ঢাকা: পুঁজিবাজারকে স্থিতিশীল রাখা ও বাজারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আরো বেশি আকৃষ্ট করতে আসছে বাজেটে ১ লাখ টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগকারীদের জন্য লভ্যাংশের ওপর করমুক্ত সুবিধা দেওয়া, স্টক এক্সচেঞ্জের ট্রেকহোল্ডার কর্তৃক সিকিউরিটিজ লেনদেনের ওপর আরোপিত উৎসে কর কমিয়ে শূন্য দশমিক ০১৫ শতাংশ করা এবং ডিমিউচ্যুয়ালাইজেশন পরবর্তী স্টক এক্সচেঞ্জকে ৫ (পাঁচ) বছরের জন্য শতভাগ কর অবকাশ দেওয়াসহ এগুচ্ছ সুবিধা চায় দেশের দুই পুঁজিবাজার ঢাকা ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ।
এর মধ্যে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ২০১৬-১৭ অর্থবছরের বাজেটে সুবিধা পেতে রোববার (০৮ মে) দুপুরে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) সাতটি প্রস্তাবনা দিচ্ছে।
এরপর অর্থ মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনকে (বিএসইসি) এ সাত দফা প্রস্তাবনা জমা দেওয়া হবে বলে বাংলানিউজকে নিশ্চিত করেন ডিএসই পরিচালক রকিবুর রহমান।
অপর পুঁজিবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই) এনবিআরকে দেবে ১৯টি প্রস্তাবনা। একইদিন আনুষ্ঠানিকভাবে দেওয়ার পর অর্থ মন্ত্রণালয় ও বিএসইসিকে জমা দেবে বলে জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. গোলাম ফারুক।
ডিএসইর সাত প্রস্তাবনা
দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) বাজেট প্রস্তাবনায় বলা হয়, ডিমিউচ্যুয়ালাইজেশন পরবর্তী স্টক এক্সচেঞ্জকে ৫ (পাঁচ) বছরের জন্য শতভাগ কর অবকাশ সুবিধা দেওয়ার প্রস্তাবনা করছে। এতে স্টক এক্সচেঞ্জ লাভজনক অবস্থানে আসবে। বাজারে লেনদেন বাড়বে, বাজারের প্রতি দেশিদের পাশাপাশি বিদেশি বিনিয়োগকারীরাও আকৃষ্ট হবেন। এতে সরকার আরো বেশি রাজস্ব আয় পাবে। তাই আগামী ৩ বছর অর্থাৎ ২০১৬ সালের জুলাই থেকে ২০১৯ সালের জুন পর্যন্ত শতভাগ কর অবকাশ দেওয়ার প্রস্তাব করা হচ্ছে।
বর্তমানে ডিমিউচ্যুয়ালাইজেশন পরবর্তী স্টক এক্সচেঞ্জকে প্রথম বছর শতভাগ, ২য় বছর ৮০ শতাংশ, ৩য় বছর ৬০ শতাংশ, ৪র্থ বছর ৪০ শতাংশ এবং ৫ বছর ২০ শতাংশ হারে কর অবকাশ সুবিধা দিয়েছে সরকার। সে হিসেবে আগামী তিন বছর ৬০, ৪০ এবং ২০ শতাংশ কর অবকাশ সুবিধা পাবে উভয় স্টক এক্সচেঞ্জ।
দ্বিতীয় প্রস্তাবনায় বলা হয়, পুঁজিবাজারের অব্যাহত মন্দায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ব্রোকাররা। তাই স্টক এক্সচেঞ্জের ট্রেকহোল্ডার কর্তৃক সিকিউরিটিজ লেনদেনের ওপর (ধারা ৫৩ বিবিবি) উৎস কর শূন্য দশমিক ০৫ শতাংশে থেকে কমিয়ে শূন্য দশমকি ০১৫ শতাংশ করা, নিবাসী এবং অনিবাসী বাংলাদেশিদের লভ্যাংশের ওপর উৎসে কর কর্তন ৮২ সি ধারার অধীনে অর্ন্তভুক্তি করা।
বিনিয়োগকারীদের জন্য করমুক্ত লভ্যাংশের পরিমাণ ২৫ হাজার টাকার পরিবর্তে তা বাড়িয়ে ১ লাখ টাকায় উন্নতি করা, স্টক এক্সচেঞ্জের ডিমিউচ্যুয়ালাইজড শেয়ার হস্তান্তর করার ক্ষেত্রে স্ট্যাম্পডিউটি (১ দশমিক ৫) থেকে অব্যহতি প্রদান করা। এসআরও নং.৩৩৩-আইন/আয়কর/২০১১, ডেট অক্টোবর ২৭, ২০১১-কে মূলধারায় (ফিন্যান্স অ্যাক্ট) অর্ন্তভুক্তিকরণ।
এছাড়াও অর্থ বছরের শুরু ১ জুলাইয়ের বাধ্যবাধকতা পরিবর্তন করে বছরের যেকোনো তারিখের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া। অর্থাৎ সম্প্রতি পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি বাজারে তালিকাভুক্ত ব্যাংক, বিমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কোম্পানি বাদে সব কোম্পানিকে পহেলা জুলাই টু জুন অর্থবছর পরিপালনের নির্দেশনা দিয়েছে। এর ফলে প্রায় ৮০টি কোম্পানির অর্থবছরের সময় পরিবর্তন করতে হচ্ছে।
সিএসইর ১৯ প্রস্তাবনা
ডিএসইর সঙ্গে মিল রেখে আসছে বাজেটে সরকারকে ১৯ দফা প্রস্তাবনা দিচ্ছে দেশের অপর পুঁজিবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই)।
সিএসইর প্রথম প্রস্তাবনা হলো, অর্থ আইন-২০১৫, ধারা-২(৩৫জি) অনুযায়ী ব্যাংক, ইন্স্যুরেন্স, আর্থিক প্রতিষ্ঠান ব্যতীত কোম্পানিগুলোর আয় বছর জুলাই থেকে শুরু করার বিধান রয়েছে, যা কোম্পানি আইনসহ অন্যান্য বিদ্যমান আইনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক বিধায় এ ধারা বাতিল করা।
দ্বিতীয় প্রস্তাবনা হচ্ছে- বর্তমান পুঁজিবাজারের সার্বিক অবস্থা বিবেচনায় নিয়ে ক্রম হ্রাসমান হারে আয়কর অব্যাহতির পরিবর্তে স্টক এক্সচেঞ্জকে শতভাগ করমুক্ত রাখা।
তৃতীয়টি হলো- স্টক এক্সচেঞ্জের সদস্যদের কাছ থেকে উৎসে আয়কর কর্তনের হার ০ দশমিক ০৫ এর পরিবর্তে ০ দশমকি ০১৫ শতাংশ এ পুনর্নির্ধারণ করে এভাবে কর্তিত করকে ব্রোকারেজ ব্যবসা থেকে উদ্ভুত সমুদয় আয়ের জন্য চূড়ান্ত কর দায় বিবেচনা করা।
চতুর্থ ও পঞ্চম প্রস্তাবনা হলো-কোম্পানিগুলোর আয়ের ওপর প্রদেয় কর কর্তন করে লভ্যাংশ দেয় বিধায় লভ্যাংশ থেকে উৎসে কর কর্তনের বিধান বাতিল করা ও বিনিয়োগকারীদের কর মুক্ত লভ্যাংশের সীমা ২৫ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ৫০ হাজার টাকা করা।
পরবর্তী প্রস্তাবনাগুলো হচ্ছে- পহেলা জুলাই ২০১৬ থেকে বিক্রয়লদ্ধ লাভের ওপর ১ বছর পর্যন্ত ৫ শতাংশ কর হার ধার্য এবং ১ বছরের বেশি শূন্য শতাংশ কর আরোপ করা, সফটওয়ার মেনট্যানেন্স ফির ওপর উৎস কর কর্তনের হার ১০ শতাংশ ও মূল্য সংযোজন কর কর্তনের হার ২ শতাংশ নির্ধারণ করা, লোকসান সমন্বয় করার সুযোগ আট বছর পর্যন্ত করা।
দেশে শিল্পায়নের মাধ্যমে উৎপাদন বৃদ্ধি ও নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য মূলধন গঠনের লক্ষ্যে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানির সংখ্যা বৃদ্ধি এবং তালিকাভুক্ত কোম্পানির প্রণোদনা হিসেবে বিদ্যমান কর হার ২৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২০ শতাংশ নির্ধারণ করা।
মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোর বিদ্যমান কর হার ৩৭ দশমিক ৫ শতাংশ কমিয়ে ২৫ শতাংশ এ নির্ধারণ করা।
পুঁজিবাজারে এসএমই’র তালিকাভুক্তিতে উৎসাহিত করার লক্ষে ক্ষুদ্র ও মাঝারি কোম্পানিগুলোর আলাদা স্কিমের আওতায় এনে তাদের জন্য ৫০ লাখ টাকা পর্যন্ত করমুক্ত রাখা, পরবর্তী ৫০ লাখ টাকা আয়কারীদের ১৫ শতাংশ এবং এর পরবর্তী ৫০ লাখ টাকা আয়কারী অর্থাৎ কোটি টাকার বেশি আয়কারীদের জন্য ২০ শতাংশ কর আরোপ করা।
পুঁজিবাজারে নতুন নতুন পণ্যকে করের আওতায় না রাখা, ব্রোকারেজ হাউজগুলোর করসীমা ৩৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২৫ শতাংশ করা, ব্যাংক ও এনবিএফআইগুলো যখন তালিকাভুক্ত করবে তখন তাদেরকে অন্যন্য সাধারণ তালিকাভুক্ত কোম্পানির মতো ২০ শতাংশ কর সুবিধা দেওয়া।
তালিকাভুক্ত মোবাইল কোম্পানির করসীমা ৪০ শতাংশ থেকে ৩৫ শতাংশে কমিয়ে আনা, ব্যক্তিগত আয়ের কর সীমা ৩০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২৫ শতাংশে আনা, করমুক্ত বাড়ি ভাড়া মাসিক সীমা ৪০ হাজার টাকা উন্নিত করা, ইউটিলিটি বাবদ বার্ষিক ৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত আয়কর মুক্ত রাখার বিধান করা।
বাংলাদেশ সময়: ০৬৪৫ ঘণ্টা, মে ০৭, ২০১৬
এমএফআই/জেডএস