ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

সালতামামি

জঙ্গি হামলার বিচার: আলোচনায় ‘আইএস’ এর টুপি

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৫৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩০, ২০১৯
জঙ্গি হামলার বিচার: আলোচনায় ‘আইএস’ এর টুপি .

ঢাকা: দেশের ইতিহাসে ভয়াবহ জঙ্গি হামলা হয়েছিল ২০১৬ সালে হলি আর্টিজান বেকারিতে। ঘৃণ্য ও বর্বরতম এই জঙ্গি হামলা মামলার রায় ছিল ২০১৯ সালে আদালত অঙ্গনে অন্যতম আলোচিত ঘটনা। বিচারিক আদালতের রায়ে আট আসামির সাতজনের মৃত্যুদণ্ড হয়। তবে রায়ের দিন দু’জন আসামির একটি টুপি পরা কেন্দ্র করে শুরু হয় তুমুল আলোচনা-সমালোচনা। 

যে টুপিটিকে আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেট বা আইএস-এর প্রতীক হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এছাড়াও ব্লগার অভিজিত রায় হত্যা ও জাগৃতি প্রকাশনীর স্বত্বাধিকারী ফয়সাল আরেফিন দীপন হত্যা মামলার বিচারকাজও শুরু হয়েছে ২০১৯ সালে।

তাই জঙ্গিদের বিচারে এই বছরে বড় অগ্রগতি হয়েছে বলেই মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

২০১৬ সালের ১ জুলাই রাতে গুলশানের হলি আর্টিজান রেস্টুরেন্টে হামলা চালিয়ে বিদেশি নাগরিকসহ ২০ জনকে হত্যা করে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন নব্য জেএমবির সদস্যরা। পরদিন সকালে সকালে সেনাবাহিনীর প্যারা কমান্ডো সদস্যদের অভিযানকালে দেশি-বিদেশি ১৩ জন জিম্মিকে জীবিত অবস্থায় উদ্ধার করতে সক্ষম হয়। এর আগেই দু’জন বিদেশিসহ ১৯ জনকে জীবিত অবস্থায় উদ্ধার করে। জিম্মি থাকা অবস্থায় হত্যা করা হয় ৯ জন ইতালীয়, ৭ জন জাপানি, একজন ভারতীয়, একজন বাংলাদেশি-আমেরিকান দ্বৈত নাগরিক ও দু’জন বাংলাদেশিসহ মোট ২০ জনকে। এ ঘটনায় জঙ্গিদের ছোড়া গ্রেনেডের আঘাতে প্রাণ হারান বনানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সালাউদ্দিন আহমেদ ও সহকারী পুলিশ কমিশনার রবিউল ইসলাম।

এই ঘটনায় হওয়া মামলায় ২০১৮ সালের বছরের ২৬ নভেম্বর অভিযোগ গঠনের মাধ্যমে বিচার শুরুর নির্দেশ দেন সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. মজিবুর রহমান। এক বছরের মধ্যে মামলায় মোট ২১১ জন সাক্ষীর মধ্যে ১১৩ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়। এরপর গত ১৭ নভেম্বর আসামিদের আত্মপক্ষ সমর্থন এবং রাষ্ট্র ও আসামিপক্ষের আইনজীবীদের যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের মাধ্যমে বিচারকাজ শেষ হয়। আর মামলার রায় ঘোষণা করা হয় ২৭ নভেম্বর।

বিচারে ৮ আসামির সাতজনকে মৃত্যুদণ্ড দেন আদালত। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন- জাহাঙ্গীর হোসেন ওরফে রাজীব গান্ধী, আসলাম হোসেন ওরফে র‌্যাশ, আব্দুস সবুর খান, রাকিবুল হাসান রিগ্যান, হাদিসুর রহমান, শরিফুল ইসলাম ওরফে খালেদ এবং মামুনুর রশিদ রিপন। আর খালাস পেয়েছেন মিজানুর রহমান ওরফে বড় মিজান।

এই মামলার রায়কে ছাপিয়ে অবশ্য আলোচনায় আসে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি রাকিবুল হাসান রিগ্যানের পরা একটি টুপি। টুপিতে থাকা লেখা মিলে যায় আইএস-এর চিহ্নের সঙ্গে। রায় ঘোষণার পর রিগ্যানকে যখন এজলাস থেকে বের করা হয়, তখন তার মাথায় ছিল ওই টুপি। এই টুপি কোথা থেকে এলো তা নিয়ে শুরু হয় তুমুল আলোচনা। পুলিশ ও কারাকর্তৃপক্ষ আলাদা কমিটি করেও টুপির কোনো উৎস বের করতে পারেনি।

শেষ পর্যন্ত গত ৩ ডিসেম্বর অন্য একটি মামলার হাজিরা দিতে আদালতে রিগ্যান জানান, রায়ের পর বের হওয়ার সময় কেউ একজন তাকে টুপিটি দেন। তবে যে টুপিটি দিয়েছেন তাকে তিনি চিনতে পারেননি। তিনি বলেন, কালেমায় শাহাদাত লেখা ছিল টুপিতে, তাই ভালো লাগায় টুপিটি নিয়েছি। প্রিজনভ্যানে ওঠার পর রাজীব গান্ধী আমার কাছ থেকে ওই টুপিটি নিয়ে পরে।

সাক্ষ্য দিয়েই বিদায় নিলেন অজয় রায়:
২০১৫ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি রাত সোয়া ৯টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি এলাকায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের পাশে বিজ্ঞানমনষ্ক লেখক ও ব্লগার অভিজিৎকে সন্ত্রাসীরা কুপিয়ে জখম করে। আহত অবস্থায় তাকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নেওয়া হলে রাত সাড়ে ১০টার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। এ ঘটনায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক অজয় রায় শাহবাগ থানায় এক‌টি হত্যা মামলা দা‌য়ের ক‌রেন।

সেই মামলায় গত ১৩ মার্চ আদাল‌তে অভিযোগপত্র দাখিল ক‌রেন পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের (সিটিটিসি) পরিদর্শক মনিরুল ইসলাম। এরপর গত ১ আগস্ট অভি‌যোগ গঠ‌নের মাধ্য‌মে বিচার শুরুর নির্দেশ দেন আদালত। সাধারণত বাদীর সাক্ষীর মাধ্যমে মামলার বিচার শুরু হয়। সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য ধার্য প্রথম তিনটি তারিখে অধ্যাপক অজয় রায় আদালতে হাজির হননি। তবে গত ২৮ অক্টোবর তিনি মামলায় সাক্ষ্য দিয়ে যান।

সাক্ষ্য দেওয়ার এক মাস ১০ দিনের মাথায় গত ১০ ডিসেম্বর মারা যান একুশে পদকপ্রাপ্ত ৮৫ বছর বয়সী পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের এই অধ্যাপক। তাই সাক্ষ্য দিয়ে মামলার বিচার শুরুতে সহযোগিতা করলেও ছেলে হত্যার বিচার দেখে যেতে পারেননি অধ্যাপক অজয় রায়।

দীপন হত্যার বিচার শুরু, চার্জশিট হয়নি নিলয় হত্যার:
২০১৬ সালের ৩১ অক্টোবর জাগৃতি প্রকাশনীর স্বত্বাধিকারী ফয়সাল আরেফিন দীপন সন্ত্রাসী হামলায় নিহত হন। এ ঘটনায় দীপনের স্ত্রী রাজিয়া রহমান বাদী হয়ে শাহবাগ থানায় একটি মামলা করেন। ২০১৮ সালের ১৫ নভেম্বর সন্ত্রাসবিরোধী আইনে চার্জশিট দাখিল করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ডিবি দক্ষিণের সহকারী পুলিশ কমিশনার ফজলুর রহমান।    

এই মামলায় গত ১৩ অক্টোবর অভিযোগ গঠনের মাধ্যমে বিচার শুরুর নির্দেশ দেন আদালত। গত ১ ডিসেম্বর দীপনের স্ত্রী রাজিয়া রহমানের সাক্ষ্যগ্রহণের মাধ্যমে মামলার বিচারকাজ শুরু হয়।

এদিকে ২০১৫ সালের ৭ আগস্ট রাজধানীর গোড়ানের একটি বাড়ির পঞ্চম তলায় ব্লগার নীলাদ্রি চট্টোপাধ্যায় নিলয়কে কুপিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। ঘটনার দিন রাতে নিলয়ের স্ত্রী অজ্ঞাত পরিচয় চারজনকে আসামি করে খিলগাঁও থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। এ ঘটনায় তদন্ত প্রতিবেদনের জন্য বারবার দিনক্ষণ নির্ধারণ হলেও ২০১৯ সালে প্রতিবেদন দাখিল করা হয়নি।  
 
বাংলাদেশ সময়: ১১৫৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩০, ২০১৯
কেআই/এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।