আর সেই কাশবন যদি ছড়িয়ে থাকে কাজল কোনো নদীর দুই ধার ঘেঁষে, তা যেন হয়ে ওঠে শিল্পীর তুলিতে আঁকা মন মাতানো কোনো ছবি! এ মুহূর্তে এরকমই এক ছবির মতো অপরূপ সাজে সেজে আছে সুন্দরবনঘেঁষা বলেশ্বর নদ। নদের বুকে জেগে ওঠা ‘বিহঙ্গদ্বীপ’ ছেয়ে আছে শরতের সাদা কাশফুলে।
দ্বীপের পশ্চিমে বলেশ্বর আর পূর্বে বিষখালী নদী। দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর আর আছে বলেশ্বরঘেঁষা ম্যানগ্রোভ সুন্দরবন। বনসংলগ্ন বলেশ্বরের উত্তর-দক্ষিণ ও পূর্ব-পশ্চিমে প্রায় ১৫০ একরের বিশাল জায়গা নিয়ে জেগে উঠেছে গোলাকার বিহঙ্গদ্বীপ। এখান থেকে একই সঙ্গে দেখা যায় সূর্যোদয় আর সূর্যাস্ত। দেখা যায় সুন্দরবনের অপরূপ লীলা।
এই বিহঙ্গদ্বীপের দেখা পেতে হলে যেতে হবে দক্ষিণের জনপদ বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলায়। শুধু কাশফুলের সমাহার নয়, নিজের নামের প্রতিও সুবিচার করে এ দ্বীপ। এখানে গেলেই দেখতে পাওয়া যায় সাদা গাঙচিল, বক, চেগাসহ হরেক প্রজাতির ঝাঁক ঝাঁক পাখি। তাদের কিচিরমিচিরে ভরে থাকে সারা দ্বীপাঞ্চল।
ওদিকে সাদা বালুচরে পিলপিল পায়ে ছুটে চলেছে অজস্র লাল কাঁকড়ার দল। সেগুলোকে কখনো কখনো দেখে মনে চলন্ত এক লাল গালিচা। এরই মাঝে পাখির ডাক শুনে বনপথে এগিয়ে যেতেই দেখবেন, হুট করে সামনে দিয়ে দৌড়ে চলে গেল একপাল মায়া হরিণ। হ্যা, সত্যিই! সব মিলিয়ে এ এক রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা।
এই শেষ নয়, একদিকে যেমন বন, আরেকদিকে আছে ধূধূ বালুচর। সারা দ্বীপ জুড়ে কতো না রঙের ফুল। আর একটু দূরেই ঢেউয়ের গর্জন। বাঁধসংলগ্ন এক কোণে দাঁড়ালেই সুন্দরবন আর বলেশ্বর নদের বিরামহীন সৌন্দর্য। সূর্যাস্তের সময় সাগর আর নদীতে গোধূলির লাল, একদৃষ্টে তাকিয়ে থাকার মতো। এসবের বাইরে বালুচরে পড়ে থাকা অজস্র কাঁকড়া, শামুক, কোরালতো রইলোই। এই হলো বিহঙ্গদ্বীপ! যে কেউই এর অপার সৌন্দর্যের নীরব সাক্ষী হতে চাইবে।
আর তাই তো শহুরে জীবনের দমবন্ধ অবস্থা কাটাতে সুযোগ পেলেই অনেকেই ছুটে যান এ স্বর্গরাজ্যে। স্থানীয় কর্মজীবীদের অনেকেই সাপ্তাহিক ছুটির দিনটি বরাদ্দ রাখেন এখানে এক পাক ঘুরে আসতে। এছাড়া প্রায়ই দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পর্যটকরা ভ্রুমণপিপাসায় এখানে বেড়াতে যান।
সম্প্রতি সরেজমিনে এ দ্বীপে গিয়ে দেখা যায় পর্যটনপ্রেমী অসংখ্য মানুষের ভিড়। এরই মাঝে দেখা হয়ে যায় পাথরঘাটা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোস্তফা গোলাম কবির, স্থানীয় সংগঠন ‘সংকল্প’ ট্রাস্টের নির্বাহী পরিচালক মির্জা শহিদুল ইসলাম খালেদ, ফটোসাংবাদিক দেবদাস মজুমদার, আরিফুর রহমান, সিসিডিবির উপজেলা ব্যবস্থাপক সুব্রত মিস্ত্রীসহ কাউখালী প্রেসক্লাবের বেশ কয়েক সংবাদকর্মীর সঙ্গে।
বিহঙ্গদ্বীপের পর্যটন সম্ভাবনা নিয়ে কথা হয় তাদের সঙ্গে। ফটোসাংবাদিক আরিফুর রহমান ও দেবদাস মজুমদার বাংলানিউজকে বলেন, পেশাগত দায়িত্ব পালনে দেশের অনেক জায়গায় ঘুরতে হয়েছে, ছবি তুলতে হয়েছে। কিন্তু বিহঙ্গদ্বীপের মতো এমন আকর্ষণীয় দ্বীপ খুব কমই পাওয়া যায়। এর ব্যতিক্রমী অনেক বৈশিষ্ট্য রয়েছে, যা আলাদাভাবে পর্যটকদের আকৃষ্ট করে। এর একদিকে যেমন সুন্দরবন, আরেক দিকে সাগর আর নদ-নদী। সব মিলিয়ে এটি অসাধারণ দর্শনীয় এক জায়গা। পর্যটকদের জন্য হরিণঘাটা পর্যটনকেন্দ্রটি থাকায় অনেক সুবিধা হয়েছে।
চেয়ারম্যান মোস্তফা গোলাম কবির বাংলানিউজকে জানান, বিহঙ্গদ্বীপ একটি আকর্ষণীয় জায়গা। আমরা গর্বিত যে এর মতো একটি দ্বীপ আমাদের রয়েছে। এটি অনেকদিন পর্যন্ত মানুষের চোখে পড়েনি। সাংবাদিক ও গবেষক শফিকুল ইসলাম খোকন, মির্জা শহিদুল ইসলাম খালেদ, আরিফুর রহমান, মেহেদী শিকদারকে ধন্যবাদ জানাই দ্বীপটি আবিষ্কারের জন্য।
পাথরঘাটার পর্যটন ব্যবস্থা নিয়ে কথা হয় উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো. হুমায়ুন কবিরের সঙ্গে। তিনি জানান, পাথরঘাটা একটি সম্ভাবনাময় পর্যটন এলাকা। ইতোমধ্যেই বিহঙ্গদ্বীপসহ এখানকার বিভিন্ন পর্যটন এলাকা নিয়ে আমরা নানান পরিকল্পনা হাতে নিয়েছি। আমরা চাই এ অঞ্চলের ব্যাপারে দেশ-বিদেশের পর্যটনপ্রেমীদের আগ্রহ বাড়ুক। আমাদের এ জনপদ ঘুরে যেতে তাদের আমন্ত্রণ।
বাংলাদেশ সময়:১১৩৯ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৭, ২০১৯
এসআইকে/এইচজে