ঢাকা: বিদ্যুৎ খাতের উন্নয়নে দেশের পুঁজিবাজারের পাশাপাশি অল্প সুদে আন্তর্জাতিক পুঁজিবাজার থেকে ৩০ বিলিয়ন ডলার (২০ থেকে ৩০ হাজার কোটি টাকা) অর্থ সংগ্রহ করবে বাংলাদেশ সরকার। দেশি কোম্পানির নামে আন্তর্জাতিক বাজারে সভরেন বন্ড ছেড়ে এ টাকা সংগ্রহ করা হবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সব মানুষের কাছে বিদ্যুৎ পৌঁছানোর মাধ্যমে বাংলাদেশকে মধ্য আয়ের দেশের উন্নীত করতে এ উদ্যোগ নিয়েছে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি মন্ত্রনালয়। এজন্য এরই মধ্যে অর্থনৈতিক পরামর্শক নিয়োগ দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বাকি কাজগুলো খুব দ্রুত শেষ করা হবে বলেও জানা গেছে।
মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়াতে এরই মধ্যে পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট অব বাংলাদেশ (পিডিবি) সিঙ্গাপুরের পুঁজিবাজার থেকে প্রাথমিকভাবে ৫০০ মিলিয়ন ডলার বন্ড ছেড়ে অর্থ আনতে প্রক্রিয়া শুরু করেছে। এর জন্য ইস্যুয়ার হিসেবে স্টান্ডার্ড চাটার্ড ব্যাংক, এইচএসবিসি ও সিটি ব্যাংক ইস্যুয়ার হিসেবে কাজ করতে সম্মতি জানিয়েছে। এরপরই পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ (পিজিসিবি) লিমিটেড ও আশুগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন কোম্পানি লিমিটেড (এপিএসসিএল) আন্তর্জাতিক পুঁজিবাজারে বন্ড ছেড়ে টাকা সংগ্রহে প্রস্তুতি নিচ্ছে। বাকি কোম্পানিগুলো ধারাবাহিকভাবে বন্ড ছেড়ে টাকা সংগ্রহ করবে।
পিডিবি’র চেয়ারম্যান সামসুল হাসান মিয়া বলেন, ‘৫শ’ মিলিয়ন ডলার ছেড়ে অর্থ কোম্পানিতে অর্থ যোগান দিতে কাজ করছি। যাতে প্রিন্সিপ্যাল অর্থ না দিয়ে কেবল ৫ শতাংশ কিংবা তার কম সুদে ঋণ নেওয়া যায়, তা নিয়ে চিন্তা করছি। এ সুযোগ কেবল বন্ড ছেড়েই সম্ভব’।
বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ জানান, ‘উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হতে আগামীতে ৩০ বিলিয়ন ডলার অর্থের প্রয়োজন। তাই আমরা বড় মার্কেটে যাচ্ছি। এর আগে আমাদের দেশের পুঁজিবাজারে যাচ্ছি’।
তিনি বলেন, ‘ভালো শেয়ার না থাকায় পুঁজিবাজারে বড় বিনিয়োগকারীরা আসছেন না। তাই বিদ্যুৎ খাতের কোম্পানিকে দেশের পুঁজিবাজারে আনতে চেষ্টা করছি’।
তিনি বলেন, ‘দেশের বাজারের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক বাজারে যাচ্ছি দু’টি কারণে। প্রথমত এ খাতে যে পরিমাণ অর্থের দরকার, সেটা সরকার কিংবা কোনো দাতা সংস্থাগুলোর পক্ষে দেওয়া সম্ভব না। তাই কম সুদে দীর্ঘ মেয়াদে টাকা পেতেই আন্তর্জাতিক বাজারে যাচ্ছি’।
দ্বিতীয় কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ‘দেশি কোম্পানিগুলো বিদেশের বাজারে গেলে কোম্পানিগুলোর সক্ষমতা বাড়বে। আন্তর্জাতিক বাজারে বাংলাদেশকে চিনবে। বাংলাদেশের ব্র্যান্ড তৈরি হবে। বিশ্ববাজারে বাংলাদেশের ইমেজ বাড়বে’।
প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি উপদেষ্টা তোফিক-ই এলাহী বলেন, ‘লোডশেডিং দূরসহ সব মানুষকে মধ্যে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সেবা দিতে আমাদের দেশের কোম্পানিগুলোর প্রচুর অর্থের প্রয়োজন। প্রায় ৩০ বিলিয়ন ডলার। বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ কিংবা বিশ্বের কোনো দাতা সংস্থা এর সমপরিমাণ অর্থ সহযোগিতা দিতে আসবে না। কম সুদে ৫ বছর কিংবা ১০ বছর মেয়াদী বন্ড আন্তর্জাতিক বাজার থেকে এ অর্থ সংগ্রহের উদ্যোগ নিয়েছি’।
তিনি বলেন, ‘বিদ্যুৎ খাতের কোম্পানির পর জ্বালানি খাতের কোম্পানিগুলোও বিশ্ব পুঁজিবাজারে বন্ড ছেড়ে টাকা সংগ্রহ করবে’।
সিঙ্গাপুরের পাশাপাশি চীনের বাজারেও যাচ্ছে বাংলাদেশ। এ লক্ষ্যে চট্টগ্রামে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে চীনাভিত্তিক কোম্পানির সঙ্গে ২ দশমিক ৫ বিলিয়ন টাকা সহায়তা দিতে চুক্তি করেছে একটি কোম্পানি।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) পরিচালক রকিবুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, ‘দেশের পুঁজিবাজারের চেয়ে আন্তর্জাতিক বাজারে বন্ড ছেড়ে (লুক্রেটিভ প্রাইজ) আকর্ষণীয় দামে বা কম সুদে টাকা উত্তোলন করা যায়। তবে বিদেশের বাজারে দেশি কোম্পানিগুলো অন্তর্ভুক্ত হতে পারে। দেশের পুঁজিবাজারের স্বার্থেই সরকারের উচিৎ, জনগণের কাছ থেকে টাকা উত্তোলন করা। এতে দেশের টাকা দেশেই থাকবে। দেশের মানুষ লাভবান হবে’।
বাংলাদেশ সময়: ১৭২৩ ঘণ্টা, মে ৩১, ২০১৬
এমএফআই/এএসআর