বলার ভঙ্গিতে মনে হলো, অটোচালক যেন রের্কড বাজাচ্ছেন। চালকের কথা শুনে খান মাহমুদের মাথায় বজ্রপাত! হিন্দিও না পারলে যোগাযোগ হবে কীভাবে? এরপর অটোচালককে সিএমসি হাসপাতাল, অল্প-স্বল্প হিন্দি আর আকার-ইঙ্গিতে হোটেল বা লজ বোঝাতে সক্ষম হলে সিএমসি হাসপাতালের সামনে নামিয়ে দেন অটোচালক।
ভেলোরে সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধকত হলো ভাষা। স্থানীয়রা তামিল ছাড়া অন্য কোনো ভাষা তেমন একটা বোঝেন না। এমনকি ভারতের রাষ্ট্রভাষা হিন্দিও খুব কম লোকে বোঝেন। যারা বোঝেন তাতে সামান্য যোগাযোগও কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ে। তৈরি হয় ভুলবোঝাবুঝি। ফলে খান মাহমুদ ও আমার মতো ‘থোড়া হিন্দি’ ও ‘থোড়া ইংলিশ’ জানা বাংলাদেশিসহ অন্যান্য বাঙালিদের ভেলোরে গিয়ে বিভ্রান্তিতে পড়তে হয়।
ভেলোরে আমার ছয় দিনের দিনযাপন নানা অম্লমধুর ভাষা জটিলতার অম্লমধুর অভিজ্ঞতায় পূর্ণ। হিন্দি মুভি ও গানের বদৌলতে ভাষাটা যতটুকু শেখা তাতে তামিলদের হিন্দি জ্ঞানের সঙ্গে ভাব বিনিময়ে তিনটা আলু-পরোটার জায়গায় ছয় আলু-পরোটা, রুই মাছের বদলে কোরাল মাছই মিলেগা!
একদিনের অভিজ্ঞতা; রাজেশ্বরী নামে হোটেলের রুম ক্লিনার আসে আমার রুমটি পরিষ্কার করতে। তাকে ‘বাদ মে’ বললেও রাজেশ্বরী রুমে ঢুকে ঝাড়ু দেওয়া শুরু করে। পরে তাকে ধরে জিজ্ঞাসা করলে যা বলে তার অর্থ এমন- ইংরেজি দু’একটি শব্দ বুঝলেও হিন্দি সে একবারেই বোঝে না।
ভেলোরের হোটেল রুমে বসে ভিন্ন ভাষার টিভি চ্যানেল দেখতে চাইলেও পারবেন না; গোটা তিনেক হিন্দি চ্যানেল বাদে সব চ্যানেলেই তামিল ভাষার। কয়েকদিন ইললে, আম্মা, আন্না; এসব শুনে হয় বাধ্য হয়ে তামিল ভাষা শিখবেন না হয় রিমোট বন্ধ করে গালে হাত দিয়ে বসে থাকবেন।
ভেলোরে মনপছন্দ আমিষ হোটেল অনেক কষ্টে খুঁজে বের করতে হয়। তাও হিন্দি গ্যারাকলে অর্ডার নিয়েও বিশ্রি পরিস্থিতি তৈরি হয়। না বোঝে ইংরেজি, না বোঝে হিন্দি। ফলে ঘাড় হেলিয়ে দুলিয়ে অর্ডারের কাজ শেষ করতে হয়।
সবচেয়ে বিপত্তি এক জায়গা থেকে আরেক জায়গা যেতে। অটো ধরতে গেলেও অনেক সময় লেগে যায়। বেশিরভাগ অটো ড্রাইভার একটুও হিন্দি বোঝে না। হিন্দি বোঝা কাউকে খুঁজে বের করে তাকে দিয়ে একজন ড্রাইভার ডেকে কন্টাক্ট করে যাত্রী ওঠায় তারা।
সিএমসির সামনে বানারসের একটি খাবারের দোকানে খাবার কেনার সময় কথা হয় চট্টগ্রাম থেকে ভেলোরে যাওয়া তৌসিফ তালুকদারের সঙ্গে। মায়ের কিডনির চিকিৎসা করাতে এসেছেন তিনি। তৌসিফ জানান, হিন্দি বুঝলেও একবারেই বলতে পারেন না। তবে এখানে এসে কিছু হিন্দি বলার চেষ্টা করছেন। কিন্তু তামিলদের বোঝাতে পারছেন না। এ কারণে পদে পদে সমস্যায় পড়ছেন বলে জানান তিনি।
তবে প্রফেশনালিজমের কারণে তামিলরা হিন্দি না বুঝলেও দীর্ঘ সময় ধরে বক্তার মনের ভাব বোঝার চেষ্টা করেন। কোনোভাবেই বুঝতে না পারলে যে কিছুটা হিন্দি বোঝে তার সঙ্গে যোগাযোগ করার অনুরোধ করেন। এসব কিছুর পরও ভেলোরে চিকিৎসা করাতে গেলে হিন্দি ভাষা কিছুটা জেনে যাওয়াই ভালো।
ভেলোরে নিয়মিত রোগী নিয়ে আসা-যাওয়া করেন মুর্শিদাবাদের বাঙালি অরুণ দেবনাথ। তিনি ১৫ বছর এ অঞ্চলে চিকিৎসার কারণে যাতায়াত করেন। আজ থেকে কয়েক বছর আগে এ অঞ্চলের মানুষ হিন্দি একবারেই বুঝতো না। দিনে দিনে হাসপাতাল ও ট্যুরিজমের কারণে নিজেদের হিন্দি ভাষায় কথা বলা শুরু করেছেন তামিলরা।
বাংলাদেশ সময়: ১৩২৪ ঘণ্টা, আগস্ট ১০, ২০১৭
এমসি/এমজেএফ