ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

সালতামামি

ডাকাত গ্রেফতারে পুলিশের সাফল্য

স্বপন চন্দ্র দাস, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮১৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩১, ২০২২
ডাকাত গ্রেফতারে পুলিশের সাফল্য

সিরাজগঞ্জ: বঙ্গবন্ধু সেতু পশ্চিম মহাসড়কসহ সিরাজগঞ্জের চারটি রুটের বিভিন্ন পয়েন্টে দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা ছিনতাই ও ডাকাতি অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে এসেছে। বছরের শেষ দিকে মাত্র আড়াই মাসের মধ্যে ছিনতাইকারীদের পাঁচটি চক্রের ২৭ সদস্যকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে ডাকাত, হত্যা মামলার আসামিও রয়েছে।  

পুলিশ ও স্থানীয় একাধিক সূত্র জানায়, দীর্ঘদিন ধরে বঙ্গবন্ধু সেতু পশ্চিম মহাসড়কসহ সিরাজগঞ্জের বিভিন্ন সড়ক-মহাসড়কে অভিনব কায়দায় ডাকাতি করে আসছিল বেশ কয়েকটি চক্র। এ ডাকাত চক্রগুলো বিভিন্ন পদ্ধতিতে যাত্রীদের মালামাল লুট করতো।  

বঙ্গবন্ধু সেতু পশ্চিম মহাসড়কের সয়দাবাদ গোলচত্বর, মুলিবাড়ি, কড্ডা, ঝাঐল ওভারব্রিজ, তালকুদার বাজার, এনডিপি মোড়, মফিজ মোড়, কোনাবাড়ী, বগুড়া-নগরবাড়ি মহাসড়কের বোয়ালিয়া জোড়া কবরস্থানের ও সিরাজগঞ্জ-বেলকুচি সড়কের শমেসপুর কাটা ওয়াপদা, কদমতলী ও আমবাড়িয়া এলাকার ফাঁকা স্থানে অবস্থান নিয়ে পাথরের ঢিল ছুঁড়ে বা চাকার নিচে ‘পেরেক পোতা বাটাম’ বা ‘লোহার বুলেট’ দিয়ে যানবাহনের গতিরোধ করে লুট করতো ডাকাতরা।  

কখনো কখনো ডাকাতরা ট্রাক, বাস-মাইক্রোবাসে যাত্রী তুলে রাস্তায় মারধর করে তার সর্বস্ব লুট করে হাত-পা-মুখ বেঁধে রাস্তায় ফেলে রাখতো। অনেক সময় লুটের আগে যাত্রীকে হত্যাও করা হতো। এছাড়া দূর থেকে আসা কোনো মালবাহী ট্রাকে যাত্রী বেশে উঠে চালক ও হেলপারকে হত্যার পর মালামাল লুট করতো একটি চক্র।  

দীর্ঘদিন ধরে মহাসড়কে এভাবেই চলে আসছিল ডাকাতি ও ছিনতাই। সিরাজগঞ্জ, টাঙ্গাইল, বগুড়া, মানিকগঞ্জ, ফরিদপুর ও ঢাকাসহ আন্তঃজেলা ডাকাতদলের সদস্যরা একাধিক চক্রের মাধ্যমে ডাকাতি সংঘটিত করতো।  

১২ অক্টোবর মুলিবাড়ী-কড্ডার মাঝামাঝি ফাঁকা স্থানে পুলিশের মাইক্রোবাসে ঢিল ছুঁড়ে গতিরোধ করে মালামাল লুটের ঘটনা ঘটার পরই টনক নড়ে পুলিশের। এ ঘটনার ৭২ ঘণ্টার মধ্যে ছিনতাইয়ের সঙ্গে জড়িত ছয়জনকে গ্রেফতার করা হয়।  

এর দুদিন পর ১৭ অক্টোবর বেলকুচির সমেশপুরে দুটি পিস্তল ও গুলিসহ সংঘবদ্ধ ডাকাতদলের নেতা মন্তাজ আলীসহ তিনজনকে গ্রেফতার করে ডিবি। এ চক্রটি ওইদিনই একটি হত্যা ও ডাকাতির পরিকল্পনা করেছিল বলে পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছে। মন্তাজের নামে চারটি ডাকাতি ও তিনটি ছিনতাই মামলা রয়েছে। অন্যদের বিরুদ্ধেও একাধিক ডাকাতির মামলা রয়েছে।  

এ চক্রের সদস্যরা গ্রেফতার হওয়ার ২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে ১৮ অক্টোবর গ্রেফতার করা হয় আরও ছয় বাস ডাকাতকে। মানিকগঞ্জের শিবালয় ও দৌলতপুর, ঢাকার সাভার ও আশুলিয়া থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়। ৩০ সেপ্টেম্বর রাতে ঢাকা থেকে চাঁপাইনবাগঞ্জগামী ন্যাশনাল ট্রাভেলসে বাইপেল থেকে যাত্রী বেশে ওঠে এ ডাকাতচক্রটি। এক পর্যায়ে চালককে ছুরিকাঘাত করে বাসটি নিয়ন্ত্রণে নেয় এবং অস্ত্রের মুখে যাত্রীদের জিম্মি করে ২ লাখ ১৫ হাজার টাকা ও ১৭টি মোবাইল লুট করে তারা।  

এছাড়া ২ অক্টোবর মুলিবাড়ী ও কড্ডার মাঝামাঝি স্থানে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে কর্মরত এক রাশিয়ান প্রকৌশলীর ডলার ও দুটি মোবাইল ছিনিয়ে নেয় ছিনতাইকারীরা। ওই ঘটনার সঙ্গে জড়িত দুই ডাকাতকে গ্রেফতার করা হয়।  

এ চক্রগুলোর সদস্যরা গ্রেফতার হওয়ার পর ১ নভেম্বর ভোরে যমুনা নদীর তীরে নির্মাণাধীন সিরাজগঞ্জ ইকোনোমিক জোনের পিডিএল বেজ ক্যাম্পে জেলে সেজে ডাকাতি সংঘঠিত করে আরও একটি চক্র। তারা একটি কোম্পানির তিন নাইটগার্ডকে মারধর করে বেঁধে রেখে পৌনে ৯ লাখ টাকার মালামাল লুট করে। এ ঘটনার সাতদিন পর ৭ নভেম্বর টাঙ্গাইলের কালিহাতী ও সিরাজগঞ্জের বেলকুচি থেকে দুই ডাকাতকে গ্রেফতার করা হয়। এরপর ১১ নভেম্বর ইকোপার্কে ঘুরতে আসা দর্শনার্থীদের টাকা ও মোবাইল ছিনতায়ের ঘটনায় জড়িত তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়।  

অক্টোবর ও নভেম্বর মাসেই চারটি ডাকাতচক্রের ২২ জন সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়। এরপর থেকে বেশ কিছুদিন মহাসড়কে ছিনতাই বন্ধ থাকলেও ১৬ ডিসেম্বর রাতে উল্লাপাড়ায় রকেট এজেন্ট ব্যবসায়ীকে গুলি করে পাঁচ লাখ টাকা করে ছিনিয়ে নেয় অপর এক ডাকাতচক্র। ঘটনার ১০ দিনের মাথায় ওই চক্রের চার সদস্যসহ পাঁচজনকে গ্রেফতার করে ডিবি পুলিশ।  

সিরাজগঞ্জ পুলিশ অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) মো. সামিউল আলম বলেন, মহাসড়কে ডাকাতি সংঘঠিত হবার পর পরই একটি চৌকস টিম গঠন করা হয়। এ টিম রাত-দিন নিরলস পরিশ্রম করে আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তি ও পর্যাপ্ত সোর্স নিয়োগ করে অল্প সময়ের মধ্যে ডাকাতদের গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়। গ্রেফতার ডাকাতদের বেশিরভাগের বিরুদ্ধে একাধিক ডাকাতি, ছিনতাই, চাঁদাবাজি, মাদক ও চুরির মামলা রয়েছে।  

পুলিশ সুপার মো. আরিফুর রহমান মণ্ডল বলেন, সিরাজগঞ্জের মহাসড়ক ও আঞ্চলিক সড়কে ছয়টি ডাকাতচক্র সক্রিয় ছিল। ইতোমধ্যে পাঁচটি চক্রের ২৭ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আরও ৫/৭ জন বাইরে রয়েছে। তাদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।  

বাংলাদেশ সময়: ১৮১৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩১, ২০২২
আরবি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।