ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

সালতামামি

সালতামামি ২০১৯

সিদ্ধান্তহীনতায় বছর পার বিএনপির

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৪০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩১, ২০১৯
সিদ্ধান্তহীনতায় বছর পার বিএনপির বিএনপির লোগো।

ঢাকা: দলীয় চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি আন্দোলন, সংসদে যোগ দেওয়া, দলের পুনর্গঠনসহ সবগুলো বিষয়েই পুরো বছর সিদ্ধান্তহীনতায় ছিল দেশের অন্যতম বড় রাজনৈতিক দল বিএনপি। গত বছরের ৩০ ডিসেম্বর বিতর্কিত একদাশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর থেকেই শুরু হয় তাদের সিদ্ধান্তহীনতা। বছরের শেষ দিন পর্যন্ত তারা সিদ্ধান্তহীনতার আবর্তেই ঘুরপাক খেয়েছে। 

বিষয়টি পুরোপুরি না হলেও আংশিক স্বীকার করেন দলের যুগ্ম-মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, ‘খালেদা জিয়ার মতো আপসহীন নেত্রী কারাগারে।

ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হাজার মাইল দূরে। সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে সমস্যা হওয়ার জন্য এটা কারণ হতেই পারে। ’  

বিএনপির সিদ্ধান্তহীনতার বিষয়গুলো পেছন ফিরে দেখা যাক-

নির্বাচন বর্জন, সংসদে যোগ দেওয়া না দেওয়া নিয়ে সিদ্ধান্তহীনতা 
২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনের পরের দিনই নির্বাচন প্রত্যাখান করে বক্তব্য দেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। একই সঙ্গে ঘোষণা দেন প্রত্যাখান করা নির্বাচনে যে কয়জন সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন তাদের সংসদে যোগ দেওয়ার প্রশ্নই আসে না। শেষ পর্যন্ত মহাসচিব তার কথায় অটল থাকলেও বাকি ৫ জন সংসদের যোগ দেন। পরে বলা হয়, রাজনৈতিক কৌশলের অংশ হিসেবেই ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের নির্দেশে তারা সংসদে যোগ দিয়েছেন।  

কর্মসূচি দিতে সিদ্ধান্তহীনতা
বিএনপি-জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ও ২০ দলীয় জোটের পক্ষ থেকে ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে ব্যাপক কারচুপির অভিযোগ আনা হয়। তাদের ভাষায়, ৩০ ডিসেম্বর দিনের পরিবর্তে ২৯ ডিসেম্বর রাতেই ভোট কেটে সরকারি দল বিজয় ছিনিয়ে নিয়েছে। এত বড় অভিযোগের পক্ষে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তোলার পক্ষে হুমকি-ধামকি থাকলেও বাস্তবে তেমন কিছুই দেখা যায়নি। বক্তৃতা-বিবৃতি-আলোচনা সভার মধ্যেই বছর পার হয়ে গেছে। এখানেও বড় ধরনের সিদ্ধান্তহীনতা দেখা গেছে দলটির নেতাদের মধ্যে।

তৃণমূলের দাবি থাকলেও কেন্দ্র কর্মসূচি দিতে ব্যর্থ হয়েছে
জানুয়ারি মাসে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর থেকেই বিএনপির তৃণমূলের দাবি ছিল ভোট কারচুপি করে গঠিত সরকারের বিরুদ্ধে কঠোর কর্মসূচি। কিন্তু কেন্দ্র থেকে বিক্ষোভ আর সমাবেশ ছাড়া তেমন কোনো কর্মসূচি দেয়া হয়নি। এতে তৃণমূলের কর্মীদের মধ্যে বছরজুড়েই ক্ষোভ ছিল। বিশ্লেষকরা মনে করেন, সিদ্ধান্তহীনতার কারণেই কর্মসূচি দিতে ব্যর্থ হয় বিএনপির হাই কমাণ্ড।

কর্মসূচি কে দেবে? 
বছরজুড়ে বিএনপির সিনিয়র নেতা থেকে শুরু করে মাঝারি ও তৃণমূল নেতারা আলোচনা সভা, মানববন্ধন আর ছোট খাটো বিক্ষোভ কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে বড় আন্দোলনের হুমকি দিলেও কোনো কর্মসূচি আসেনি। এ ক্ষেত্রে দলের সবচেয়ে সিনিয়র স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরীকে সারা বছর সরব থাকতে দেখা গেছে। প্রেসক্লাব-রিপোর্টার্স ইউনিটি-সুপ্রিম কোর্ট বার সমিতি মিলনায়তন থেকে শুরু করে রাজধানীর বিভিন্ন ঘরোয়া আলোচনা সভায় তারা বলেছেন, নেত্রীর মুক্তি ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য কঠোর কর্মসূচি দিতে হবে। কিন্তু কর্মসূচি কে দেবে এমন কোনো বক্তব্য তাদের কাছ থেকে পাওয়া যায়নি। সাংবাদিকরা প্রশ্ন করলেও মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর থেকে শুরু করে সিনিয়র নেতাদের বক্তব্য ছিল যথাসময়ে কঠিন কর্মসূচি দেওয়া হবে। কিন্তু এক বছরেও তাদের সেই যথাসময়টি আসেনি।

ছোট কর্মসূচিতেই পার হলো বছর
বছর জুড়ে দোয়া-মুনাজাত, কালো পতাকা মিছিল, মানববন্ধন, সমাবেশ আর ঘরোয়া আলোচনা সভায় ২০১৯ সালটি পার করেছে বিএনপি। খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে কোথাও দোয়া মুনাজাত, আলোচনা সভা, রুহুল কবির রিজভীর নেতৃত্বে প্রতি সপ্তাহে ২০-২৫ জন নেতাকর্মী নিয়ে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ঝটিকা মিছিলই ছিল বিএনপির কর্মসূচি। পুরো বছরে ঢাকার বাইরে বিভাগীয় শহরগুলোতে কয়েকটি সমাবেশই ছিল তাদের বড় কর্মসূচি।

খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য নিয়ে বছরজুড়ে আশঙ্কা 
২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হয়ে কারাগারে যাওয়ার পর থেকেই বিএনপি অভিযোগ করে আসছে খালেদা জিয়া অসুস্থ। ২০১৯ সালের জানুয়ারির পর থেকে এই অভিযোগ প্রতিদিনই তীব্র থেকে তীব্র হতে থাকে। যদিও সরকারপক্ষ বলছে, খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য ভাল আছে। বিএনপি বলছে, দিন দিন পঙ্গুত্বের দিকে যাচ্ছেন খালেদা জিয়া। কারাগারে রেখে ধীরে ধীরে তাকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে। বছরজুড়ে হাইকোর্টে জামিনের চেষ্টা করা হলেও ৩৬টি মামলার মধ্যে ৩৪ মামলায় জামিন হয় খালেদা জিয়ার। দুটি মামলায় জামিন না হওয়ার কারণে মুক্তি পাননি খালেদা।  

এ অবস্থায় দলের সিনিয়র আইনজীবীরা বলছেন, আইনী লড়াইয়ে খালেদা জিয়াকে মুক্ত করা যাবে না। খালেদা জিয়াকে আন্দোলনের মাধ্যমে মুক্ত করতে হবে।

রিজভীর সংবাদ সম্মেলন
পুরো বছর বিএনপির মধ্যে সবচেয়ে আলোচিত ব্যক্তি ছিলেন দলের সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। দীর্ঘ দু’বছর নয়াপল্টনে দলীয় কার্যালয়ে অবস্থান করা এই নেতাকে এখন বিএনপির ‘আবাসিক নেতা’ হিসেবে ব্যঙ্গ করেন বিরোধীরা। আর সংবাদ সম্মেলনের রেকর্ডটিও তার দখলে বলা যায়। বছরের প্রায় প্রতিদিন কোনো না কোনো ইস্যুতে দলীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছেন রুহুল কবির রিজভী। এতে দলের একটি অংশ সায় দিলেও তৃণমূলের নেতাকর্মীদের সমালোচনা করতে শোনা যায়। কেউ কেউ বলেন, রিজভীই দলকে জিইয়ে রেখেছেন। আবার অনেকে বলেন, দৈনিক সংবাদ সম্মেলন করে এর মূল্য কমিয়ে দিয়েছেন রিজভী।

কয়েকজনের পদত্যাগের গুঞ্জন থাকলেও দল ছেড়েছেন একজন
বছর জুড়ে বিএনপি ভাঙার গুঞ্জন ছিল রাজনৈতিক অঙ্গনে। দলের বেশ কয়েকজন সিনিয়র নেতার দল ছাড়ার বিষয়টি ছিল সবচেয়ে বেশি আলোচিত। তবে শেষ পর্যন্ত দলের ভাইস চেয়ারম্যান সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী এম মোরশেদ খান ছাড়া এ বছর আর কেউ দল ছাড়েননি। স্থায়ী কমিটির সদস্য লেফটেনেন্ট জেনারেল অব. মাহবুবুর রহমানের পদত্যাগের খবর গণমাধ্যমে প্রচার হলেও দলের দায়িত্বশীল কোনো নেতা বিষয়টি স্বীকার করেননি। যদিও মাহবুবুর রহমান নিজে গণমাধ্যমের কাছে বলেছেন, তিনি আর রাজনীতি করবেন না। পদত্যাগপত্র দিয়েছেন দলের মহাসচিবের কাছে। কিন্তু বিষয়টি দলের স্থায়ী কমিটিতে ওঠেনি বলে বাংলানিউজকে জানান স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলামের দাবি বিভিন্নভাবে বিএনপিকে ভাঙার চেষ্টা করা হলেও বিএনপি যেমন ছিল তেমনই আছে। বিএনপির সবার মধ্যে ঐক্য আছে।

ছাত্রদলের কাউন্সিল
শত বাধা বিপত্তির মধ্যেও দীর্ঘ ২৮ বছর পর ছাত্রদলের দুটি পদে সরাসরি ভোটে নির্বাচিত হয়েছেন সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনার ওই কাউন্সিলে আদালতের নিষেধাজ্ঞার পরও ভোট গ্রহণ করা হয়। ভোটে ফজলুর রহমান খোকন সভাপতি ও ইকবাল হোসেন শ্যামল সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। মূলদল বিএনপির বছরজুড়ে ব্যর্থতার খবরের মধ্যে সহযোগী সংগঠন ছাত্রদলের কাউন্সিল ছিল বছরের সেরা সফলতা।

সরকারের কাছে প্লট চেয়ে সমালোচিত রুমিন ফারহানা
নির্বাচন বর্জন আর সংসদে না যাওয়ার ঘোষণা দিয়েও সংসদে যায় বিএনপি। ফলে একটি সংরক্ষিত আসনও পায় তারা। ওই আসনে দলের অপেক্ষাকৃত নবীন সদস্য ২০১৬ সালের কমিটিতে আশ্রয় পাওয়া সহ-আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা মনোনয়ন পান। এমপি নির্বাচিত হওয়ার কয়েকদিনের মাথায় গণপূর্তমন্ত্রী বরাবরে প্লটের আবেদন করে দেশব্যাপী সমালোচনার মুখে পড়েন। শেষ পর্যন্ত তিনি আবেদন প্রত্যাহার করে নেন।

দীর্ঘদিন পর স্থায়ী কমিটিতে দু’জনকে নিয়োগ
২০১৬ সালের মার্চে বিএনপির সর্বশেষ কাউন্সিলে ১৭ সদস্যের স্থায়ী কমিটির নাম ঘোষণা করেছিল। যদিও স্থায়ী কমিটিতে পদ রয়েছে ১৯টি। দুটি পদ খালি থাকার পরে তরিকুল ইসলাম, আ স ম হান্নান শাহ এবং এমকে আনোয়ারের মৃত্যুতে আরও তিনটি পদ খালি হয়। ৫টি খালি পদের বিপরীতে গত জুন মাসে ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু ও সেলিমা রহমানকে নিয়োগ দেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তারা দুজনই দলের ভাইস চেয়ারম্যান পদে ছিলেন।

কূটনীতিকদের কাছে নালিশই ছিল সান্ত্বনা 
ঢাকায় অবস্থানরত বিদেশি কূটনীতিকদের কাছে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটের অনিয়ম তুলে ধরে বিএনপিসহ জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। ৬ জানুয়ারি সন্ধ্যায় গুলশানে একটি হোটেলে কুটনীতিকদের সঙ্গে ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে বৈঠক করেন বিএনপির সিনিয়র নেতারা। ওই দিন ড. কামাল হোসেন বলেন, আমরা কূটনীতিকদের বলেছি তারা যেন সরকারকে বুঝিয়ে আরেকটি ভাল নির্বাচনের ব্যবস্থা করেন। এরপর বছরের বিভিন্ন সময়ে কূটনীতিকদের কাছে দেশের রাজনীতি নিয়ে নালিশ করেছে বিএনপি। অসমর্থিত সূত্রের খবর অনুযায়ী, কূটনীতিকরা বিএনপিকে শুধু আশাই দিয়েছে।

বিএনপি যাদের হারালো
২০১৯ সালে বিএনপির কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতা মারা গেছেন। তাদের মধ্যে বছরের শেষভাবে সবচেয়ে আলোচিত মৃত্যু ছিল ভাইস চেয়ারম্যান ও ঢাকার সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার। গত ৪ নভেম্বর নিউ ইয়র্কের একটি হাসপাতালে তিনি মারা যান। এছাড়া দলের ভাইস চেয়ারম্যান সাবেক মন্ত্রী ব্যারিস্টার আমিনুল হক মারা যান ২১ এপ্রিল। চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য কাজী আসাদুজ্জামান ৩ এপ্রিল ও উপদেষ্টা পরিষদের অপর সদস্য কবির মুরাদ মারা যান ডিসেম্বর মাসের ১৪ তারিখ। কেন্দ্রীয় বিএনপির ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প বিষয়ক সম্পাদক রংপুর মহানগর বিএনপির সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা মোজাফ্ফর হোসেন মারা যান এ বছর ১ সেপ্টেম্বর। সুনামগঞ্জ বিএনপির নেতা সাবেক এমপি গোলজার আহমদ চৌধুরী মারা যান ২ ডিসেম্বর।

২০১৯ সালটি বিএনপির জন্য কেমন গেলো- জানতে চাইলে দলের যুগ্ম-মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বাংলানিউজকে বলেন, খালেদা জিয়াবিহীন একটি নির্বাচনে বিএনপি অংশ নিয়েছিল। পরবর্তী সময়ে তার মুক্তির আন্দোলনে ফ্যাসিবাদী সরকারের বিরুদ্ধে সে রকম কর্মসূচি আমরা দিতে পারিনি। বছরজুড়ে আমরা গতানুগতিক কর্মসূচি পালন করেছি।

তিনি বলেন, সংসদে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত ছিল। পরে আবার যাওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এই নির্বাচন কমিশনের অধীনে আর কোনো নির্বাচনে যাব না, এমন ঘোষণাও ছিল। আবার আমরা সেই কমিশনের অধীনে নির্বাচনে যাচ্ছি।

আলাল বলেন, আমরা একটা বিষয় দেখলাম, সরকার বছরজুড়ে পুরনো কিছু সমস্যা আমাদের সামনে এনে হাজির করেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের টাকা চুরির তদন্ত রিপোর্ট দিতে ৪১ বারের মতো সময় নেওয়া হয়েছে। সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের তদন্ত রিপোর্ট ৬৮ বারের মতো পেছানো হলো। তারপরে আবরার হত্যাকাণ্ড, ট্রেন দুর্ঘটনা, মিরপুরের কালশিতে ৯জন পুড়ে কয়লা হয়ে যাওয়া। রামু-নাসিরনগর-গাইবান্ধায় সাঁওতালপল্লীতে হামলা-আগুন, পেঁয়াজসহ নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি, দফায় দফায় বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধি। কোনোটারই এই সরকার সমাধান করতে পারেনি। এই ধরণের ঘটনার বিরুদ্ধে আমরা সুনির্দিষ্ট ইস্যুভিত্তিক কর্মসূচি দিতে পারিনি। এখন আবার নতুন বছরে যদি এই সরকার তাদের লুটপাট এবং দুর্নীতিকে আরও সম্প্রসারণ করার জন্য বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধি করে তাহলে সেটাকে আমরা কিভাবে মোকাবেলা করবো, সেই সিদ্ধান্ত এখন আমাদের সামনে এসেছে। অপরদিকে বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির আন্দোলনের কৌশলগত পরিবর্তন করে নতুন করে এগুনোর জন্য আমি তাগিদ অনুভব করছি।

একাদশ নির্বাচনে ব্যাপক কারচুপির অভিযোগ এনে আপনারা নির্বাচনের ফলাফল প্রত্যাখান করেছিলেন। এর বিরুদ্ধে গত এক বছরে কঠিন কোনো কর্মসূচি ছিল না। সেটা কেন ছিল না। এটা কি সিদ্ধান্তহীনতার কারণে হয়েছে? খালেদা জিয়া জেলে, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান দেশের বাইরে এসব কারণে কি আপনারা সরকারের বিরুদ্ধে কঠোর কর্মসূচি দিতে পারেননি?

এসব প্রশ্নের জবাবে বিএনপির এই নেতা বলেন, হ্যাঁ, আমরা গতানুগতিক কর্মসূচি দিয়েছি। এটা আংশিক সত্য। খালেদা জিয়ার মতো আপসহীন নেত্রীর অনুপস্থিতি সিদ্ধান্তহীনতার একটা বড় কারণ। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হাজার মাইল দূরে অবস্থান করছেন, সেটাও একটা কারণ।

তবে আমার কাছে মনে হয়, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান দূরে থাকলেও তিনি নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন। তিনি নীতি নির্ধারকদের সঙ্গে এবং মাঠ পর্যায়ে যোগাযোগ অব্যাহত রেখেছেন। ওনার সঙ্গে আলাপ আলোচনা করে, সমন্বয় করেই সম্ভবত সিদ্ধান্তগুলো হয়েছে। এখানে যদি কোনো সিদ্ধান্ত তাৎক্ষণিকভাবে কারও ভাল না লেগে থাকে তবুও সেটা সমন্বিত সিদ্ধান্ত হয়েছে বলেই আমি জানি। যোগ করেন তিনি।  

সবমিলিয়ে বছরটা বিএনপির জন্য ভাল যায়নি, এটাতো বলা যায়- জবাবে আলাল বলেন, হ্যাঁ প্রাপ্তির দিক থেকে বছরটা আমাদের জন্য ভাল যায়নি।

আসছে বছর এর চেয়ে ভাল যাবে বলে মনে করেন কি আলাল বলেন, মানুষের সারাজীবনটাইতো আশার ওপরে নির্ভর করে। মানুষের যেটা অবধারিত আছে মৃত্যু, সেই মৃত্যুর আগেভাগেও মানুষ আশা করে যায়। সুতরাং আশার ওপরেই মানুষের বেঁচে থাকা। সেজন্য আমরাও আশা নিয়েই আছি।

বাংলাদেশ সময়: ১২৪০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৮, ২০১৯
এমএইচ/এজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।