ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

সালতামামি

সালতামামি ২০১৯

বছর শেষে আলোচনায় ‘শুদ্ধি অভিযান’

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭২৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৭, ২০১৯
বছর শেষে আলোচনায় ‘শুদ্ধি অভিযান’

ঢাকা: ঘটনাবহুল আরেকটি বছর ২০১৯ প্রায় শেষের দিকে। বছরের শেষলগ্নে এসে প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তির হিসাব মিলিয়ে নতুন বছরের প্রস্তুতি সবক্ষেত্রেই। দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি পর্যালোচনায় বিদায়ী বছরে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল সরকার ঘোষিত ‘শুদ্ধি অভিযান’।

বছরের মাঝামাঝি সময়ে দল-মত নির্বিশেষ ‘শুদ্ধি অভিযানের’ ঘোষণা দেয় সরকার। এরপরই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে বিভিন্ন খাতের অরাজকতা, বিশৃঙ্খলা ও অবৈধ অর্থের বিরুদ্ধে তৎপরতা শুরু করে সংশ্লিষ্ট আইন প্রয়োগকারী বিভিন্ন সংস্থা।

আলোচিত ক্যাসিনো অভিযানের নামে দৃশ্যমান এ বিশেষ অভিযানে সরাসরি দায়িত্ব পালন করে এলিট ফোর্স র‌্যাপিড অ্যাকশান ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)।
 
গত ১৮ সেপ্টেম্বর রাজধানীতে অবৈধ ক্যাসিনোর বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করে র‌্যাব, যাকে সরকার ঘোষিত শুদ্ধি অভিযানের অংশ হিসেবেই আখ্যায়িত করেছেন সংশ্লিষ্টরা। এ অভিযানে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সভাপতি (বহিষ্কৃত) ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাটসহ গ্রেফতার করা হয় অন্তত ১০ জনকে। নগদ প্রায় সাড়ে ৮ কোটি টাকাসহ জব্দ করা হয় প্রায় ১৬৬ কোটি টাকার এফডিআর, যা শুরু থেকেই পেয়েছে ব্যাপক জনসমর্থন, জনমনে সৃষ্টি করেছে আস্থা।
 
র‌্যাব সদর দফতরের তথ্য অনুযায়ী, ১১টি ক্যাসিনো/ক্লাবে অভিযান পরিচালনা করেছে র‌্যাব। এর মধ্যে রাজধানীতে ৮টি এবং চট্টগ্রামে ৩টি। এসব ক্লাব থেকে উদ্ধারকৃত ক্যাসিনো সামগ্রীর দাম প্রায় কয়েক কোটি টাকা। আর সব মিলিয়ে ক্যাসিনোকেন্দ্রীক ক্লাব, বাসস্থান ও অফিসসহ অন্তত ২১টি অভিযান পরিচালিত হয়।

অভিযান পরিচালিত ক্লাবগুলো হলো- ফকিরাপুল ইয়াং ম্যান্স ক্লাব, ওয়ান্ডার্স ক্লাব, মুক্তিযোদ্ধা চিত্তবিনোদন ক্লাব, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ক্রীড়া চক্র, গোল্ডেন ঢাকা বাংলাদেশ, কলাবাগান ক্রীড়া চক্র, ধানমন্ডি ক্লাব, ফু-ওয়াং ক্লাব এবং চট্টগ্রামের মুক্তিযোদ্ধা ক্লাব, আবহানী ক্লাব, মোহামেডাম ক্লাব। এই 

অভিযানে উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিসহ গ্রেফতার করা হয়েছে ২০ জনকে। এছাড়া বিভিন্ন ক্যাসিনোতে র‌্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে ২০১ জনকে আর্থিক জরিমানাসহ বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে।  

এ পর্যন্ত র‌্যাব দেশি-বিদেশি মুদ্রাসহ প্রায় ৯ কোটি নগদ টাকা জব্দ করেছে। উদ্ধার করা হয়েছে ১৬৬ কোটি ২৭ লাখ টাকার এফডিআর, ১৩২টি বিভিন্ন ব্যাংকের চেক বই এবং ৬ কোটি ৭৭ লাখ টাকার চেক। ৭.২০ ভরি অলংকার (৮ কেজি) জব্দ করা হয়েছে, যার আনুমানিক বাজার মূল্য ৪ কোটি টাকা। এছাড়া, বৈধ অস্ত্রের অবৈধ ব্যবহার এবং অবৈধ অস্ত্র হিসেবে মোট ২৫টি আগ্নেয়াস্ত্র জব্দ করা হয়েছে। পাশাপাশি বিপুল পরিমাণ ইয়াবা, বিদেশি মদ উদ্ধার করেছে বাহিনীটি।

অভিযান শুরুর দিন ১৮ সেপ্টেম্বর বিকেলে ফকিরাপুলের ইয়াং ম্যানস ক্লাবের ক্যাসিনোতে অভিযান চালায় র‌্যাব। ওইদিন রাতেই একে একে ওয়ান্ডার্স ক্লাব, মুক্তিযোদ্ধা চিত্তবিনোদন ক্লাব, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ক্রীড়া চক্র, গোল্ডেন ঢাকা বাংলাদেশ ক্লাবে অভিযান চালিয়ে অবৈধ ক্যাসিনোর সন্ধান পায়। একই দিন রাতে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক (পরে বহিষ্কৃত) খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়াকে গুলশানের বাসা থেকে অস্ত্র ও মাদকসহ গ্রেফতার করা হয়।  

২০ সেপ্টেম্বর আরেক যুবলীগ নেতা ‘টেন্ডারবাজ’ খ্যাত জি কে শামীমকে গ্রেফতার করে র‌্যাব। এ সময় তার অফিস থেকে ১ কোটি ৮০ লাখ টাকা ও ১৬৫ কোটি টাকার এফডিআর উদ্ধার করা হয়। একই দিন রাতে রাজধানীর কলাবাগান ক্রীড়াচক্র ও ধানমন্ডি ক্লাবে অভিযান চালানো হয়, গ্রেফতার করা হয় কলাবাগান ক্লাবের সভাপতি ও কৃষকলীগ নেতা শফিকুল আলম ফিরোজকে।
 
২৬ সেপ্টেম্বর রাতে রাজধানীর মনিপুরী পাড়ার বাসায় অভিযান চালিয়ে মাদকসহ গ্রেফতার করা হয় বিসিবির পরিচালক ও মোহামেডান ক্লাবের ডিরেক্টর ইনচার্জ লোকমান হোসেন ভূঁইয়াকে। ৩০ সেপ্টেম্বর দুপুরে বিদেশে পালিয়ে যাওয়ার সময় থাইল্যান্ডগামী এক বিমান থেকে নামিয়ে আনা হয় অনলাইন ক্যাসিনোর জনক সেলিম প্রধানকে।
 
৬ অক্টোবর সবচেয়ে আলোচিত ঢাকা মহানগর দক্ষিন যুবলীগের সভাপতি (পরে বহিষ্কৃত) ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাট ও তার সহযোগী এমরানুল হক আরমানকে কুমিল্লা থেকে গ্রেফতার করে র‌্যাব। পরে তাকে সঙ্গে নিয়ে রাজধানীতে তার অফিস ও কয়েকটি বাসায় অভিযান চালানো হয়।
 
১১ অক্টোবর ভোরে শ্রীমঙ্গলের কলেজ গেট এলাকার এক বান্ধবীর বাসা থেকে অবৈধ পিস্তল-গুলি ও নগদ দুই লাখ টাকাসহ ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের ৩২ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর হাবিবুর রহমান মিজান ওরফে পাগলা মিজানকে গ্রেফতার করে র‌্যাব। পরে তার বাসা ও কার্যালয়ে অভিযান চালিয়ে বিভিন্ন ব্যাংকের ৭ কোটি ৬৯ লাখ ৯০ হাজার টাকার চেক ও এফডিআর জব্দ করা হয়।

ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান শুরুর পর আত্মগোপনে যান ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ৩৩ নম্বর ওয়ার্ডের নির্বাচিত কাউন্সিলর তারেকুজ্জামান রাজীব। সবশেষে গত ১৯ অক্টোবর রাতে রাজধানীর ভাটারা থানা এলাকার বাসা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। সর্বশেষ ৩১ অক্টোবর টিকাটুলির নিজ কার্যালয় থেকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) ৩৯ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ময়নুল হক মঞ্জুকে গ্রেফতার করা হয়। অভিযোগ রয়েছে, তিনি চাঁদাবাজির মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা অবৈধভাবে অর্জন করেছেন এবং সেসব অর্থ আমেরিকায় বসবাসরত পরিবারের কাছে হুন্ডির মাধ্যমে পাচার করেছেন।
 
এদিকে, র‌্যাবের এই অভিযানের মধ্যে বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়েছে মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর। অধিদফতরের বিভিন্ন অভিযানের মধ্যে সবচেয়ে আলোচিত অভিযান ছিল গত ২৭ অক্টোবর বিতর্কিত ব্যবসায়ী আজিজ মোহাম্মদ ভাইয়ের বাসায় অভিযান। গুলশান-২ নম্বরে তার বাসায় অভিযান চালিয়ে ক্যাসিনোসামগ্রী এবং বিপুল পরিমাণ মদ, সিসা ও সিসা উপকরণ এবং বিয়ার জব্দ করা হয়।
 
সার্বিক অভিযান প্রসঙ্গে র‌্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক লে. কর্নেল সারওয়ার বিন কাশেম বাংলানিউজকে বলেন, ‘আমরা ক্যাসিনো বিরোধী অভিযান শুরু করেছিলাম, এ অভিযানের ফলে সারাদেশের কোথাও এখন ক্যাসিনো নেই। এর সঙ্গে জড়িত সকলের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালিত হয়েছে, সংশ্লিষ্ট অনেক হর্তা-কর্তাদেরকে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে। ’
 
অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘ক্যাসিনোর বিরুদ্ধে যে অভিযান শুরু করেছিলাম, সে ক্ষেত্রে আমরা শতভাগ সফল। ক্যাসিনোর সঙ্গে জড়িত অনেককেই আইনের আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে। বিষয়গুলো নিয়ে তদন্ত চলমান রয়েছে, এটা একটা চলমান প্র্রক্রিয়া। ভবিষ্যতে আরো কারো সম্পৃক্ততা পেলে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ’

বাংলাদেশ সময়: ১২১৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৭, ২০১৯
পিএম/এজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।