শরবতরসিক নীহার প্রাকৃতিক উৎস কাজে লাগিয়ে দারুণ এক পরিকল্পনা করে উদ্ভাবন করলেন ডাবের শরবত। ডাবের পানির সঙ্গে সিরাপ,শাঁস মিশিয়ে তৈরি সে শরবত সত্যি তৃষ্ণা মেটানোর পাশাপাশি পেট ভরালো।
নামি দামি ব্র্যান্ড খাবারের ভিড়েও শরবত যে মানুষকে এখনও দারুণভাবে বুঁদ করে রেখেছে, তা প্রাকসন্ধ্যায় ৪০ জন বসার উপযোগী লম্বা চিকন ঘরটিতে পা দিয়েই বুঝতে বাকি রইলো না। তখন রীতিমতো লাইন পড়ে গেছে। বাইরে পাতা বেঞ্চে অপেক্ষা করতে হচ্ছে কখন খালি হবে ভেতরটা। কেউ কেউ অপেক্ষা না করে বাইরে বসেই সারছেন খাইদাই।
সাজানো ছিমছাম ঘরটিতে কাজ করছেন সব মেয়েরা। কথা বলার ফুরসৎ নেই তাদের। শুধু মুহুর্মুহু গলার আওয়াজ পাওয়া যাচ্ছে তিনটে কেশর, দুটো ডাব, একটা ট্যামারিন্ড। আর ভেতর থেকে মিনিট পাঁচেকের মধ্যে গ্লাস সেজে আসছে মোহনীয় শরবত।
প্রায় বিশ পদের শরবত থাকলে বেশি চাহিদা দেখা গেলো ১০০ টাকা দামের কেশর আর ৫০ টাকা দামের ডাবের শরবতের।
বঙ্কিমচন্দ্র স্ট্রিটে নিতান্ত শখের বশে গড়ে তোলা নীহারবাবুর এ শরবতঘরে পা রেখেছেন তদানীন্তন ও বর্তমানের প্রায় সব লিজেন্ডরা। ঘরটিতে নীহারবাবুর একখানা ছবি ছাড়াও বিশাল এক তালিকা টাঙানো রয়েছে প্যারামাউন্টের শরবতে বুঁদ হওয়া বিখ্যাতদের।
এর মধ্যে সবার উপরে রয়েছে বাংলার কিংবদন্তি ক্রিকেটার, বাংলার মহারাজ, দাদা সৌরভ গাঙ্গুলীর নাম। এছাড়া নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু, মেঘনাদ সাহা, জগদীশ চন্দ্র বসু, কাজী নজরুল ইসলাম, পুলিন বিহারী দাস, আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র দাস, শচীনদেব বর্মণ, বিকাশ দত্ত, তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়, শক্তি চট্টোপাধ্যায়, বনফুল, সমরেশ বসু, অমর্ত্য সেন, শঙ্খ ঘোষ, তসলিমা নাসরিন, উত্তম কুমার, সুচিত্রা সেন, রবি ঘোষ, সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়সহ নামের বহর বিশাল।
কলেজ স্ট্রিটের বিখ্যাত বইপাড়া, কফি হাউস, প্রেসিডেন্সি কলেজ, সংস্কৃত কলেজসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্যারামাউন্টের একেবারে কাছেই। বিকেল থেকে পা ফেলার জায়গা থাকে না। শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি ভারতের বিভিন্ন প্রদেশ, বাংলাদেশসহ নানান দেশের পর্যটকরা এখনও ছুটে যান এ শরবতের টানে।
শত বছর আগে শুধু শরবত তৈরি করে ব্যবসার কথা সত্যি ভাবা যায় না। তা-ও আবার এতো বিখ্যাত। এখানকার শরবতের সেই আদি পন্থা এখনও ধরে রাখা হয়েছে। প্লেন পানি দিয়ে কোনো শরবত এখানে তৈরি করা হয় না। তাই গ্লাসের সঙ্গে সব সময় দেওয়া হয় চামচ। স্ট্র দিলেও তাকে টান দিলে আটকে যায় নিচের ঘন উপাদানে। সব শরবতই ঠান্ডা। ডাবের শরবতে পানি ও অন্যান্য উপকরণের সঙ্গে সঙ্গে থাকে ডাবের শাঁস, জনপ্রিয় কেশর শরবতেও থাকে বড় বড় সব উপাদেয় উপাদান। স্বাদেও অতুলনীয়।
শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেশি হলেও সব বয়সী মানুষকেই দেখা গেল লাইন ধরে শরবত চেখে দেখতে। প্যাশন ফ্রুটস, কোকোনাট, ম্যাঙ্গো ম্যানিয়া, কেশর মালাই, পাইনাপল মালাই, রোজ, স্ট্রবেরি, ব্যানানা, ভ্যানিলা মালাইসহ ডাব, তেঁতুল, লিচু, কমলা প্রভৃতির শরবত পাওয়া যায় প্যারামাউন্টে। দাম সর্বনিম্ন ৫০, সর্বোচ্চ ১২০ রুপি।
বাংলাদেশ সময়: ১১১৯ ঘণ্টা, মার্চ ২২, ২০১৭
এএ/জেএম