ঢাকা, শুক্রবার, ১৭ কার্তিক ১৪৩১, ০১ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ রবিউস সানি ১৪৪৬

খেলা

এবারও বিনোদন জুগিয়েছে ‘‌‌‌গুমগুটি’ খেলা

এম আব্দুল্লাহ আল মামুন খান, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৫৫৮ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৪, ২০১৭
এবারও বিনোদন জুগিয়েছে ‘‌‌‌গুমগুটি’ খেলা গোলাকার ৪০ কেজি ওজনের একটি পিতলের গুটি মাথায় নিয়ে একজন খেলোয়াড়/ছবি-অনিক খান

ফুলবাড়িয়া (ময়মনসিংহ) ঘুরে এসে: অনাবাদি মাঠে ফুটবলের মতো গোলাকার ৪০ কেজি ওজনের একটি পিতলের গুটি মাথায় নিয়ে থাকেন একজন। বাঁশিতে ফুঁ দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে চারপাশের হাজার হাজার খেলোয়াড়ের মাঝখানে ছেড়ে দেওয়া হয় ভারি এ গুটি। এরপর চলে দুই দলের ধাক্কাধাক্কি আর কাড়াকাড়ি।

শক্তিমত্তা দিয়ে গুটিটি যে দল নিজেদের দখলে নিয়ে লুকিয়ে ফেলতে পারবে, জয় তাদেরই।

গ্রামীণ সংস্কৃতির ঐতিহ্য বহন করা এ খেলার নাম গুমগুটি বা ‘হুমগুটি’।

আধুনিকতার ছোঁয়া আর কালের আবর্তে গ্রামীণ বিনোদনের অনেক কিছু হারিয়ে গেলেও হারায়নি এ ‘গুমগুটি’ খেলা। ‘‌‌‌গুমগুটি’ খেলাটি দেখতে দর্শকদের ভিড়/ছবি-অনিক খানময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়ায় প্রতি শীতে পৌষের শেষ বিকেলে টানা আড়াইশ’ বছর ধরে চলে আসছে গ্রামীণ সংস্কৃতির খেলাটি, জোগাচ্ছে বিনোদনের খোরাক।

শুক্রবার (১৩ জানুয়ারি) বিকেল থেকে উপজেলার লীপুর গ্রামের বড়ই আটা এলাকায় অনুষ্ঠিত হয় এ বছরের গুমগুটি খেলা।

উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের লাখো মানুষ ভিড় করেন লোকজ খেলাটি দেখতে। একে ঘিরে উপজেলাজুড়ে দিনভর ছিলো উৎসবের আমেজ। একপক্ষ গুটি লুকিয়ে ফেললে রাত দশটার দিকে সাঙ্গ হয় ‘গুমগুটি’র মিলনমেলা।

স্থানীয়রা জানান, জমির পরিমাপ নিয়ে মুক্তাগাছার জমিদার রাজা শশীকান্তের সঙ্গে ত্রিশালের বৈলরের হেম চন্দ্র রায়ের বিরোধ তৈরি হয়। জমিদারি আমলের শুরু থেকে প্রতি কাঠা জমি পরগনায় ১০ শতাংশে মাপা হলেও তালুকে মাপা হতো সাড়ে ছয় শতাংশে। একই জমিদারের দ্বৈত নীতির প্রতিবাদে সৃষ্ট এ বিরোধের নিষ্পত্তি করতে তালুক-পরগনার সীমান্ত লীপুর গ্রামের বড়ই আটা এলাকায় ‘গুমগুটি’ খেলার আয়োজন করেন জমিদাররা।

মুক্তাগাছার জমিদারের প্রজারা শক্তিমত্তার প্রমাণ দিয়ে গুমগুটি পরগনার সীমানায় নিয়ে আসেন। এরপর থেকে পরগনা সীমানার জমির পরিমাপও সাড়ে ছয় শতাংশে কাঠা হয়। মূলত জমির পরিমাপ নির্ধারণ করতেই এ খেলার সূত্রপাত হয়েছিলো।

লীপুর বাজারের বয়োবৃদ্ধ আরফান আলী ও ইদ্রিস আলী জানান, শৈশবে বাবার কাঁধে চড়ে তারা এ খেলা দেখতে আসতেন। এখন বুড়িয়ে গেলেও তরুণ-যুবকদের ‘হুমগুটি’ নিয়ে শক্তির লড়াইয়ে আমোদিত হন।

ফুলবাড়িয়া ডিগ্রি কলেজের শিক্ষার্থী রেজাউল নাহিদ ফয়সাল বলেন, ‘সবাই ধাক্কাধাক্কি করে এ খেলা খেলে। যারা গুটি নিজেদের এলাকায় নিয়ে যেতে পারবে, তাদেরই সুনাম। এ সুনামের জন্যই সবাই মরিয়া হয়ে দাপিয়ে বেড়ায়’।

তেলিগ্রাম এলাকার ৮০ বছর বয়সী আব্দুল খালেক বলেন, ‘আমাদের শৈশবে এ খেলা চলতো ২/৩ দিন। ওই সময় আমাদের শক্তি ছিল। এখন কয়েক ঘণ্টায় শেষ হয়ে যায় এ খেলা’।

ফুলবাড়িয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট ইমদাদুল হক সেলিম বাংলানিউজকে জানান, ‘গুমগুটি’ খেলায় নির্দিষ্ট কোনো খেলোয়াড় নেই, রেফারিও থাকেন না। এরপরেও কোনো ঝগড়া-বিবাদ হয় না। ঐতিহ্য টিকিয়ে রাখতেই খেলাটি ধরে রেখেছেন স্থানীয়রা।

বাংলাদেশ সময়: ১১৫৯ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৪, ২০১৭

এমএএএম/এএটি/এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।