ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বছরজুড়ে দেশ ঘুরে

হ্রদে ছয় ঘণ্টা রোমাঞ্চকর নৌ ভ্রমণ, ১৪০ টাকায়

সেরাজুল ইসলাম সিরাজ, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১৫৯ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৭, ২০১৬
হ্রদে ছয় ঘণ্টা রোমাঞ্চকর নৌ ভ্রমণ, ১৪০ টাকায় ছবি: ডি এইচ বাদল

জুরাছড়ি (রাঙ্গামাটি) থেকে: চারদিকে বিশাল বিশাল পাহাড়ের সারি। তার মাঝে চার হাজার দুই’শ পঞ্চাশ বর্গ কিলোমিটার জুড়ে বিশাল হ্রদ।

আর হ্রদের মাঝে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে ছোট ছোট দ্বীপ।

স্বচ্ছ জলের উপর ছয় ঘণ্টার নৌ বিহার মাত্র ১৪০ টাকাতে মিলবে রাঙ্গামাটিতে। বিশ্বাস করুন আর না-ই করুন এটাই বাস্তবতা। উপভোগ করতে হলে আজই চলে আসুন পার্বত্য জেলা রাঙ্গামাটিতে। সারা বছরেই থাকে এর লাবন্য। কিন্তু বর্ষা মৌসুমে হচ্ছে ভরা যৌবনা।

এই বিহারের নৌকা পাওয়া যাবে সদরের রিজার্ভ বাজার ঘাট থেকে। প্রতিদিন সকাল সাড়ে সাতটায় ছেড়ে যায় হ্রদের বুকে এফোড় ওফোড় করতে। স্থানীয়দের কাছে ঘরে ফেরার অতীব প্রয়োজনীয় মাধ্যম হলেও সত্যিকারের অপরূপ নৌ পথ। যা আপনার মনকে পুলকিত করতে সক্ষম হবে।

নৌকা ঘাটে বিশাল বিশাল পাহাড় আপনাকে স্বাগত জানাবে। এরপর যত এগিয়ে চলবেন মনে হবে ঠিক যেনো লাইন হয়ে দাঁড়িয়ে আপনাকে অভ্যর্থনা জানাচ্ছে সবুজে আচ্ছাদিত পাহাড়গুলো। কখনও কখনও নাকে ভেসে আসবে বুনো ফুলের মাতাল করা গন্ধ।

ঘাট থেকে বেরিয়ে মিনিট বিশেকের মাথায় দেখা মিলবে শিমুলতলী। তারপর মাস্টারপাড়া। যে গ্রামে নাকি সব বাড়িতে কেউ না কেউ স্কুলে শিক্ষকতা করেন। যদিও নৌকা থেকে কোন ঘরবাড়ির নাম নিশানা পর‌্যন্ত দেখার সুযোগ নেই। দেখতে মনে হবে কোন নিবীড় ঘন বনের পাশ দিয়ে যাচ্ছেন আপনি।

এরপরেই শুভলং ঝরনা। তিন’শ ফুট উচু থেকে পানি আছড়ে পড়ছে হ্রদে। ঝরনার পরে পড়বে শুভলং বাজার। এখান থেকে কর্নফুলী চ্যানেল বামে বাঁক নিয়ে চলে গেছে বরকল উপজেলা ‍মুখে। আরেকটি চ্যানেল (জুরাছড়ি) চলে গেছে জুরাছড়ি সদরের দিকে।

এই জায়গাটির নৈস্বর্গিক ‍রূপ আপনাকে জাগতিক চিন্তা ভাবনা থেকে অন্য জগতে টেনে নিয়ে যাবে। এখানে হ্রদের পানিতে পাবেন ছোট ছোট দ্বীপের দেখা। মোহনীয় তার রূপ। এখানে দেখতে পাবেন পাহাড়ীদের মাছ ধরার অভিনব কায়দা কানুন ও জীবন চিত্র।

এগিয়ে গেলে হাতের বামে পড়বে নতুন বাজার, ক্লিনিক ঘাট, বাগান ঘাট, ভিজাক্যাচিং, খিয়াংঘাটা, চেঙ্গি ছড়ি, রাস্তার মাথা, বন্দুকছড়ি, রবাটতলী, মধ্যভিটা, জুরাছড়ি উপজেলা ঘাট। সবশেষে পাবেন থানা ঘাট।

যেখানে গিয়ে আপনি নেমে যেতে পারবেন সকাল সাড়ে ১০টার মধ্যে। প্রায় তিন ঘণ্টা সময় পাবেন রাঙ্গামাটির মুল ভূখন্ড থেকে বিচ্ছিন্ন জুরাছড়ি উপজেলা সদরকে ঘুরে দেখার। পাহাড়ের ‍উপর অবস্থিত ছোট্ট এই শহরটিও অনেক মোহনীয়। এর দক্ষিণে কয়েক কিলোমিটারের বিশাল জলরাশির ওপারে রয়েছে আমতলী পাহাড়।
উপজেলা সদরের দক্ষিণ এই কূলটি অনেকটা সী বীচের মতো দেখতে। বালি নেই তবে পানির ঢেউ আছড়ে পড়ছে পাড়ে। আর শীতল হাওয়া প্রাণ জুড়িয়ে দিয়ে যাবে কয়েক মুহূর্তে।

দুপুর দেড়টায় ফিরতী পথে রওয়ানা দিবে এই লঞ্চটি। তবে আপনি চাইলে নৌকা রিজার্ভ করে যেতে পারেন। তাতে ইচ্ছা-খুশি মতো যেখানে সেখানে ওঠা –নামা করতে পারবেন। তবে সে সেবার জন্য বাড়তি অর্থও গুণতে হবে।

এই নয়নাভিরাম সৌন্দর‌্য বর্ষা মৌসুমের জন্য বরাদ্দ। অন্যান্য সময়ে সীমিত হয়ে আসে। তখন রাঙ্গামাটি থেকে নতুন বাজারে গিয়ে থেমে যেতে হয়। তখন লঞ্চও চলে না। চলতে হয় ট্রলারে করে। এরপর জুরাছড়ি যেতে হলে পায়ে হেটে অথবা মোটরবাইক ভাড়া করে পাড়ি দিতে হবে ৪ কিলোমিটার পথ।

পর‌্যটকরা একে নৌ বিহার নাম দিলেও স্থানীয়দের কাছে এটি অত্যন্ত প্রয়োজনীয় একটি বাহন। যা দিয়ে জেলা সদরের সঙ্গে যাতায়াত করে থাকেন। ৬ মাস পুরোপুরি নাব্যতা থাকে তখন নৌকাতে করে আসা যাওয়া করতে পারেন।

কিন্তু পানি টান ধরলে তাদের কলিজাতেও টান পড়ে। তখন ভিজাক্যাচিং গিয়ে ট্রলার থেকে নেমে পায়ে হেঁটে নতুন বাজার যেতে হয়। তারপর সেখান থেকে মোটরবাইক অথবা ট্যাক্সি ভাড়া করে জুরাছড়ি পৌঁছতে হয়।

জুরাছড়িতে গেলে আপনি পাবেন তরতাজা সব পাহাড়ি ফলমূল। মাছ পাবেন প্রায় বিনামূল্যে। চার থেকে ৫ কেজি ওজনের লেকের রুই পাবেন মাত্র ১১’শ টাকায়। আর হোটেলে প্রমাণ সাইজের এক টুকরো রুই মাছ পাবেন মাত্র ৬০ টাকায়।

** ‘ভাবার লোকদের তো সমস্যা নেই’
** ঝরনা নিজেই এসে মিশে গেলো শরীরে
** খাগড়াছড়িকে পাহাড়ের সঙ্গে মেলালে ভুল হবে

বাংলাদেশ সময়: ১১৩২ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৭, ২০১৬
এসআই/এমআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

বছরজুড়ে দেশ ঘুরে এর সর্বশেষ