ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ট্রাভেলার্স নোটবুক

ঘুরে আসুন সুন্দরবনের শর্মিলা ও বাদাবন ইকো-কটেজ

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২১৯ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৩১, ২০১৮
ঘুরে আসুন সুন্দরবনের শর্মিলা ও বাদাবন ইকো-কটেজ সুন্দরবনে এমন মনোরম পরিবেশ রাত্রিযাপনের সুযোগ হাতছানি দিয়ে ডাকছে ভ্রমণপিপাসুদের। ছবি: বাংলানিউজ

সুন্দরবন থেকে ফিরে: ঘরে বসে সুন্দরবনের পাক-পাখালির ডাক। পায়ে হেঁটে সুন্দরবনের অপার সৌন্দর্য উপভোগ। নিরাপত্তার সঙ্গে নিশিযাপন। মানসম্মত খাবার গ্রহণ। স্বল্প খরচে লোকালয় থেকে খুব কাছে ভ্রমণ করেই বিশ্বের সর্ববৃহৎ ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট সুন্দরবন উপভোগের সুযোগ । 

পর্যটকদের জন্য সুন্দরবন ভ্রমণের এমন সুযোগ নিয়ে ২০১৭ সালে চাঁদপাঁই ফরেস্ট রেঞ্জের আওতায়  কৈলাশগঞ্জ ও দক্ষিণ চিলায় কমিউনিটি ইকো-ট্যুরিজমের অংশ হিসেবে দু’টি ইকো-কটেজ স্থাপন করা হয়। এ দু’টি কটেজ ভ্রমণপিপাসু পর্যটকদের জন্য চালু করা হয়েছে চলতি জানুয়ারি থেকে।

চাঁদপাঁই সহ-ব্যবস্থাপনা সংগঠনের সার্বিক তত্ত্বাবধানে সুন্দরবন শর্মিলা ইকো কটেজ ও বাদাবন ইকো-কটেজ দু’টি স্থাপনে সহায়তা প্রদান করে ইউএসআইডি’র ক্রেল প্রকল্প।  

ক্রেল প্রকল্প খুলনার সমন্বয়কারী-এনআরএম অ্যান্ড লাইভলিহুড (পূর্ব) মো. তৌহিদুর রহমান বাংলানিউজকে জানান, সুন্দরবন সংরক্ষণে ও বনজীবীদের জীবিকায়নে বিশেষ অবদান রাখতে এই কমিউনিটি ইকো-ট্যুরিজম তৈরি করা হয়েছে। কমিউনিটি ইকো-ট্যুরিজম কার্যক্রমে সম্পৃক্ত বননির্ভর পরিবার এবং প্রকৃতিপ্রেমী পর্যটকরা বনসংরক্ষণে যত্নবান থাকেন।

তিনি বলেন, ইকো-কটেজ যেমন সুন্দরবন সুরক্ষায় অবদান রাখবে, তেমনি বনজীবীদের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নেও অবদান রাখবে। এই কটেজের আয়ের ৫ শতাংশ বনজীবীদের উন্নয়নে ব্যয় হবে এবং একইসঙ্গে ১০-২০টি পরিবারেরও জীবিকায়ন হতে পারে।  

সুন্দরবনে এমন পরিবেশ প্রাতরাশের সুযোগ হাতছানি দিয়ে ডাকছে ভ্রমণপিপাসুদের।  ছবি: বাংলানিউজ
তৌহিদুর রহমান বলেন, এ কটেজে এলে বনের আশপাশের সহজ-সরল মানুষের জীবন-যাত্রা সম্পর্কে জানতে পারবেন, তাদের নিজস্ব সংস্কৃতি, বিশ্বাস, ধর্ম, প্রথা জানতে পারবেন, কিভাবে সহ-ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে তারা বনরক্ষায় কাজ করছে, তা জানতে পারবেন। রাত্রে তাদের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপভোগ করতে পারবেন।  

বাদাবন ইকো-কটেজ ঘুরে দেখা যায়, গোলপাতা, কাঠ দিয়ে তৈরি মাটির ঘর। সামনের পুকুরের ওপর বসার জন্য গোল ঘর। কিন্তু বাথরুম আধুনিক হাই-কমোড, লো-কমোড, দু-রকমই আছে। বারান্দায় রয়েছে সংরক্ষিত মাটিতে বাঘের পায়ের চিহ্ন। আছে প্রাকৃতিক পরিবেশে খাওয়ার ব্যবস্থা।  

সুন্দরবন শর্মিলা ইকো-কটেজ ঘুরে দেখা যায়, ইকো-কটেজের সামনে বড় পুকুর। পুকুরের ওপর বসার জন্য গোল ঘর, খড়ের গম্বুজ। গোলপাতার ছাউনি দেওয়া মুলিবাঁশের ঘর। নাস্তার সঙ্গে সুন্দরবনের নানা পাখির ডাকে সময় কাটানোর সুযোগ এখানে। সুন্দরবনের লোক গান, পালা গান স্থানীয় শিল্পীদের কাছ থেকে শোনার সুযোগ থাকছে সুন্দরবন শর্মিলা ইকো-কটেজে।  

সুন্দরবনে এমন মনোরম পরিবেশ রাত্রিযাপনের সুযোগ হাতছানি দিয়ে ডাকছে ভ্রমণপিপাসুদের।  ছবি: বাংলানিউজ
ইকো-কটেজটির পরিচালক শর্মিলা সরকার বলেন, এখানে যে কোনো মৌসুমে সুন্দরবন দেখার সুবিধা রয়েছে। দুই রুম-বিশিষ্ট ইকো-কটেজ, দু’টি ফ্যামিলি (৫+৫=১০ জন) একসঙ্গে সহজেই থাকতে পারবেন। খুব শিগগির তাঁবুর মাধ্যমে অধিক সংখ্যক সাহসী ভ্রমণকারীদের থাকার ব্যবস্থা করা হবে। সুন্দরবনের উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে সেলাই-সুতার কাজ, বাঘ,হরিণ ও কুমিরের নিদর্শন সে সকল কাজে ফুটে উঠেছে, সঙ্গে করে নিয়ে যেতে পারবেন প্রিয়জনের জন্য।

বাদাবন ইকো-কটেজের পরিচালক মো. লিটন জমাদ্দার বলেন, পুকুর ও ঘেরে নিজে বা অন্যের সহায়তায় মাছ মেরে তাজা মাছ খাওয়ার সুযোগ রয়েছে। এখানে রয়েছে দেশি গরুর খাঁটি দুধ, দেশি মুরগি ও হাঁস, পাশের ক্ষেতের বিষমুক্ত সবজি, গাছের ফল, সুন্দরবনের খাঁটি মধু। লোক গান, পালা গান স্থানীয় শিল্পীদের কাছ থেকে শোনার সুযোগ থাকছে সুন্দরবন শর্মিলা ইকো-কটেজে।  ছবি: বাংলানিউজইকো-কটেজে ভাবে যাবেন
সুন্দরবন শর্মিলা ইকো-কটেজ: খুলনা থেকে বাসে মোংলায় যেতে হবে। মোংলা গিয়ে পশুর নদী পার হতে হবে (অথবা ফরেস্টের অনুমতি নিয়ে নির্দিষ্ট ফি দিয়ে সরাসরি ইকো-কটেজে যাওয়া যাবে)। পশুর নদী পার হলেই বানিশান্তা/কাটাখালি ঘাট, ঘাট থেকে কৈলাশগঞ্জ ইকো-কটেজে ইজিবাইক বা ভ্যানে আধঘণ্টার পথ। সরাসরি ব্যক্তিগত/ভাড়ার গাড়ি নিয়ে (নির্ভরযোগ্য ভাড়ার গাড়ি নিয়ে যাওয়া যেতে পারে, নাম্বার: ০১৮২৪৪৪৪৮৮৮) যেতে পারেন খুলনা-পানখালি-চালনা-পোদ্দারগঞ্জ হয়ে কৈলাশগঞ্জ ইকো-কটেজের সামনে।  
মোংলা হতে বাদাবন ইকো-কটেজ: খুলনা থেকে বাসে মোংলায় যেতে হবে। সেখান থেকে ট্রলারে মোংলা নদী পার হতে হবে। মোংলা নদী পার হলেই ছোট মোংলা শহর বা বাজার, সেখান থেকে মোটরসাইকেল/ইজি বাইক বা ভ্যানে আধঘণ্টার পথ।  

বাংলাদেশ সময়: ১৭৫৮ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৩১, ২০১৮
এমআরএম/এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।