ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

সালতামামি

সালতামামি-২০২১

ঝড়-বন্যা ছাড় দিলেও রেহাই দেয়নি বজ্রপাত-ভাঙন

ইকরাম-উদ দৌলা, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪২০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৫, ২০২১
ঝড়-বন্যা ছাড় দিলেও রেহাই দেয়নি বজ্রপাত-ভাঙন

ঢাকা: করোনার করাল থাবার মধ্যে আগের বছরের চেয়ে এবার কিছুটা সহনীয় ছিল প্রকৃতি। পেছন ফিরে তাকালে দেখা যায়, অন্যান্য বছরের মতো গেল এক বছরে ঘূর্ণিঝড়-বন্যা তেমন ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়নি।

তেমনি শৈত্য প্রবাহ তীব্র হলেও তা ছিল স্বল্পমেয়াদি। তবে, নদী ভাঙন, তাপপ্রবাহ আর বজ্রঝড় ক্ষতি করেছে আগের তুলনায় বেশি।

শৈত্যপ্রবাহ:
২০২১ সালের জানুয়ারিতে তীব্র শৈত্যপ্রবাহে পুরো দেশ জবুথবু হয়ে গেলেও তা দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। ফলে মৃত্যু কিংবা অন্যান্য ক্ষয়ক্ষতি তেমন হয়নি। জানুয়ারিতে তাপমাত্রা নেমেছিল ৫ ডিগ্রির ঘরে।

তাপপ্রবাহ:
এ বছর আগের তুলনায় তাপপ্রবাহ সংখ্যায় যেমন বেশি ছিল, মাত্রাগত দিক থেকেও কষ্ট দিয়েছে বেশি। ক্ষতিও করেছে ফসলের। এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ১১ বার তাপপ্রবাহ বয়ে যায় দেশের ওপর দিয়ে। এমনকি এপ্রিলেই গত সাত বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়।

গত ২৫ এপ্রিল ঢাকায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৩৯ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। দেশের সর্বোচ্চ তামপাত্রা রেকর্ড করা হয় যশোরে, ৪১ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ২০১৪ সালের পর থার্মোমিটারের পারদ এতো ওপরে ওঠেনি। দেশব্যাপী বেশ কয়েকবার তাপপ্রবাহ দীর্ঘস্থায়ী রূপ নেয়। ফলে ধানের ব্যাপক ক্ষতি হয়। বিশেষ করে উত্তর ও উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে চিটা হয় বেশি।

ঘূর্ণিঝড়:
দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমী বায়ু তথা বর্ষার সময় অর্থাৎ এপ্রিল থেকে অক্টোবর পর্যন্ত অন্তত ১৩টি লঘুচাপের সৃষ্টি হয় সাগরে। এরমধ্যে চারটি ঘণীভূত হয়ে নিম্নচাপ থেকে মোটাদাগে ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নেয়।

এগুলোর মধ্যে ঘূর্ণিঝড় তাইতি, ইয়াস, গোলাব উল্লেখযোগ্য। আর ডিসেম্বরের শুরুতে জাওয়াদ আসে। তাইতি পাকিস্তান, দক্ষিণ-পশ্চিম ভারতে আঘাত হানে। ইয়াস দক্ষিণ ভারতে আঘাত হেনে দেশে প্রবেশ করে দুর্বল আকারে। গোলাবও দেশে আসেনি। আর জাওয়াদ আন্দামান সাগর থেকে সৃষ্টি হয়ে দীর্ঘপথ অতিক্রম করে দক্ষিণ ভারতের উপকূলে এসে শক্তি হারিয়ে ফেলে। ইয়াস উপকূলীয় অঞ্চলে বাঁধের ক্ষতি করলেও বাকিগুলো তেমন কোনো প্রভাব ফেলতে পারেনি। এছাড়া কালবৈশাখী ঝড়ও বড় কোনো ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়নি।  

বজ্রঝড়:
২০২০ সালে এসে সবচেয়ে বড় প্রাকৃতিক দুর্যোগে রূপ নিয়েছে বজ্রঝড়। আবহাওয়াবিদরা বলছেন, আগের তুলায় বেশ বেড়েছে বজ্রপাত। এর পেছনে বড় কারণ তাপপ্রবাহ/জলবায়ু পরিবর্তন। চলতি বছর সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৩৫০ জন মানুষ বজ্রপাতে নিহত হয়েছেন।  

এছাড়া একদিনে একইসঙ্গে চাঁপাইনবাবগঞ্জে ১৭ ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। তারা বরযাত্রী ছিলেন এবং পথে বৃষ্টির কারণে একটি ছাউনিতে অবস্থান নিয়েছিল। গত ৪ এপ্রিলের এই ঘটনা দেশে বজ্রপাতের ইতিহাসে রেকর্ড এবং আলোচনার জন্ম দেয়। চলতি বছর জামালপুর, সিরাজগঞ্জ, নেত্রকোণা, কুমিল্লা, নরসিংদীতে সবচেয়ে বেশি বজ্রঝড় হয়। জামালপুর বাদে অন্য অঞ্চলকে বজ্রপাতের হটস্পট হিসেবে চিহ্নিত করে আবহাওয়া অফিস।

বন্যা:
এবার বন্যার দেখা মেলে দেরিতেই। প্রায় ১০ বছর ধরে আগাম বন্যা হলেও চলতি বছর হয়নি। জুন-জুলাইতেও দেখা মেলেনি বড় বন্যার। তবে, মৌসুমের শেষের দিক অর্থাৎ আগস্ট-সেপ্টেম্বরে বৃষ্টিপাত বাড়ায় দেশের ১৫টি জেলার নিম্নাঞ্চল ব্যাপকভাবে প্লাবিত হয়। জামালপুর, বগুড়া, কুড়িগ্রাম, সিরাজগঞ্জ, ফরিদপুর অঞ্চলে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়। তবে, অন্যান্য বছরের তুলনায় খুব কম। বন্যার চেয়ে এবার বেশি ক্ষতি হয় বন্যা পরবর্তী নদী ভাঙনে। এবার নদী ভাঙনে সাড়ে নয় হাজার পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয় বলে জানান দুর্যোগ ববস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমান।

ভূমিকম্প:
চলতি বছর বেশ কয়েকটি মৃদু ভূমিকম্পের ঘটনা ঘটে। এর কোনো কোনোটিতে পুরো দেশ কেঁপে ওঠে। গত ২৯ মে সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত চারবার ভূমিকম্প অনুভূত হয় সিলেট অঞ্চলে। রিখটার স্কেলে ৪ মাত্রার ঘরে ছোট এসব ভূমকম্পনের উৎসস্থল দেশের বাইরে ডাউকি ফল্টে। ৯ আগস্ট রাতে রিখটার স্কেলে ৪ দশমিক ৩ মাত্রার  এ কম্পনটির উৎপত্তি মিয়ানমারে হওয়ায় চট্টগ্রাম, কক্সবাজারকেও নাড়া দেয়।   ২৫ নভেম্বর মিয়ানমানের চিন প্রদেশে মাটির অনেক গভীর একটি মাঝারি ভূমিকম্প হওয়ায় ২৯ নভেম্বর পর্যন্ত চট্টগ্রাম অঞ্চলে তিনটি মৃদু কম্পন হয়। ২৫ নভেম্বর প্রায় পুরো দেশ কেঁপে ওঠে।

এ নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্যোগ বিজ্ঞান ও ব্যবস্থাপনা বিভাগের অধ্যাপক ও আর্থ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স অনুষদের সাবেক ডিন ড. এএসএম মাকসুদ কামাল বলেন, বাংলাদেশের বাইরে হয়েছে ভূমিকম্পগুলো। তাই কম কম্পন্ন অনুভূত হয়েছে। সাধারণত একশ বছর পরপর বড় ভূমিকম্প হয়। সেটারই পূর্বাভাস হতে পারে এগুলো। ভূমিকম্প ঠেকানোর কোনো উপায় নেই। তবে ক্ষয়ক্ষতি কমাতে সচেতনতা বাড়াতে হবে।

বাংলদেশ সময়: ১৪২০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৫, ২০২১
ইইউডি/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।