ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ট্রাভেলার্স নোটবুক

পর্যটকদের অপেক্ষায় বান্দরবান

সাইফুল আলম বাবলু, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১৪৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৪, ২০১৫
পর্যটকদের অপেক্ষায় বান্দরবান ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

বান্দরবান: অবকাশ যাপন, হানিমুন, আনন্দ ভ্রমণ ও অ্যাডভেঞ্চার প্রিয়দের জন্য আদর্শ স্থান পর্যটন শহর পাহাড়ি জেলা বান্দরবান। যান্ত্রিক জীবনের নানা কর্মব্যস্ততার ফাঁকে সুযোগ পেলেই ঘুরে আসুন পাহাড়ি এ জেলায়।

যেখানে রয়েছে ১১টি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠির বসবাস। প্রকৃতি যেন সাজিয়েছে আপন মনের মাধুরি মিশিয়ে। তাই সবুজে মোড়ানো প্রাকৃতিক সৌর্ন্দয, অবারিত সবুজের সমারোহ এবং মেঘ ছোঁয়ার ইচ্ছে হলেই ঘুরে আসুন পাহাড়ি কন্যা বান্দরবানে।
 
যেভাবে যাবেন
ঢাকা থেকে বান্দরবান যেতে আপিন ২/৩ টি রুট ব্যবহার করতে পারেন। ঢাকা থেকে ট্রেনে বা বাসে প্রথমে চট্টগ্রাম তারপর চট্টগ্রাম হতে সোজা বান্দরবান।

ঢাকা থেকে সরাসরি বান্দরবান যাওয়ার ক্ষেত্রে আপনি বেছে নিতে পারেন ডলফিন, এস.আলম, সৌদিয়া, বিআরটিসি, সেন্ট মার্টিন ব্লু, ইউনিক, শ্যামলী পরিবহনের যে কোনটিই। এসব পরিবহনের ভাড়া জনপ্রতি ৮৫০-৯০০ (এসি), ৬০০-৬৫০ (নন এসি)। এছাড়া ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম হয়ে বাসে চড়ে বান্দরবান আসতে চাইলে জনপ্রতি ভাড়া ৪৮০ (নন এসি) এবং ৮৫০-১২০০ (এসি) টাকা।

এরপর চট্টগ্রাম থেকে বান্দরবানের দূরত্ব মাত্র দুই থেকে আড়াই ঘণ্টার। বহদ্দারহাট টার্মিনাল থেকে বিআরটিসি, পূরবী, পূর্বাণী পরিবহনে সরাসরি এসি/নন এসি বাসে চড়ে বান্দরবান পৌঁছাতে পারেন। প্রতি ৩০ মি. পরপর বাসগুলো বান্দরবানের উদ্দেশে ছেড়ে যায়। ভাড়া জনপ্রতি-১১০-১৩০ টাকার মধ্যে।

কোথায় থাকবেন
হোটেল হিল ভিউ: বান্দরবানে প্রবেশ করতেই দেখতে পাবেন শহরের সবচাইতে বড় আবাসিক হোটেল হিল ভিউ। শহরের কাছেই এ হোটেলের ভাড়া রুমপ্রতি ১০০০-৪০০০ টাকা। ফোন: ০৩৬১-৬৩০৪৫।

পর্যটন মোটেল: পর্যটন স্পট মেঘলার পাশেই পর্যটন কর্পোরেশন কর্তৃক পরিচালিত পর্যটন মোটেল। যার ভাড়া রুম প্রতি ৮৫০ থেকে ২০০০ টাকার মধ্যে। ফোন: ০৩৬১-৬২৭৪১ এবং ০৩৬১-৬২৭৪২।

হলি ডে ইন: চারদিকে পাহাড় আর প্রাকৃতিক লেকের কাছাকাছি থাকতে চাইলে যেতে পারেন মেঘলার কাছেই অবস্থিত হলি ডে ইন এ। যার ভাড়া রুম প্রতি ১৫০০-৩০০০ টাকা পর্যন্ত। ফোন: ০৩৬১-৬২৮৯৬।

ভেনাস রিসোর্ট: বান্দরবানের মেঘলা এলাকায় অবস্থিত ভেনাস রিসোর্ট। যেখানে রয়েছে পাহাড়ের চূঁড়ায় ৫টি আধুনিক কটেজ। এছাড়াও রয়েছে ভেনাস চাইনিজ রেস্টুরেন্ট যেখানে দেশি-বিদেশি মজাদার সব রকমের খাবার পাওয়া যায়। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের সঙ্গে শৈল্পিক ছোঁয়া এবং একাধিক ছোটবড় ভাস্কর্যে সাজানো হয়েছে ভেনাস রিসোর্ট। ফোন- ০৩৬১-৬৩৪০০, ০১৫৫২৮০৮০৬০।

হোটেল প্লাজা: এটি বান্দরবানের অন্যতম আধুনিক আবাসিক হোটেল। বান্দরবান শহরের কেন্দ্রবিন্দুতে অবস্থিত এ হোটেলে রাত্রিযাপন করতে পারবেন ১০০০-৪০০০ টাকার মধ্যে। ফোন: ০৩৬১-৬৩২৫২।

হিলসাইড রিসোর্ট: চিম্বুক যাওয়ার পথে মিলনছড়ি এলাকায় পাহাড়ের বুকে গড়ে ওঠা এ রিসোর্ট বান্দরবানের অন্যতম দৃষ্টিনন্দন রিসোর্ট হিসেবে পরিচিত। যেখানে বসে পাহাড়, নদী আর মেঘের দৃশ্য উপভোগ করতে পারবেন সহজেই। যার ভাড়া রুম প্রতি ১৫০০-৪০০০ টাকার মধ্যেই। ফোন: ০১৫৫৬৫৩৯০২২, ০১৭৩০০৪৫০৮৩।

সাকুরা হিল রিসোর্ট: চিম্বুক রোডের মিলনছড়ি এলাকার কাছাকাছি এ রিসোর্ট অত্যন্ত দৃষ্টিনন্দন। প্রাকৃতিক ও কোলাহলমুক্ত পরিবেশে থাকতে চাইলে এ রিসোর্ট এর কোনো বিকল্প নেই। যার ভাড়া রুম প্রতি ১৫০০-৩০০০ টাকা পর্যন্ত।

হোটেল ফোর স্টার: এটি বান্দরবান বাজারে অবস্থিত। রুম প্রতি ভাড়া ৩০০-১২০০ টাকা। ফোন:-০৩৬১-৬৩৫৬৬, ০১৮১৩২৭৮৭৩১,০১৫৫৩৪২১০৮৯।

হোটেল থ্রি স্টার: এটি বান্দরবান বাসস্টপের পাশে অবস্থিত। এটি ৮/১০ জন থাকার মতো ৪ বেডের এমন একটি ফ্ল্যাট। প্রতি নন এসি ফ্ল্যাট-২৫০০ টাকা, এসি-৩০০০ টাকা। ফোন:- ০১৫৫৩৪২১০৮৯।

প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এক অনন্য নিদর্শন বান্দরবান। যেখানে প্রকৃতি নিজ ঐশ্বর্যকে ঢেলে দিতে কৃপণতা করেননি। পাহাড়ি এ জেলায় রয়েছে অসংখ্য হ্রদ, ঝর্না, নদী, খাল ও ঝিরি। সেখানকার জীববৈচিত্র্য এবং তাদের ঐতিহ্যপূর্ণ বর্ণাঢ্য সংস্কৃতি যেকোন সংস্কৃতি মনা ও অ্যাডভেঞ্চারপ্রিয় মানুষকে আকৃষ্ট করে করে।

নীলগিরি
বাংলাদেশ সেনাবাহিনী কর্তৃক পরিচালিত নীলগিরি পর্যটন কেন্দ্রটি সমুদ্র পৃষ্ট হতে ২২০০ ফুট উচ্চতায়। যা পাহাড় এবং আকাশের মিতালীর এক অপূর্ব নিদর্শন। যেখান থেকে খালি চোখে সমুদ্র সৈকতের দৃশ্য উপভোগ করা যায়। বান্দরবান শহর থেকে ৫২ কি.মি. দূরে পর্যটন কেন্দ্র নীলগিরির অবস্থান। যেখানে পাহাড় আর মেঘের মিতালী চলে দিনরাত। আপনিও ঘুরে আসতে পারেন ওই মেঘের দেশে। তবে যারা মেঘ ছুঁতে চান তারা জুন-জুলাই অর্থাৎ বর্ষা মৌসুমে ভ্রমণে যেতে ভুল করবেন না।

কারণ মেঘ তখন নিজেই আপনাকে ছুঁয়ে যাবে। তবে যারা রাত্রিযাপন করতে চান তারা অবশ্যই আগে থেকে কটেজ বুকিং এবং খাবার অর্ডার দিয়ে রাখবেন। নীলগিরির মেঘের সমুদ্রে রয়েছে কিছু দৃষ্টি নন্দন কটেজ। যেগুলোর নামকরণ করা হয়েছে গিরি মারমেট, মেঘদূত, নীলাঞ্জনা ইত্যাদি।

নীলগিরি যেতে হলে বান্দরবান হতে জিপ, চাঁদের গাড়ি ভাড়া করতে হবে। তবে প্রাইভেট গাড়ি থাকলে আরও ভালো। তবে প্রকৃত অ্যাডভেঞ্চার প্রিয়দের জন্য চাঁদের গাড়ির কোনো বিকল্প নেই। এ গাড়িগুলো পাহাড়ে চলাচলের জন্য বিশেষ ভাবে উপযোগী এবং স্থানীয় চালকরা পাহাড়ি আঁকাবাঁকা ও ঢালু পথে চলাচলে অভ্যস্ত। এ গাড়িগুলো ৪০০০-৬০০০ টাকার মধ্যে ভাড়ায় পাওয়া যায়।

আলীকদম-থানচি রাস্তা ধরে আপনাকে পৌঁছে দেবে পাহাড়ের চূড়ায় অবস্থিত নীলগিরিতে। তবে এখানে যাওয়ার পূর্বে সেনাবাহিনীর কাছ থেকে রাত্রি যাপনের অনুমতি নিতে হবে। রাত্রিযাপনের জন্য সেখানে বেশ কয়েকটি কটেজ রয়েছে। ভাড়া দৈনিক ৬০০০-১২০০০ টাকার মধ্যে। নীলগিরির আশে পাশে কোন পাড়া কিংবা হোটেল না থাকায় পর্যটকদের জন্য রাত্রি যাপনে কিছুটা অসুবিধার সম্মুখিন হতে হয়। তাই রাত্রি যাপন না করে বিকেলে বান্দরবান শহরে ফিরে বিভিন্ন হোটেলে থাকার সুব্যবস্থা রয়েছে। নীলগিরি রিসোর্ট বুকিং এর জন্য যোগাযোগ করতে পারেন: ০১৭১৬৫৯৮২৬৬, ০১৮১৯১৮৫০১৫ নাম্বারে।

নাফাখুম
বাংলার নায়াগ্রা হিসেবে খ্যাত নাফাখুম। মারমা ভাষায় ‘নাফা’ অর্থ মাছ আর ‘খুম’ অর্থ জলপ্রপাত। বান্দরবানের থানছি উপজেলা হতে গাইড নিয়ে ইঞ্জিন নৌকা রিজার্ভ করে যাওয়া যায় নাফাখুম। নাফাখুম যেতে হলে সময় স্বল্পতার কারণে একরাত কাটাতে হবে সেখানে। যেতে হবে ছবির মতো সুন্দর সাঙ্গু নদী বেয়ে। এই নদীটিই একমাত্র বাংলাদেশে উৎপত্তি। রেমাক্রি খালের পানি প্রবাহ এই নাফাখুম। সূর্যের আলোয় যেখানে তৈরি হয় রংধনুর বর্নিল আভা। পানির তীব্র স্রোত, স্বচ্ছ জলের নদীতে পাথরের তলদেশ, দু’পাশে দিগন্ত ছোঁয়া পাহাড় যেন প্রাচীর হয়ে আছে। দূর থেকে দেখা যায় রাজাপাথর (বিশালাকৃতির পাথর)।

মনে হবে সত্যিই রাজা হয়ে দাঁড়িয়ে আছে, পাথরের রাজ্যে। কখনও নদী-খাল কখনও ঝিরি কখনওবা পাহাড়-টিলা ডিঙ্গিয়ে থানছি থেকে প্রায় চার ঘণ্টা হেঁটে নাফাখুম জলপ্রপাতের দেখা পাওয়া যাবে।

সেখানে রেমাক্রিতে স্থানীয় আদিবাসীদের তৈরি কটেজ এ স্বল্প খরচে রাতযাপনের সুবিধা রয়েছে। তবে অবশ্যই মশা ও জোঁক প্রতিরোধক ক্রিম সঙ্গে নিবেন। সঙ্গে রাখতে হবে পর্যাপ্ত পরিমাণ খাবার স্যালাইন ও শুকনো খাবার। নাফাখুম যাওয়ার সহজ উপায় হচ্ছে বান্দরবান শহর হতে জিপ অথবা চাঁদের গাড়ি ভাড়া নিয়ে থানচি বাজার পর্যন্ত যেতে হবে। গাড়িগুলো ৪০০০-৬০০০ টাকার মধ্যে ভাড়ায় পাওয়া যায়। সেখান থেকে ইঞ্জিন চালিতা নৌকায় যেতে হবে রেমাক্রিতে। যেখানে এক রাতে অবস্থান করতে হবে।

রাত্রি যাপনের জন্য উন্নতমানের কোনো হোটেল না থাকলেও উপজাতিদের বিভিন্ন পাড়ায় রয়েছে খুব স্বল্প খরচে থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা। জনপ্রতি ১৫০-২০০ টাকার মধ্যে থাকার ব্যবস্থা। তাদের নিজস্ব তৈরি খাবার ও কটেজগুলোতে অবস্থান নিয়ে পরদিন ভোরেই যাত্রা করতে হবে নাফাখুমের উদ্দেশে। সেখানে একটি ত্রিপুরা পাড়া রয়েছে, যেখানে আপনি চাইলে জনপ্রতি ১৫০-২০০ টাকার মধ্যে রাত্রি যাপন করতে পারেন। নাফাখুম, অমিয়খুম, সাতভাই খুমসহ বিভিন্ন দুর্গম পর্যটন স্পটে যেতে অবশ্যই গাইডের সহযোগিতা প্রয়োজন। তাই এ বিষয়ে ট্যুর বান্দরবান এর ইনচার্জ ডাবলু বড়–য়ার সঙ্গে ০১৮৩৫০৯০৫০৩ এ নাম্বারে যোগাযোগ করে নিতে পারেন।

নীলাচল
বান্দরবান শহরের সবচেয়ে কাছে জনপ্রিয় পর্যটন স্পট হল নীলাচল। শহর থেকে ৫ কি.মি. দূরে সমুদ্র পৃষ্ট থেকে ২ হাজার ফুট উচ্চতায় অবস্থিত এটি। যেখান থেকে উপভোগ করা যায় মেঘমুক্ত আকাশে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের অপূর্ব দৃশ্য। যে দিকে দুচোখ যায় অবারিত সবুজ ও নীল আকাশের হাতছানি। যেন আকাশের নীল আচল ছড়িয়ে দিয়েছে সবুজের জমিনে। মুহূর্তেই উঠে মন প্রাণ ভরে উঠে মুগ্ধতায়। বিশেষ করে নীলাচলে সূর্যাস্তের দৃশ্য ভ্রমণ পিয়াসুদের মনে আনে স্বর্গীয় অনুভূতি। কথিত আছে নীলাচলের নির্মল বাতাস যেকোনো পুরনো রোগ নিরাময়ের জন্য টনিক হিসেবে কাজ করে। এছাড়াও নীলাচলে রয়েছে নীল রঙের ৫টি কটেজ যেগুলো ভাড়ায় পাওয়া যায়।

বগালেক
পাহাড়ের চূড়ায় প্রাকৃতিক ভাবে সৃষ্ট একটি প্রাকৃতিক জলাশয় ‘বগালেক’। যার পানির উচ্চতা শীত বর্ষায় কখনোই পরিবর্তন হয় না। এ লেক বান্দরবান জেলার রুমা উপজেলায় অবস্থিত। সমুদ্রপৃষ্ট থেকে প্রায় ১৫০০ ফুট উঁচুতে এ লেক সৃষ্টির পেছনে অনেক পুরোনো কল্প কাহিনী প্রচলিত রয়েছে। পাহাড়িরা এটিকে দেবতার লেক বলেও মনে করে। পাহাড়ের উপরে শান বাঁধানো বেষ্টনিতে প্রায় ১৫ একর জায়গা জুড়ে বগালেকের অবস্থান। তবে বর্ষা মৌসুমে বগালেক ভ্রমন কিছুটা কষ্টসাধ্য।

তাই শীত মৌসুমেই সেখানে যাওয়ার সময় বেছে নেওয়া ভালো। বগালেক ভ্রমণের সময় সাথে শুকনো খাবার, পানি, টর্চলাইট ও জরুরি ওষুধ সাথে রাখা জরুরি। পর্যটকদের রাতযাপনের সুবিধার্থে বগালেকে জেলা পরিষদের রেস্ট হাউজ এবং স্থানীয় ভাবে কিছু গেস্ট হাউজ রয়েছে। স্থানীয় অধিবাসীরা পর্যটকদের খাবার ও আবাসন সুবিধা দিয়ে থাকে।

রিজুক ঝর্ণা
প্রকৃতির অপূর্ব সৃষ্টি রুমা জল প্রপাত (রিজুক ঝর্না)। এ ঝর্নার স্বচ্ছ পানি গড়িয়ে মিশে যায় সরাসরি সাঙ্গু নদীতে। নদীপথে রুমা থেকে থানছি যেতে রুমা জলপ্রপাতের (রিজুক ঝর্ণা) এ দৃশ্য চোখে পড়বে। রিজুক, রেমাক্রি এবং তেছরী প্রপাত-এ তিন অপরূপা অরণ্য কন্যাকে দেখতে প্রতি বছর পাড়ি জমান হাজারও পর্যটক। রুমা থেকে ইঞ্জিন চালিত নৌকায় সহজেই জলপ্রপাত এবং ঝর্ণায় যাওয়া যায়। যেতে সময় লাগবে ২-৩ ঘণ্টা।

জাদিপাই ঝর্না
কেওক্রাডংয়ের খুব কাছের জনবসতি পাসিং পাড়া। প্রায় ৩ হাজার ২০০ ফুট উচ্চতার কেওক্রাডং এর পরেই ৩০৬৫ ফুট উচ্চতায় এ পাসিং। দেশের অন্য কোন পাহাড়ে এত উঁচুতে কোনো জনবসতি নেই। তাই এ পাড়াকে বিবেচনা করা হয় দেশের সবচেয়ে উঁচু গ্রাম হিসেবে। প্রায় সারা বছরই মেঘের ভেতরে থাকে এ পাড়ার লোকজন। পাসিং পাড়া থেকে নিচের দিকে নেমে গেলে জাদিপাই পাড়া। এখান থেকে ঘণ্টা খানেক নিচের দিকে নামলেই দেখা মিলবে অবর্ণনীয় সুন্দর জাদিপাই ঝর্নার। জাদিপাই ঝর্ণার কোথাও কোন কৃত্রিমতা স্পর্শ করেনি। ঝর্ণার শীতল জল যেখানে পড়ছে সেখানে তৈরি হয়েছে জলপ্রপাত। পাহাড়ের সবুজের আড়ালে এমন সৌন্দর্য থাকতে পারে তা নিজের চোখে না দেখলে বিশ্বাস করাই মুশকিল। যারা কেওক্রাডং যাবেন তারা অবশ্যই একবার হলেও জাদিপাই দেখে আসবেন। নয়তো থেকে যাবে ভ্রমণে অপূর্ণতা।

কেওক্রাডং, তাজিংডং বা বিজয় পর্বতশৃঙ্গ
এটি দেশের সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ। সমুদ্র পৃষ্ট থেকে এটির উচ্চতা ৪ হাজার ৫শত ফুট। যার পাশাপাশি দ্বিতীয় সর্বোচ্চ চূড়া কেওক্রাডং পাহাড়ের উচ্চতা প্রায় ৪ হাজার ৩৩০ ফুট। দুটি পর্বত শৃঙ্গই রুমা উপজেলায় অবস্থিত। বান্দরবান সদর থেকে যার দূরত্ব প্রায় ৭০ কি.মি এবং রুমা হতে তাজিংডং (বিজয়) চূড়ার দূরত্ব প্রায় ২৫ কি.মি.। এছাড়া দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ কেওক্রাডং পাহাড়ের দূরত্ব রুমা উপজেলা থেকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার। বগালেক হতে ১৫ কি. মি. পায়ে হেটেও কেওক্রাডং এ যাওয়া যায়। তবে শুষ্ক মৌসুমে জিপে কেওক্রাডং চূড়ার কাছাকাছি যাওয়া সম্ভব। সেখানে রয়েছে পার্বত্য জেলা পরিষদের তত্ত্বাবধানে রেস্ট হাউজ এবং স্থানীয়দের কটেজ এ রাত্রিযাপনের সুবিধা।

সবশেষে কিছু বিষয় ভ্রমণকারীদের অবশ্যই মেনে চলা জরুরি। বান্দরবানের সবুজে ঘেরা পাহাড়, নদী, হ্রদ, ঝর্ণার নেস্বর্গিক সৌন্দর্যরে টানে সেখানে সারা বছর, বিশেষ করে বর্ষা ও শীত মৌসুমে দেশি-বিদেশি পর্যটকদের ভিড় লেগেই থাকে। পাহাড়ি এলাকা, ঝুঁকিপূর্ণ রাস্তা, নদী, ঝর্না। সেখানে অবশ্যই সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। যাতে সামান্য অবহেলায় পুরো ভ্রমণের আনন্দ মাটিতে মিশে না যায়। তাই বান্দরবানে আসার আগেই কিছু জরুরি মোবাইল/ফোন নাম্বার সংরক্ষণ করুন এবং দুর্গম পর্যটন স্পটগুলোতে অবশ্যই গাইড সঙ্গে নিতে ভুল করবেন না।

পর্যটকদের জন্য জরুরি এবং প্রয়োজনীয় কিছু ফোন নাম্বার: ওসি, বান্দরবান সদর থানা- ০১৭৩০-৩৩৬১৬৬,০৩৬১-৬২২৩৩, ওসি, রুমা থানা - ০১৮২০-৪২৫৬৪৩, ওসি, থানছি থানা - ০১৫৫৭-২৫৬৯৫৮, ওসি, লামা থানা - ০১৮২০-৪২৫৬৪৪, বান্দরবান সদর হাসপাতাল - ০৩৬১-৬২৫৪৪, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স- ০৩৬১-৬২২২২, বান্দরবান প্রেসক্লাব -০৩৬১-৬২৫৪৯।

বাংলাদেশ সময়: ২১৪৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৪, ২০১৫
পিসি/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।