অন্যদিকে ১৯৯৬ এবং ২০১০ সালের শেয়ার কারসাজির ১৯টি মামলার মধ্যে বর্তমানে ট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন মামলার সংখ্যা মাত্র ৩টি। বাকি ১৬টি মামলা উচ্চ আদালতের নির্দেশে স্থগিত রয়েছে।
২০১৪ সালে চালু হওয়া ট্রাইব্যুনালের প্রথম বিচারক হুমায়ুন কবির ২০১৫ ও ২০১৬ সালে মোট ৬টি মামলার রায় দিয়ে যান। তিনি ২০১৬ সালের জুন মাস পর্যন্ত ট্রাইব্যুনালের বিচারক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এরপর বর্তমান বিচারক আকবর আলী শেখ ২০১৬ সালের জুলাই মাসে দায়িত্ব নেওয়ার পর গত দেড় বছরে মাত্র ২টি মামলার রায় দিয়েছেন।
মামলা নিষ্পত্তি না হওয়ায় এবং অপকর্মের বিচার ও শাস্তিবিধান না হওয়ায় পুঁজিবাজারের লুটেরা চক্র আবারও নানা কারসাজিতে সক্রিয় হয়ে উঠেছে। তারা আবারো বাজারে অনিয়ম ও শেয়ার কারসাজিতে নেমেছে। যেমন, সম্প্রতি বিবিএস ক্যাবলস কোম্পানির শেয়ারে ব্যাপক কারসাজি ও অনিয়মের ঘটনা ঘটেছে। পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) তদন্ত করে এই কারসাজির প্রমাণও পেয়েছে। এরকম ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা।
বাজার সংশ্লিষ্টদের অভিমত, বিএসইসি’র উচিৎ বাজারের স্থিতিশীলতা, স্বচ্ছতা বজায় রাখা ও বিনিয়োগকারীদের স্বার্থরক্ষায় ট্রাইব্যুনালকে সক্রিয় করা। পাশাপাশি কারসাজির হোতাদের উপযুক্ত বিচারের মুখোমুখি করে শাস্তি দেওয়া।
চলতি বছর ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রম শুরু ১৮ জানুয়ারি
ট্রাইবুনালের তথ্যমতে, মার্ক বাংলাদেশ শিল্প অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানির শেয়ার কেলেঙ্কারির মামলার শুনানি শুরুর মধ্য দিয়ে চলতি ২০১৭ সালের ১৮ জানুয়ারি ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রম শুরু হয় । ১৯৯৯ সালে শেয়ার নিয়ে কারসাজির দায়ে মার্ক বাংলাদেশ শিল্প অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি, কোম্পানির চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইমাম মুলকুতুর রহমান, ভাইস-চেয়ারম্যান আব্দুল হাই ও পরিচালক সালমা আক্তারকে বিবাদী করে ২০০০ সালে মামলা করা হয়। বিএসইসির পক্ষে প্রতিষ্ঠানটির তৎকালীন উপ-পরিচালক আহমেদ হোসেন মামলাটি দায়ের করেন। দীর্ঘ ১৬ বছর পর এর শুনানি শুরু হয়। এখনও সেটি বিচারাধীন।
প্রিমিয়াম সিকিউরিটিজের রায়
২০১৭ সালে এপ্রিল মাসে উল্লেখযোগ্য ঘটনাটি ঘটে। আর তা হচ্ছে একটি মামলার আংশিক রায় প্রকাশ। ১৯৯৬ সালে প্রিমিয়াম সিকিউরিটিজের শেয়ার কারসাজির অভিযোগে করা মামলার আংশিক রায় প্রকাশ করা হয় ২৩ এপ্রিল (রোববার)। দীর্ঘদিন ধরে চলা মামলার চার আসামির মধ্যে শুনানি শেষে র্যাংগস গ্রুপের কর্ণধার এম এ রউফ চৌধুরী ও এইচআরসি গ্রুপের চেয়ারম্যান সাঈদ এইচ চৌধুরীকে বেকসুর খালাস দেয় স্পেশাল ট্রাইব্যুনাল।
তবে বাকি দুই আসামি প্রিমিয়াম সিকিউরিটিজের তৎকালীন ব্যবস্থাপনা পরিচালক(এমডি)মশিউর রহমান ও পরিচালক আনু জায়গীরদারের বিচার এখনো চলছে।
শেয়ার কেলেঙ্কারির তদন্ত শেষে এই চারজনের বিরুদ্ধে ১৯৬৯ সালের সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অধ্যাদেশের ২১ ধারা মেনে ১৯৯৭ সালে মামলা করে কমিশন।
সিকিউরিটিজ কনসালট্যান্টস-এর মামলা
এরপর আগস্ট মাসে এসে যোগ হয় ’৯৬সালের শেয়ার কারসাজির অভিযোগে করা সিকিউরিটিজ কনসালট্যান্টস লিমিটেডের নামে করা মামলা। বিএসইসির দায়ের করা মামলার আসামিরা হলেন সিকিউরিটিজ কনসালট্যান্টস-এর তৎকালীন ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি)আজম চৌধুরী এবং দুই পরিচালক মো. শহীদুল্লাহ ও অধ্যাপক মাহবুব আহমেদ।
আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তারা ১৯৯৬ সালে পুঁজিবাজারকে অবৈধভাবে প্রভাবিত করে ফায়দা লুটেছেন। এজন্য তাদের বিরুদ্ধে ১৯৯৭ সালে একটি মামলা দায়ের করা হয়। আসামিরা ’৯৬ সালের জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময়ে সিকিউরিটিজ কনসালট্যান্টস-এর পক্ষে বাজারকে অবৈধভাবে প্রভাবিত করেন বলে মামলায় অভিযোগ করা হয়।
এরপর সর্বশেষ যোগ হয় এসপিএমএল নামের একটি ব্রোকারেজ হাউসের শেয়ার কারসাজির মামলা। ট্রাইব্যুনালে এই মামলাটিও বিচারাধীন।
প্রসঙ্গত, ২০১৪ সালের ৭ জানুয়ারি ট্রাইব্যুনাল গঠনের পর ২৬ ফেব্রুয়ারি এর বিচারক হিসেবে ময়মনসিংহের জেলা জজ হুমায়ুন কবিরকে নিয়োগ দেয় সরকার। ১৫ মার্চ কাজে যোগ দিয়ে তিনি ২০১৫ সালের ২৯ জুন বিচারকার্য শুরু করেন। এরপর তার মেয়াদ শেষ হলে ২০১৬ সালের ১৪ জুলাই ট্রাইব্যুনালে আকবর আলী শেখ নামে নতুন বিচারক যোগ দেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৫৭ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩১,২০১৭
এমএফআই/জেএম