১২ মাসের ফুটবল-ময়দানে চোখ বুলিয়ে দেখা যাচ্ছে, ফুটবল বিশ্বে অন্য দেশগুলো ক্রমশ নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করার লড়াই করে গেলেও বাংলাদেশ জাতীয় দল এক্ষেত্রে রিক্ত হস্তে দাঁড়িয়ে। এ বছর যে মামুনুলদের কোনো আন্তজার্তিক ম্যাচই খেলতে হয়নি! ঘুমে কেটেছে বলা যায়! তবে ‘বড়দের ঘুমের বছরে’ সাফল্য এনে দিয়েছে বয়সভিত্তিক ফুটবল।
জাতীয় দলের বাজে রেকর্ডের বছর
একটা দেশের জাতীয় দল পুরো বছরে কোনো ম্যাচ খেলেনি। ভাবা যায়? এই অভাবনীয় ‘কীর্তি’ যুক্ত হয়েছে বাংলাদেশ দলের সঙ্গে। লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা ঘুমিয়ে কাটিয়েছে পুরোটা বছর। এর ফলও অবশ্য হাতে-নাতে পেয়েছে বাংলাদেশ। নিজেদের ইতিহাসে সর্বনিম্ন র্যাংকিং ১৯৭-এ পৌঁছেছে দলটি। যেন ‘ডাবল সেঞ্চুরিটা’ হয়ে যায়।
হিসাবের খাতা বলছে, ২০১৪ থেকে ২০১৬ পর্যন্ত বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেছে মোট ৩৬টি। ২০১৫ সালেই খেলেছে রেকর্ড ২১টি ম্যাচ। গত বছর ছিল সাতটি। এ বছর ফিফা বা এএফসির কোনো ম্যাচ ছিলো না। বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনও (বাফুফে) এর সঙ্গে ‘তাল মিলিয়ে’ কোনো প্রীতি ম্যাচ আয়োজনের তাগাদাবোধ করেনি। যদিও ২০১৪ ও ২০১৫ সালে সমান চারটি করে প্রীতি ম্যাচ খেলা হয়েছে, ২০১৬ সালেও মামুনুলরা খেলেছেন দু’টি প্রীতি ম্যাচ।
’১৭ সালটা একেবারে ঘুমে গেলেও আশার কথা আছে নতুন বছরে। সূচি অনুযায়ী, ২৩ মার্চ কম্বোডিয়া জাতীয় দল ঢাকায় খেলতে পারে। আর ২৭ মার্চ বাংলাদেশ খেলতে পারে ব্রুনাইয়ে। এর ফলে ছয় মাস আগে জাতীয় দলের কোচ হওয়া অ্যান্ড্রু ওর্ডের ডাগআউটে নামবার অপেক্ষারও অবসান হবে।
সাফল্য এনেছে কিশোরেরা
বয়সভিত্তিক ফুটবলে ছেলেরা দারুণ বছর কাটিয়েছে বলতে হবে। কোনো শিরোপা না জিতলেও বিশ্ব দরবারে নিজেদের ঠিকই চিনিয়েছে কিশোররা। যার বড় সাফল্য এসেছে থিম্পুতে। সাফ অনূর্ধ্ব-১৮ ফুটবলে শক্তিশালী ভারতের বিপক্ষে ৩-০ গোলে পিছিয়ে থাকার পরও সেখান থেকে ৪-৩ ব্যবধানে জয় এনেছে বাংলাদেশ। চ্যাম্পিয়ন হতে না পারলেও টুর্নামেন্টের রানারআপ ট্রফি নিয়ে ফিরেছে যুবারা। পাশাপাশি টুর্নামেন্টে সর্বোচ্চ পাঁচ গোল করে বাংলাদেশকে ‘গোল্ডেন বুট’ উপহার দেন ‘সোনার ছেলে’ জাফর ইকবাল।
অনূর্ধ্ব-১৬ এএফসি ফুটবলেও কীর্তি গড়েছে বাংলাদেশের প্রতিনিধিরা। কাতারকে তাদেরই মাটিতে ২-০ গোলে হারিয়ে দেয় কিশোরেরা। আর অনূর্ধ্ব-১৯ টুর্নামেন্টে তাজিকিস্তানের বিপক্ষে ড্র ও উজবেকিস্তানের বিপক্ষে ১-০ গোলে হারলেও নিজেদের জাত চিনিয়েছে যুবারা। অনূর্ধ্ব-১৫ দল নেপালে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে অর্জন করেছে তৃতীয় স্থান।
দেশকে শিরোপার উচ্ছ্বাসে ভাসিয়েছে কিশোরীরা
গত সেপ্টেম্বরে থাইল্যান্ডে এএফসি অনূর্ধ্ব-১৬ প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশের কিশোরীরা চূড়ান্ত পর্বে জায়গা করে নেয়। নারী দলও র্যাংকিংয়ে ১০০-এ উঠে আসে। যদিও ২০১৩ সালেও একবার ১০০-এ ছিল বাংলাদেশ।
বছরের একেবারে শেষে বাংলাদেশকে উৎসবে রাঙিয়ে দেয় অনূর্ধ্ব-১৫ কিশোরীরা। প্রথমবারের মতো আয়োজিত এই টুর্নামেন্টের ফাইনালে ভারতকে হারিয়ে শিরোপা ঘরে তোলে তহুরারা। এই সাফল্য আনন্দে উদ্বেলিত করে পুরো বাংলাদেশকে।
আরও যা ঘটেছে এ বছর
দেশের ঘরোয়া ফুটবল বিগত কয়েক বছরের মতোই এবারও একেবারে ঝিমিয়ে চলেছে। এবছরও গ্যালারিতে দেখা গেছে দর্শক-শূন্যতা। বড়দের নিয়ে টুর্নামেন্ট হলেও, নেই জুনিয়র পর্যায়ের তেমন কোনো প্রতিযোগিতা। দীর্ঘদিন পর অবশ্য অনূর্ধ্ব-১৮ জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপ হয়েছে।
এ বছর পরপারে চলে গেছেন স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের সদস্য অমলেশ সেন। প্রয়াত হয়েছেন ষাট থেকে আশির দশকে মাঠ মাতানো ফুটবল তারকা শামসুল ইসলাম, আইনুল হক ও আবদুল মোতালেবদের মতো তারকারা।
বাংলাদেশ সময়: ১৩৪৯ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৯, ২০১৭
এমএমএস/এইচএ/