ঢাকা: রোববার ২৭তম ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলার উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। যাতায়াত ব্যবস্থার সুবিধা এবং আকর্ষণীয় পণ্যের সম্ভারে গত বছরের তুলনায় এবারের বাণিজ্যমেলায় ব্যবসা দ্বিগুণ হবে বলে প্রত্যাশা রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর।
তবে উদ্বোধন হয়ে গেলেও মেলার প্রস্তুতির সব কাজ এখনো সম্পন্ন হয়নি। মেলা কর্তৃপক্ষের আশা, আগামী শুক্রবারের আগেই মেলার সব কাজ শেষ হবে। এর পরই মূলত দর্শনার্থীদের ভিড় বাড়বে।
এবারের বাণিজ্যমেলায় স্টলগুলো যাতে সঠিক সময়ে কাজ শেষ করতে পারে সে জন্য ডিসেম্বরের এক তারিখেই কাজ শুরু করার নির্দেশনা দিয়েছিল মেলা কর্তৃপক্ষ। তবে অনেক ব্যবসায়ী বা প্রতিষ্ঠান শেষ দিকে এসে স্টল নির্মাণের কাজ শুরু করে। এ কারণেই মেলা শুরুর দ্বিতীয় দিনে এসেও বেশির ভাগ স্টলের নির্মাণ কাজ শেষ হয়নি।
সোমবার (২ জানুয়ারি) দুপুর থেকে সরেজমিনে পূর্বাচলে বাণিজ্যমেলা প্রাঙ্গণ ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে। এদিন মেলা শুরুর সময় সকালে লোকসমাগম কম থাকলেও বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে লোকসমাগম বাড়তে থাকে।
মেলা শুরু হয়েছে ১ জানুয়ারি থেকে। তবে বেশির ভাগ স্টলের কাজ এখনো শেষ হয়নি। পুরোপুরি কাজ শেষ করতে আরও দুই থেকে তিন দিন সময় লাগতে পারে বলে জানিয়েছেন নির্মাণ শ্রমিকরা। স্টল নির্মাণে দেরি কেন হচ্ছে জানতে চাইলে বেশির ভাগ নির্মাণ শ্রমিক জানান, দেরিতে কাজ শুরু করার ফলে সময় মতো কাজ শেষ করা যায়নি। স্টল নির্মাণে দেরি হওয়ার পেছনে মেলা কর্তৃপক্ষ ও ব্যবসায়ীদের গাফিলতিকে দায়ী করেন তারা।
লিটন মিয়া বাণিজ্যমেলায় স্টোর এবং প্যাভেলিয়নের ইন্টেরিয়রের কাজ করেন। এ পর্যন্ত চার বার ইন্টেরিয়রের কাজ করেছেন তিনি। গত মাসের ২৬ ডিসেম্বর পোলারের স্টল নির্মাণে কাজ শুরু করেন লিটন। মেলা শুরু হয়ে আজ দ্বিতীয় দিন হলেও এখনো তার কাজ শেষ হয়নি।
বাংলানিউজকে তিনি বলেন, আরও তিন থেকে চার দিন লাগবে এই স্টলের কাজ শেষ করতে। এমন একটি স্টল তৈরি করতে ৮-১০ দিন সময় লাগে বলেও জানান তিনি।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত বছর মেলা উপলক্ষে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ১৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের সমপরিমাণ পণ্য রপ্তানির আদেশ পেয়েছিল। এবারের রপ্তানির আদেশ গতবারের তুলনায় দ্বিগুণের (৩০ বিলিয়ন ডলারের) বেশি হবে এমটাই আশা করছেন মেলা কর্তৃপক্ষ।
বাণিজ্যমেলার পরিচালক ইফতেখার আহমেদ চৌধুরী (ইপিবি সচিব) বাংলানিউজকে বলেন, মেলার নাম ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলা হলেও এখানে দেশি-বিদেশি সকলেরই আগমন ঘটে। শুধু বিদেশি অর্ডারের জন্যই মেলা, বিষয়টি এমন নয়। এখানে ছোট উদ্যোক্তা থেকে শুরু করে বড় ব্যবসায়ীরা যাতে তাদের পণ্যের প্রচার করতে পারেন, এমন প্ল্যাটফর্মই হচ্ছে বাণিজ্যমেলা। মেলার মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে দেশীয় এবং বিদেশি পণ্যগুলো সকল ক্রেতার সামনে তুলে ধরা। গতবারের তুলনায় এবারের বাণিজ্যমেলার পরিধি বৃদ্ধি পেয়েছে। গত বছর মেলায় ২২৫টি স্টল ছিল। এ বছর মেলায় আরও ১০৬টি স্টল বাড়িয়ে মোট ৩৩১টি স্টল রয়েছে।
স্টল বিন্যাসের বিষয়ে মেলা পরিচালক বলেন, রপ্তানি উন্নয়ন বুরোর (ইপিবি) পক্ষ থেকে আমরা ওপেন টেন্ডারের মাধ্যমে ছোট বড় সকল ধরনের প্যাভেলিয়নের ব্যবস্থা করেছি। যে কেউ চাইলে যে কোনো স্টল নিতে পারবেন। সে জন্য আমরা যথেষ্ট জায়গা দিচ্ছি। এবারের মেলায় আমরা ইলেকট্রনিক পণ্য, ফার্নিচারসহ বিভিন্ন ক্যাটাগরির পণ্যের জন্য আলাদা জোন করে দিয়েছি। মেলায় এখনো কিছু কাজ বাকি আছে, কাজগুলো শেষ হলে মেলা পূর্ণাঙ্গ রূপ পাবে।
মেলায় জনসাধারণের নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ব্যাপক প্রস্তুতি রয়েছে। এ বিষয়ে কথা হয় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মুহাম্মদ কামরুল হাসানের সঙ্গে। বাংলানিউজকে তিনি বলেন, মেলার নিরাপত্তাজনিত বিষয়ে এখন পর্যন্ত সার্বিক পরিস্থিতি ভালোই চলছে। মেলার নিরাপত্তা মোট তিনটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে। প্রতি ভাগেই সাধারণ ফোর্সের সঙ্গে অফিসার হিসেবে একজন করে অ্যাডিশনাল এসপি এবং একজন করে এএসপি কাজ করছেন। কোনো কোনো জায়গায় ফোর্সের ইনচার্জ হিসেবে একজন ইনেসপেক্টর বা সাব-ইনেসপেক্টর দায়িত্বে থাকছেন। এছাড়া সব প্রতিটি গেটে আমাদের মোবাইল টিম আছে। মেলার বাইরে ৫টি ওয়াচ টাওয়ার স্থাপন করা হয়েছে। পাশাপাশি পুলিশের ফুড পেট্রোলও কাজ করছে।
তিনি আরও বলেন, পুরো মাসের হিসেবে মেলায় আমাদের পর্যাপ্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা আছে। আশা রাখি কোনো সমস্যা হবে না। তবে মেলায় এখন পর্যন্ত সব স্টল বসেনি। এক অর্থে বলা যায় মেলা প্রস্তুতি পর্যায়ে আছে।
মেলা প্রাঙ্গণে সাধারণ মানুষকে পৌঁছে দিতে বিআরটিসি শাটল সার্ভিসের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এ সার্ভিস কুড়িল বিশ্ব রোড থেকে পূর্বাচল বাণিজ্যমেলা প্রাঙ্গণ পর্যন্ত যাতায়াত করবে। সকাল ৮টা থেকে শুরু হয়ে মেলা শেষ হওয়া পর্যন্ত চলবে বিআরটিসির শাটল সার্ভিস। ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে ৩৫ টাকা করে। মেলা উপলক্ষে সর্বমোট ১৫০টি বিআরটিসি বাস প্রস্তুত করা হয়েছে। এই বাসগুলো পরিচালনার জন্য ৩০০ চাল প্রস্তুত আছে বলে জানিয়েছেন বিআরটিসি শাটল সার্ভিসের দায়িত্বে থাকা ট্রাফিক অফিসার জাফর আহমেদ।
বাংলানিউজকে তিনি বলেন, মেলা প্রাঙ্গণে যাওয়ার যেহেতু নির্ধারিত কোনো ট্রান্সপোর্ট নেই, সে কারণে এই শাটল সার্ভিসের ব্যবস্থা করা। গত বছর রাস্তা ভালো ছিল না। সে তুলনায় এ বছর রাস্তা অনেক ভালো। ফলে যাত্রীর চাপ এবারে বেশি থাকবে। তবে মেলা এখনো পর্যন্ত সেভাবে জমে ওঠেনি। সে জন্য যাত্রী চাপও কম। তাই গতকাল মাত্র ১৯টি বিআরটিসি বাস যাত্রীসেবা দিয়েছে। আজ প্রাথমিকভাবে ২৫টি বাস যাত্রীসেবা দিচ্ছে। প্রয়োজনে যাত্রীর চাহিদা অনুযায়ী আরও বাস নামানো হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৮২৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০২, ২০২৩
ইএসএস/এমজেএফ