ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

সালতামামি

২০১৯ হারালো যাদের!

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২১৪ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১, ২০২০
২০১৯ হারালো যাদের!

ঢাকা: বিদায় নিয়েছে ২০১৯। নতুন প্রত্যাশায় আগত হয়েছে ২০২০। তবে নতুন বছরেই যদি একটু ফিরে তাকানো যায় পেছনে! ২০১৯-এ অনেক গুণীজনই আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন।

আমরা জানি, মৃত্যু অবধারিত। জন্মালে মৃত্যুর স্বাদ নিতেই হবে।

তবে কিছু মানুষের প্রস্থান বাংলাদেশের জন্য অপূরণীয় ক্ষতি। ২০১৯-এ এমন অনেক বিশিষ্টজনকেই হারিয়েছি আমরা। এমন কিছু বিশিষ্টজনের নামই বাংলানিউজের পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো।

রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব:
সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম: ফুসফুস ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে গত ৩ জানুয়ারি চিরবিদায় নেন আওয়ামী লীগের বর্ষিয়ান নেতা সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। ব্যাংককের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৬৭ বছর।

বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সহচর ও জাতীয় চার নেতার অন্যতম সৈয়দ নজরুল ইসলামের ছেলে আশরাফ দুই মেয়াদে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। সবশেষ তিনি দলটির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ছিলেন।

২০০৭ সালে দেশে জরুরি অবস্থা জারির পর শেখ হাসিনা কারাবন্দি হলে আওয়ামী লীগের যে কয়জন নেতা দলের হাল ধরেছিলেন, তাদের মধ্যে অন্যতম সৈয়দ আশরাফ।

হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ: দীর্ঘদিন বার্ধক্যজনিত বিভিন্ন রোগে ভোগার পর গত ১৪ জুলাই চিরবিদায় নেন সাবেক রাষ্ট্রপতি ও জাতীয় পার্টির (জাপা) প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৯০ বছর।  

প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক ও রাষ্ট্রপতি পদে ১৯৮২ থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত প্রায় নয় বছর সরকার চালানো এরশাদ আমৃত্যু বাংলাদেশের রাজনীতিতে আলোচিত ব্যক্তিত্ব ছিলেন।

মোজাফফর আহমদ: বার্ধক্যজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত ২৩ আগস্ট চিরবিদায় নেন ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির (ন্যাপ) একাংশের সভাপতি অধ্যাপক মোজাফফর আহমদ। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৯৭ বছর।

মুক্তিযুদ্ধকালীন মুজিবনগর সরকারের উপদেষ্টা ছিলেন অধ্যাপক মোজাফফর আহমদ। এছাড়া ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন, ভাষা আন্দোলন, স্বাধীনতাযুদ্ধে তার ভূমিকা অবিস্মরণীয়।

রাজনৈতিক জীবনের শুরুতে এটির জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের চাকরি ছেড়ে দিয়েছিলেন তিনি। ১৯৬৮ সালে ন্যাপ দু’ভাগে বিভক্ত হয়ে যায়। একভাগ মাওলানা ভাসানীর সঙ্গে থাকলেও অন্য অংশ অধ্যাপক মোজাফফর আহমদের নেতৃত্বে আলাদা হয়ে যায়।  

রাজনীতিতে সততাকে ব্রত করেছিলেন অধ্যাপক মোজাফফর আহমদ।

২০১৯ হারালো যাদের!

সাদেক হোসেন খোকা: নিউইয়র্কের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত ৪ নভেম্বর চিরবিদায় নেন বিএনপির সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান, অবিভক্ত ঢাকার সাবেক মেয়র মুক্তিযোদ্ধা সাদেক হোসেন খোকা। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৬৮ বছর।

১৯৯১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন এবং তার দল সরকার গঠন করলে তিনি যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পান। পরে ১৯৯৬ এবং ২০০১ সালেও তিনি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তার দল সরকার গঠন করলে তিনি মৎস ও পশুসম্পদ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পান।

এরপর তিনি সরাসরি নির্বাচনে জয় লাভের মাধ্যমে ২০০২ সালের ২৫ এপ্রিল অবিভক্ত ঢাকার মেয়র হিসেবে দায়িত্ব নেন। ২০১১ সালের ২৯ নভেম্বর পর্যন্ত মেয়র পদে দায়িত্ব পালন করেন তিনি।

ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে ২০১৪ সালের মে মাসে চিকিৎসার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে যান সাদেক হোসেন খোকা। এরপর থেকে প্রায় সাড়ে পাঁচ বছর ধরে থেকেছেন নিউইয়র্ক সিটির ইস্ট এলমহার্স্ট এলাকার একটি ভাড়া বাসায়। সার্বক্ষণিক তার সঙ্গে ছিলেন স্ত্রী ইসমত হোসেন।

মঈন উদ্দীন খান বাদল: ভারতের বেঙ্গালুরের নারায়ণ হৃদরোগ রিসার্চ ইনস্টিটিউট অ্যান্ড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত ৭ নভেম্বর চিরবিদায় নেন চট্টগ্রাম-৮ আসনের তিনবারের সংসদ সদস্য ও জাসদ নেতা মঈন উদ্দীন খান বাদল। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৬৭ বছর।

বাংলাদেশ জাসদের কার্যকরি পরিষদের সভাপতি ছিলেন বাদল। তিনি ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাসদের প্রার্থী হিসেবে নির্বাচিত হন। এছাড়া দশম জাতীয় সংসদের সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হন। সবশেষ একাদশ জাতীয় সংসদেও তিনি সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হন।

সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব: (সংগীত, চলচ্চিত্র, চিত্রশিল্পী, অভিনেতা, চিত্রগ্রাহক)
আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল: হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে গত ২২ জানুয়ারি না ফেরার দেশে পাড়ি জমান মুক্তিযুদ্ধের বীরসেনানী, প্রখ্যাত গীতিকার, সুরকার ও সংগীত পরিচালক আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৬২ বছর।

‘সব কটা জানালা খুলে দাও না’, ‘সেই রেল লাইনের ধারে’, ‘ও মাঝি নাও ছাইড়া দে ও মাঝি পাল উড়াইয়া দে’র মতো দেশাত্মবোধক গানগুলোতে তার দেওয়া সুর বাংলাদেশের মানুষের হৃদয়ে স্পন্দন তুলবে চিরদিন। দীর্ঘ ক্যারিয়ারে ৩৫০টির মতো চলচ্চিত্রের সংগীত পরিচালনা করেছেন তিনি। এর মধ্যে ‘নয়নের আলো’, ‘দেশ প্রেমিক’, ‘প্রেমের তাজমহল’, ‘আম্মাজান’, ‘ইতিহাস’ উল্লেখযোগ্য।

সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে অনন্য অবদানের জন্য রাষ্ট্রীয় সর্বোচ্চ সম্মান একুশে পদক, জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার, রাষ্ট্রপতির পুরস্কারসহ অসংখ্য সম্মাননায় ভূষিত হন আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল।

মুহম্মদ খসরু: বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে গত ১৯ ফেব্রুয়ারি মারা যান বাংলাদেশের সুস্থ চলচ্চিত্র আন্দোলনের অন্যতম পুরোধা মুহম্মদ খসরু। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭৩ বছর।

মুহম্মদ খসরু বাংলা চলচ্চিত্রের অন্যতম পত্রিকা ‘ধ্রুপদী’ ও ‘চলচ্চিত্র’ পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন । এছাড়া প্রখ্যাত চলচ্চিত্র পরিচালক ও অভিনেতা রাজেন তরফদারের বিখ্যাত চলচ্চিত্র ‘পালঙ্ক’র সহকারী পরিচালক হিসেবে কাজ করেছেন তিনি।

নিখিল সেন: গত ২৫ ফেব্রুয়ারি না ফেরার দেশে পাড়ি জমান নাটকে একুশে পদকপ্রাপ্ত শিল্পী নিখিল সেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮৭ বছর।

নিখিল সেন বাংলাদেশের একজন প্রতিথযশা নাট্যকার ও সংস্কৃতিকর্মী। তিনি একাধারে একজন অভিনয়শিল্পী, নাট্যকার, সাংবাদিক, আবৃত্তিশিল্পী, ভাষাসৈনিক, মুক্তিযোদ্ধা এবং রাজনীতিবিদ। আবৃত্তিতে অবদান রাখার জন্য ২০১৫ সালে শিল্পকলা পদক পেয়েছেন তিনি। সর্বশেষ নাটকে বিশেষ অবদান রাখার জন্য একুশে পদক পান।

এছাড়া ১৯৯৬ সালে শিল্পকলা একাডেমি সম্মাননা, ১৯৯৯ সালে বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশন সম্মাননা ও ২০০৫ সালে শহীদ মুনীর চৌধুরী পুরস্কার পান নিখিল সেন। নিজেই দিক নির্দেশনা দিয়েছেন ২৮টি নাটকে। নিখিল সেন কমিউনিস্ট আন্দোলনে ভূমিকা রেখেছেন ও ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন।

শাহনাজ রহমতউল্লাহ: হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে গত ২৩ মার্চ না ফেরার দেশে চলে যান বরেণ্য সংগীতশিল্পী শাহনাজ রহমতউল্লাহ। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৬৫ বছর।

দেশাত্মবোধক গান গেয়ে তিনি জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। তার উল্লেখযোগ্য গান- ‘এক নদী রক্ত পেরিয়ে’, ‘একবার যেতে দে না আমার ছোট্ট সোনার গাঁয়ে’, ‘একতারা তুই দেশের কথা বলরে এবার বল’, ‘প্রথম বাংলাদেশ আমার শেষ বাংলাদেশ’, ‘আমায় যদি প্রশ্ন করে’ ও ‘যে ছিল দৃষ্টির সীমানায়’।

তার ৪টি গান বিবিসির একটি জরিপে সর্বকালের সেরা ২০টি বাংলা গানের তালিকায় স্থান পায়। ১৯৯২ সালে তিনি একুশে পদকে ভূষিত হন। এছাড়া ১৯৯০ সালে ছুটির ফাঁদে চলচ্চিত্রের জন্য শ্রেষ্ঠ নারী কণ্ঠশিল্পী হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে ভূষিত হন শাহনাজ রহমতউল্লাহ।

২০১৯ হারালো যাদের!

টেলি সামাদ: বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে গত ৬ এপ্রিল মারা যান ঢাকাই চলচ্চিত্রের জনপ্রিয় কৌতুক অভিনেতা টেলি সামাদ। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭৪ বছর।  

১৯৭৩ সালে নজরুল ইসলাম পরিচালিত ‘কার বৌ’ সিনেমার মাধ্যমে চলচ্চিত্রে যাত্রা করেন সামাদ। এটি তার প্রথম সিনেমা হলেও ‘পায়ে চলার পথ’ সিনেমার মাধ্যমে জনপ্রিয়তা অর্জন করেন তিনি।

চার দশকের অভিনয় ক্যারিয়ারে ছয় শতাধিক সিনেমায় অভিনয় করেছেন জনপ্রিয় এ অভিনেতা। অভিনয়ের পাশাপাশি গানেও তার দক্ষতার প্রমাণ রেখেছেন। গান গেয়েছেন ৫০টিরও বেশি সিনেমায় । এছাড়া ‘মনা পাগলা’ নামক একটি সিনেমায় সংগীত পরিচালনাও করেছেন।

সালেহ আহমেদ: বার্ধক্যজনিত নানা রোগে আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ এপ্রিল না ফেরার দেশে চলে যান নন্দিত অভিনেতা সালেহ আহমেদ। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮৩ বছর।

নাটক ও চলচ্চিত্রে অভিনয় করে অসংখ্য দর্শকের হৃদয় জয় করেছেন সালেহ আহমেদ। হুমায়ূন আহমেদের প্রায় সব নাটকেই তার উপস্থিতি দেখা যেত।

আনিসুর রহমান আনিস: গত ২৮ এপ্রিল নিজ বাসভবনে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন কৌতুক অভিনেতা আনিসুর রহমান আনিস। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭৮ বছর।

সুবীর নন্দী: কিডনি ও হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে গত ৭ মে না ফেরার দেশে পাড়ি জমান একুশে পদকপ্রাপ্ত বরেণ্য সংগীতশিল্পী সুবীর নন্দী। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৬৫।

আধুনিক সংগীতের পাশাপাশি তিনি শ্রোতাদের মুগ্ধ করেন শাস্ত্রীয় সংগীত, ভজন, কীর্তন এবং পল্লীগীতিতেও। নিজের ভালোলাগার নজরুলসংগীতেও আবেশ ছড়ান সুবীর নন্দী। সংগীতের সব অঙ্গনে মায়া ছড়ানো এই শিল্পী প্রায় পাঁচ দশকের ক্যারিয়ারে গান গেয়েছেন আড়াই হাজারেরও বেশি।

চলচ্চিত্রে প্লেব্যাক করে সুবীর নন্দী চারবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন। বাংলা সংগীতাঙ্গনে অনন্য অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে ভূষিত হন একুশে পদকেও।

সুবীর নন্দীর গাওয়া ‘ও আমার উড়াল পঙ্খী রে’, ‘একটা ছিল সোনার কন্যা’, ‘পাখিরে তুই দূরে থাকলে’, ‘কত যে তোমাকে বেসেছি ভালো’, ‘আমার এ দুটি চোখ পাথর তো নয়’, ‘দিন যায় কথা থাকে’র মতো গান তাকে বাঁচিয়ে রাখবে বাংলা সংগীতাঙ্গনে।

মায়া ঘোষ: দীর্ঘদিন ক্যানসারের সঙ্গে লড়াই করে গত ১৯ মে না ফেরার দেশে চলে যান মঞ্চ, টিভি ও চলচ্চিত্র অভিনেত্রী এবং মুক্তিযোদ্ধা মায়া ঘোষ। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭০ বছর।

১৯৮১ সালে ‘পাতাল বিজয়’ চলচ্চিত্রের মাধ্যমে বড় পর্দায় মায়া ঘোষের যাত্রা শুরু হয়। প্রায় দুই শতাধিক সিনেমায় অভিনয় করেছেন করেছেন তিনি। অসংখ্য মঞ্চ নাটক ও টিভি নাটকের অভিনেত্রী তিনি। সর্বশেষ ২০১৬ সালে ধারাবাহিক নাটক ‘ডিবি’তে তাকে অভিনয় করতে দেখা যায়।

১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় কলকাতায় বাংলাদেশি শরণার্থী শিবিরে মুক্তিযোদ্ধাদের রান্না করে খাওয়ানোর কাজ করেছেন মায়া ঘোষ। বহু আহত মুক্তিযোদ্ধার সেবাও করেছেন তিনি।

খালিদ হোসেন: হৃদরোগসহ বার্ধক্যজনিত নানা রোগে আক্রান্ত হয়ে গত ২২ মে না ফেরার দেশে পাড়ি জমান একুশে পদকপ্রাপ্ত বিশিষ্ট নজরুলসংগীত-শিল্পী, গবেষক ও স্বরলিপিকার খালিদ হোসেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮৪ বছর।

এখনো পর্যন্ত খালিদ হোসেনের গাওয়া ছয়টি নজরুলসংগীতের অ্যালবাম প্রকাশিত হয়েছে। আধুনিক গানের একটি ও ইসলামি গানের ১২টি অ্যালবাম প্রকাশ পেয়েছে গুণী এই শিল্পীর কণ্ঠে।

সংগীতে অসামান্য অবদানের জন্য ২০০০ সালে খালিদ হোসেন একুশে পদক পান। এছাড়া পেয়েছেন নজরুল একাডেমি পদক, শিল্পকলা একাডেমি পদক, কলকাতা থেকে চুরুলিয়া পদকসহ আরও অসংখ্য পুরস্কার ও সম্মাননা।

মমতাজউদদীন আহমদ: গত ২ জুন মারা যান একুশে পদকপ্রাপ্ত প্রখ্যাত নাট্যকার, নির্দেশক ও অভিনেতা অধ্যাপক মমতাজউদদীন আহমদ। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮৫ বছর।

অধ্যাপক মমতাজউদদীন আহমদ বাংলাদেশের একজন প্রখ্যাত নাট্যকার, নির্দেশক, অভিনেতা ও ভাষাসৈনিক। ১৯৯৭ সালে নাট্যকার হিসেবে একুশে পদকে ভূষিত হন।

খলিলুর রহমান বাবর: হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে গত ২৬ আগস্ট না ফেরার দেশে চলে যান এক সময়ের জনপ্রিয় চলচ্চিত্র অভিনেতা, পরিচালক ও প্রযোজক খলিলুর রহমান বাবর। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৬৭ বছর।

আমজাদ হোসেন পরিচালিত ‘বাংলার মুখ’ সিনেমার মাধ্যমে নায়ক হিসেবে চলচ্চিত্রে আত্মপ্রকাশ করেছিলেন বাবর। এরপর ধীরে ধীরে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন খলনায়ক হিসেবে।  

খলনায়ক হিসেবে বাবরের যাত্রা শুরু হয় নায়করাজ রাজ্জাক প্রযোজিত ও জহিরুল হক পরিচালিত ‘রংবাজ’ চলচ্চিত্রের মধ্য দিয়ে। এরপর তিন শতাধিক চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন তিনি।

কালিদাস কর্মকার: গত ১৮ অক্টোবর না ফেরার দেশে পাড়ি জমান বরেণ্য চিত্রশিল্পী কালিদাস কর্মকার। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭৪ বছর।

ইউরোপীয় আধুনিক ঘরানার শিল্পী কালিদাস কর্মকার তার নিরীক্ষাধর্মী চিত্রকর্মের জন্য শিল্পীমহলে বিশেষ স্থান দখল করে নিয়েছেন। দেশে-বিদেশে এ শিল্পীর ৭১টি চিত্র প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়েছে। ১৯৭৬ সাল থেকে ফ্রিল্যান্স শিল্পী হিসেবে দেশে-বিদেশে কাজ করে আসছিলেন তিনি।

২০১৯ হারালো যাদের!

হুমায়ূন সাধু: ব্রেন স্ট্রোকে গত ২৪ অক্টোবর দিনগত রাতে না ফেরার দেশে পাড়ি জমান নির্মাতা ও অভিনেতা হুমায়ূন সাধু।

মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর হাত ধরে শোবিজে হুমায়ূন সাধুর পথচলা শুরু। অভিনয় দিয়ে দর্শকদের কাছে পরিচিতি পেয়েছেন, নাটক নির্মাণ করেও প্রশংসিত তিনি। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে অমর একুশে বইমেলায় প্রকাশ পেয়েছে তার প্রথম বই ‘ননাই’। একটি সিনেমা নির্মাণের কাজও হাতে নিয়েছিলেন তিনি।

মোবারক হোসেন খান: দীর্ঘদিন ধরেই বার্ধক্যজনিত নানা রোগে ভুগছিলেন বিশিষ্ট সংগীত গবেষক ও বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির সাবেক মহাপরিচালক মোবারক হোসেন খান। এর মধ্যে গত ২৩ নভেম্বর রাতে নিজ বাসভবনে ঘুমের মধ্যেই শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮৪ বছর।

মোবারক হোসেন খান দীর্ঘদিন বাংলাদেশ বেতার ও বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালকের দায়িত্ব পালন করেন। সংগীতে অসামান্য অবদানের জন্য ১৯৮৬ সালে একুশে পদক, ১৯৯৪ সালে স্বাধীনতা দিবস পুরস্কার এবং ২০০২ সালে বাংলা একাডেমি পুরস্কারে ভূষিত হন গুণী এই সংগীত ব্যক্তিত্ব।

কালা আজিজ: গত ২৩ নভেম্বর নিজ বাসভবনে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত অভিনেতা কালা আজিজ। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৬৫ বছর।

প্রায় তিন দশক ধরে চলচ্চিত্রে পার্শ্ব-অভিনেতা হিসেবে কালা আজিজ অভিনয় করেছেন। দীর্ঘ ক্যারিয়ারে চারশতাধিক চলচ্চিত্রে তিনি অভিনয় করেছেন।

কাজী হায়াৎ পরিচালিত ‘অন্ধকার’ চলচ্চিত্রের জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন তিনি।

মাহফুজুর রহমান খান: বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে গত ৫ ডিসেম্বর দিনগত রাতে না ফেরার দেশে পাড়ি জমান নয়বার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত চিত্রগ্রাহক মাহফুজুর রহমান খান। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭০ বছর।

মাহফুজুর রহমান খান অসংখ্য চলচ্চিত্রের চিত্রগ্রাহক হিসেবে কাজ করেছেন। স্বীকৃতিস্বরূপ নয়বার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার, আটবার বাচসাস (বাংলাদেশ চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতি) এবং একবার বিশেষ বিভাগে মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কার পেয়েছেন।

চিত্রগ্রাহক হিসেবে কাজ করার আগে তিনি চলচ্চিত্রে অভিনয়ও করেছেন। ‘দাবি’ ও ‘চল ঘর বাঁধি’সহ বেশকিছু চলচ্চিত্রে নায়ক হিসেবে তাকে পাওয়া গেছে।

কবি-সাহিত্যিক-শিক্ষাবিদ:
আল মাহমুদ: নিউমোনিয়াসহ বার্ধক্যজনিত নানা রোগে আক্রান্ত হয়ে গত ১৫ ফেব্রুয়ারি না ফেরার দেশে পাড়ি জমান বাংলা সাহিত্যের অন্যতম কবি আল মাহমুদ। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮২ বছর।

বিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয়ার্ধে সক্রিয় থেকে আধুনিক বাংলা কবিতাকে নতুন আঙ্গিকে, চেতনায় ও বাকভঙ্গিতে বিশেষভাবে সমৃদ্ধ করেছেন কবি আল মাহমুদ। আধুনিক বাংলা সাহিত্যের অন্যতম প্রধান কবিও তিনি। এছাড়া তিনি ছিলেন একাধারে ঔপন্যাসিক, প্রাবন্ধিক, ছোটগল্প লেখক, শিশুসাহিত্যিক এবং সাংবাদিক।

সাহিত্যে অবদানের জন্য রাষ্ট্রীয় সম্মান একুশে পদক, বাংলা একাডেমি পুরস্কার, ফিলিপস সাহিত্য পুরস্কার, শিশু একাডেমি (অগ্রণী ব্যাংক) পুরস্কার, ফররুখ স্মৃতি পুরস্কার, জীবনানন্দ দাশ স্মৃতি পুরস্কারসহ বিভিন্ন সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন এই কবি।

হেলেনা খান: যুক্তরাষ্ট্রের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত ১৫ মার্চ মারা যান একুশে পদকপ্রাপ্ত লেখিক হেলেনা খান। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৯২ বছর।

তার লেখা গ্রন্থের সংখ্যা ৭০টি। ১৯৭০ সালে তিনি আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য (এমএনএ) নির্বাচিত হন। সাহিত্যকর্মের স্বীকৃতি হিসেবে তিনি সাহিত্যে একুশে পদকসহ ১৭টি পুরস্কার অর্জন করেন।  

হায়াৎ সাইফ: কিডনি জটিলতাসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে গত ১২ মে দিনগত রাতে মারা যান একুশে পদকপ্রাপ্ত কবি হায়াৎ সাইফ। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭৬ বছর।

কবিতায় অসামান্য অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে কবি হায়াৎ সাইফ ২০১৮ সালে একুশে পদকে ভূষিত হন। কর্মজীবনে তিনি জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সদস্য ও পরে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।  

রিজিয়া রহমান: কিডনি জটিলতাসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে গত ১৬ আগস্ট না ফেরার দেশে পাড়ি জমান বাংলা ভাষার অন্যতম কথাশিল্পী রিজিয়া রহমান। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮০ বছর।

রিজিয়া রহমান বাংলাদেশের কথাসাহিত্যে উজ্জ্বল এক নাম। প্রায় পঞ্চাশ বছর ধরে এ দেশের কথাসাহিত্য সমৃদ্ধ হয়েছে তার লেখনীতে। শুরু করেছিলেন কবিতা দিয়ে। পরে তিনি গল্প-উপন্যাসেও সক্রিয় এবং খ্যাত হন। উপন্যাস ও গল্প- মূলত কথাশিল্পের এই দুটি ধারাতেই তার স্বতঃস্ম্ফূর্ত বিচরণ। তবে প্রবন্ধও লিখেছেন বেশ কিছু। লিখেছেন স্মৃতিকথাও।

২০১৯ হারালো যাদের!

রবিউল হুসাইন: হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত ২৫ নভেম্বর দিনগত রাতে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন কবি ও স্থপতি রবিউল হুসাইন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭৬ বছর।

স্থপতি হওয়ার পাশাপাশি ষাটের দশক থেকেই তিনি লেখালেখির সঙ্গে সম্পৃক্ত হন। বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় লেখা ছাড়াও ষাটের দশকের পরীক্ষা-নিরীক্ষা প্রবণ ছোট কাগজে লেখালেখি করতেন। কবিতা, প্রবন্ধ, উপন্যাস ও শিশুতোষ গোটা পঁচিশেক বইয়ের লেখক তিনি।

ভাষা ও সাহিত্যে অবদান রাখায় ২০১৮ সালে একুশে পদক পান কৃতি কবি, মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচিহ্ন সংরক্ষক ও স্থপতি রবিউল হুসাইন। এছাড়াও তিনি বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার, জাতীয় কবিতা পরিষদ পুরস্কার, কবিতালাপ সাহিত্য পুরস্কার, আইএবি পুরস্কারসহ বহু পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন।

অজয় রায়: বার্ধক্যজনিত নানা রোগে আক্রান্ত হয়ে গত ৯ ডিসেম্বর চলে যান একুশে পদকপ্রাপ্ত পদার্থবিজ্ঞানের বরেণ্য অধ্যাপক অজয় রায়। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮৫ বছর।

শিক্ষা আন্দোলন মঞ্চের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যাপক অজয় রায় একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির প্রতিষ্ঠাতাদেরও একজন। সবশেষ তিনি কমিটির উপদেষ্টা ছিলেন।

পদার্থবিদ অজয় রায়ের দুটি গবেষণা নোবেল কমিটিতে আলোচিত হয়। মুক্তিযোদ্ধা অজয় রায়ের সক্রিয় অংশগ্রহণ ছিল ভাষা আন্দোলন ও ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানেও।

ভাষাসৈনিক:
রওশন আরা বাচ্চু: হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত ৩ ডিসেম্বর চিরবিদায় নেন বায়ান্নর ভাষাসৈনিক রওশর আরা বাচ্চু। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮৬ বছর।

১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের সময় রওশন আরা বাচ্চু ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালযের (ঢাবি) ছাত্রী। ২১ ফেব্রুয়ারি যেসব ছাত্রনেতারা ১৪৪ ধারা ভঙ্গের পক্ষে ছিলেন, তিনি তাদের মধ্যে অন্যতম।

সমাজকর্মী:
পলান সরকার: দীর্ঘদিন ধরে বার্ধক্যজনিত নানা রোগে ভুগে গত ১ মার্চ না ফেরার দেশে চলে যান ‘জ্ঞানের ফেরিওয়ালা’খ্যাত পলান সরকার। মৃত্যকালে তার বয়স হয়েছিল ৯৮ বছর।

রাজশাহীর প্রত্যন্ত অঞ্চলে বইপড়া আন্দোলন গড়ে তুলে আলোড়ন সৃষ্টি করেছিলেন পলান সরকার। নিজের টাকায় বই কিনে পলান সরকার পড়তে দিতেন পিছিয়ে পড়া গ্রামের মানুষদের। প্রতিদিন ভোরে ঘুম থেকে উঠে কাঁধে ঝোলাভর্তি বই নিয়ে বেরিয়ে পড়তেন। মাইলের পর মাইল হেঁটে একেক দিন একেক গ্রামে যেতেন। বাড়ি বাড়ি কড়া নেড়ে আগের সপ্তাহের বই ফেরত নিয়ে নতুন বই পড়তে দিতেন। একটানা ৩০ বছরের বেশি সময় ধরে এই কাজ করে যাওয়া পলান সরকার তাই এলাকাবাসীর কাছে পরিচিতি পেয়েছিলেন ‘বইওয়ালা দুলাভাই’ হিসেবে।

সমাজ গঠনে অনন্য অবদান রাখার স্বীকৃতি হিসেবে পলান সরকার ২০১১ সালে রাষ্ট্রীয় সর্বোচ্চ সম্মাননা ‘একুশে পদক’ লাভ করেন।

সত্যপ্রিয় মহাথের: বার্ধক্যজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে গত ৪ অক্টোবর না ফেরার দেশে পাড়ি জমান সংঘরাজ ভিক্ষু মহাসভার প্রাক্তন সভাপতি ও একুশে পদকপ্রাপ্ত বৌদ্ধধর্মীয় গুরুপণ্ডিত সত্যপ্রিয় মহাথের। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮৯ বছর।

সমাজসেবায় অবদানের জন্য ২০১৫ সালে একুশে পদক লাভ করেন কক্সবাজারের রামু কেন্দ্রীয় সীমা বিহারের এই অধ্যক্ষ।

স্যার ফজলে হাসান আবেদ: বার্ধক্যজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে গত ২০ ডিসেম্বর না ফেরার দেশে পাড়ি জমান ব্র্যাকের প্রতিষ্ঠাতা স্যার ফজলে হাসান আবেদ। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮৩ বছর।

মাত্র ৩৬ বছর বয়সে, ১৯৭২ সালে সিলেট জেলায় একটি ক্ষুদ্র ত্রাণ ও পুনর্বাসন প্রকল্প হিসেবে ব্র্যাক প্রতিষ্ঠা করেন স্যার আবেদ। গত ৪৭ বছরে বহুবিস্তৃত কার্যক্রমের মধ্য দিয়ে ব্র্যাক বিশ্বের অন্যতম কার্যকরী বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থায় পরিণত হয়েছে। সংস্থাটি এশিয়া ও আফ্রিকার ১১টি দেশের ১০ কোটিরও বেশি মানুষের জীবনমান উন্নয়নে ভূমিকা রেখে চলেছে।

বিভিন্ন ক্ষেত্রে অনন্য অবদান রাখায় দেশে-বিদেশে অসংখ্য পুরস্কার ও স্বীকৃতিতে ভূষিত হয়েছেন স্যার ফজলে হাসান আবেদ।

২০১৯ হারালো যাদের!

সাংবাদিক:
শাহ আলমগীর: বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে গত ২৮ ফেব্রুয়ারি চিরবিদায় নেন জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক ও প্রেস ইনস্টিটিউট বাংলাদেশের (পিআইবি) সাবেক মহাপরিচালক সাংবাদিক মো. শাহ আলমগীর। ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালের (সিএমএইচ) নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন।

শাহ আলমগীর ২০১৩ সালের ৭ জুলাই পিআইবির মহাপরিচালক হিসেবে যোগ দেন। ২০১৮ সালের জুলাই মাসে তার চাকরির মেয়াদ আরও এক বছর বাড়ায় সরকার।

উপমহাদেশের প্রথম শিশু-কিশোর পত্রিকা সাপ্তাহিক কিশোর বাংলায় যোগ দেওয়ার মাধ্যমে সাংবাদিকতা শুরু করেন শাহ আলমগীর। এখানে তিনি ১৯৮০ সাল থেকে ১৯৮৪ সাল পর্যন্ত সহ-সম্পাদক হিসেবে কাজ করেছেন।  

এরপর তিনি কাজ করেন দৈনিক জনতা, বাংলার বাণী, আজাদ ও সংবাদ-এ। প্রথম আলো প্রকাশের সময় থেকেই তিনি পত্রিকাটির সঙ্গে জড়িত ছিলেন এবং ১৯৯৮ সালের নভেম্বর মাস থেকে ২০০১ সালের সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত যুগ্ম বার্তা-সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। পরে তিনি চ্যানেল আইয়ের প্রধান বার্তা সম্পাদক, একুশে টেলিভিশনে হেড অব নিউজ, যমুনা টেলিভিশনে পরিচালক (বার্তা) এবং মাছরাঙা টেলিভিশনে বার্তা প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

শাহ আলমগীর ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বও পালন করেছেন।  

সাংবাদিকতায় বিশেষ অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে তিনি ‘কবি আবু জাফর ওবায়দুল্লাহ সাহিত্য পুরস্কার ২০০৬, ‘চন্দ্রাবতী স্বর্ণপদক ২০০৫ ’, ‘রোটারি ঢাকা সাউথ ভকেশনাল এক্সিলেন্স অ্যাওয়ার্ড ২০০৪’ এবং ‘কুমিল্লা যুব সমিতি অ্যাওয়ার্ড ২০০৪’ পেয়েছেন।

মাহফুজ উল্লাহ: থাইল্যান্ডের ব্যাংককের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত ২৭ এপ্রিল মারা গেছেন সিনিয়র সাংবাদিক মাহফুজ উল্লাহ। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৬৯ বছর।

বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় সাপ্তাহিক বিচিত্রাসহ দেশের বিভিন্ন নেতৃস্থানীয় বাংলা ও ইংরেজি দৈনিকে কাজ করেছেন। মাঝে চীন গণপ্রজাতন্ত্রে বিশেষজ্ঞ, কলকাতার বাংলাদেশ উপ-দূতাবাসে কূটনীতিক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগেও খণ্ডকালীন শিক্ষক হিসেবে কাজ করেন সিনিয়র এই সাংবাদিক।  

বাংলাদেশ সময়: ১৭১৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০১, ২০২০
এসএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।