ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

পর্যটন

কুয়াকাটায় যে কারণে ভোগান্তিতে পর্যটকরা

শেখ তানজির আহমেদ, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, সাতক্ষীরা | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৩২ ঘণ্টা, মার্চ ১৫, ২০২৩
কুয়াকাটায় যে কারণে ভোগান্তিতে পর্যটকরা

কুয়াকাটা (পটুয়াখালী) থেকে ফিরে: দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম সমুদ্র সৈকত সাগরকন্যা পটুয়াখালীর কুয়াকাটা। ছয় মাস আগেও কুয়াকাটায় ভ্রমণের কথা উঠলেই প্রশ্ন উঠতো যোগাযোগ ব্যবস্থা নিয়ে।

সে সময় কুয়াকাটায় পৌঁছতে ছয়টি ফেরি পার হতে হতো। ভিন্ন রুটে বরিশালের দোয়ারিকা ও শিকারপুর এবং পটুয়াখালী পায়রা, পটুয়াখালী ও মহিপুরে ফেরি পার হতে হতো।  

এতে ব্যয় হতো দীর্ঘ সময়, এর সঙ্গে যুক্ত হতো ভ্রমণ বিড়ম্বনাও। সেই সঙ্গে যুক্ত হতো দৌলদিয়া-পাটুরিয়া ফেরিঘাটের দীর্ঘ যানজটের ভোগান্তিও।  

এসব এখন অতীত। মাওয়া-জাজিরা রুটে পদ্মা সেতু ও পায়রায় পায়রা সেতুসহ এ দুটি রুটের প্রতিটি নদীতে সেতু হওয়ায় ভ্রমণপথের দীর্ঘ ভোগান্তি থেকে মুক্তি পেয়েছে মানুষ। এখন ইচ্ছে করলেই স্বল্প সময়ে কুয়াকাটা ভ্রমণ করতে পারছে ভ্রমণপিপাসুরা।

সেই সঙ্গে বদলেছে কুয়াকাটার চিরচেনা দৃশ্যও। বেড়েছে হোটেল রেস্তোরাঁ। বেড়েছে সৌন্দর্য। বেড়েছে পর্যটন স্পট।

তবে, সারাদেশের সঙ্গে কুয়াকাটার যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত হলেও পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার পর্যটন শহর কুয়াকাটার স্থানীয় রাস্তাঘাটে উন্নয়নের ছিটে ফোটাও লাগেনি। স্থানীয় পর্যটন স্পটগুলোতে যাতায়াত খরচও বেশ। খাবার বা আবাসিক হোটেল খরচও উল্লেখযোগ্য।

কুয়াকাটার পর্যটন স্পটগুলোর মধ্যে রয়েছে গঙ্গামতির চর, রাখাইন পল্লী, রাখানই মার্কেট, বৌদ্ধ মন্দির, লাল কাকড়ার চর, ঝাউবন ও শুটকি পল্লী।  

এর মধ্যে কুয়াকাটা জিরো পয়েন্ট থেকে গঙ্গামতির চরের দূরত্ব ৮-৯ কিলোমিটার। এই ৯ কিলোমিটার পথ যাওয়া আসায় পর্যটকদের কাছে মোটরসাইকেলে ভাড়া চাওয়া হয় ৪০০ টাকা (দুইজন), ইজিবাইকে কিংবা ব্যাটারিচালিত ভ্যানে ৮০০ টাকা (চার থেকে পাঁচজন)।  
একইভাবে রাখাইন পল্লী, রাখানই মার্কেট ও বৌদ্ধ মন্দির এক জায়গায় হলেও তিনটি স্পটের কথা বলে মোটরসাইকেল কিংবা ইজিবাইকে ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা ভাড়া হাকা হয়। আবার, লাল কাকড়ার চর ও ঝাউবন একই জায়গায় এবং শুটকি পল্লী যাওয়া আসার পথে পড়লেও তিনটি ভিন্ন স্পষ্ট দেখিয়ে মোটরসাইকেল কিংবা ইজিবাইকে ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা ভাড়া হাকা হয়। এই খরচ টানতে গিয়ে অতিষ্ঠ হয়ে ওঠেন পর্যটকরা।

কুয়াকাটা যেহেতু আসা হয়েছে, খরচ যাই হোক সবকিছু দেখতে হবে- এমন প্রবণতা থেকে অস্বাভাবিক ভাড়া দিয়েই এসব দর্শনীয় স্থান দেখতে বাধ্য হচ্ছেন পর্যটকরা।

এরপর ভোগান্তি শুরু হয় সড়কে। কুয়াকাটা জিরো পয়েন্ট থেকে রাখাইন পল্লী, রাখানই মার্কেট ও বৌদ্ধ মন্দির দর্শনের দুটি রুট। একটি হলো কুয়াকাটা জিরো পয়েন্ট থেকে খাসপুকুর-দোখাসি পাড়া হয়ে রাখাইন পল্লী। অন্যটি হলো কুয়াকাটা জিরো পয়েন্ট থেকে মুসুল্লিয়াবাদ হয়ে রাখাইন পল্লী। এ সড়কের দৈর্ঘ্য ৯ কিলোমিটার।

এর মধ্যে খাসপুকুর-দোখাসি পাড়া হয়ে রাখাইন পল্লীর সড়কটি নির্মাণের পর আর কখনও সংস্কার করা হয়নি। এতে রাস্তার পিচ, খোয়া উঠে গিয়ে চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। ইজিবাইকে এই ৯ কিলোমিটার যেতে ঝাঁকিতে অসুস্থ হয়ে পড়েন অনেকে।

আবার, কুয়াকাটা জিরো পয়েন্ট থেকে মুসুল্লিয়াবাদ হয়ে রাখাইন পল্লীর কুয়াকাটা পৌরসভার অংশটুকু মোটামুটি চলাচলযোগ্য হলেও বাকি অংশটুকুর অবস্থা একই।

এ প্রসঙ্গে সাতক্ষীরা থেকে ভ্রমণে আসা শিক্ষক শহীদুল ইসলাম বলেন, এখান থেকে দশ বছর আগেও রাখাইন পল্লী যাওয়ার এই সড়ক দুটির একই অবস্থা যা ছিল, সেই অবস্থার পরিবর্তন হয়নি। সড়কটি চলাচলের একেবারেই অযোগ্য। যা কুয়াকাটা ভ্রমণের আনন্দকে ম্লান করে দিচ্ছে। নয় কিলোমিটার রাস্তার জন্য ৫০০ টাকা দিয়ে ইজিবাইক ভাড়া করে এসে ঝাঁকিতেই প্রাণ যায় যায় অবস্থা। অনেকে বমি পর্যন্ত করে ফেলছে। পর্যটনকে ঘিরেই এখনকার বেশির ভাগ মানুষের জীবন-জীবিকা। কিন্তু রাস্তাঘাটের যেমন বেহাল দশা, তেমনি মোটর সাইকেল বা ইজিবাইক ভাড়া কিংবা খাবারের দামে মানুষকে নিঃসন্দেহে ঠকানো হচ্ছে।

স্থানীয় ইজিবাইক চালক আজিজ বলেন, আসলে রাখাইন পল্লীর রাস্তাটার অবস্থা খুবই খারাপ। এতে চলাচল করতে গিয়ে মানুষও যেমন কষ্ট পায়, প্রতিনিয়ত আমাদের ইজিবাইকের নানা যন্ত্রাংশও নষ্ট হয়ে যায়। যা আয় করি, তার বড় অংশ খরচ হয়ে যায় বাইক ঠিক করতে গিয়ে।

ঢাকা থেকে কুয়াকাটা ভ্রমণে আসা কামরুল-মেরিনা দম্পতি বলেন, এখানকার হোটেল-রেস্তোরাঁগুলোতে খাবারের দাম অনেক বেশি। তারপরও খাবারের মান ভালো না। ১৪০ টাকা দিয়ে একপিস টেংরা মাছ কিনেও খাওয়া গেল না। এটি ছিল পচাঁ। মাছের মাথার মধ্যে দুর্গন্ধ। কতদিন আগের তার ঠিক নেই। এগুলো স্থানীয় কর্তৃপক্ষকে দেখা উচিত। বেশি দামও নেবে, আবার পঁচা মাছ খাওয়াবে এটা তো হতে পারে না।

কুয়াকাটা ভ্রমণে আসা পর্যটক আব্দুস সামাদ বলেন, আগে কুয়াকাটা আসাটাই ছিল কষ্টের। কিন্তু এখন বর্তমান সরকারের নানামুখী উদ্যোগে সেই কষ্ট দূর হলেও স্থানীয় কিছু সমস্যা উল্লেখযোগ্য, যা পর্যটকদের ভোগান্তির কারণ হচ্ছে। প্রয়োজনীয় অর্থ খরচ করে এখানে আসার পর যদি শুধুমাত্র খাওয়া ও দর্শনীয় স্থান ভ্রমণের জন্য জনপ্রতি দুই-তিন হাজার টাকা করে খরচ হয়, তাহলে তা দুঃসাধ্যই বটে। আর হোটেল-রিসোর্ট খরচের কথা তো বাদই দিলাম। তার ওপর পদে পদে প্রতারণা। দর্শনীয় স্থান ভ্রমণের ভাড়া নিয়েও যেমন মানুষের কাছ থেকে বেশি অর্থ নেওয়া হচ্ছে, তেমনি খাবারের ক্ষেত্রে অর্থ বেশি নিয়েও অত্যন্ত নিম্নমানের বা ক্ষেত্র বিশেষ পঁচা খাবার খাওয়ানো হচ্ছে।  

তিনি বলেন, একটা কথা বললে বিষয়টি আরও পরিস্কার হবে- কুয়াকাটায় তরমুজ চাষ হয়। এই পাশ দিয়ে দেখলাম অনেক তরমুজ ক্ষেত। কিন্তু কিনতে গিয়ে অবাক। একটা বড় তরমুজের (৮-৯ কেজি) দাম চাইলো ৪০০ টাকা পিস। যেখানে উৎপাদন হয়, সেখানে এই দাম হাকালে, ঢাকায় তার দাম কত হবে? 

বাংলাদেশ সময়: ১৬৩০ ঘণ্টা, মার্চ ১৫, ২০২৩
এসএএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।