মূলত সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার আন্দোলনের মধ্য দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিচিতি পান নুর। আন্দোলন চলাকালীন সময়ে ৩০ জুন (২০১৮) কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার চত্বরে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের হাতে বেড়ধক পিটুনির পর সহমর্মিতা পেয়েছিলেন শিক্ষার্থীদের।
বছরের শুরুতে ১১ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচন তারিখ ঘোষণা করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচনের গঠনতন্ত্রের ৮(ই) ধারা অনুযায়ী ডাকসুর সভাপতি উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান। নির্বাচন পরিচালনার জন্য চিফ রিটার্নিং অফিসারকে সার্বিক সহায়তা দেওয়ার জন্য পাঁচজন অধ্যাপককে রিটার্নিং অফিসার হিসেবে নিয়োগ করা হয়। বিভিন্ন সংগঠনের সঙ্গে মতবিনিময়ের পর প্রার্থীর বয়স ৩০ বছর নির্ধারণ করা হয়। তবে ভোটকেন্দ্র হিসেবে হলের পরিবর্তে অ্যাকাডেমিক ভবন করার দাবি উঠলেও প্রশাসন তা আমলে নেয়নি। ১৯ ফেব্রুয়ারি থেকে ২৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চলে মনোনয়ন ফরম বিতরণ। ২০ ফেব্রুয়ারি বিকেলে হলের নোটিশ বোর্ডে ভোটারতালিকা প্রকাশ করা হয়। ৭ মার্চ নুরুল হক নূর তার প্যানেলের ইশতেহার ঘোষণা করেন।
নির্বাচনের আগে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কড়াকড়ি আরোপ করে। নির্বাচনের দিন বিভিন্ন অনিয়মের খবরে শুরু হয় আন্দোলন। কুয়েত মৈত্রী হলে সিলমারা ব্যালট বাক্স উদ্ধার করা হয়। রোকেয়া হলেও ভোটচুরির অভিযোগ এনে আন্দোলন হয়। মারধরের শিকার হন ভিপি প্রার্থী নুর। ভোটগ্রহণে বিভিন্ন অনিয়মের পর ছাত্রলীগ ছাড়া বিভিন্ন প্যানেল নির্বাচন বর্জন করে অনশন-মিছিল-সমাবেশ শুরু করে। ভোটগ্রহণ শেষ হওয়ার পরেও ভোট গণণায় নেওয়া হয় অনেক সময়। গভীর রাতে সিনেট ভবনে উপাচার্য ভিপি পদে নুরুল হক নুরকে বিজয়ী ঘোষণা করেন। সঙ্গে সঙ্গে ভিপি পদে ছাত্রলীগের সভাপতি রেজাওয়ানুল হক চৌধুরী শোভনের পরাজয়ে তার সমর্থকরা বিক্ষোভ করে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান নেন। নির্বাচনের পরদিন টিএসসিতে নুরের ওপর হামলার চেষ্টা চালান ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা। নানা নাটকীয়তার পর ছাত্রলীগ তাকে ভিপি হিসেবে মেনে নেয়। ১৬ মার্চ গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎকালে নুরের দেওয়া বক্তব্য ছাত্রলীগ ইতিবাচকভাবেই গ্রহণ করে।
তবে ভিপি নির্বাচিত হওয়ার পরেও ক্যাম্পাসের ভেতরে-বাইরে বিভিন্ন সময় মারধরের শিকার হয়েছেন নুরুল হক নুর। ২ এপ্রিল বিশ্ববিদ্যালয়ের এসএম হলে এক শিক্ষার্থীকে ছাত্রলীগের মারধরের অভিযোগ জমা দিতে গেলে তাকে অবরুদ্ধ করে নির্যাতন করেন সংগঠনটির নেতাকর্মীরা। পরে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন তিনি। বছরের শেষের দিকেও মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের হামলায় গুরুতর আহত হন নুর।
ডাকসু নির্বাচনে জয়ী হয়েও এতে অনিয়মের বিষয়ে কথা বলছেন নুর। ২৭ জুন বিশ্ববিদ্যালয় সিনেটের বার্ষিক অধিবেশনে ছাত্র-প্রতিনিধির বক্তব্যে তিনি বলেন, আমিও আপনাদের মতো ডাকসু নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে মেনে নেবো। কিন্তু যেসব পত্রিকা অনিয়ম নিয়ে রিপোর্ট করেছে, তাদের বিরুদ্ধে মামলা দেন। মামলা না দিলে ঢালাওভাবে কথা বলবেন না যে, নির্বাচনে অনিয়ম হয়নি। অসংখ্য অনিয়ম হয়েছে, এর প্রমাণ রয়েছে।
নির্বাচিত হওয়ার পাঁচ মাস পর নিজের কাজের মূল্যায়ন করতে গিয়ে ভিপি নুরুল হক নুর বাংলানিউজকে বলেছিলেন, ডাকসু দৃশ্যমান কিছু করতে পারেনি। এর ব্যর্থতা স্বীকার করতেই হবে। তবে সে ব্যর্থতা আমার নয়। আমি পরিবেশ-পরিস্থিতির কারণে কিছুটা ব্যর্থ হয়েছি। কিন্তু এখানে ব্যর্থতা যে ২৩ জন সংখ্যাগরিষ্ঠ রয়েছেন তাদের এবং বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের। ডাকসু নির্বানে প্রশাসনের সহযোগিতায় ছাত্রলীগ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছে। যে কারণে আমরা চাইলেও সবকিছু করতে পারি না। আবার উপাচার্য ও ডাকসু কোষাধ্যক্ষেরও কোনো ইচ্ছা নেই এটিকে কার্যকর করার। দীর্ঘ তিন টার্মে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকার কারণে ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের একক আধিপত্য তৈরি হয়েছে। তবে তারপরও ডাকসু নির্বাচনের পর শিক্ষার্থীরা কিছুটা সক্রিয় হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৫৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩০, ২০১৯
এসকেবি/একে