কক্সবাজার থেকে: বাংলাদেশের পর্যটন সম্ভবনাকে ইতিবাচকভাবে তুলে ধরার আহ্বান জানিয়েছেন দেশি-বিদেশি পর্যটক বিশ্লেষকরা। পর্যটকদের জন্য বাংলাদেশ নিরাপদ বলেও জানান তারা।
বৃহস্পতিবার (২৪ নভেম্বর) সন্ধ্যায় কক্সবাজারের ‘রয়েল টিউলিপ সি-পার্ল রিসোর্ট অ্যান্ড স্পা’তে প্যাসিফিক এশিয়া ট্রাভেল অ্যাসোসিয়েশনের (পাটা) বার্ষিক সম্মেলন ‘পাটা নিউ ট্যুরিজম ফ্রন্টিয়ার ফোরাম-২০১৬’ এর প্রথমদিনের টেকনিক্যাল সেশনের অভিজ্ঞতার কথা বলতে গিয়ে তারা এ আহ্বান জানান।
বাংলাদেশসহ ১৭টি দেশের পর্যটক নীতিনির্ধারক, পযর্টন বিশেষজ্ঞ, শিক্ষাবিদ, শিক্ষার্থী, পযর্টনসংশ্লিষ্ট স্টেকহোল্ডার, আন্তর্জাক সংস্থার প্রতিনিধি ও গণমাধ্যমকর্মীসহ প্রায় ২৪২ জন অংশ নেন।
সংবাদ সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সচিব এসএম গোলাম ফারুক, বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের প্রধান নির্বাহী আখতারুজ্জামান খান কবির, প্যাসিফিক এশিয়া ট্রাভেল অ্যাসোসিয়েশনের (পাটা) চেয়ারম্যান অ্যান্ড্রু জোনস, পাটা‘র প্রধান নির্বাহী (সিইও) মারিও হেন্ড্রি, ওয়ার্ল্ড ট্যুরিজম অর্গানাইজেশনের (ইউএনডব্লিউটিও) এশিয়া অ্যান্ড দ্য প্যাসিফিক রিজিওনাল ডিরেক্টর জু জিং প্রমুখ।
পাটা’র চেয়ারম্যান অ্যান্ড্রু জোনস জানান, বাংলাদেশের যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে। এই সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে অর্থনৈতিক খাতে ব্যাপক ভূমিকা রাখতে পারে। এজন্য সোশ্যাল মিডিয়াসহ সকল গণমাধ্যমকে ইতিবাচক চিত্র তুলে ধরতে হবে।
তিনি জানান, পর্যটন খাতের সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে হলে এখানে কিছু পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে হবে। বিশেষ করে কক্সবাজার ট্যুরিস্ট স্পটকে ঘিরে বিভিন্ন ধরনের আকর্ষণীয় প্যাকেজ অফার দিতে হবে।
ইউএনডব্লিউটিও-এর রিজিওনাল ডিরেক্টর জু জিং বলেন, আমাদের পার্সেপশন (ধারণা) পরিবর্তন করতে হবে। পর্যটকদের জন্য বাংলাদেশ এখন নিরাপদ। যে সমস্যার কথা বলা হচ্ছে সেটা শুধু বাংলাদেশের ইউনিক সমস্যা নয়। এটা বিশ্বের অনেক দেশেই হচ্ছে। তাই সবার আগে পর্যটন খাতের সম্ভবনার কথা বেশি বেশি করে তুলে ধরতে হবে। কিছু সমস্যা থাকতেই পারে। এটা সব দেশেই কম-বেশি রয়েছে। কক্সবাজার বিশ্বের সবচাইতে বড় সি-বিচ।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের জাতীয় আয়ে ১০ শতাংশ অবদান রাখছে পর্যটন খাত। তাই এ সম্ভাবনাকে আরও পরিকল্পনা মাফিক কাজে লাগাতে পারলে আয় অনেক বৃদ্ধি পাবে। এজন্য দেশি মিডিয়াসহ সকল মাধ্যমে পর্যটনকে ইতিবাচকভাবে তুলে ধরতে হবে।
বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের প্রধান নির্বাহী আখতারুজ্জামান খান কবির বলেন, কক্সবাজারে পর্যটন শিল্প গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করে নানামুখী পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার। এরই ধারাবাহিকতায় আগামী বছরের মধ্যে কক্সবাজার বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে রূপ দিতে কাজ করছে। পাশাপাশি কক্সবাজারের ১২০ কিলোমিটার সি-বিচকে ঘিরে বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড হাতে নেওয়া হয়েছে। এছাড়া দেশি-বিদেশি পর্যটকদের নিরাপত্তার বিষয়টি সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছে সরকার।
বিশ্বের কাছে বাংলাদেশের পর্যটন শিল্পকে আকর্ষণীয়ভাবে তুলে ধরতে দেশি-বিদেশি গণমাধ্যমকে গুরুত্ব দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা বছরব্যাপী বিভিন্ন ইভেন্টের মাধ্যমে ট্যুরিস্টকে আকৃষ্ট করার চেষ্টা অব্যাহত রেখেছি।
সভাপতির বক্তব্যে ট্যুরিজম বোর্ডের চেয়ারম্যান ও সচিব এসএম গোলাম ফারুক বলেন, কক্সবাজারকে ঘিরে নানা রকম কার্যক্রম হাতে নেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশের পর্যটন স্পট সম্পর্কে বিদেশি পর্যটকদের আগ্রহ রয়েছে। ইতোমধ্যে বেশ কিছু বিদেশি ফোরামে বাংলাদেশ সম্পর্কে তাদের ইতিবাচক সাড়া পাওয়া গেছে। আমাদের ট্যুরিস্ট আগমন ইতিবাচক বলা যায়। পর্যটন শিল্পের উন্নয়নে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা মাফিক কাজ এগিয়ে যাচ্ছে।
এদিকে তিন দিনব্যাপী সম্মেলনকে কেন্দ্র করে পুরো কক্সবাজার এলাকায় দেশি-বিদেশি পর্যটকের আগমন ঘটেছে কক্সবাজারে। পাশাপাশি ব্যানার ফেস্টুনে সেজেছে সাগরকন্যা। দিনভর নানা আয়োজনে কক্সবাজারের বিভিন্ন স্পট ঘুরে দেশি-বিদেশি পর্যটকরা উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন। বৃহস্পতিবার মহেশখালী দ্বীপ ও রামুসহ বিভিন্ন এলাকায় টেকনিক্যাল ট্যুর ও ‘ট্যুরিজম মার্কেটিং ট্রেজার হান্টে’ অংশগ্রহণের মাধ্যমে তারা কক্সবাজারকে নতুন করে তুলে ধরেন।
বাংলাদেশ সময়: ২১২০ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৪, ২০১৬
এসএম/এমজেএফ/