সন্ধ্যায় হালকা বৃষ্টির পর মৃদু হিমেল হাওয়ায় সবাই তখন মাতোয়ারা। হঠাৎ গলা ছেড়ে গান ধরলেন ট্যুরিস্ট চ্যানেল বাংলাদেশ’র সিইও ইকবাল হোসেন।
আর ঠিক তখনই একসঙ্গে হুক্কাহুয়া করে উঠল অনেকগুলো শেয়াল। মনে হলো, সংখ্যায় কয়েক ডজন হবে। কারণ, বাঘের টিলাটির চারদিক থেকেই হুক্কাহুয়া শব্দ আসছিল। বারবিকিউ পার্টির গান যে তোড়ে চলছিল, সমানতালে চলছিল শেয়ালের ডাকও। কয়েক মুহূর্ত চলল মানুষ ও শেয়ালের মধ্যে অলিখিত প্রতিযোগিতা। অবশ্য ইকবাল হোসেনের দমের কাছে হার মানল শেয়ালের দল।
হার মানলেও শেয়ালের দলটি কিন্তু স্থান ত্যাগ করল না। মাত্র কয়েক ফুট দূরে দল বেঁধে ঘুর ঘুর করতে করতে থাকে। জনা পঞ্চাশেকের বারবিকিউ পার্টিকে তারা কোনো পরোয়াই যেনো করল না। অবস্থা এমন, যেনো মানুষের মধ্যে এসে ঢুকে পড়বে যেকোনো সময়।
এক্সেলসিয়র সিলেট হোটেল অ্যান্ড রিসোর্টে বন্য শেয়াল দলের এমন আচরণ ভিন্ন রকম অনুভূতি ছড়িয়ে যায় সবার ভেতরে। অনেকেই বলতে থাকেন, একা হলে হয়তো ভয় পেয়ে যেতাম। অনেক লোক থাকায় দারুণ উপভোগ করলাম।
কেউ কেউতো বলেই বসলেন, জীবনে কখনও দলবেঁধে এমন শেয়ালের ডাক শুনতে পাইনি। শুধু বই পুস্তকে পড়েছি। তবে গ্রামে বড় হওয়া নাসির উদ্দিন এমন পরিবেশের সঙ্গে পরিচিত বলে জানালেন। তবে তাও নাকি তার ছোটবেলায় অর্থাৎ পঁচিশ ত্রিশ বছর আগের কথা।
রাত ১০টায় এই মুগ্ধতা যেনো সবার মনে দোলা দিয়ে যায়। খাওয়া শেষ হলেও অনেকেই উঠছিলেন না। চারদিকে তখন শ্মশানের নীরবতা। এই নীরবতাকে চুটিয়ে উপভোগ করলেন মধ্যরাত পর্যন্ত।
বাংলাদেশের ষড়ঋতু যেমন জানান দিয়ে আসে। এক্সেলসিয়র সিলেট হোটেল অ্যান্ড রিসোর্ট ঠিক তেমনি মুহূর্তে মুহূর্তে তার রূপ বদলায়। ঠিক যেভাবে আলোকসজ্জার লাল-নীল বাতি ক্ষণে ক্ষণে রূপ বদল করে।
সকালে যখন আসি তখন দেখি, কতোগুলো পাখি কিচির-মিচির শব্দ করে একডাল থেকে আরেক ডালে নেচে বেড়াচ্ছে। একটু বেলা হলে দেখা মিলবে বন্য হরিণ। দুপুরের দিকে দেখলাম, কাঠফাটা রোদ থেকে বাঁচতে গাছের ডালে বিশ্রাম নিচ্ছে কয়েক জোড়া ঘুঘু, শালিক আর নাম জানা কয়েক জাতের পাখি। কোনোটি আবার মাটিতে নেমে আহার সংগ্রহে মগ্ন।
দর্শনার্থীদের সঙ্গেও যেনো তাদের দীর্ঘদিনের মিতালী। কে কোন দিক দিয়ে যাচ্ছে, পাখিগুলোর যেনো সেদিকে কোনোই ভ্রুক্ষেপ নেই। ঠিক যেনো পোষা প্রাণীর মতো। আর হবেই না কেনো, বিশাল বিশাল বৃক্ষরাজিতে ঠাসা এক্সেলসিয়র সিলেট হোটেল অ্যান্ড রিসোর্ট পাখিদের অভয়ারণ্য হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে।
বিশাল এই এলাকাটিকে কেউ যদি উদ্যান বলেন তাহলেও কিন্তু বেশি বলা হবে না। হয়তো দেখা যাবে, অনেক উদ্যান থেকেও সমৃদ্ধ এক্সেলসিয়র। তিনটি টিলা নিয়ে স্থাপিত এক্সেলসিয়রের মোট আয়তন সতের একর। এখানে ৪শ প্রজাতির প্রায় ৫০ হাজার গাছ রয়েছে। এরমধ্যে ঔষধি গাছই রয়েছে প্রায় শতাধিক প্রজাতির।
গ্রামীণ পরিমণ্ডলের ছায়া সুনিবিড় পরিবেশ। দিগন্তজোড়া এ সবুজের মাঝে রয়েছে যেনো অরণ্যের সজীবতা। বিশিষ্ট শিল্পপতি ও যুক্তরাজ্য প্রবাসী সাঈদ চৌধুরী এ রিসোর্টের উদ্যোক্তা। নিশুতি রাতে রিসোর্টের পরিবেশ হয়ে ওঠে আরও মনোরম। নয়নাভিরাম সৌন্দর্য মুগ্ধ করে অতিথিদের। ঘুরে বেড়ানো, প্রশান্তি আর সজীবতার মধ্যে বুকভরে নিঃশ্বাস নিতে নিত্যদিনই দেশের নানা প্রান্ত থেকে এখানে ছুটে আসছেন অনেকেই।
কী রয়েছে না বলে কী নেই, এমন প্রশ্নই এখানে বেশি যুতসই। রয়েছে সুইমিং পুল, একাধিক খেলার মাঠ, বেশ কয়েকটি পুকুর। যেখানে বোটে চড়ে ঘুরে বেড়ানোর পাশাপাশি, ছিপ দিয়ে মাছ ধরার রয়েছে চমৎকার সব আয়োজন। ঘুরে বেড়ানোর জন্য চমৎকার জায়গাটি। রাস্তা এবং পায়ে হাঁটা পথগুলোর দু’ধারে বাহারি ফুল ও ফলের গাছ আপনাকে মনকে মুগ্ধতার আবেশে জুড়িয়ে দিবে।
এক্সেলসিয়রকে ঢেলে সাজানো শুরু হয়েছে। আগামী দু’বছর এখানে প্রায় দেড়শো কোটি টাকার মতো বিনিয়োগের পরিকল্পনা নিয়েছেন। এ উদ্যোগ বাস্তবায়িত হলে এটি শুধু বাংলাদেশই নয়, গোটা দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে অন্যতম আকর্ষণীয় ও নান্দনিক রিসোর্টের চেহারা পাবে, এমন আশাবাদ ব্যক্ত করেন উদ্যোক্তা সাঈদ চৌধুরী।
সিলেট নগরীর উপকণ্ঠে ছায়া সুনিবিড় পরিবেশে পাহাড়ের ভাঁজে গড়ে ওঠা এক্সেলসিয়র সিলেট হোটেল অ্যান্ড রিসোর্ট, সিলেট জেলা সদর থেকে সাড়ে নয় কিলোমিটার আর সিলেট আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর থেকে মাত্র ২৫ কিলোমিটার দূরে দূরে অবস্থিত। রাত্রি যাপনের আবাসের পাশাপাশি, শিশু পার্ক, অডিটোরিয়াম, মিনি চিড়িয়াখানা, খেলাধুলা, শরীর চর্চার চমৎকার আয়োজন এবং বিয়ে-জন্মদিনসহ সামাজিক অনুষ্ঠান আয়োজনের অনন্য ব্যবস্থা।
বাংলাদেশ সময়: ০৮৩২ ঘণ্টা, মে ২০, ২০১৭
এসআই/এসএনএস