ঢাকা: চলতি বছর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রেক্ষিতে বৈশ্বিক সংকট সামাল দিতে তৎপর ছিল সরকার। এই সংকট ঘিরে কূটনৈতিক পদক্ষেপও নেওয়া হয়।
চলতি বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হয়। যুদ্ধের প্রেক্ষিতে বৈশ্বিক সঙ্কটও বাড়তে থাকে। বিশেষ করে আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেল ও খাদ্য পণ্যের দাম বৃদ্ধি পায়। রাশিয়া-ইউক্রেন থেকে গম আমদানি বন্ধের প্রেক্ষিতে দেশের অভ্যন্তরীণ বাজারে গম-আটার দাম বেড়ে যায়। পাশাপাশি অন্যান্য নিত্যপণ্যের দামও বাড়ে। এ প্রেক্ষিতে সরকার বিকল্প বাজার খুঁজতে থাকে। আর বিকল্প উৎস থেকে গম আমদানি করতে অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় করতে হয়।
ইউক্রেন ইস্যুতে কৌশলী কূটনীতি
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রেক্ষিতে আন্তর্জাতিক কূটনীতিতেও উত্তাপ ছড়ায়। পশ্চিমা দেশগুলোর বেশির ভাগই ইউক্রেনের পক্ষে অবস্থান নেয়। তবে ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে বন্ধু রাষ্ট্র হিসেবে রাশিয়ার প্রতি নীরব সমর্থন ছিল বাংলাদেশের। তবে এ ক্ষেত্রে কূটনৈতিকভাবে কৌশলী ভূমিকা নেয় বাংলাদেশ। বিশেষ করে ইউক্রেন ইস্যুতে জাতিসংঘে ভোটাভুটিতে বাংলাদেশ ভারসাম্যের কূটনীতি বজায় রাখে। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ বিভিন্ন সময়ে রাশিয়ার পক্ষে ও বিপক্ষে ভোট দেয়।
ইউক্রেন ইস্যুতে জাতিসংঘে ভোটাভুটি
ইউক্রেনের চারটি অঞ্চলকে রুশ ফেডারেশনে যুক্ত করার বিষয়ে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে যে নিন্দা প্রস্তাবে বাংলাদেশ রাশিয়ার বিপক্ষে ভোট দেয়। ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলার প্রেক্ষিতে উদ্ভূত মানবিক সংকট নিরসনে অবিলম্বে ব্যবস্থা নিতে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের পক্ষেও ভোট দেয় বাংলাদেশ। এই ভোটও ইউক্রেনের পক্ষে যায়। আবার জাতিসংঘে ‘ইউক্রেনের ওপর আগ্রাসনের ক্ষতিপূরণ ও প্রতিকার’ শীর্ষক যে প্রস্তাব আনা হয়, সেখানে ভোটদানে বিরত ছিল বাংলাদেশ।
রোহিঙ্গা ফেরাতে অগ্রগতি হয়নি
মিয়ানমারের রোহিঙ্গা নাগরিকদের ফেরাতে কোনো অগ্রগতি হয়নি। চলতি বছরের শুরুতে রোহিঙ্গা নাগরিকদের প্রত্যাবাসনে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে যৌথ টাস্কফোর্সের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে রোহিঙ্গাদের ফেরত না নেওয়ায় হতাশা প্রকাশ করে বাংলাদেশ। রোহিঙ্গা নাগরিকদের ফেরাতে কোনো অগ্রগতি না হলেও বিভিন্ন দ্বিপক্ষীয় বৈঠক ও আন্তর্জাতিক ফোরামে ইস্যুটিকে প্রাধান্য দিয়ে আসছে সরকার।
অন্যদিকে বছরের শেষ দিকে বাংলাদেশ থেকে প্রথম ব্যাচে ২৪ জন রোহিঙ্গাকে যুক্তরাষ্ট্রে পুনর্বাসন করা হয়েছে। প্রথম দফায় দেশটি ৬২ জন রোহিঙ্গাকে পুনর্বাসন করবে।
মিয়ানমার সীমান্তে গোলা
চলতি বছর সেপ্টেম্বর থেকে দফায় দফায় মিয়ানমার সীমান্তে গোলা নিক্ষেপ করা হয়। জিরো লাইনে গোলা নিক্ষেপের ঘটনায় সীমান্ত থেকে বাংলাদেশের নাগরিকদের সরিয়ে নেওয়া হয়। এ ঘটনায় সীমান্তে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। ঢাকায় নিযুক্ত রাষ্ট্রদূতকে ডেকে কড়া প্রতিবাদ জানানো হয়। মিয়ানমারের সীমান্তের ঘটনাটি ঢাকার কূটনীতিকদের কাছেও তুলে ধরে সরকার।
ঢাকায় আইওআরএ সম্মেলন
চলতি বছর নভেম্বরে ঢাকায় ইন্ডিয়ান ওশান রিম অ্যাসোসিয়েশনের (আইওআরএ) ২২তম মন্ত্রী পর্যায়ের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। আইওআরএ’র ২৩ সদস্য ও ১০ পর্যবেক্ষক দেশ থেকে ১৩৪ জন প্রতিনিধি অংশ নেন। সম্মেলনে ১৬টি দেশের মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীরা যোগ দেন। এসব দেশের মধ্যে ছিল—অস্ট্রেলিয়া, কমোরোস, ভারত, মালদ্বীপ, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ইন্দোনেশিয়া, মাদাগাস্কার, মরিশাস, মোজাম্বিক, সোমালিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, শ্রীলঙ্কা, তানজানিয়া, জাপান , ইয়েমেন ও থাইল্যান্ড। এ সময় বিভিন্ন দেশের মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকও হয়।
বাংলাদেশ সময়: ১৮৪৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৩, ২০২২
টিআর/এমজেএফ