টানা তৃতীয়বার সরকার গঠন:
গেল বছরের শুরুতেই আলোচিত ঘটনা ছিলো আওয়ামী লীগের নতুন সরকার গঠন। ২০১৯ সালের ৭ জানুয়ারি টানা তৃতীয়বারের মতো সরকার গঠন করে আওয়ামী লীগ।
দলের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা টানা তৃতীয় বার এবং সব মিলিয়ে চতুর্থ বারের মতো প্রধানমন্ত্রী হন। এই সরকারের মন্ত্রিসভা অনেকটা চমক সৃষ্টি করা মন্ত্রিসভা। দলের প্রভাবশালী অনেক সিনিয়র নেতাকে বাদ দিয়ে তুলনামূলকভাবে নবাগত ও তারুণ্যনির্ভর মন্ত্রিসভঅ গঠন করা হয়।
রাজনৈতিক চাপমুক্ত প্রথম বছর:
একাদশ সংসদ নির্বাচন নিয়ে সৃষ্ট নানা ঘটনা ও সমালোচনার প্রেক্ষাপটে গঠিত আওয়ামী লীগের নতুন সরকারের বিরুদ্ধে বিরোধী পক্ষ কোনো আন্দোলন দাঁড় করাতে ব্যর্থ হয়। বছরব্যাপী একের পর এক কড়া সমালোচনা ছুড়তে থাকলেও ন্যুনতম রাজনৈতিক চপে পড়তে হয়নি সরকারকে।
রাজপথের বিরোধী দল বিএনপি প্রতিনিয়তই সরকারবিরোধী আন্দোলনের নানা হুমকি ধামকি দিয়ে এলেও প্রকৃত পক্ষে আন্দোলন করতে পারেনি। বিরোধী বামপস্থি দলগুলোর সমন্বয়ে গঠিত বাম গণতান্ত্রিক জোট সারা বছার নানা সমালোচনায় মুখর থাকলেও কার্যকর কোনো আন্দোলন দৃশ্যমান করতে পারেনি।
আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলন:
চলতি বছরের শুরুতে যেমন আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন সরকার পুনরায় ক্ষমতাসীন হয় তেমনি বছরের শেষ প্রান্তে এসে এদেশের ঐতিহ্যবাহী এই রাজনৈতিক দলটির জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। গত ২০ ও ২১ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত দলটির সম্মেলন নিয়ে বছরব্যাপী নানামুখী আলোচনা ও গুঞ্জন শোনা গেলেও শেষ পর্যন্ত চমকবিহিন রয়ে যায় এবারের সম্মেলন।
এই সম্মেলনে বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৯ম বারের মতো বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন। সাধারণ সম্পাদকসহ পূর্বের কমিটির অধিকাংশ নেতাই কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদে বহাল থাকেন। সাধারণ সম্পাদক নিয়ে নানা জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে ওবায়দুল কাদেরই এই পদে পুনর্নির্বাচিত হন। তবে কমিটি থেকে ছিটকে পড়েন ৭ মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রী।
গুজব মোকাবিলা:
বড় ধরনের কোনো রাজনৈতিক চাপে না পড়লে কৃত্রিম সংকট গুজব মোকিলায় সরকারকে হিমশিম খেতে হয়। গত জুলাইয়ে পদ্মসেতুতে শিশুর কাটা মাথা লাগার গুজব ছড়িয়ে পড়লে শিশু ধরার আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে সারা দেশে। এই গুজবে গণপিটুনির বলি হন বেশ কয়েকজন সাধারণ মানুষ। গণপিটুনিতে প্রাণ হারান বেশ কয়েকজন। তবে সার্বিক পররিস্থিতি অনুধাবন করে সরকার কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
সামাজিক সংকট:
গুজবের পাশাপাশি সারা বছরই সামাজিক ক্ষেত্রে সৃষ্ট বিভিন্ন সংকট মোকাবিলা করতে হয়েছে সরকারকে। এর মধ্যে দ্রব্যমূল্য, সন্ত্রাস, নৃশংস হত্যাকাণ্ডের ঘটনা রয়েছে, যা নিয়ে সরকারকে সমালোচনার মুখোমুখি হওয়ার পাশাপাশি পরিস্থিতি মোকাবিলায় হিমশিম খেতে হয়েছে।
ফেনীর মাদ্রাসা ছাত্রী নুসরাতকে পুড়িয়ে হত্যা, বগুনার কলেজ ছাত্র রিফাতকে কুপিয়ে হত্যা, বুয়েটের ছাত্র আবরারকে পিটিয়ে হত্যা, পেঁয়াজের অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধি, ধান কাটার শ্রমিক সংকট ও ধানের দাম পড়ে যাওয়া এই ঘটনাগুলো ছিলো আলোচনা-সমালোচনার শীর্ষে। আলোচিত এ সব হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে সরকারি দলের লোকদের জড়িত থাকার অভিযোগ ওঠে। এ সব ঘটনায় বিভিন্ন দিক থেকে সরকারের বিরুদ্ধে সমালোচনার ঝড় ওঠে। তবে সরকার শক্ত হাতে এবং তৎক্ষণিক পদক্ষেপের মাধ্যমে পরিস্থিতি মোকাবিলা করে।
শুদ্ধি অভিযান:
এ বছরে সরকারের জন্য সব চেয়ে আলোচিত ও সাহসী পদক্ষেপ ছিলো দুর্নীতির বিরুদ্ধে শুদ্ধি অভিযান। এর অংশ হিসেবে গত ১৮ সেপেপ্টম্বর চিহ্নিত দুর্নীতিবাজদের গ্রেফতার অভিযান শুরু হয়। দেশব্যাপী আলোড়ন সৃষ্টিকারী আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীর এই অভিযানের মধ্য দিয়ে রাজধানীর ক্লাবগুলোতে আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন ও দলটির বিভিন্ন পর্যায়ের কিছু নেতার ছত্রছায়ায় গড়ে ওঠা ক্যাসিনোসহ দুর্নীতি, অনিয়ম ও এর সঙ্গে জড়িতদের অজানা তথ্য বেরিয়ে আসে।
টানা তৃতীয়বারের মতো ক্ষমতায় আসার পরই আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরকারের ‘জিরো টলারেন্স’ এর কথা বাববার উচ্চারণ করেন। যদিও বিষয়টি আগে থেকেই তিনি বলে আসছিলেন তবে এই সরকারের আমলে কঠোরভাবে কার্যকর করতে দেখা যায়।
দুনীতির বিরুদ্ধে আইনশৃ্ঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কয়েক দফা অভিযানে আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠন যুবলীগের কয়েক জন নেতা গ্রেফতার হন। এর মধ্যে বহুল আলোচিত ঘটনা ছিলো গত ৬ অক্টোবর যুবলীগ নেতা ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি ইসমাইল চৌধুরী সম্রাটের গ্রেপ্তার।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৫০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০১, ২০২০
এসকে/এজে