ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

সালতামামি

খুলনায় আলোচনার শীর্ষে ছিল যেসব ঘটনা

মাহবুবুর রহমান মুন্না, ব্যুরো এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৪২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১, ২০২৩
খুলনায় আলোচনার শীর্ষে ছিল যেসব ঘটনা

খুলনা: ক্যালেন্ডারের পাতা উল্টে বিদায় নিয়েছে ২০২২ সাল। ঘটনাবহুল বিদায়ী বছরে খুলনায় ঘটে গেছে নানা আলোচিত-সমালোচিত ঘটনা।

এমনকি কয়েকটি লোমহর্ষকর ঘটনা দেশবাসীকেও নাড়া দিয়েছে।

কুয়েটের ৪ শিক্ষার্থী আজীবন বহিষ্কার
কুয়েটের শিক্ষক প্রফেসর ড. সেলিম হোসেনের মৃত্যুর ঘটনায় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদমান নাহিয়ান সেজানসহ ৪ শিক্ষার্থীকে (৫ জানুয়ারি) আজীবন বহিষ্কার করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। বিশ্ববিদ্যালয়ের জরুরি সিন্ডিকেট সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়।
আজীবন বহিষ্কার হওয়া চার শিক্ষার্থী হলেন- সাদমান নাহিয়ান সেজান, হাসান আব্দুল কাইয়ুম, মো. কামরুজ্জামান রাজ্জাক ও রিয়াজ খান নিলয়। এ ছাড়া ৭ শিক্ষার্থীকে দুই শিক্ষাবর্ষ বহিষ্কার ও আজীবন হল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। এক শিক্ষার্থী এক শিক্ষাবর্ষ বহিষ্কার, ২২ শিক্ষার্থীকে এক শিক্ষাবর্ষ স্থগিত বহিষ্কার ও ১০ শিক্ষার্থীকে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। মোট ৪৪ শিক্ষার্থীকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেওয়া হয়।

মৃতদেহকে ধর্ষণ করে দুই পাষণ্ড
মোবাইল ফোনে মাত্র তিন দিনের পরিচয়। এটুকু সময়ের মধ্যে ফুলতলারমেয়ে মুসলিমা খাতুনের (২০) সঙ্গে  প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলে রিয়াজ (২২)। ২৫ জানুয়ারি রাত ৯টার দিকে ফোন করে দেখা করার জন্য উত্তরডিহির বাড়ি থেকে ডেকে নেয় কথিত প্রেমিক রিয়াজ ও তার বন্ধু সোহেল (২২)। বাড়ি থেকে কিছুটা দূরে জনৈক মনসুরের নির্মাণাধীন বাড়িতে নিয়ে দুই ঘণ্টা ধরে পাশবিক নির্যাতন চালায় প্রেমিক রিয়াজ ও সোহেল। এ সময় অনেক আকুতি মিনতি জানায় মুসলিমা। এক পর্যায়ে রিয়াজ ও সোহেল তাকে বাড়ি পৌঁছে দেওয়ার কথা বলে ওই বাড়ি থেকে বের হয়। পথে মুসলিমার গলা টিপে ধরে। পরনের শাড়ি দিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। বিবস্ত্র মুসলিমাকে পুনরায় তারা ধর্ষণ করে। ঘটনাটি আত্মহত্যা বলে চালানোর জন্য মৃতদেহ একটি গাছে ঝুলানোর চেষ্টা করে তারা ব্যর্থ হয়। এরপর রিয়াজ তার বাড়ি থেকে ধারালো বটি এনে তিন কোপে মাথাটি বিচ্ছিন্ন করে ফেলে। মাথাটি মনসুররের ওই বাড়িতে রেখে বাকি দেহটি ওখানেই ধানক্ষেতে ফেলে দেয়। পরদিন সকালে যখন মরদেহ উদ্ধার হয়, অন্যান্যদের সঙ্গে রিয়াজ ও সোহেলও ঘটনাস্থলে যায় এবং অন্যান্যদের মতো মোবাইলফোনে ভিডিও ধারণ করে। র‌্যাব-৬ এর একটি অভিযানিক দল দুইজনকে গ্রেফতারের পর হত্যা রহস্য উম্মোচিত হয়।

পানিতে ডুবিয়ে জমজ শিশু হত্যা করে মা
খুলনার তেরখাদার কানিজ ফাতেমা কনা দীর্ঘদিন অসুস্থ ছিলেন। হত্যাকাণ্ডের কয়েকদিন আগে স্বামী মাসুম বিল্লাহকে মোবাইলে ক্ষুদে বার্তা পাঠান কনা। শ্বশুরবাড়িতে যাওয়ার জন্য স্বামীকে বলেন। মাসুমের মা অসুস্থ থাকায় বাড়িতে নিতে পারেনি কনাকে। পরে তাকে নেওয়ার কথা বলেছিলেন তিনি। এ নিয়ে তাদের মধ্যে মনোমালিন্য হয়। তাছাড়া জমজ শিশুর কান্নাকাটিতে কনা বিরক্ত হতেন। ১৮ ফেব্রুয়ারি রাতে মেয়েদের দুধ খাওয়ানোর পর কান্না থামছিল না। অনেক কষ্ট করে তাদের ঘুম পাড়ানো হয়। রাত আড়াইটার পর ঘুম থেকে জেগে আবারও কান্না শুরু করলে তাদের হত্যা করার সিদ্ধান্ত নেন তিনি। হত্যার পর কিছুক্ষণ শিশুদের কাছে অবস্থান করেন। ঘটনাটি ধামাচাপা দেওয়ার সব পরিকল্পনা তিনি করেছিলেন। পরে পুকুরে ফেলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।
এরপর দু’ঘণ্টা পর সন্তান নিখোঁজের নাটক সাজিয়ে চিৎকার করেন। পাড়া প্রতিবেশীরা ছুটে আসে। মসজিদের মাইকে ঘোষণা করা হয়। পরে ভোর সাড়ে ছয়টার দিকে পুকুরে শিশু দুটির মরদেহ ভেসে থাকতে দেখা যায়। শিশুর মরদেহ উদ্ধারের পর বাবা ও মাকে পুলিশ থানায় ডেকে নেওয়া হয়। জিজ্ঞাসাবাদের সময় শিশু দুটির মা অসংলগ্ন কথা বলতে থাকলে তাদের সন্দেহ আরও বেড়ে যায়। একপর্যায়ে জমজ শিশু হত‌্যার দায় স্বীকার করেন মা কনিজ ফাতেমা কনা। আদালতে হত‌্যার দায় স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন তিনি। সিনিয়র জুডিসিয়াল ম‌্যাজিস্ট্রেট আদালত-৪ এর বিচারক মো. মোস্তাফিজুর রহমান তার জবানবন্দি রেকর্ড করেন। এরপর তাকে কারাগারে পাঠানো হয়।

ইট দিয়ে মাথায় আঘাত করে শিশু হত্যা
বিদায়ী বছরের ২০ ফেব্রুয়ারি রোববার দুপুরে নগরীর সোনাডাঙ্গা আবাসিক এলাকার দ্বিতীয় ফেজের ১৪ নম্বর রোডের একটি মাঠে ইট দিয়ে মাথায় আঘাত করে শুভ হাওলাদার (১১) নামের এক শিশুকে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। নিহত শুভ হাওলাদার নগরীর আনিস বিশ্বাস আদর্শ স্কুলের দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্র ছিল।

পুলিশ ইন্সপেক্টরের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ 
গেল বছরের ১৫ মে নগরীর ছোট মির্জাপুর এলাকার একটি অফিসে বিএল কলেজে ভর্তিচ্ছু এক ছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগ ওঠে  খুলনার পিবিআই ইন্সপেক্টর মাসুদের বিরুদ্ধে । ওই ঘটনায় ছাত্রীর বাবা বাদী হয়ে খুলনা সদর থানায় মামলা করেন।

অস্ত্রের মুখে দুই বোনকে ধর্ষণ  
খুলনার বটিয়াঘাটা উপজেলার বালিয়াডাঙ্গা ইউনিয়নের ফুলবাড়ি গ্রামে (১৬ মে) বাড়িতে মা-বাবা না থাকার সুযোগ নিয়ে গভীর রাতে অস্ত্রের মুখে ১৩ বছর বয়সী এক মাদ্রাসাছাত্রী ও তার খালাত বোনকে (২২) সংধর্ষণ করে কয়েক যুবক।

দুদক কার্যালয়ে আগুন, পুড়েছে ফাইলপত্র
২ জুন দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক), খুলনা বিভাগীয় কার্যালয়ের তৃতীয় তলায় ছয়টি কক্ষে আগুন লেগে ফাইল ও আসবাব পুড়ে যায়। সন্ধ্যা পৌনে ছয়টার দিকে ভবনের জানালা দিয়ে ধোঁয়া বের হতে দেখে দমকল বিভাগের দুটি ইউনিট ৪৫ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আনে।

প্রতিপক্ষকে ফাঁসানোর রহিমা বেগমের নিখোঁজের নাটক
২৭ আগস্ট রাত ১০টার দিকে খুলনার দৌলতপুরের মহেশ্বরপাশা উত্তর বণিকপাড়া এলাকার বাসার উঠানের নলকূপ থেকে পানি আনতে গিয়ে আর বাড়ি ফেরেননি রহিমা বেগম। ওই রাতেই রহিমা বেগমের ছেলে দৌলতপুর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। রহিমা বেগমের ছেলে–মেয়েরা মায়ের সন্ধান চেয়ে এলাকায় পোস্টার লাগানো, ঢাকা ও খুলনায় মানববন্ধন, সংবাদ সম্মেলন করেন। মেয়ে মরিয়ম মান্নান ফেসবুকে মায়ের সন্ধান চেয়ে বিভিন্ন পোস্ট দেন। ঘটনাটি ফেসবুকে ব্যাপকভাবে আলোচিত হয়। এ নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদও প্রকাশ হয়। মায়ের সন্ধান দাবিতে আয়োজিত এক কর্মসূচিতে মরিয়ম মান্নানের কান্নার ছবি দেখে তার পক্ষে সোচ্চার হয়েছিলেন অনেকে। ২৮ আগস্ট রহিমা বেগমের আরেক মেয়ে আদুরী আক্তার বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে খুলনার দৌলতপুর থানায় মাকে অপহরণের অভিযোগ তুলে মামলা করেন।

খুলনার মহেশ্বরপাশায় নিখোঁজ রহিমা বেগমকে অক্ষত অবস্থায় ২৪ সেপ্টেম্বর ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলার সৈয়দপুর গ্রাম থেকে উদ্ধার করেছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। উদ্ধারের আগে দিব্যি দৈয়দপুরে কুদ্দুসের বাড়িতে রীতিমত গল্পরত অবস্থায় থাকলেও পুলিশ দেখা মাত্র কেন চুপ হলে গেলেন রহিমা। উদ্ধারের পরপরই পাল্টাতে থাকে দৃশ্যপট। পুলিশেরও ধারণা জমিসংক্রান্ত বিরোধের জেরে প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে মা রহিমার সঙ্গে মিলে মরিয়মসহ তার অন্য সন্তানরা অপহরণের নাটক সাজান। অভিযোগ, রহিমা আত্মগোপনে যাওয়ার পর অজ্ঞাতপরিচয়ের যে কোনো নারীর মরদেহকে মায়ের বলে দাবি করার পরিকল্পনাও সাজিয়ে রেখেছিলেন তার মেয়েরা।

বন্ধুদের সঙ্গে ঘুরতে গিয়ে ধর্ষণের শিকার
খালিশপুর মদিনাবাগ আবাসিক এলাকায় ২০ সেপ্টেম্বর বন্ধুর সঙ্গে ঘুরতে বের হওয়া নবম শ্রেণির ছাত্রীকে দলবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগে মামলা হয়।

বছরজুড়ে বেসরকারি পাটকল শ্রমিকরা ছিলেন রাজপথে
বিদায়ী বছরের শুরু থেকেই খুলনার খানজাহান আলী থানা এলাকার মিরেরডাঙ্গা ও আটরা শিল্প এলাকায় শুরু হয় বেসরকারি জুট মিল শ্রমিকদের আন্দোলন। ধারাবাহিক এ আন্দোলন কর্মসূচি সারা বছর ধরেই চলে, এমনকি বছরের শেষ মাসে এ আন্দোলন আরও তীব্র হতে শুরু করেছে। ৬ দফা দাবিতে মহসেন, সোনালী, অ্যাজাক্স, জুট স্পিনার্সসহ ব্যক্তি মালিকানা জুট মিল শ্রমিকদের আন্দোলন এখনো অব্যাহত রয়েছে। দাবি আদায়ে সভা-সমাবেশ, মিল গেটে বিক্ষোভ, ভুখা মিছিল, গণমিছিল, সড়ক অবরোধ, মানববন্ধনসহ নানা কর্মসূচি পালন করে। যদিও এসব আনন্দোলনের ফসল তারা ঘরে তুলতে পারেনি বলে হতাশ শ্রমিকরা।

বাংলাদেশ সময়: ১৮৩৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০১, ২০২৩
এমআরএম/এসএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।