২০১৮ সালের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে এক ঝলক দেখে নেওয়া যাক ২০১৭-তে বিজ্ঞানের অগ্রযাত্রায় যুক্ত হলো কোন কোন আবিষ্কার। তালিকাটি বিশাল।
দুই নক্ষত্রের সংঘর্ষ
এবছর দু’টি নিউট্রন নক্ষত্রের সংঘর্ষে সৃষ্ট মহাকর্ষীয় তরঙ্গ ধরতে পেরেছেন বিজ্ঞানীরা। প্রখ্যাত পদার্থ বিজ্ঞানী আলবার্ট আইনস্টাইন ১৯১৬ সালে এমন তরঙ্গের বিষয়টি অনুমান করতে পেরেছিলেন। আইনস্টাইনের তরঙ্গ শনাক্ত করার স্বীকৃতিস্বরূপ লাইগোর শীর্ষ তিন বিজ্ঞানী এবার পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন।
২০১৭’র ১৭ আগস্ট তারা এ মহাকর্ষীয় তরঙ্গ ধরতে পারেন। এর সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ দিক হলো, নিউট্রন নক্ষত্র দু’টির সংঘর্ষকে তারা একই সঙ্গে মহাকর্ষীয় তরঙ্গ এবং আলো হিসেবে দেখতে পেয়েছেন। লাইগো বলছে, এভাবে এই প্রথম কোনো মহাজাগতিক ঘটনা দেখতে পেলো মানুষ।
ক্যাসিনির যাত্রা
১৯৯৭ সালে উড়াল দেওয়া ‘ক্যাসিনি’ মহাকাশযান ২০০৪ সালে শনি গ্রহের কক্ষপথে প্রবেশ করে। গত ১৩ বছর ধরে ক্যাসিনি শনি গ্রহ ও এর উপগ্রহগুলো পর্যবেক্ষণ করে এবং এ সংক্রান্ত তথ্য সরবরাহ করে পৃথিবীবাসীকে।
শনি গ্রহে একটি দৈত্যাকার ঝড় পর্যবেক্ষণ করে ক্যাসিনি। এ মিশনে শনির উপগ্রহ এনসেলাডাসে বরফের আস্তরণের নিচে পানি আবিষ্কৃত হয়েছে এবং আরেক উপগ্রহ টাইটানে দেখা গেছে মিথেনের হ্রদ।
কিন্তু ক্যাসিনির জ্বালানি ফুরিয়ে এলে ২০১৭ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর তা ধ্বংস করে ফেলা হয়। ক্যাসিনির এ যাত্রা শনি গ্রহ তথা বহির্বিশ্ব সম্পর্কে মানুষের জ্ঞান আরও অগ্রসর করে।
প্যারিস জলবায়ু চুক্তি ও ডোনাল্ড ট্রাম্প
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্যারিস জলবায়ু চুক্তি থেকে সরে যাওয়া, চলতি বছর একটি বড় আলোচনার বিষয়ে পরিণত হয়।
জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক একটি ফ্রেমওয়ার্ক তৈরি করা হয় ১৯৯২ সালে। দীর্ঘ ২৩ বছরের অনেক সাধনার পর ২০১৫ সালে প্যারিস চুক্তির মাধ্যমে সারা বিশ্ব এ ফ্রেমওয়ার্কের অন্তর্ভুক্ত হয়।
এবছর মার্কিন প্রেসিডেন্টের এক ঘোষণায় দীর্ঘ এ সাধনার ফসল পণ্ড হতে বসে। প্যারিস চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে সরিয়ে নেন তিনি। এতে ট্রাম্প আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ উভয় মহলেরই সমালোচনার মুখে পড়েন।
বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধির ব্যাপারটা কোনো নির্দিষ্ট অঞ্চলে সীমাবদ্ধ থাকে না। অন্য দেশের মতো যুক্তরাষ্ট্রকেও এর ফল ভোগ করতে হবে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, ২০৬০ সালের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের মিয়ামির সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা প্রায় তিন ফুট পর্যন্ত বাড়বে। এ শতাব্দীর শেষ দিকে ফ্লোরিডার নয় লাখ ৩৪ হাজার মানুষের বাসস্থান ডুবে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
সূর্য গ্রহণ
এ বছর পূর্ণগ্রাস সূর্যগ্রহণের সাক্ষী হয় বিশ্ববাসী। সূর্য গ্রহণের দৃশ্যটি সবচেয়ে ভালো দেখা যায় যুক্তরাষ্ট্র থেকে। পশ্চিম ইউরোপ ও আফ্রিকার কয়েকটি অঞ্চল থেকেও আংশিক সূর্য গ্রহণের দেখা মেলে। বাংলাদেশ থেকে এ বিরল দৃশ্য দেখা যায়নি। কারণ এ সময় বাংলাদেশে ছিল রাত। তবে আগ্রহীরা এ দৃশ্য নাসা টেলিভিশন ও নাসার ওয়েবসাইটে লাইভ স্ট্রিমিংয়ের মাধ্যমে সারা বিশ্ব থেকে দেখতে পেয়েছে।
সাতটি নতুন পৃথিবী
২০১৭-তে পৃথিবীর মতোই সাতটি নতুন গ্রহের সন্ধান পেয়েছেন জ্যোতির্বিদরা। আবিষ্কৃত গ্রহগুলো যে বামন তারাটির চারপাশে ঘুরছে, তার নাম ‘ট্র্যাপিস্ট-১’। আর গ্রহ সাতটিকে ১বি, ১সি ইত্যাদি নামে ডাকা হচ্ছে।
গবেষকরা বলছেন, গ্রহগুলোতে তরল পানি থাকার মতো পরিবেশ রয়েছে। এর মধ্যে তিনটি গ্রহের পরিবেশের সঙ্গে পৃথিবীর পরিবেশের অনেক মিল। এ কারণে গ্রহ তিনটিতে প্রাণের সম্ভাবনা থাকতে পারে বলে জানাচ্ছেন গবেষকরা। গ্রহগুলো পৃথিবী থেকে প্রায় ৪০ আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত।
বাংলাদেশ সময়: ০২০৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৭, ২০১৭
এনএইচটি/এএ