাপথেই যেতে চান পৃথিবীর সবচেয়ে শীতল স্থান সাইবেরিয়ার ওইমিয়াকনে। স্বপ্ন দেখেন সড়ক পথে ভারত থেকে সেখানে যাওয়ার প্রথম দক্ষিণ এশীয় ব্যক্তি হওয়ার।
এ দীর্ঘ যাত্রাপথে পরিবেশ, প্রাণ-প্রকৃতিতে প্লাস্টিকের ভয়াবহতার বিষয়ে মানুষকে সচেতন করছেন এই তরুণ। বিভিন্ন স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে মত বিনিময় করছেন শিক্ষার্থীদের সঙ্গে।
সম্প্রতি ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের বিলোনিয়া হয়ে ফেনী প্রবেশ করেন এই তরুণ। সোমবার (১০ অক্টোবর) দুপুরে ফেনী শহরে দেখা এই তরুণের সঙ্গে। আলাপ হয় তার এই দীর্ঘ ভ্রমণ নিয়ে।
রোহান জানান, তার এই যাত্রার প্রধান উদ্দেশ্য হলো প্লাস্টিকের নেতিবাচক প্রভাব সম্পর্কে সচেতনতা তৈরি করা এবং মানুষের মধ্যে ঐক্যের বার্তা দেওয়া।
রোহান বলেন, ভারতের অনেক রাজ্যের বিভিন্ন স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় ও বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গিয়েছি। সেখানে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পৃথিবীর প্রাণ প্রকৃতির ওপর প্লাস্টিকের ভয়াবহতা নিয়ে কথা বলেছি। সচেতনতা তৈরির চেষ্টা করেছি।
রোহান বলেন, পরিবেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান মাটি, পানি, বায়ু প্লাস্টিক দ্বারা দূষিত হচ্ছে। প্লাস্টিক স্টিরিন নামক ক্ষতিকর পদার্থ নির্গত করে, যা মানবদেহে তৈরি করতে পারে ক্যান্সারের মতো মরণব্যাধি।
এ তরুণ আরো বলেন,আমি সাইবেরিয়ার ওইমিয়াকনে হেঁটে যাবো এবং যেখানে তাপমাত্রা মাইনাস ৭২ ডিগ্রি এবং এটি পৃথিবীর সবচেয়ে শীতল স্থান। স্থলপথে ভারত থেকে সেখানে পৌঁছানো প্রথম দক্ষিণ এশীয় হবো। সাইবেরিয়া যাওয়ার পথে আরও ৫ বছরের মধ্যে বাংলাদেশ, পাকিস্তান, মিয়ানমার, নেপাল, চীন, থাইল্যান্ডসহ মধ্যে দক্ষিণ এশিয়ার প্রায় ১২-১৩টি দেশ অতিক্রম করবো।
বিশাল এই রুটে ভ্রমণ নিয়ে ভারতীয় এই যুবক বলেন, এটি আমার জন্য অনেক চ্যালেঞ্জিং। তবে রোটারি, লায়নসহ বিভিন্ন সংগঠনের সদস্যরা আমার এই যাত্রা পথে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। দেশের সরকার আমাকে এই যাত্রার জন্য অনুমতি দিয়েছে এবং অন্য দেশগুলোর ভিসা প্রাপ্তির ব্যবস্থা করে দিয়েছে।
রোহান বলেন, এই বিশাল রুটে জীবন ধারণের নানা দিক দেখছি। নানা রকম মানুষের সঙ্গে কথা বলছি, যেখানে পারছি সেখানেই রাত যাপন করছি। যা পাচ্ছি তাই খাচ্ছি এটা সহজ না হলেও দারুণ উপভোগ্য।
রোহান আরও জানান, দীর্ঘ এ যাত্রার ব্যয় বিভিন্ন দেশের মানুষই তাকে দিচ্ছেন। অনেকে খাওয়াচ্ছেন। আবার অনেকে থাকার জায়গাও দিচ্ছেন। নানা রকম উপহারও মিলছে মানুষের কাছ থেকে।
বাংলাদেশের প্লাস্টিক পরিস্থিতির বিষয়ে এ তরুণ বলেন, ভারতের মেঘালয়, আসাম, ত্রিপুরা, নাগাল্যান্ড, মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গসহ বিভিন্ন রাজ্য ঘুরে দেখা যায় প্লাস্টিকের ব্যবহার প্রায় একই রকম। তবে সেসব রাজ্যে প্লাস্টিক যেখানে সেখানে ফেলে রাখা হয় না। নির্দিষ্ট স্থানে ডাস্টবিনে ফেলা হয়।
রোহান জানান, বাংলাদেশের মানুষ অতিথি পরায়ণ এবং পরোপকারী।
ফেনীতে অবস্থানকালে রোহান ফেনী জেলা প্রশাসক আবু সেলিম মাহমুদ- উল হাসান, স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক ড. মো মঞ্জুরুল ইসলাম, ফেনী সদর উপজেলা চেয়ারম্যান শুসেন চন্দ্র শীলের সঙ্গে দেখা করেন।
রোহান আগারওয়াল ভারতের সিকিম প্রফেশনাল ইউনিভার্সিটিতে ইংরেজি ও বিকম জেনারেলে প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী। এছাড়াও অ্যামেরিকার গ্লোবাল পলিটিক্যাল ইউনিভার্সিটিতে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে ডিপ্লোমা করছেন তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ১৩০৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ১১, ২০২২
এসএইচডি/এসআইএস