ঢাকা: অব্যাহত দরপতনে (সোমবার পর্যন্ত, ২৮ মার্চ) কেবল মার্চ মাসেই বিনিয়োগকারীরা পুঁজি হারিয়েছেন ৯ হাজার কোটি টাকার বেশি। একারণে বাজারে বিনিয়োগকারীদের আস্থাহীনতা বেড়েছে।
ফলে শেয়ার কেনার চেয়ে বিক্রির চাপে প্রতিনিয়তই বাজারে দরপতন অব্যাহত রয়েছে। এতে সূচক কমে সাড়ে চার হাজার পয়েন্ট আর লেনদেন ৩শ’ কোটির নিচে অবস্থান করছে।
ক্যাপিটাল মার্কেট এক্সপোজার লিমিটকে (পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ব্যাংকগুলোর অতিরিক্ত বিনিয়োগের সমন্বয়ের সময়সীমা) প্রধান কারণ মনে করেছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা। তারা মনে করছেন, বিষয়টি কেন্দ্র করে মার্চেন্ট ব্যাংকগুলো বাজারে এ পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে।
বাজারের দুর্দিনের শেয়ার কিনে মার্কেটকে সার্পোট দেওয়ার লক্ষে গঠিত সরকারি প্রতিষ্ঠান আইসিবিসহ সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোও হাত গুটিযে রয়েছে। ফলে বাজারের পরিস্থিতি আরো খারাপের দিকে যাচ্ছে।
এদিকে বাজার পরিস্থিতি নিয়ে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) মঙ্গলবার (২৯ মার্চ) দু’দফা ডিএসইর সব ব্রোকার হাউজের প্রধানদের সঙ্গে বৈঠক করবেন বলে ডিএসই সূত্রে জানা গেছে। প্রথম দফায় বিকেল ৩টায় ডিএসইর শীর্ষ ৩০ ব্রোকারেজ হাউজের সঙ্গে। দ্বিতীয় দফায় সব ব্রোকারেজ হাউজের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার (সিইও) সঙ্গে বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।
মার্চেন্ট ব্যাংকাররা বলছেন, ব্যাংলাদেশ ব্যাংকের আইন অনুযায়ী আগামী জুলাই মাসের মধ্যে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ব্যাংকগুলোর অতিরিক্ত বিনিয়োগ সমন্বয় করতে হবে। এতে ব্যাংকগুলোর প্রায় ৪ থেকে ৫শ’কোটি টাকার ক্ষতি হবে।
লোকসান থেকে বাঁচতে তারা ২০২০ সালের জুলাই পর্যন্ত সময় চেয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ব্যাংক এবং পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) কাছে আবেদন করে। সময়সীমা আরো ২ বছর বাড়ানোর জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকে নির্দেশনাও দেয় অর্থ মন্ত্রণালয়। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংক এ বিষযে কোনো উদ্যোগ গ্রহণ না করায় পুঁজিবাজারে নতুন করে সংকট তৈরি হয়েছে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমবিএ) মহাসচিব ও এমটিবি ক্যাপিটাল লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) খায়াল বাশার আবু তাহের মোহাম্মদ বলেন, পুঁজিবাজারে ধসের সময় ব্যাংকগুলো অনেক বিনিয়োগকারীকে মার্জিন ঋণ সুবিধা দিয়েছিলো। এ কারণে বাজারে প্রতিষ্ঠানগুলোর অনেক টাকা আটকে রয়েছে। এ অর্থ আদায় না হওয়ায় বর্তমানে প্রতিষ্ঠানগুলোর আর্থিক সামর্থ্য বাড়ছে না।
অন্যদিকে সংশ্লিষ্ট বিনিয়োগকারীরা সক্রিয় হতে পারছেন না। তাই পুঁজিবাজারে ব্যাংকের বিনিয়োগসীমা সমন্বয়ের মেয়াদ বাড়ানোর ও বিনিয়োগসীমা নির্ধারণের সংজ্ঞা পরিবর্তনের জন্য অর্থমন্ত্রীর কাছে অনুরোধ জানিয়েছি।
অর্থনীতিবিদ ও পুঁজিবাজার বিশ্লেষক আবু আহমেদ বলেন, ২০১০ সালের ঘটনার ছয় বছরে স্থিতিশীল হয়নি দেশের পুঁজিবাজার। বরং এসময়ে ছোট ধসের মতো ঘটনা ঘটেছে। গত ফেব্রুয়ারি মাসের মাঝামাঝি সময় থেকে চলা এ দরপতনে বিনিয়োগকারীরা বেশি হতাশ হয়েছেন। বাজারে বর্তমান অবস্থার উন্নতি করতে হলে ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগের সময়সীমা বাড়ানো দরকার।
পাশাপাশি দেশের আর্থিক খাতে একের পর এক কেলেঙ্কারি ও এসব কেলেঙ্কারির সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে কোনো ধরনের ব্যবস্থা না নেওয়ায় পুঁজিবাজারের বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থার সংকট রয়েছে। বিষয়টি দ্রুত নিষ্পত্তি দরকার বলে মনে করেন ডিএসইর বর্তমান পরিচালক শাকিল রিজভী।
ডিএসইর তধ্য অনুসারে, গত মার্চ মাসে ১৯ দিন পুঁজিবাজারে লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে ১২দিন উত্থান আর ৭ দিন পতন হয়েছে। এতে বাজার থেকে মূলধন কমেছে ৯ হাজার ৪০৮ কোটি ৯২ লাখ ৫৯ হাজার টাকা। সূচকও কমেছে ২০৯ পয়েন্ট। লেনদেন নেমেছে ৩শ’ কোটির নিচে।
বাংলাদেশ সময়: ১২০৫ ঘণ্টা, মার্চ ২৯, ২০১৬
এমআই/জেডএস