ঢাকা: গ্রীষ্মের তীব্র দাবদাহে বৈদ্যুতিক পাখা আর এসির বাতাসের মধ্যেও ঘরেই যেখানে নাগরিক জীবন অতিষ্ট, সেখানে অমানবিকভাবে শিশুদের পোড়ানো হল কাঠফাটা রোদে। টানা দুই ঘণ্টা খোলা মাঠে ৫-১০ বছর বয়সী শতাধিক শিশুকে দাঁড় করিয়ে রাখা হল এক মন্ত্রীকে অভিবাদন দেওয়ার জন্য।
রোববার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জাতীয় পর্যায়ের ফুটবল টুর্নামেন্টের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এ ঘটনা ঘটে।
অভিবাদন গ্রহণের জন্য প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমানের মঞ্চে ওঠার কথা সকাল সাড়ে নয়টায়। সে অনুযায়ী সোয়া নয়টা থেকেই শিশুদের সোয়েটার সদৃশ ফুলহাতা জার্সি পরিয়ে কাঠফাটা রোদের মধ্যে লাইনে দাঁড় করিয়ে দেওয়া হয়। মন্ত্রী মঞ্চে ওঠেন বেলা ঠিক ১১টা চার মিনিটে। তাকে অভিবাদন দিতে দিতে বেজে যায় সোয়া এগারটা।
রোদ আর গরমের অযুহাতে মন্ত্রী নিজে দুই মিনিটের বেশি বক্তৃতা না দিলেও টানা দুই ঘণ্টা কাঠফাটা রোদ আর গ্রীষ্মের দাবদাহে পোড়ানো হয় দেশের সাতটি বিভাগ থেকে খেলতে আসা শিশুদের।
প্রখর রোদের মধ্যে দাঁড়িয়ে থাকতে না পেরে এক সময় অনেকে মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়ে। শিশুদের কচি মুখগুলো রোদে পুড়ে ম্লান হয়ে যায়। হাসফাস করে বারবার পানিও খেতে দেখা যায় তাদের।
কিন্তু সেদিকে খেয়াল নেই মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ কর্তাসহ আয়োজনের দায়িত্বশীলদের। তারা ব্যস্ত মন্ত্রীকে লাল গালিচা সংবর্ধনা দিতেই!
খেলার মাঠের পশ্চিম দিকের গ্যালারির সামনে বিশাল সামিয়ানা টানানো ছিল। সেখানে ছায়ার পাশাপাশি ছিল বৈদ্যুতিক পাখাও। আমন্ত্রিত অতিথিরাসহ অন্যরা সেখানে বসে আরাম করলেও পুড়তে হলো শিশুদেরকেই।
ক্লান্ত হয়ে বসে পড়েছিল বরিশাল বিভাগ থেকে আসা ৫-৬ বছর বয়সী এক মেয়ে শিশু। বারবার শুধু পানি খাচ্ছিল সে। কাছে গিয়ে কথা বললে বললো, খুব কষ্ট হচ্ছে ভাইয়া। কিন্তু লাইন থেকে সরে গেলে ‘স্যাররা’ শাস্তি দিতে পারে।
কথা হল একটি দলের কোচের সঙ্গেও। অসহায় কোচ বললেন, কি করবো ভাই বলেন! মন্ত্রী আসবে এজন্য বাচ্চাদের দাঁড় করিয়ে রাখা হয়েছে। অথচ তার আসার খবর নাই।
গায়ে মোটা কাপড় আর ক্লান্ত হয়ে বসে পড়ার ব্যাপারে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, মন্ত্রী আসবে তাই ইউনিফর্মতো গায়ে থাকতেই হবে। তবে দীর্ঘদিন শিশুদের প্রশিক্ষণ দিয়েছি। সহজে ক্লান্ত হবে না বলে দাবি তার।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের দায়িত্বে ছিলেন শিক্ষা অধিদপ্তরের অতিরিক্ত সচিব এফ এম এনামুল হক।
শিশুদের দাঁড় করিয়ে রাখার ব্যাপারে তার কাছে জানতে চাইলে তিনি ট্রাফিক জ্যামের ওপরে দোষ চাপিয়ে বলেন, মন্ত্রী মহোদয় ট্রাফিক জ্যামে আটকে ছিলেন, তাই কিছুটা দেরি হয়ে গেছে।
এতো আগে থেকেই কেন শিশুদের দাঁড় করিয়ে রাখা হল এমন প্রশ্নের জবাবে এই কর্মকর্তা হাস্যজ্বল মুখে বললেন, নতুন প্রজন্মকে একটু কষ্টতো করতেই হবে!
বাংলাদেশ সময়: ১৬১২ ঘণ্টা, মে ৩১, ২০১৫
এসএ/জেডএম
** বঙ্গবন্ধু ও বঙ্গমাতা ফুটবল টুর্নামেন্টের চূড়ান্ত পর্ব শুরু