ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ট্রাভেলার্স নোটবুক

মোবাইল স্ক্রিনে ডুবে থাকেন চীনারা!

সাব্বির আহমেদ, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮৫১ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১০, ২০১৮
মোবাইল স্ক্রিনে ডুবে থাকেন চীনারা! স্মার্টফোনের স্ক্রিন থেকে চোখ যেন সরেই না চীনাদের। ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

পূর্ব চীনের ওয়েনজো সিটি থেকে: আগেই জানা ছিলো, চীনে ফেসবুক বন্ধ। কিন্তু বিমানবন্দরে নেমেই চোখে পড়ে, মোবাইল ফোন ঘিরে চীনের মানুষজনের অসম্ভব ব্যস্ততা! দেখলে মনে হবে, মোবাইল ফোনে দু'চোখ আটকে রাখার জাতি যেন চীনারা! বিমানবন্দর, রেলস্টেশন, বাসস্টপ, রাস্তা বা অফিস যেখানেই হোক, স্মার্টফোনের স্ক্রিন থেকে তাদের চোখ যেন সরেই না!

বুধবার (১০ জানুয়ারি) চীন ভ্রমণের পঞ্চম দিন। দক্ষিণ থেকে উত্তর এবং উত্তর থেকে পূর্ব চীন ঘুরে যেখানেই দেখেছি, মোবাইল স্ক্রিনে ডুবে থাকেন চীনারা।

কিন্তু এত মোবাইলের পোকা কেন চীন? তরুণ থেকে বুড়ো সবাই যেন মোবাইলের স্ক্রিনের মধ্যে আলাদা এক জগত তৈরি করে নিয়েছেন বিশ্বের এক-পঞ্চমাংশ জনসংখ্যার দেশটি।

এমনিতে ইন্টারনেটের ওপর চীনা কর্তৃপক্ষের আরোপিত কঠোর সেন্সরশিপ রয়েছে। সরকারিভাবে ভিনদেশি অ্যাপ ব্যবহার বন্ধ। এভাবেই নিজেদের অ্যাপগুলোর ব্যবহার বাড়িয়েছে চীনারা।

বিদেশি সামাজিক যোগাযোগ সাইট যেমন- ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম এবং টুইটার বন্ধ চীনে। এমনকি গুগলের মতো জনপ্রিয় সার্চ ইঞ্জিনও বন্ধ। বহু বিদেশি সংবাদমাধ্যম দেখা যায় না এ দেশে বসে। এসব বন্ধ রাখলেও একই রকম অ্যাপ সুবিধা চালু রয়েছে। আর এসব অ্যাপ নিয়েই দিন-রাত ব্যস্ত চীনারা।

এ বিষয়ে জানার আগ্রহ থেকে মানুষের হাতে হাতে থাকা মোবাইল ‌ফোনে চোখ রাখতে শুরু ক‌রি। একদিনের পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, চীনা মোবাইল ফোনে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হচ্ছে, হোয়াটসঅ্যাপের মতো উইচ্যাট। এরপর রয়েছে  কিউ কিউ এবং ওয়েবো। ওয়েবো হলো টুইটারের মতো মাইক্রোব্লগিং সাইট। আর উইচ্যাট তাৎক্ষণিক বার্তা পাঠানোর মেসেজিং অ্যাপ।

আরও রয়েছে বাইদু ও  তিয়েবা। এ দু’টি হলো জনপ্রিয় অলোচনা ও বিতর্কের ফোরাম, অনেকটা ব্লগ ও সার্চ ইঞ্জিনের মতো। এই ৫টি অ্যাপ নিয়ে দিনরাত পড়ে থাকেন চীনের কোটি কোটি মানুষ।

এ অ্যাপগুলো কেনইবা ব্যবহার করবেন না চীনারা? উইচ্যাট দিয়ে শুধু চ্যাট নয়, লেনদেনও শুরু হয়েছে। রাস্তায় রাস্তায় বাইসাইকেল পাওয়া যায় উইচ্যাটের ই-ওয়ালেট অপশনে। গাড়ি বা ট্যাক্সি পাওয়া যায় দিদি নামে আরেকটি অ্যাপে।

 মোবাইল ফোনে দু'চোখ আটকে রাখার জাতি যেন চীনারা! ছবি: বাংলানিউজটোয়ান্টিফোর.কম

চীনের একটি সংবাদ মাধ্যমের জরিপ বলছে, চীনের ৬০ শতাংশ উইচ্যাট ব্যবহারকারী প্রতিদিন ১০ বারের বেশি অ্যাপ্লিকেশনটি খোলেন। আর ২১ শতাংশ ব্যবহারকারী প্রতিদিন ৫০ বার এটি খুলছেন। ১৭ শতাংশ ব্যবহারকারী প্রতিদিন ৪ ঘণ্টার বেশি সময় অ্যাপটিতে ব্যয় করেন। একই প্রতিবেদনের তথ্য মতে, বর্তমানে দেশটির প্রায় ৮৬ কোটি মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহার করেন।  

চীনা ইন্টারনেট নেটওয়ার্ক ইনফরমেশন সেন্টারের (সিএনএনআইসি) তথ্য বলছে, ২০১৭ সালে চীনের ৫০ কোটি মানুষ বিল পরিশোধ, ডাক্তার দেখানো ও লেখাপড়ার কাজ সেরেছেন অনলাইনে।

নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা ইন্টারনেট হলেও চীন বিশ্বে নিজস্ব অ্যাপ, সফটওয়্যার ও ইন্টারনেট বিকশিত করেছে। আইটি ক্ষেত্রে তাদের সাফল্য প্রবৃদ্ধির আরও জানতে বুধবার (১০ জানুয়ারি) রাতে ওয়েনজু থেকে পাড়ি দেবো হাজার কিলোমটারেরও বেশি দূরে অবস্থিত সেনজেন সিটিতে। এ শহরকে চীনারা ডাকে আইটি পণ্যের সিটি হিসেবে।

পূর্ব প্রকাশিত লেখার লিংক: 

অদেখা থাকলো সাংহাইয়ের আলো আর গ‌তির রহস্য

চীনাদের অর্ধসেদ্ধ খাবারের স্বাদ

কনফু‌সিয়া‌সের ছু ফু শহরে

শত ব্যস্ততায় আতিথেয়তায় অনন্য চীনারা

ঢাকার বিমানবন্দ‌র ছা‌ড়ি‌য়ে চী‌নের রেল স্টেশন!

সুজিয়ানায় সাইবেরীয় শীতে তুষারখেলা  

বুলেট ট্রেনে ভেসে সাংহাই ছাড়িয়ে

বন্দরে বা‌ণি‌জ্যে ব্যস্ত, শান্ত অপ্সরী নিং‌বো সি‌টি

বাংলাদেশ সময়: ১৪৫০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১০, ২০১৮
এসএ/এনএইচটি/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।