ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

সালতামামি

পদ্মাসেতু না হলেও ডানা মেলেছে উড়ালসেতু

আবু তালহা, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৫৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩১, ২০১৩
পদ্মাসেতু না হলেও ডানা মেলেছে উড়ালসেতু ছবি: জনি/ বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঢাকা: ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ২০০৮ সালের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি ছিল পদ্মাসেতু নির্মাণের। দক্ষিণবঙ্গের মানুষের বহুল প্রত্যাশিত পদ্মাসেতু নির্মাণের মূল কাজ শুরু করতে না পারলেও, ২০১৩ সালের যোগাযোগ খাতে সবচেয়ে বড় অর্জন রাজধানীতে উড়ালসেতু নির্মাণ।



মেয়র মোহাম্মদ হানিফ ‍উড়ালসেতু
যোগাযোগ ব্যবস্থায় সবচেয়ে বড় অর্জন মেয়র মোহাম্মদ হানিফ উড়ালসেতু। গুলিস্তান থেকে যাত্রাবাড়ী পর্যন্ত দুই হাজার ১০৮ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত ১১ দশমিক ৭ কিলোমিটার দীর্ঘ সেতুটি। এটি সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে (পিপিপি) নির্মিত দেশের সবচেয়ে বড় উড়ালসেতু।

চট্টগ্রাম ও সিলেটসহ দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের প্রায় ৩০ জেলার যানবাহন এই রুট দিয়ে চলাচল করতো। ফলে ঢাকার প্রবেশপথে সৃষ্টি হতো দীর্ঘ যানজটের।

চার লেনের ছয়টি প্রবেশের এবং সাতটি বের হওয়ার পথ বিশিষ্ট এই উড়ালসেতুর সঙ্গে আশেপাশের প্রধান সড়ক ও বাস টার্মিনালের সংযোগ রয়েছে। ফলে দীর্ঘ যানজটের অবসান ঘটেছে এই রুটে।

বনানী উড়ালসেতু
রাজধানীর বনানী হয়ে প্রতিদিন গড়ে ৭২টির বেশি ট্রেন চলাচল করার ফলে একদিকে যেমন গুলশান-জাহাঙ্গীর গেট-প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, অন্যদিকে বনানী-বিমানবন্দর পর্যন্ত দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হতো।

এই যানজট নিরসনে ১০৩ কোটি টাকা ব্যয়ে ৮০৪ মিটার দীর্ঘ ছয় লেনের ২২ দশমিক ৫২ মিটার প্রশস্ত বনানী উড়ালসেতু নির্মাণ করা হয়েছে।

সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের (সওজ) নেওয়া প্রকল্পটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান আবদুল মোনেম লিমিটেড বাস্তবায়ন করে।

সেতুটি আর্মি স্টেডিয়ামের কাছ থেকে শুরু হয়ে বনানী-বিমানবন্দর সড়কের ওপর দিয়ে রেললাইন পার হয়ে নৌবাহিনীর অফিসার্স মেসের কাছে গিয়ে শেষ হয়েছে।

এছাড়াও ৩০ কোটি টাকা ব্যয়ে ৫৬০ মিটার দীর্ঘ সংযোগ সড়ক নির্মাণ করে মিরপুরের সঙ্গে বিমানবন্দর সড়কের সরাসরি যোগাযোগ স্থাপন করা হয়েছে। ফলে উত্তরা-গাজীপুর পোশাক কারখানাসহ বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠানে কর্মরতদের যাতায়াত হাতের নাগালে চলে এসেছে।

কুড়িল উড়ালসেতু
রাজধানীর অন্য একটি ব্যস্ত সড়কের ওপর কুড়িল ক্রসিং দিয়ে প্রতিদিন প্রায় ৯৮টি ট্রেন যাতায়াত করায় প্রতিবার ট্রেন যাওয়ার সময় আট থেকে দশ মিনিট অপেক্ষা করতো এই রুটের দুই লাখ মোটরযান। ফলে গাজীপুর-উত্তরা-যাত্রাবাড়ী রুটে সৃষ্টি হতো দীর্ঘ যানজটের।

এই যানজট নিরসনে এ বছরই রাজউকের নিজস্ব অর্থায়নে ৩০৬ কোটি টাকা ব্যয়ে কুড়িল মোড় থেকে প্রগতি সরণি পর্যন্ত তিন দশমিক ১০ কিলোমিটার দীর্ঘ কুড়িল উড়ালসেতু নির্মাণ করা হয়েছে।

সেতুটি রাজধানীর বনানী, কুড়িল, খিলক্ষেত ও পূর্বাচল এই চারটি প্রান্ত সংযুক্ত করেছে। যে কারণে এই উড়াল সেতুটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে রাজধানীবাসীর কাছে।

প্রসঙ্গত, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) সূত্রে জানা যায়, ২০১৩ সালের জানুয়ারি মাস থেকে নভেম্বর মাস পর্যন্ত সারাদেশে মোট ১২৬৫২৪ টি নতুন যান নিবন্ধিত হয়েছে। যার মধ্যে রাজধানীতে রয়েছে মোট ৪৯৬০০টি। এর মধ্যে অ্যাম্বুলেন্স ১৬৬, অটোরিক্সা ৫৮, বাস ৯১৮, কার্গো ভ্যান ৫৪৪, কভার্ড ভ্যান ১৬৫৫, ডেলিভারি ভ্যান ৬৪৯, হিউম্যান হলার ১০৬, জিপ ৯৭৪, মাইক্রোবাস ২১২১, মিনিবাস ৮৩, মোটরসাইকেল ২৩৬২৪, পিকআপ ৪৫০১, প্রাইভেট কার ৮৬২০, বিশেষ কাজে ব্যবহারিত যান ৭৮, ট্যাঙ্কার ১৩১, ট্যাক্সি ক্যাব ৪ , ট্রাক্টর ১৫১৩, ট্রাক ৩২৫২ এবং অন্যান্য ৬০৩ টি।

নতুন নিবন্ধিত যানসহ রাজধানীতে সর্বমোট যানের সংখ্যা ৭,৭৫,১৯৭টি । এছাড়াও প্রতিদিন আনুমানিক ৩,২০,০০০ টি রিক্সা চলাচল করে রাজধানীতে। এর মধ্যে মাত্র ৭০,০০০ রিক্সা নিবন্ধিত।

কেবল যোগাযোগের ক্ষেত্রে যানজট নিরসনই নয়, এর পাশাপাশি উড়ালসেতু গুলো পূরণ করছে নগরবাসীর বিনোদনস্থলের অভাবও। সারাদিনের কর্মব্যস্ততা শেষে এবং ছুটির দিনে খোলা আকাশের নিচে একটু মুক্ত বাতাস নিতে অসংখ্য মানুষকে ভিড় করতে দেখা যায় রাজধানীর উড়াল সেতুগুলোতে।

বাংলাদেশ সময়: ১৭৫৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩০, ২০১৩
জুয়েল মাজহার, কনসালট্যান্ট এডিটর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।