ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

সালতামামি

বিদায়ী বছরে কুমিল্লায় আলোচনায় ছিল পূজামণ্ডপ, কাউন্সিলর হত্যা

তৈয়বুর রহমান সোহেল, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৩২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১, ২০২২
বিদায়ী বছরে কুমিল্লায় আলোচনায় ছিল পূজামণ্ডপ, কাউন্সিলর হত্যা

কুমিল্লা: পূজামণ্ডপ কাণ্ড, একে ঘিরে পরবর্তী সহিংসতা, কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সৈয়দ মোহাম্মদ সোহেলকে হত্যা, বিভাগ নিয়ে দোলাচল, সঙ্গে সাবেক আইনমন্ত্রী আবদুল মতিন খসরু, অ্যাডভোকেট বাসেত মজুমদার, সাবেক সংসদ সদস্য ইউনুস ভূঁইয়া ও আওয়ামী লীগ নেতা অধ্যক্ষ আফজল খানের মৃত্যু এবং ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের ছোবল - এসবের মধ্য দিয়ে এক বেদনাবিধুর বছর পার করেছে কুমিল্লা।

পূজামণ্ডপ কাণ্ড ও কাউন্সিলর সৈয়দ মোহাম্মদ সোহেল হত্যার ঘটনাকে কেন্দ্র করে অক্টোবর ও নভেম্বর দুই মাস পুরো দেশের মানুষের চোখ ছিল কুমিল্লার দিকে।

তবে কিছু আশাব্যঞ্জক খবরও ছিল। যার মধ্যে কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের সবচেয়ে বড় বাজেট উল্লেখযোগ্য।

১৩ অক্টোবর ভোরে ৯৯৯-এ একটি কল পেয়ে কুমিল্লা কোতোয়ালি মডেল থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আনওয়ারুল আজিম ছুটে যান। কুমিল্লা নগরীর নানুয়ার দিঘির পাড়ের একটি অস্থায়ী পূজামণ্ডপে হনুমানের মূর্তির কোল থেকে পবিত্র কোরআন শরিফ উদ্ধার করেন তিনি। এ ঘটনা লাইভ হয়। ফেসবুকে তৎক্ষণাৎ ছবি ছড়িয়ে পড়লে সারাদেশে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে।

ঘটনার ভয়াবহতা উপলব্ধি করতে পেরে ওইদিন বিকেল ৩টা থেকে কুমিল্লায় ইন্টারনেট সংযোগ দুর্বল করে দেওয়া হয়। পরবর্তীতে আরও তিনদিন ইন্টারনেট সংযোগ স্লো থাকে কুমিল্লায় (ব্রডব্যান্ড বাদে)। মণ্ডপের ঘটনাকে কেন্দ্র করে সহিংসতায় চাঁদপুর, নোয়াখালী, কক্সবাজার ও কুমিল্লায় আটজনের প্রাণহানি ঘটে। যেকোনো সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় কুমিল্লায় প্রাণহানির ঘটনা এটাই প্রথম।

এ ঘটনা ও ঘটনা পরবর্তী সহিংসতায় কুমিল্লায় মোট সাতটি মামলা দায়ের করা হয়। ১২টি সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে পুলিশ নিশ্চিত হয়, মণ্ডপে কোরআন রাখা ব্যক্তির নাম ইকবাল। সে পাথুরিয়া পাড়ার বাসিন্দা। ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের মামলায় ইকবাল, ৯৯৯-এ কল করা ইকরামসহ চারজন জেলহাজতে রয়েছে।

২২ নভেম্বর কুমিল্লা নগরীর পাথুরিয়া পাড়া থ্রি স্টার এন্টারপ্রাইজে ঢুকে এলোপাতাড়ি গুলি করে সিটি করপোরেশনের ১৭ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর সৈয়দ মোহাম্মদ সোহেল ও তার সহযোগী হরিপদ সাহাকে হত্যা করা হয়। পরদিন তার ভাই রুমন ১১ জনকে এজাহারনামীয় ও ৮-১০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করে। মামলার পর পুলিশের সঙ্গে 'বন্দুকযুদ্ধে' নিহত হয় প্রধান আসামি শাহ আলম, সাব্বির ও সাজন। কাউন্সিলর সোহেলের মালিকানাধীন বস্তিতে ভাড়া থাকতো মণ্ডপে কোরআন রাখা ইকবাল। অনেকের ধারণা দুইটি ঘটনার যোগসাজশ আছে। তবে স্থানীয়দের বিশ্বাস, আধিপত্য বিস্তারের রাজনীতিতে খুন হন কাউন্সিলর।

কুমিল্লা বিভাগ আন্দোলন শুরু হয় নব্বই দশকের গোড়ার দিকে। ২০১৫ সালে কুমিল্লায় নজরুল জন্মজয়ন্তীর জাতীয় উৎসবেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কুমিল্লাকে বিভাগ করার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন। বিভাগ করার প্রতিশ্রুতি থেকে তিনি সরে আসেননি। প্রথমে ময়নামতি নামে কুমিল্লা বিভাগ করার কথা বলা হয় ২০১৮ সালে। চলতি মাসে প্রধানমন্ত্রী মেঘনা নামে কুমিল্লা বিভাগ করার কথা বলেন। তবু বিভাগ আর হয় না! এ নিয়ে কুমিল্লার মানুষের দুঃখের অন্ত নেই। কারণ ১৯৬১ সালে যে বিশ্ববিদ্যালয় কুমিল্লা পাওয়ার কথা, সে বিশ্ববিদ্যালয় পেয়ে যায় চট্টগ্রাম। শিক্ষা-সংস্কৃতিতে একটি অগ্রসর জনগোষ্ঠী শত বছর পিছিয়ে পড়ে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের অভাবে।

চলতি বছরের এপ্রিলে করোনার ভয়াবহতা শুরু হয়। সাবেক আইনমন্ত্রী আবদুল মতিন খসরু সদ্য সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি নির্বাচিত হন। কিন্তু শপথ গ্রহণের আগেই করোনায় আক্রান্ত হয়ে ১৪ এপ্রিল মারা যান তিনি। তিনি ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ বাতিল করেন। ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ বাতিলের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর খুনিদের বিচারের পথ পরিষ্কার হয়। তিনি পাঁচবার কুমিল্লার বুড়িচং-ব্রাহ্মণপাড়ার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। কুমিল্লার ইতিহাসে সবচেয়ে জনপ্রিয় নেতাদের একজন ছিলেন তিনি। এর আগে মারা যান সাবেক সংসদ সদস্য ( বুড়িচং-ব্রাহ্মণপাড়া) বিএনপি নেতা ইউনুস ভূঁইয়া। মাঝে বাংলাদেশ বার অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সহ সভাপতি, আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য ও কুমিল্লার সন্তান অ্যাডভোকেট বাসেত মজুমদার মারা যান। সর্বশেষ ১৬ নভেম্বর মারা যান কুমিল্লার আওয়ামী রাজনীতির সিংহ পুরুষ খ্যাত বীরমুক্তিযোদ্ধা অধ্যক্ষ আফজল খান। যিনি বঙ্গবন্ধু শহীদ হওয়ার পরও শক্ত হাতে কুমিল্লার আওয়ামী রাজনীতিকে ধরে রাখেন। তার হাত ধরে অনেক জাতীয় নেতার সৃষ্টি হয়।  

মে মাসে করোনা পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নেয়। ঘরে ঘরে করোনা ছড়িয়ে পড়ে। কোরবানির ঈদটিও নিরানন্দভাবেই কেটে যায়। করোনায় মৃত্যুর মিছিলে কুমিল্লার সিভিল সার্জন মীর মোবারক হোসেনের ভূমিকা ছিল প্রশংসার যোগ্য। তিনি কোভিড রোগীদের জন্য এক হাজারের বেশি শয্যা বাড়ানোর উদ্যোগ নেন। যেটা উদাহরণ হয়ে থাকবে।

আশার সংবাদ হলো কুমিল্লা সিটি করপোরেশন একনেকের ৭ ডিসেম্বরের সভায় ১৫৩৮ কোটি টাকা বরাদ্দ পায়। এর আগে আড়াইশ কোটি টাকার কাছাকাছি পায় তারা। এবার সেটা কয়েকগুণ বেশি হওয়ায় সিটিতে ভালো উন্নয়ন হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।

তাছাড়া বছর জুড়ে কুমিল্লার পুলিশ সুপার ফারুক আহমেদের নেতৃত্বে মাদক ও সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান প্রশংসা কুড়িয়েছে। সন্ত্রাস দমনে র‌্যাব-১১ সিপিসি-২ এর কার্যক্রম ছিল বেশ ইতিবাচক।

বাংলাদেশ সময়: ১৩২৯ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০১, ২০২২

আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।