ঢাকা, সোমবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

তারার ফুল

টম হ্যাঙ্কস ও স্পিলবার্গের সেতুবন্ধন

জনি হক, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৩৬ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৪, ২০১৫
টম হ্যাঙ্কস ও স্পিলবার্গের সেতুবন্ধন

‘সেভিং প্রাইভেট রায়ান’ (১৯৯৮), ‘ক্যাচ ইফ ইউ ক্যান’ (২০০২) ও ‘দ্য টার্মিনাল’ (২০০৪)- এ ছবি তিনটির মধ্যে মিল কোথায়? একটু খেয়াল করে দেখুন- তিনটিতেই অভিনয় করেছেন টম হ্যাঙ্কস, তিনটিরই পরিচালক স্টিভেন স্পিলবার্গ। এক দশকেরও বেশি সময় পর আবার তারা জোট বাঁধলেন।

এ জুটির চতুর্থ ছবি ‘ব্রিজ অব স্পাইস’ মুক্তি পাচ্ছে আগামী ১৬ অক্টোবর। এর প্রথম পোস্টার ছাড়া হয় গত ৪ জুন। পরদিন ইউটিউবে আসে ট্রেলার।

পরিচালক হিসেবে এটি স্পিলবার্গের ২৭তম ছবি। শুরুতে এর নাম ছিলো ‘সেন্ট. জেমস প্লেস’। ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে নির্মিত থ্রিলারধর্মী ছবি এটি। ঘটনাটা ১৯৬০ সালের। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষে গোটা বিশ্বে তখন ক্ষমতা দখল নিয়ে শীতল যুদ্ধ বিরাজ করছে। এমন অবস্থায় ইউ-টু নামের একটি মার্কিন গোয়েন্দা উড়োজাহাজ ভূপাতিত হয় সোভিয়েত ইউনিয়নে। ধরা পড়েন এর বৈমানিক ফ্রান্সিস গ্যারি পাওয়ার্স। সে সময় স্পিলবার্গের বাবা প্রকৌশলী হিসেবে রাশিয়ায় গিয়েছিলেন বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময়ের জন্য। তাকে লক্ষ্য করে সে সময় অনেকে বলেছিলেন, ‘দেখো তোমার দেশ আমাদের সঙ্গে কি করছে। ’

ছবিটির গল্পের প্রাণভোমরা ব্রুকলিনের আইনজীবী জেমস বি. ডোনোভান। এ চরিত্রেই দেখা যাবে টম হ্যাঙ্কসকে। গল্পে পাওয়ার্সকে ছাড়িয়ে আনার জন্য সমঝোতার দায়িত্ব দেওয়া হয় ডোনাভানকে। এই সত্যি ঘটনা নিয়ে ১৯৬৪ সালে তিনি একটি বই লেখেন। নাম- ‘স্ট্রেঞ্জার্স অন অ্যা ব্রিজ: দ্য কেস অব কর্নেল আবেল অ্যান্ড ফ্রান্সিস গ্যারি পাওয়ার্স’। পরের বছরই বইটি নিয়ে ছবি তৈরির পরিকল্পনা করা হয়। ডোনোভান চরিত্রে গ্রেগরি পেক আর আবেলের ভূমিকায় কাজ করতে সম্মতি জানান অ্যালেক গিনেস। কিন্তু নির্মাণ প্রতিষ্ঠান মেট্রো-গোল্ডউইন-মেয়ার শীতল যুদ্ধের অস্থির সময়ে ভীত হয়ে ছবিটি তৈরি থেকে সরে আসে।

৫০ বছর পর ওই গ্রন্থকে সেলুলয়েডে তুলে আনলেন স্পিলবার্গ। এ বইটির পাশাপাশি তার ছবির চিত্রনাট্য তৈরি হয়েছে ররি ম্যাকলিনের ‘বার্লিন: ইমাজিন অ্যা সিটি/বার্লিন: পোট্রেট অব অ্যা সিটি থ্রো দ্য সেঞ্চুরিস’-এ তুলে ধরা পশ্চিম বার্লিনের প্রাক্তন সিআইএ প্রধান উইলিয়াম কিং হার্ভে ও অপারেশন গোল্ডের গল্প অবলম্বনে। বাস্তবে রুডলফ আবেল ব্রুকলিনেই থাকতেন, ব্রুকলিন হাইটসে ক্যাডম্যান প্লাজা ওয়েস্টে ওভিংটন আর্টিস্টস ভবনে একটি অফিসও চালাতেন। প্রসপেক্ট পার্কে চুরি যাওয়া নথি নষ্ট করার অভিযোগে তাকে গ্রেফতার করা হয়। এ বিষয়টি ‘অ্যা হাউস ইন দ্য হাইটস’ গ্রন্থে আলোচনা করেছেন তার প্রতিবেশী বিখ্যাত ব্যক্তি ট্রুম্যান ক্যাপোট।

টমের পাশাপাশি ‘ব্রিজ অব স্পাইস’ ছবিতে অভিনয় করেছেন মার্ক রাইল্যান্স, অ্যামি রায়ান ও অ্যালান অ্যালডা। এর চিত্রনাট্যকার দলে আছেন কোয়েন ভ্রাতৃদ্বয়। তাদের পরিচালিত ‘ট্রু গ্রিট’ (২০১০) ছবির নির্বাহী প্রযোজক ছিলেন স্পিলবার্গ। অন্য চিত্রনাট্যকার হলেন ম্যাট শারম্যান। ‘ইন্ডিয়ানা জোন্স’ সিরিজ বাদ দিলে ‘হুক’ (১৯৯১) মুক্তির ২৪ বছর পর তার কোনো ছবির চিত্রায়ন হলো অ্যানামর্ফিক লেন্সে। ক্যালিফোর্নিয়ার বিয়েল এয়ার ফোর্স বেজেও কিছু দৃশ্যের কাজ হয়েছে। গত বছরের ৮ সেপ্টেম্বর শুরু হয়ে ১২ সপ্তাহ ছবিটি নিয়ে নিউইয়র্ক, জার্মানির বার্লিন ও পোল্যান্ডে ঘুরেছে ইউনিট। এ ছাড়া গল্পটা যেসব জায়গায় ঘটেছে, সেসব স্থানেও কাজ করেছেন সবাই। ছবিটির এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে টম হ্যাঙ্কস জানান, জেমস ডোনোভান সুপ্রিম কোর্টে রুডলফকে নিয়ে যেসব যুক্তি দেখিয়েছে, তাতে বাস্তবে সুপ্রিম কোর্টে ব্যবহৃত শব্দগুলো ব্যবহার করা হয়েছে।

‘দ্য কালার অব পার্পল’ (১৯৮৫) থেকে শুরু করে স্পিলবার্গের সব ছবির সংগীত পরিচালনা করেছেন জন উইলিয়ামস। এবারও তারই থাকার কথা ছিলো। কিন্তু গত মার্চে স্বাস্থ্য সমস্যায় ভুগতে থাকায় সময় মেলানো যাচ্ছিলো না। তাই সংগীত পরিচালনার দায়িত্ব পান থমাস নিউম্যান।

ছবিটি তৈরিতে খরচ হয়েছে ৪ কোটি মার্কিন ডলার অর্থাৎ ৩১০ কোটি ৯৩ লাখ ৭৮ হাজার টাকা মাত্র! উত্তর আমেরিকায় ওয়াল্ট ডিজনি স্টুডিওস মোশন পিকচার্স আর আন্তর্জাতিকভাবে টোয়েন্টিয়েথ সেঞ্চুরি ফক্স ছবিটির পরিবেশনার স্বত্ত্ব পেয়েছে। ২ ঘণ্টা ২১ মিনিট ব্যাপ্তির ‘ব্রিজ অব স্পাইস’ গত ৪ অক্টোবর দেখানো হয় ৫৩তম নিউইয়র্ক চলচ্চিত্র উৎসবে। সমালোচকরা এর ভূয়সী প্রশংসা করেছেন। ৩৫টি পর্যালোচনা দেখে রোটেন টমেটোস ছবিটিকে দশে রেটিং দিয়েছে ৭.৯। স্পিলবার্গ ও টম হ্যাঙ্কস অসাধারণ কাজ দেখিয়েছেন বলেও মন্তব্য সমালোচকদের। মেটাক্রিটিক ছবিটিকে একশতে ৭৭ দিয়েছে ১৩টি সমালোচনা পর্যবেক্ষণ করে।

‘ব্রিজ অব স্পাইস’-এর মাধ্যমে হলিউডে এ বছর মুক্তিপ্রাপ্ত গুপ্তচর ও গোয়েন্দাগিরি নির্ভর ছবির তালিকায় আরও একটি ছবি যুক্ত হলো। অন্যগুলো হলো ‘স্পাই’, ‘সিকারিও’, ‘মর্টডিকাই’, ‘মিশন: ইমপসিবল-রোগ নেশন’, ‘দ্য ম্যান ফ্রম আঙ্কেল’ ও ‘কিংসম্যান: দ্য সিক্রেট সার্ভিস’। তবে স্পিলবার্গ আর টম হ্যাঙ্কস সম্মিলনের সঙ্গে কোনো কিছুর তুলনা চলে না। তারা যে কি জিনিস, তা আগামী বছর হলিউডের পুরস্কার বিতরণীগুলোতেই ভালো করে বোঝা যাবে!

বাংলাদেশ সময় : ১৯৩৬ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৪, ২০১৫
জেএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

তারার ফুল এর সর্বশেষ