মাদারীপুর: সূর্য ওঠে; অস্ত যায়। প্রকৃতির নিয়মে বছর হারিয়ে যায় মহাকালের গর্ভে।
বিদায় নিচ্ছে দুই হাজার বাইশ সাল। হতাশা-গ্লানি আর অপ্রাপ্তি সরিয়ে রেখে হিসেব করতে হলে বছরটি দক্ষিণাঞ্চলবাসীর স্বপ্ন পূরণের। বিশেষ করে মাদারীপুরবাসীর বুকভরা প্রত্যাশা পূরণের বছর।
২৫ জুন ২০২২ প্রমত্তা পদ্মার দিকে তাচ্ছিল্যভরে তাকিয়ে নির্বিঘ্নে নদী পার হওয়ার স্বপ্ন পূরণ হয় দক্ষিণাঞ্চলবাসীর। রাজধানী ঢাকার সঙ্গে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার মানুষের নির্বিঘ্নে যোগাযোগে প্রমত্তা পদ্মার বুকে গড়ে ওঠে স্বপ্নের সেতুর। ঢাকায় যেতে নদীর ঘাটের ভোগান্তি, ফেরি বন্ধ, দীর্ঘ যানজট, উত্তাল পদ্মা, সলিল সমাধি আর নিখোঁজ- নানা দুঃসহ-কষ্ট পায়ে ঠেলে যোগাযোগের নতুন এ দ্বার উন্মোচন হয়।
গত ২৫ জুন উদ্বোধনের পর ২৬ জুন সকাল থেকেই সাধারণ মানুষের পারাপার শুরু হয় পদ্মা সেতু দিয়ে। রাজধানী ঢাকা চলে আসে ঘরে কাছে। ৪-৫ ঘণ্টা ব্যয় করে যেখানে ঢাকা পৌঁছতে হতো, সেখানে এখন সময় লাগে মাত্র এক ঘণ্টা। ঢাকা থেকে রওনা দিয়ে জেলার শিবচরের বাসিন্দারা বাড়ি ফিরে সকালের নাস্তা করতে পারছেন এখন। তাই ২০২২ পদ্মা সেতু প্রাপ্তির বছর। দক্ষিণাঞ্চলবাসীর স্বপ্ন পূরণের বছর!
জানতে চাইলে স্থানীয় শিক্ষক তাজুল ইসলাম বলেন, নিঃসন্দেহে পদ্মা সেতু শিবচরবাসীর জন্য বহুল কাঙ্ক্ষিত। এখন বাড়ি থেকে ঢাকা যাওয়া সময়ের ব্যাপার মাত্র। গাড়িতে উঠে বসলেই ঢাকা! কাজ সেরে আবার বাড়িতে ফিরে আসা যায় সূর্য ডোবার আগেই। যোগাযোগের জন্য এ এক অভাবনীয় পরিবর্তন।
জাহিদুল ইসলাম নামের স্থানীয় এক ব্যবসায়ী বলেন, ২০২২ সালে পদ্মা সেতু আমাদের জন্য বড় ধরণের প্রাপ্তি। যুগ যুগ ধরে রাজধানীর সাথে যোগাযোগের যে ভোগান্তি ছিল দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের, তার অবসান হয়েছে এ সেতুর মাধ্যমে।
পদ্মা সেতু সংলগ্ন গ্রামের বাসিন্দারা জানান, সেতুকে কেন্দ্র করে অবহেলিত চরাঞ্চল এখন সম্ভাবনাময় গ্রাম। এক সময় কাদা-পানিতে ডুবে থাকা গ্রামগুলোয় কাঁচা রাস্তা খুঁজে পাওয়া যাবে না। পদ্মা সেতুকে ঘিরে নদী পাড়ের গ্রামগুলোর যোগাযোগ ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন হয়েছে। সড়কের পাশে গড়ে উঠেছে নতুন ডজনখানেক বাজার-ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান। বাড়ছে মানুষের জীবন যাত্রার মান। তাই পদ্মা সেতু চালুর বছর হিসেবে ২০২২ সাল এ অঞ্চলের মানুষের কাছে স্মরণীয়ও বটে!
প্রমত্তা পদ্মা। যার একূল ভাঙে ওকূল গড়ে। শীত মৌসুমে শান্ত থাকলেও বর্ষা মৌসুমে পদ্মা হয়ে উঠে রুদ্র, প্রবল ঢেউ আর স্রোতে উত্তাল! রাজধানী ঢাকা যাওয়া-আসায় দক্ষিণাঞ্চলের ২১ জেলার মানুষকে এই পদ্মা পাড়ি দিতে হতো লঞ্চ, স্পিডবোট, ফেরি; কখনোও বা ট্রলারে। বছরের দুই ঈদে পদ্মা পাড়ি দিতে নাভিশ্বাস উঠত যাত্রীদের।
সীমাহীন দুর্ভোগের পাশাপাশি পদ্মা পার হতে গিয়ে প্রাণহানির ঘটনাও কম নয়। ২০১৪ সালের যাত্রীবাহী লঞ্চ পিনাক-৬ ডুবি এবং ২০২১ সালে স্পিডবোট দুর্ঘটনায় ২৬ যাত্রীর মৃত্যুর ঘটনা ছাড়াও প্রতি বছরই পদ্মানদীতে কোনো না কোনো দুর্ঘটনায় প্রাণহানির সংখ্যাও কম নয়। এসব ছাপিয়ে জরুরি মুহূর্তে পদ্মা পার হতে না পারার যন্ত্রণাও সাধারণ মানুষকে কাঁদিয়েছে। সব সমস্যার সমাধান হয়েছে এক পদ্মা সেতুর মাধ্যমে। তাই বিদায়ী বছরকে স্বপ্ন পূরণের বছর হিসেবেই স্মৃতির পাতায় লিখে রাখবেন এ অঞ্চলের লোকজন।
বাংলাদেশ সময়: ১৭২০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩১, ২০২২
এমজে