বরিশাল: মহামারি করোনার সংক্রমণ কিছুটা কমে আসার পর ২০২১ সালে নির্মাণসামগ্রী, তেলসহ বিভিন্ন দৈনিন্দিন পণ্যের মূল্যের উর্ধ্বগতির কারণে কিছুটা নাজেহাল ছিলো বরিশালবাসী। সার্বিক আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও সেবার মান উন্নয়নে বছরটা অনেকটাই স্বস্তিতে কাটিয়েছেন তারা।
২০২১ সালের ১৮ আগস্ট রাতে বরিশাল নগরে সবচেয়ে আলোচিত ঘটনা ঘটে। ওইরাতে বরিশাল সিটি করপোরেশনের স্টাফরা বরিশাল সদর উপজেলা পরিষদ চত্ত্বরে (থানা কাউন্সিল) থাকা ব্যানার-পোস্টার অপসারণে যায়। তবে সরকারি বিভিন্ন দপ্তরের কার্যালয় থাকা ওই কম্পাউন্ডের ভেতরে রাতের বেলা কোনো ধরনের কাজ না করার জন্য বাধা দেন সদ্য বিদায়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মুনিবুর রহমান। এ নিয়ে সিটি করপোরেশনের স্টাফদের সঙ্গে বিতাণ্ডার সৃষ্টি হলে সিটি করপোরেশনের প্যানেল মেয়র, কর্মকর্তা-কর্মচারী, স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগ নেতারা ঘটনাস্থলে যান। তবে ইউএনওর সঙ্গে আলোচনার মধ্যেই আনসারদের ছোড়া গুলিয়ে আহত হন বেশ কয়েকজন। গুলি ছোড়ার খবরে ঘটনাস্থলে যান সিটি মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ্। তার দাবি ছিলো, পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে তিনি সেখানে গেলে ইউএনওর উপস্থিতিতে আনসার সদস্যরা তাকে উদ্দেশ্য করেও গুলি চালায়।
প্রতক্ষ্যদর্শী ও স্থানীয়রা জানান, এ খবর ছড়িয়ে পড়লে সিটি করপোরেশন স্টাফদের সঙ্গে নগর আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরারাও থানা কাউন্সিলমুখী হলে পরিস্থিতি ঘোলাটে হয়ে যায়। একটি যাত্রীবাহী বাস ও পুলিশের অ্যাম্বুলেন্সে ভাংচুর চালালে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ লাঠিচার্জ করে নেতাকর্মীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। তবে এর মধ্যেই আনসারদের ছোড়া গুলিতে আরো এক পুলিশ সদস্যসহ কয়েকজন আহত হন।
এ নিয়ে সারারাত রাত থানা কাউন্সিল থেকে শুরু করে গোটা বরিশালে একটা থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করে। এরপর ধারাবাহিকতায় সিটি মেয়র ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে আসামি করে পাল্টাপাল্টি মামলা দায়ের করা হয়। বিভাগীয় প্রশাসন ও মন্ত্রণালয়ের তদন্ত কমিটি গঠন, সিটি মেয়রকে কটাক্ষ করে প্রশাসন ক্যাডার কর্মকর্তাদের অ্যাসোসিয়েশনের বিবৃত্তি, জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তাদের মেয়র বিরোধী রাজনৈতিক বক্তব্য প্রদান, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বাসভবনের সিসি ক্যামেরা ছোট-ছোট ভিডিও ফুটেজ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ, মেয়রের বাসা ঘিরে রেখে পুলিশের অভিযান, বরিশাল থেকে আওয়ামী লীগ নেতাদের ও ঢাকা থেকে সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলরকে গ্রেফতারে অনেকটাই কোণঠাসা হয়ে পড়েন মেয়রপন্থীরা।
তবে পুরো ঘটনার ভিডিও ফুটেজ প্রকাশ ও ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি ছিলো মেয়রের। সেই সঙ্গে আনসারদের ছোড়া গুলিতে বেশ কয়েকজন নেতাকর্মীর চোখ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া, মেয়রের পক্ষে সিটি করপোরেশনের স্টাফদের অবস্থান ও মানববন্ধন কর্মসূচি, গোটা বরিশালের পৌর মেয়ররা, উপজেলা চেয়ারম্যান, ভাইস-চেয়ারম্যানগন মেয়রের পক্ষে অবস্থান নিয়ে বিবৃতি প্রদান করলে পাল্লা কিছুটা ভারি হতে শুরু করে।
তবে ঘটনা কি হয়েছিলো সেই রাতে, কার দোষ কম-কার দোষ বেশি তার কোনো সুরাহা না হলেও, অনেক বাকযুদ্ধের পর প্রশাসন এবং আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের উপস্থিতিতে ২২ আগস্ট রাতে সমঝোতা হয়। আর ওই রাতের পরই বিষয়টি নিয়ে উত্তাপ কমে আসে নগরে। যদিও জাতীয় রাজনীতিতেও এ ঘটনা প্রভাব ফেলে। মেয়রের পাশাপাশি প্রশাসনিক ব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন কেন্দ্রীয় বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব মজিবর রহমান সরোয়ারসহ অনেকে।
ঘটনার পর কিছুদিন ঢাকায় অবস্থান করার পর মেয়র নিজ উদ্যোমে নগর চষে বেড়াচ্ছেন, স্বাভাবিকভাবে নিজের কথাগুলো তুলে ধরছেন। এদিকে তৎকালীন বরিশাল সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মুনিবুর রহমান ও কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নুরুল ইসলাম বদলী হয়ে অন্যত্র চলে গেছেন। তবে মেয়র আর সাংসদ পন্থীদের দূরত্ব বেড়েছে অনেকটাই।
এসব ঘটনার পর সিটি করপোরেশনের বেশ কিছু কাউন্সিলর ও সাবেক আওয়ামী লীগ নেতা বরিশাল সদর আসনের সাংসদ ও জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি কর্নেল অব. জাহিদ ফারুক শামীমকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানান। এছাড়া ফাঁস হয় মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও কাউন্সিলরের ফোনালাপ। যেখানে মেয়রের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ক্ষোভের কথা প্রকাশ করেছেন ২০ নম্বর ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগের কাউন্সিলর জিয়াউর রহমান বিপ্লবকে। তাছাড়া সম্প্রতি মহানগর ও জেলা আওয়ামী লীগ বিভিন্ন কর্মসূচির আয়োজন করলেও সেখানে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও স্থানীয় সংসদের দেখা মেলে না। তার অনুসারীরা আলাদাভাবে কর্মসূচি পালন করছেন।
এদিকে দীর্ঘদিন বরিশাল মহানগর ছাত্রলীগের কমিটির কোনো কার্যক্রম না থাকলেও এপ্রিল মাসে সভাপতি জসিম উদ্দিনের বিরুদ্ধে এক তরুণীর ধর্ষণের অভিযোগে মামলা দায়ের আর দীর্ঘদিন সরে থাকার পর সাধারণ সম্পাদক অসীম দেওয়ানের বরিশালে শো-ডাউন দিয়ে আগমন।
বাংলাদেশ সময়: ০০০০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০০, ২০২১
এমএস