ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

সালতামামি

সালতামামি-২০২১

করোনাকালে চমক দেখিয়েছে পুঁজিবাজার

এস এম এ কালাম, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৫৯ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৫, ২০২১
করোনাকালে চমক দেখিয়েছে পুঁজিবাজার

ঢাকা: পুঁজিবাজারের একটি গুণগত পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে বিদায় নিচ্ছে ২০২১ সাল। দীর্ঘ এক দশক পর ২০২১ সালজুড়েই দেশের পুঁজিবাজারে আলোচনার বিষয়বস্তু ছিল বাজারের গতিশীলতা।



বিদায়ী বছরে করোনা ভাইরাস নিয়ন্ত্রণে কঠোরতম লকডাউনের মধ্যেও ব্যাংকিং কার্যক্রমের সঙ্গে সংগতি রেখে দেশের পুঁজিবাজার চালু থাকে৷ নতুন উচ্চতায় পৌঁছে দেশের শেয়ারবাজার। করোনা অতিমারির মধ্যেও দীর্ঘ এক দশক পর প্রতিদিনই নিত্যনতুন রেকর্ড গড়ে শেয়ারবাজার। সামগ্রিক অর্থনীতিতে করোনার নেতিবাচক প্রভাব পড়লেও চমক দেখায় দেশের পুঁজিবাজার।

প্রতিদিনই বাজারে নতুন নতুন বিনিয়োগ আসে পুঁজিবাজারে৷ সেসঙ্গে যুক্ত হন নতুন বিনিয়োগকারীও৷ প্রাতিষ্ঠানিক ও ব্যক্তি পর্যায়ের সব ধরনের বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণ বাড়ায় প্রধান শেয়ারবাজারের লেনদেন বিগত ১০ বছরে সর্বোচ্চ স্থানে পৌঁছে। একইভাবে লেনদেনের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে সার্বিক সূচক। এতে বাজারের গভীরতা যেমন বৃদ্ধি পায়, তেমনি বৃদ্ধি পায় বিনিয়োগকারীদের আস্থা।

নতুন কমিশন দায়িত্ব নেওয়ার পর কিছু ইতিবাচক পদক্ষেপ গ্রহণের ফলে বৈশ্বিক মহামারির মধ্যেও অভাবনীয় ভালো অবস্থান ধরে রেখেছে দেশের পুঁজিবাজার। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বিশ্বের স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠান ব্লুমবার্গের তথ্যের ভিত্তিতে এশিয়া ফ্রন্টিয়ার ক্যাপিটালের এক প্রতিবেদনে পারফরম্যান্স বিবেচনায় বিশ্বে শীর্ষস্থান অর্জন করেছে দেশের পুঁজিবাজার।  
এর আগে গত বছরের জুলাই-সেপ্টেম্বরেও ‘বিশ্বসেরা’ হয় দেশের পুঁজিবাজার। পুঁজিবাজারের গতিশীলতা ধরে রাখতে দেশ এবং দেশের বাইরে ব্রোকারেজ হাউজের শাখা বা ডিজিটাল বুথ চালু করা হয়েছে৷ 

আইপিওর শেয়ার সাধারণ বিনিয়োগকারীদের মধ্যে প্রো-রাটা অনুসারে বরাদ্দের সিদ্ধান্ত৷ কোয়ালিফাইড ইনভেস্টর অফার বাই স্মল ক্যাপিটাল কোম্পানিজ রুলস, ২০১৮ এর আওতায় ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে এ বছর প্রযুক্তিগত সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করে ৬টি কোম্পানি নিয়ে স্মল ক্যাপিটাল প্ল্যাটফর্মে লেনদেনের সূচনা উন্মোচিত হয়েছে।

এবছর পুঁজিবাজারে আলোচিত ওভার দি কাউন্টার মার্কেট বিলুপ্তির মাধ্যমে ওটিসি মার্কেটের ১৮টি কোম্পানি, ১৪টি বন্ড এবং বেশ কিছু ওপেন এন্ড মিউচ্যুয়াল ফান্ড তালিকাভুক্তির মাধ্যমে অল্টারনেটিভ ট্রেডিং বোর্ড (এটিবি) চালু করার প্রক্রিয়া চূড়ান্ত পর্যায়ে৷ একটি উন্নত ও কার্যকর বন্ড মার্কেট প্রতিষ্ঠার লক্ষে ইতোমধ্যেই বহুল প্রতীক্ষিত গভর্নমেন্ট ট্রেজারি বন্ডের পরীক্ষামূলক লেনদেন সম্পন্ন হয়েছে৷ শিগগিরই প্রয়োজনীয় সিস্টেম ডেভেলপমেন্ট সম্পাদনের মাধ্যমে সার্বজনীনভাবে গভর্মেন্ট ট্রেজারী বন্ডের লেনদেন স্টক এক্সচেঞ্জের টেডিং প্ল্যাটফর্মে শুরু হবে৷ ব্রোকারেজ হাউজগুলোকে এপিআই সংযোগের মাধ্যমে নিজস্ব ওএমএস চালুর মাধ্যমে গ্রাহক সেবার উন্নতি করণের লক্ষ্যে দুটো ব্রোকারেজ হাউজকে ডিএসই ফিক্স সার্টিফিকেশন প্রদান করেছে৷ আশা করা যাচ্ছে নতুন বছরের শুরুতেই এসব অর্জনের মাধ্যমে পুঁজিবাজারের এক নতুন মাত্রা যোগ হবে।

টেকসই উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় মুজিববর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে ডিএসইর ৫৪টি নতুন ট্রেক হস্তান্তর দেশের পুঁজিবাজার প্রসারে এক অনন্য উপহার৷ এরই ধারাবাহিকতায় নতুন এবং পুরাতনদের ব্যবসায়িক অভিজ্ঞতায় রচিত হবে আগামীর পুঁজিবাজারের শক্তিশালী ভীত৷ তারল্য সংকটে শেয়ারবাজারের অস্থিতিশীল পরিস্থিতি মোকাবিলায় বিনিয়োগ কার্যক্রমের মাধ্যমে বাজারকে স্বাভাবিক করার লক্ষে তালিকাভুক্ত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বিতরণ না হওয়া লভ্যাংশ নিয়ে শেয়ারবাজার স্থিতিশীলকরণ তহবিল গঠন করা হয়েছে৷ সাধারণ বিনিয়োগকারীদের আনুপাতিক হারে শেয়ার বরাদ্দের জন্য এক্সচেঞ্জে ইলেক্ট্রনিক সাবস্ক্রিপশন সিস্টেমের উদ্বোধন করা হয়৷ এর ফলে ইস্যুয়ার কোম্পানির আইপিও ইস্যু খরচ কমার পাশাপাশি, চাঁদা গ্রহণ থেকে লেনদেন শুরুর মধ্যবর্তী সময় কমে আসে৷ একইসঙ্গে আইপিও আবেদন, পরীক্ষণ এবং শেয়ার বরাদ্দের ক্ষেত্রে আরও বেশি সুশাসন প্রতিষ্ঠা হয় এবং একই প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে সব ধরনের স্টেক হোল্ডারদের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়েছে৷

অতীতের যেকোনো সময়ের তুলনায় বর্তমানে বাংলাদেশের সার্বিক অর্থনীতির চিত্র ও পরিবেশ বিনিয়োগের অনুকূল৷ ফলে বাংলাদেশ আজ দেশের গণ্ডি পেরিয়ে প্রবাসী বংলাদেশি বিনিয়োগকারী এবং বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণ করতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের সম্ভাবনাময় পুঁজিবাজার বিষয়ে রোড-শো’র শুরু করে৷ ইতোমধ্যে সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের চারটি অঙ্গরাজ্য, সুইজারল্যান্ড, লন্ডনে রোড-শো’ সম্পন্ন করেছে এবং আরো বেশ কয়েকটি দেশে রোড-শো’র আয়োজন প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

২০২১ সালের বাজারচিত্র
আইপিও


শিল্প উদ্যোক্তারা ২০২১ সালে ১টি মুদারাবা পারপিচ্যুয়াল বন্ড ও ১৪টি কোম্পানিসহ মোট ১৫টি প্রতিষ্ঠান বাজার থেকে প্রাথমিক গণপ্রস্তাব বা আইপিওর মাধ্যমে ১২৮৩ কোটি ৩৬ লাখ টাকা মূলধন সংগ্রহ করে৷ এর মধ্যে ৩টি কোম্পানি প্রিমিয়াম বাবদ ২৯৭ কোটি ৭৩ টাকা মূলধন উত্তোলন করে৷ অপরদিকে ২০২০ সালে ৮টি কোম্পানি প্রাথমিক গণপ্রস্তাব বা আইপিওর মাধ্যমে মোট ১২৯৬ কোটি ৮৭ লাখ টাকা মূলধন সংগ্রহ করা হয়৷ এর মধ্যে ৩টি কোম্পানি প্রিমিয়াম বাবদ ৩১১ কোটি টাকা মূলধন উত্তোলন করে।

তালিকাভুক্তি

২০২১ সালে প্রাথমিকগণ প্রস্তাব বা আইপিওতে আসা ১৩টি কোম্পানি ২৫৮৬ কোটি ৯ লাখ টাকার পরিশোধিত মূলধন নিয়ে ডিএসইতে তালিকাভুক্ত হয়৷ এছাড়াও ওটিসি মার্কেট থেকে আসা ৪টি কোম্পানি মূল মার্কেটে পুনঃতালিকাভুক্ত হয়৷ যার পরিশোধিত মূলধন ১৬৪ কোটি ৯০ লাখ টাকা। অপরদিকে ২০২০ সালে ১টি মিউচ্যুয়াল ফান্ডসহ মোট ৯টি সিকিউরিটিজ ৬০০২ কোটি ৯ লাখ টাকা পরিশোধিত মূলধন নিয়ে ডিএসইতে তালিকাভুক্ত হয়। সব মিলিয়ে ২০২১ সাল পুঁজিবাজারে দীর্ঘ সময়ের মধ্যে একটি ইতিবাচক বছর বলেও মনে করেন বিনিয়োগকারীসহ সংশ্লিষ্টরা।

বাংলাদেশ সময়: ১৫৫৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৫, ২০২১
এসএমএকে/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।