ঢাকা: মন্দা পুঁজিবাজারে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন ব্রোকারেজ হাউজ মালিকরা। নিজেরা লোকসানে থাকার পাশাপাশি তাদের ব্রোকারেজ হাউজগুলো চালাচ্ছেন লোকসান দিয়ে।
মোট ৩৯৮ সদস্যকে লভ্যাংশ হিসেবে এ টাকা দিচ্ছে স্টক এক্সচেঞ্জ দু’টি।
এ টাকার ৯০ শতাংশ বিনিয়োগ হবে পুঁজিবাজারে। আর বাকি ১০ শতাংশ ব্যয় হবে ব্রোকার হাউজের ব্যবস্থাপনায়। এর ফলে বেশির ভাগ ব্রোকারদের বিনিয়োগের সক্ষমতা বাড়বে। পুঁজিবাজারেও ইতিবাচক প্রভাব পড়বে বলেও মনে করেন বাজার সংশ্লিষ্টরা।
আড়াইশ’ কোটি টাকার মধ্যে ডিএসই'র সদস্য ব্রোকার মালিকরা পাবেন প্রত্যেকে ৬৪ লাখ ৪০ হাজার টাকা আর সিএসই’র ৩ লাখ ৮০ হাজার টাকা করে। সব মিলে ডিএসই’র ২৫০ সদস্য পাবেন ১৬২ কোটি টাকা আর সিএসই’র ১৪৮ সদস্য পাবেন ৩৪ কোটি ২০ লাখ টাকা। বাকি ২১ কোটি ৮০ লাখ টাকা যাবে সরকারের রাজস্ব খাতে।
জানা গেছে, মহাধসের পর থেকে থেমে থেমে চলা মন্দায় অস্তিত্ব সংকটে রয়েছে ব্রোকারেজ হাউজগুলোর। ব্যবসা সংকটে খাঁ খাঁ করছে ব্রোকারেজ হাউজ। নেই বিনিয়োগকারী, নেই লেনদেন। লোকসান কমাতে হাজার হাজার কর্মীকে ছাঁটাই করেছেন ব্রোকারেজ হাউজ মালিকরা। বন্ধও করেছেন শত শত শাখা অফিস। এখন কেবল ৪-৫ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী দিয়ে প্রধান অফিস চালাচ্ছে ৩ শতাধিক ব্রোকারেজ হাউজ।
ব্রোকাররা বলছেন, ক্ষতিপূরণের এ টাকা পেলে তাদের কেউ কেউ অফিস ব্যবস্থাপনা, আবার কেউ কেউ পুঁজিবাজারে নতুন করে বিনিয়োগ করবেন। বাজারের পরিস্থিতির যাদি উন্নতি না হয় তবে আগামী ২ বছর এ টাকা দিয়েই চলতে পারবে ৩ শতাধিক ব্রোকার হাউজ।
এদিকে বাকি ৯৮টি বড় ব্রোকারেজ হাউজের খরচ সমন্বয়ের চেষ্টা চলছে। ফলে ব্রোকারদের ১৫ শতাংশ লভ্যাংশের দাবির প্রেক্ষিতে ১০ শতাংশ লভ্যাংশ দিয়েছে ডিএসই। আর সিএসই দিচ্ছে ৬ শতাংশ লভ্যাংশ। যা টাকার অংকে দাঁড়িযেছে ১৮০ আর ৩৮ কোটি টাকা।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) অধ্যাপক স্বপন কুমার বালা বাংলানিউজকে জানান, লভ্যাংশের অর্থ দেওয়ার কার্যক্রম চলছে। শিগগিরই টাকা দেওয়া সম্পন্ন হবে।
চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) ভারপ্রাপ্ত এমডি জানান, আগামী ২১ এপ্রিল এজিএমের পর পরই সিএসই’র ব্রোকারদের টাকা দিয়ে দেওয়া হবে। এর ফলে তারা শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করতে পারবেন। এতে বাজারে লেনদেন বাড়বে। বিনিয়োগকারীদের মধ্যেও আস্থা বাড়তে শুরু করবে।
ডিএসই’র সাবেক সভাপতি ও বর্তমান পরিচালক শাকিল রিজভী বাংলানিউজকে জানান, বাজারে চলছে ফান্ড সংকট। এই মুহূতে বাজারে যতো বেশি ফান্ড আসবে, বাজার ততো ভাল হবে। লভ্যাংশের এই টাকা পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করা হবে। আশা করছি, বাজারের এ অবস্থা থেকে উত্তরণে বড় প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা নতুন করে ফান্ড সৃষ্টি করে বাজারের জন্য অবদান রাখবেন।
এতে বিনিয়োগকারী ও শেয়ার ব্যবসায়ী সবাই লাভবান হবেন বলেও মনে করেন তিনি।
এ টাকা কোথায় কিভাবে খাটানো হবে জানতে চাইলে প্রাইলিংক সিকিউরিটিজ লিমিটেডের চেয়ারম্যান ও ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশনের পরিচালক ড. মো. জহিরুল ইসলাম জানান, ডিএসই থেকে পাওয়া টাকার ৯০ শতাংশ বিনিয়োগ করা হবে পুঁজিবাজারে। আর বাকি ১০ শতাংশ ব্যয় হবে অফিস ব্যবস্থাপনা খাতে।
ডিমিউচ্যুয়ালাইজড স্টক এক্সচেঞ্জ পরবর্তী পুঁজিবাজারের শেয়াহোল্ডারদের জন্য লভ্যাংশ ঘোষণার পর গত ৩১ মার্চ ডিএসই’র ৫৪তম বার্ষিক সাধারণ সভা অুনষ্ঠিত হয়। সভায় ২০১৪-১৫ অর্থবছরের জন্য ডিএসই’র ১০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশের বিষয়টি সব ব্রোকারেজ মালিকের সর্বসম্মতিক্রমে পাস হয়। অপর পুঁজিবাজার সিএসই’র ৬ শতাংশ লভ্যাংশের বিষয়টি আগামী ২১ এপ্রিলের পর্ষদ সভায় সর্বসম্মতিক্রমে পাস হবে বলে জানিয়েছে সূত্র।
দুই স্টক এক্সচেঞ্জই এ লভ্যাংশ তাদের রিজার্ভ ভেঙে দিচ্ছে। তাই পুরো কার্যক্রম সম্পন্ন হতে একটু দেরি হবে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
বাংলাদেশ সময়: ১১১৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৪, ২০১৬
এমআই/এএসআর