ঢাকা: এক্সপোজার তথা পুঁজিবাজারে ব্যাংকগুলোর অতিরিক্ত বিনিয়োগের সমন্বয়ের সময়সীমা পরোক্ষভাবে বাড়ানোর ফলে ঘুরে দাঁড়ানোর অপেক্ষায় রয়েছে দেশের পুঁজিবাজার। এ কারণে বাংলাদেশ ব্যাংকের ঘোষণার পর থেকে তিন কার্যদিবস পুঁজিবাজারে লেনদেন হয়েছে, এর মধ্যে দুই কার্যদিবসই বেড়েছে সূচক ও বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ারের দাম।
গত সোমবার (০২ মে) বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে বলা হয়, পুঁজিবাজারে বাড়তি বিনিয়োগ সমন্বয়ের জন্য বাণিজ্যিক ব্যাংককে কোনো শেয়ার বিক্রি করতে হবে না। পুঁজিবাজারে বর্তমানে নির্ধারিত সীমার চেয়ে সামান্য বেশি বিনিয়োগ রয়েছে ১০টি ব্যাংকের। তা আইনি সীমায় নামিয়ে আনতে তাদের জন্য কেস টু কেস ভিত্তিতে সমাধান দেবে বাংলাদেশ ব্যাংক।
বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পুঁজিবাজারে ব্যাংকের অতিরিক্ত বিনিয়োগের (সিঙ্গেল বরোয়ার এক্সপোজার লিমিট) সমন্বয়ের বিষয়ে সুনির্দিষ্ট ব্যাখ্যা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। তা পরোক্ষভাবে এক্সপোজার লিমিটে বাড়ানোর পক্ষে। সহযোগী প্রতিষ্ঠানের মূলধন বাড়ানোর মাধ্যমে সমন্বয়ের যে নীতি বাংলাদেশ ব্যাংক নিয়েছে তা বাজারের জন্য দীর্ঘমেয়াদী ফলপ্রসূ হবে। ফলে বাজারে সেল প্রেসার থাকবে না। আর সেল প্রেসার কমাতে বাংলাদেশ ব্যাংকের এমন উদ্যোগ বর্তমান বাজারের জন্য ইতিবাচক। এ কারণে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে এক্সপোজার নিয়ে যে দোটানা ছিলো তা কেটে গেছে। ফলে বাজার ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে।
ঢাকা স্টক এক্সচঞ্জের (ডিএসই) তথ্য মতে, ০২ মে থেকে ০৫ পর্যন্ত বিদায়ী সপ্তাহে মোট চার কার্যদিবস পুঁজিবাজারে লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে দু’দিন উত্থান আর দু’দিন দরপতন হয়েছে। সপ্তাহ শেষে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ডিএসই প্রধান সূচক আগের সপ্তাহের চেয়ে ১১১ পয়েন্ট বেড়ে ৪৩০৬ পয়েন্টে, ডিএস-৩০ সূচক আগের সপ্তাহের চেয়ে ৫২ পয়েন্ট বেড়ে ১৬৬৫ পয়েন্টে এবং ডিএসইএস শরিয়াহ সূচক আগের সপ্তাহের চেয়ে ৩১ পয়েন্ট বেড়ে ১০৫৭ পয়েন্ট দাঁড়িয়েছে।
আলোচিত সপ্তাহে ডিএসইতে লেনদেন হয়েছে এক হাজার ৭শ ৪৫ কোটি ৯১ লাখ টাকা। আগের সপ্তাহে মোট পাঁচদিনে লেনদেন হয়েছিলো এক হাজার ৭শ ৮১ কোটি ১২ লাখ টাকা। যা আগের সপ্তাহের চেয়ে ৩৫ কোটি টাকা কম। তবে গড় লেনদেন আগের সপ্তাহের তুলনায় ২২ শতাংশ বেশি। আগের সপ্তাহে প্রতিদিন লেনদেন হয়েছিলো ৩শ ৫৬ কোটি টাকা। আর গত সপ্তাহে প্রতিদিন গড়ে লেনদেন হয়েছে ৪৩৪ কোটি টাকা।
লেনদেন হওয়া কোম্পানিগুলোর মধ্যে বিদায়ী সপ্তাহে দাম বেড়েছে ২০১টির, কমেছে ১শটির আর অপরিবর্তিত রয়েছে ২৫টি কোম্পানির শেয়ারের দাম। আগের সপ্তাহে লেনদেন হওয়া কোম্পানির মধ্যে দাম বেড়েছিলো ৫৬টির, কমেছিলো ২শ ৫৩টির আর অপরিবর্তিত ছিলো ১৬টি কোম্পানির শেয়ারের দাম।
এর ফলে গত সপ্তাহে আগের সপ্তাহের চেয়ে দুই শতাংশ বাজার মূলধন বেড়ে দাঁড়িয়েছে তিন লাখ পাঁচ হাজার ৫শ ৭৮ কোটি ৬৪ লাখ ৭৮ হাজার ৩৪ টাকা। আগের সপ্তাহের ডিএসই’র বাজার মূলধন ছিলো দুই লাখ ৯৯ হাজার ৯শ ৮৫ কোটি ২৯ লাখ ৩০ হাজার ১শ ৬৪ টাকা।
দেশের অন্য পুঁজিবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) সার্বিক সূচক আগের সপ্তাহের চেয়ে ২০৭ পয়েন্ট বেড়ে আট হাজার ৫৭ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। আলোচিত এই সপ্তাহে সিএসইতে লেনদেন হয়েছে ৯৭ কোটি ৮৩ লাখ টাকা। লেনদেন হওয়া কোম্পানিগুলোর মধ্যে দাম বেড়েছে ১শ ৬১টির, কমেছে ৭৯টির আর অপরিবর্তিত রয়েছে ২৯টি কোম্পানির শেয়ারের দাম।
বাজার পরিস্থতি নিয়ে জানতে চাইলে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের পরিচালক শাকিল রিজভী বাংলানিউজকে জানান, উত্থান-পতন পুঁজিবাজারের স্বাভাবিক নিয়ম। কোনো কারণে কোম্পানির শেয়ারের দাম যৌক্তিক মূল্যের চেয়ে কমে গেলে স্বাভাবিক নিয়মে আবারও বাড়বে।
তিনি বলেন, এক্সপোজার লিমিটকে কেন্দ্র করে প্রায় দুই মাস বাজারে দরপতন হয়েছে। বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ারের দাম তলানিতে নেমে এসেছে। এখন স্বাভাবিক নিয়মে বাজার ঘুরে দাঁড়াবে।
ডিএসই’র আরেক পরিচালক রকিবুর রহমান বলেন, এখন বাজার খারাপ থাকার কোনো কারণ নেই। বাজারের সব সমস্যা সমাধান হয়েছে। এখন শুধু সুদিনের অপেক্ষা।
তিনি বিনিয়োগকারীদের উদ্দেশ্য বলেন, এখনই বাজারে বিনিয়োগের উত্তম সময়। তবে ভালো কোম্পানি দেখে বিনিয়োগের আহ্বান জানাই।
বাংলাদেশ মার্চেণ্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ছায়েদুর রহমান জানান, কয়টা দিন অপেক্ষা করুন, বাজার ইতিবাচক ধারায় ফিরবে।
বাংলাদেশ সময়: ১১৫৫ ঘণ্টা, মে ০৮, ২০১৬
এমএফআই/এসএনএস