২০১৮ সালে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ৩১৬ জন নারী ও শিশু। এর মধ্যে ২৪১ নারী ও ৭৫ জন শিশু।
আর গত ৬ বছরের হিসাব করলে দেখা যাবে, খাগড়াছড়িতে নির্যাতনের শিকার হয়েছে ১ হাজার ১৩০জন। এরমধ্যে ৯৩৭ নারী এবং ১৯৩ জন শিশু। শারীরিক, মানসিক, যৌন, আগুনে পুড়ে কিংবা এসিডে ঝলসে এসব নির্যাতন করা হয়। এক হিসাবে অনূর্ধ্ব ১৮ বছর পর্যন্ত শিশু হিসেবে গণ্য করা হয়েছে। আর মানসিক নির্যাতন বলতে পারিবারিক কলহ-অশান্তির জেরে বিষপান আর আত্মহত্যার ঘটনাকে বোঝানো হয়েছে। এটিমূলত সরকারের নারী ও শিশু সুরক্ষার জন্য গঠিত ওয়ান-স্টপ ক্রাইসিস সেলের তথ্য।
মূলত সামাজিক অবক্ষয় ও সচেতনার অভাবের কারণে এমনটা ঘটছে বলে মনে করেন সচেতন নাগরিকরা। তবে পুলিশ বলছে, আইনের প্রয়োগ বেড়েছে বলে ঘটনার সংখ্যা বেড়েছে।
খাগড়াছড়ির ওয়ান-স্টপ ক্রাইসিস সেলের তথ্য মতে, ২০১৩ সালে খাগড়াছড়িতে ৭৩ নারী ও ২১ জন শিশু নির্যাতনের শিকার হয়। আর ২০১৪ সালে নির্যাতনের শিকার হয় ১৩৮ নারী ও ২৭ জন শিশু। ২০১৫ সালে ১৪২ নারী ও ১৭ জন শিশু। ২০১৬ সালে ১৬৮ নারী ও ২৯ জন শিশু। ২০১৭ সালে ১৭৪ নারী ও ২৪ জন শিশু নির্যাতনের শিকার হয়। আর গত ৬ বছরের মধ্যে চলতি বছর ২০১৮ সালের নভেম্বর পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনা ঘটে। এ সময়কালে নির্যাতনের শিকার হন ৩১৬ জন। এরমধ্যে ২৪১ নারী ও ৭৫ জন শিশু।
এরমধ্যে গত ৬ বছরে শারীরিক নির্যাতনের শিকার হন ৬৬৫ নারী ও ৪৩ জন শিশু। মানসিক নির্যাতনের শিকার হন ২৩৮ নারী এবং ৮১ জন শিশু। যৌন নির্যাতনের শিকার হন ৩২ নারী ও ৪৯ জন শিশু। দগ্ধ হন ২ জন নারী। এসিডে ঝলসে দেওয়া হয় ১ নারী ও একজন শিশুকে। আর অন্যান্য ঘটনায় নির্যাতিত হন ২জন শিশু।
সবচেয়ে বেশি নির্যাতনের শিকার হয় গেলো বছর (৩১৬ জন)। শারীরিক নির্যাতনের শিকার হন ১৬৩জন নারী ও ২৫জন শিশু। মানসিক নির্যাতনের শিকার হন ৭৪ নারী ও ৩৫ জন শিশু। যৌন নির্যাতনের শিকার হন ৩ নারী ও ১৫ জন শিশু। দগ্ধহন ৩ নারী।
খাগড়াছড়ির ওয়ান-স্টপ ক্রাইসিস সেলের প্রোগ্রাম অফিসার রুবেল বিশ্বাস বলেন, ‘আমরা ভিকটিমের সুরক্ষা থেকে শুরু করে আইন প্রয়োগের ব্যবস্থা করাসহ সবক্ষেত্রে সহযোগিতা করে থাকি। অনেক সময় স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ এলাকার লোকজন সামাজিক মীমাংসার নামে ঘটনাকে ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করে থাকে। আবার ভিকটিম নিজেও সমাজের লজ্জা থেকে বাঁচতে ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করে। তারপরও আমরা নির্যাতিতা নারী ও শিশুর সার্বিক খবরাখবর রাখি। যাতে ঘটনার পুনরাবৃত্তি না ঘটে।
খাগড়াছড়ির খাগড়াপুর মহিলা কল্যাণ সমিতির সভানেত্রী শেফালিকা ত্রিপুরা বলেন, সমাজে নারীদের নিরাপত্তা মোটেও নেই। পুরুষতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থার দৃষ্টিকোণের কারণে আমরা নির্যাতনের শিকার হয়ে আসছি। ঘটনার পর যদি আসামি আটক হতো, তার যদি শাস্তি হতো তাহলে নির্যাতন কমে আসতো। তাছাড়া সামাজিক অবক্ষয় ও সচেতনার অভাবে নারীর মুক্তি ঘটছে না। খাগড়াছড়িতে তিনি ভিকটিম সার্পোট সেন্টার স্থাপনের দাবি জানান।
নারী নেত্রী শাপলা ত্রিপুরা বলেন, নারী সহিংসতা বন্ধ করতে হলে বৈষম্যমূলক দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে হবে। সমাজে জনসচেতনামূলক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। এতে করে আস্তে আস্তে নির্যাতনের সংখ্যা কমবে। তিনি আইনের যথাযথ প্রয়োগের জন্য প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানান।
তবে খাগড়াছড়ির পুলিশ সুপার আহমার উজ্জামান বলেন, ঘটনার পরপর আইনের প্রয়োগ হচ্ছে বলে ঘটনার সংখ্যা বাড়ছে। এখন আর সামাজিক বিচারের নামে ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার সুযোগ নেই। সরকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমনে ট্রাইব্যুনাল গঠন করেছে। আমরা সচেষ্ট আছি। সহিংসতা রোধে জনগণের সচেতনার উপর তিনি গুরুত্বারোপ করেছেন।
বাংলাদেশ সময়: ০০৫৭ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০২, ২০১৯
এডি/এসএইচ