ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

সালতামামি

বিশ্বজুড়ে বিক্ষোভের বছর

ফারাহ্‌ মাহমুদ, নিউজরুম এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭৫০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৮, ২০১৯
বিশ্বজুড়ে বিক্ষোভের বছর

২০১৯ সালকে বলা হচ্ছে ‘দ্য ইয়ার অব দ্য স্ট্রিট প্রটেস্টার’ বা সড়কে বিক্ষোভকারীদের বছর। সাংবাদিক ও বিশ্লেষকদের অনেকে এভাবেই দেখছেন এ বছর বিভিন্ন দেশে ঘটে যাওয়া বিক্ষোভগুলোকে। বছরজুড়ে বিভিন্ন দেশে কোনো একটি বিষয় নিয়ে ক্ষুব্ধ হয়ে বিক্ষোভকারীরা রাস্তায় নামলে তা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে বড় পরিসরে। শেষ পর্যন্ত এসব বিক্ষোভের বেশিরভাগই সরকারবিরোধী আন্দোলনে রূপ নেয়।

ভারতে সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের প্রতিবাদে আন্দোলনকারীরা, ছবি: সংগৃহীত

ভারত: সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের (সিএএ) প্রতিবাদে বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে ওঠে ভারত। ২০১৯ সালের ১২ ডিসেম্বর পাস হওয়া এ আইনে ১৯৫৫ সালের ভারতীয় নাগরিকত্ব আইন সংশোধন করে বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও আফগানিস্তান থেকে যাওয়া অমুসলিম অবৈধ অভিবাসীদের নাগরিকত্ব দেওয়ার কথা বলা হয়েছে।

বৈষম্যমূলক এ আইনের বিরুদ্ধে ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে বিক্ষোভ চলছে। এছাড়া, বিক্ষোভ চলছে জাতীয় নাগরিকপঞ্জি (এনআরসি) ও জাতীয় জনসংখ্যা নিবন্ধনের (এনপিআর) বিরুদ্ধেও। চলমান বিক্ষোভে পুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষে এ পর্যন্ত অন্তত ২৫ জন নিহত হয়েছেন।


অপরাধী প্রত্যর্পণ বিল বাতিলের দাবিতে হংকংয়ের আন্দোলনরতরা, ছবি: সংগৃহীত

হংকং: চলতি বছরের জুন মাসে চীন প্রস্তাবিত একটি অপরাধী প্রত্যর্পণ বিল বাতিলের দাবিতে আন্দোলন শুরু হয় চীনের আধা-স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল হংকংয়ে। গণতান্ত্রিক হংকং প্রতিষ্ঠার দাবিতে বিক্ষোভ এখনো অব্যাহত রয়েছে। এ পর্যন্ত প্রায় ছয় হাজার বিক্ষোভকারীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের মধ্যে প্রায় এক হাজার জনের বয়স ১৮ বছরেরও কম।  

ইরান: ইরানে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার প্রতিবাদে ১৫ নভেম্বর শুরু হয় বিক্ষোভ। যুক্তরাজ্যভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল দাবি করেছে বিক্ষোভে এখন পর্যন্ত তিন শতাধিক মানুষ নিহত ও হাজারও মানুষ আহত হয়েছেন। কয়েক হাজার বিক্ষোভকারীকে আটক করার কথা স্বীকার করলেও ইরানের দাবি, বিক্ষোভে কারো প্রাণহানি হয়নি।

ইরাক: ১ অক্টোবর থেকে উন্নত জীবনব্যবস্থা ও কর্মসংস্থান এবং দুর্নীতির অবসানের দাবিতে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে ইরাকে। চলমান এ বিক্ষোভে নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে এ পর্যন্ত চার শতাধিক বিক্ষোভকারী নিহত ও ১৫ হাজারের বেশি মানুষ আহত হয়েছেন। ৩০ নভেম্বর প্রবল বিক্ষোভের মুখে ইরাকের প্রধানমন্ত্রী আদেল আবদুল মাহদি পদত্যাগ করেন।


বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে করারোপের প্রতিবাদে লেবাননে বিক্ষোভ, ছবি: সংগৃহীত

লেবানন: ১৭ অক্টোবর হোয়াটসঅ্যাপসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নতুন কর আরোপের ঘোষণা দেয় লেবানন সরকার। এতে বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে ওঠে লেবাননের জনতা। পরে কর প্রত্যাহার করা হলেও রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরকারবিরোধী বিক্ষোভ চলতে থাকে দেশটিতে। ২৯ অক্টোবর তীব্র বিক্ষোভ-আন্দোলনের মুখে পদত্যাগ করেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী সাদ হারিরি। তারপরও বিক্ষোভ চলছে লেবাননে।


মেট্রোরেলের ভাড়া বাড়ানোর প্রতিবাদে চিলিতে বিক্ষোভ, ছবি: সংগৃহীত

চিলি: ১৮ অক্টোবর মেট্রোরেলের ভাড়া বাড়ানোর প্রতিবাদে বিক্ষোভ শুরু করে দক্ষিণ আমেরিকার দেশ চিলির সাধারণ মানুষ। ১৯ অক্টোবর দেশটির সরকার ভাড়া বাড়ানোর সিদ্ধান্ত স্থগিত করলেও রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক বৈষম্য নিরসনে বিক্ষোভ চলছে এখনো। বিক্ষোভে সহিংসতায় এ পর্যন্ত ২৬ জন নিহত ও কয়েকশ’ মানুষ আহত হয়েছেন।

কলম্বিয়া: ২১ নভেম্বর কর ও পেনশন ব্যবস্থা সংস্কার প্রস্তাব প্রত্যাহারের দাবিতে ধর্মঘট শুরু হয় দক্ষিণ আমেরিকার দেশ কলম্বিয়ায়। পরে তা রূপ নেয় সরকারবিরোধী বিক্ষোভে। শিক্ষা খাতে ব্যয়, বেতন-ভাতা, কর্মসংস্থান বাড়ানো, চিকিৎসা ব্যবস্থা উন্নত করার দাবিতে বিক্ষোভ অব্যাহত রেখেছে দেশটির জনতা।  

ইকুয়েডর: এ বছরের অক্টোবরে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের কাছ থেকে ঋণ নেওয়ার শর্ত হিসেবে জ্বালানিতে ভর্তুকি প্রত্যাহারের ঘোষণা দেয় ইকুয়েডরের প্রেসিডেন্ট লেনিন মোরেনো। এর প্রতিবাদে রাস্তায় নামে দেশটির হাজারও জনতা। পুলিশ ও বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষের মধ্যে দুই মাসের জন্য জরুরি অবস্থা জারি করেন মোরেনো। তারপরও মাত্র দু’ সপ্তাহের বিক্ষোভেই জ্বালানি ভর্তুকি প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত বাতিল করতে বাধ্য হয় সরকার।  

বলিভিয়া: চলতি বছরের ২০ অক্টোবর অনুষ্ঠিত সাধারণ নির্বাচনে ব্যাপক কারচুপির অভিযোগে বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে ওঠে উত্তর আমেরিকার দেশ বলিভিয়া। এ বিক্ষোভের মুখে পদত্যাগ করতে বাধ্য হন দেশটির প্রেসিডেন্ট ইভো মোরালেস। বিক্ষোভে সহিংসতায় অন্তত ১৮ জন নিহত হয়েছেন। এছাড়া, আটক করা হয়েছে ছয় শতাধিক বিক্ষোভকারীকে।  

ফ্রান্স: ৫ ডিসেম্বর থেকে প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁর পেনশন ব্যবস্থা ও অবসরের সময়সীমা সংস্কার পরিকল্পনা বাতিলের দাবিতে বিক্ষোভ-ধর্মঘটে অচলাবস্থা শুরু হয় ফ্রান্সে। দেশজুড়ে এধরনের ধর্মঘট ফ্রান্সের গত কয়েক যুগের ইতিহাসে এই প্রথম।


ডানপন্থি নেতা মাতেও সালভিনি ও লিগ পার্টির বিরুদ্ধে বিক্ষোভ, ছবি: সংগৃহীত

ইতালি: নভেম্বর থেকে কট্টর ডানপন্থি নেতা মাতেও সালভিনি ও লিগ পার্টির বিরুদ্ধে বিক্ষোভ চলছে ইতালিতে। ৩০ নভেম্বর  ইতালির ফ্লোরেন্সে তরুণদের নেতৃত্বে ‘সার্ডিন মুভমেন্ট’ এর র্যালিতে অংশ নেন ১০ হাজারেরও বেশি মানুষ। সম্প্রতি ইতালিতে উগ্রবাদী মতাদর্শের বিরুদ্ধে একটি প্রতীক হয়ে উঠেছে সার্ডিন মাছ। তার অন্যতম কারণ, বড় আকারের শত্রু মোকাবিলায় সার্ডিন মাছেরা দলবদ্ধ হয়ে চলাফেরা করে।


৯ কাতালান নেতাকে কারাদণ্ড দেওয়ার প্রতিবাদে স্বাধীনতাকামী কাতালানদের বিক্ষোভ, ছবি: সংগৃহীত
স্পেন: স্পেনের স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল কাতালোনিয়ায় স্বাধীনতার দাবিতে গণভোট আয়োজনের ঘটনায় ১৪ অক্টোবর ‘রাষ্ট্রদ্রোহের’ অভিযোগে ৯ কাতালান নেতাকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেন দেশটির সুপ্রিম কোর্ট। এ ঘটনার প্রতিবাদে বিক্ষোভ শুরু করেন স্বাধীনতাকামী কাতালানরা। ১৮ অক্টোবর বিক্ষোভে রাস্তায় নেমে সেন্ট্রাল বার্সেলোনা অচল করে দেন প্রায় আধা লাখ মানুষ।  

আলজেরিয়া: গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা ও শাসন ব্যবস্থা পরিবর্তনের দাবিতে প্রবল গণআন্দোলনের মুখে এ বছরের এপ্রিলে পদত্যাগ করেন আলজেরিয়ার প্রেসিডেন্ট আবদেলাজিজ বুতেফ্লিকা। ২০ বছর দেশটির প্রেসিডেন্ট ছিলেন তিনি। বিক্ষোভকারীদের আপত্তি সত্ত্বেও ১২ ডিসেম্বর দেশটিতে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এ নির্বাচনে ৫৮ শতাংশেরও বেশি ভোট পেয়ে দেশটির প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন আবদেলমাদজিদ তেবোনে। ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্ট বুতেফ্লিকা সরকারের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন তেবোনে। নির্বাচন সুষ্ঠু হয়নি দাবি করে এবং নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্টকে বয়কট করে বিক্ষোভকারীরা এখনো আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন।

এ দেশগুলো ছাড়াও ২০১৯ সালে বিক্ষোভে উত্তাল হয়েছে ইন্দোনেশিয়া, রাশিয়া, চেক প্রজাতন্ত্র, হাইতি, ভেনিজুয়েলা, জিম্বাবুয়ে, সুদান, ইথিওপিয়া, মিশর, সাউথ আফ্রিকাসহ আরও অনেক দেশ।  

বাংলাদেশ সময়: ০২৫০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৮, ২০১৯
এফএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।