ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

পর্যটন

পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-১৯)

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৫৯ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৪, ২০২০
পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-১৯)

বাবর আলী। পেশায় একজন ডাক্তার। নেশা ভ্রমণ। তবে শুধু ভ্রমণ করেন না, ভ্রমণ মানে তার কাছে সচেতনতা বৃদ্ধিও। ভালোবাসেন ট্রেকিং, মানুষের সেবা করতে। সম্প্রতি চট্টগ্রামের এই ডাক্তার হেঁটে ভ্রমণ করেছেন দেশের ৬৪ জেলা। সেটা আবার ৬৪ দিনে। কেমন ছিল সেই অভিজ্ঞতা? সেটা নিয়ে ধারাবাহিকভাবে লিখেছেন বাংলানিউজের ট্রাভেলার্স নোটবুকে। ৬৪ দিনে থাকবে ৬৪ দিনের ভ্রমণ-অভিজ্ঞতা।

দিন ১৯

নওগাঁ বাজার (তাড়াশ, সিরাজগঞ্জ)-কড্ডার মোড় (সিরাজগঞ্জ)= ৩৯.৬৯ কিমি

অনেক অনুরোধ সত্ত্বেও যে বাসার আতিথেয়তা গ্রহণ করছি সে বাসায় সকালের নাশতা করার ব্যাপারটা পরিহার করা যাচ্ছে না। যতই বলি না কেন খুব ভোরে বেরিয়ে যাবো, না খাইয়ে তারা কেউই ছাড়েন না।

পলাশ ভাইয়ের বাবা-মা সকালের নাশতা খাইয়ে ছাড়ার পরে হাঁটা শুরু করতে করতে ঘণ্টার কাঁটায় তখন ৮টা পার।

আজ শুরুর সময়ে আমার সঙ্গী চট্টগ্রাম থেকে আসা ফরহান ভাই, আরিফ ভাই আর তাড়াশের পলাশ ভাই। নওগাঁ বাজার পর্যন্ত ভ্যানে গিয়ে ওখান থেকেই পদব্রজে চলা শুরু। কিছুটা পথ ভেতরের রাস্তায় চলে মহিষলুটি থেকে উঠে পড়বো মহাসড়কে। অল্প এগোতেই পাশের বিলে কচুরিপানা একাট্টা করে চাষ উপযোগী করতে ব্যস্ত কৃষকের দলের দেখা। পলাশ ভাই জানালেন এখন জমিতে সরিষা লাগানোর সময়। এবার বিল থেকে পানি দেরিতে নামায় এমনিতেই নাকি মৌসুম থেকে পিছিয়ে। মহিষলুটি জায়গাটা বিখ্যাত এই অঞ্চলের মাছের আড়ত হিসেবে। মাছের বিকিকিনিতে দারুণ সরগরম জায়গাটা। এক পাশে বড় এলাকাজুড়ে চলছে মাছ শুটকি বানানোর প্রক্রিয়া। তারে ঝুলিয়ে একদম ছোট মাছও শুটকি বানানো হচ্ছে। এসবে দৃষ্টি হানতে হানতেই মহিষলুটি বাজারে৷

শুঁটকি বানানো হচ্ছে মাছ।  ছবি: বাংলানিউজ

বাজার থেকে ডানে মোড় নিয়েই মহাসড়কে। এই মহাসড়কের সবচেয়ে ভালো দিক হলো, এর পাশেই আছে ছোট একটা রাস্তা যেখানে ছোট যানবাহনগুলো চলাচল করে। মূল মহাসড়কে বাস-ট্রাকের রাজত্ব। আর পাশের ছোট সড়কে ভ্যান, সিএনজি, সাইকেলের আধিপত্য। এ রাস্তায় আমি আগেও কয়েকবার এসেছি। সাইকেল চালানোর স্মৃতিই মনে আছে বেশি। সেসব রোমন্থন করতে করতেই সে পথে পা বাড়ালাম। হরেক রকম গাছ রাস্তার পাশে। প্রথম অংশে খেজুর গাছই সংখ্যাগরিষ্ঠ। খালকুলা বাজারের পরে রাস্তার দু'ধারের কিছু অংশ ন্যাড়া আবার কিছু অংশ একদম ছায়া সুনিবিড়। খালকুলা পেরিয়েই তাড়াশ উপজেলা শেষ। প্রবেশ করলাম উল্লাপাড়া উপজেলায়। মহাসড়কের পাশেই দবিরগঞ্জ নামক ছোট্ট একটা বাজার পড়লো। বিলে ধানক্ষেতের পাশাপাশি বিশাল সব মাছের প্রজেক্ট। সেসবের পাড়ে যথারীতি কলাগাছ।

হরিণচরা বাজার থেকে বিদায় নিলেন পলাশ ভাই। এখান থেকেই সঙ্গী হিসেবে যুক্ত হলো উল্লাপাড়ারই ছোটভাই ইমরান। ক্লাইম্বিং ওয়ার্কশপ করেছিল আমার সঙ্গে বছরখানেক আগে। সে থেকেই পরিচয় ওর সঙ্গে। রাস্তার পাশে প্রচুর আলোক লতা। এক-দু'জন সঙ্গী হলে এমনিতে রাস্তার পাশে একই সমান্তরালে গল্প গল্প করতে হাঁটি। আজ আমরা সর্বমোট জনাচারেক হওয়ায় পাশাপাশি হাঁটাটা মুশকিল। চারজন একলাইনে হাঁটলে এ ছোট রাস্তায় আর যানবাহন চলার জো থাকবে না। আমি আর ইমরান সামনে হাঁটছি আর আরিফ ভাই, ফরহান ভাই একটু পেছনে নিজস্ব গতিতে এগোচ্ছেন। কিছুদূর গিয়েই শিশু গাছের রাজত্বে এসে পড়লাম৷ এদিকে আরেকটা জিনিসে পরিবর্তন পেলাম। নওগাঁর দিকটায় ভ্যানগুলোতে আলাদা করে ফোমের গদি বসানো ছিল না। এ অঞ্চলে সব ভ্যানেই খানিক উঁচুতে ফোমের গদি বসানো।

মহাসড়কের পাশে ছোট রাস্তা।  ছবি: বাংলানিউজ

পাশের বিলগুলোতে প্রচুর গরুর উপস্থিতিই বলে দিচ্ছে এদিকে গরু পালনটা বেশ প্রচলিত। নাইমুড়ী, রামার চর পেরিয়ে পড়লো চড়িয়া বাজার। হলুদ খড় বোঝাই ভ্যানগুলো পাশ কাটিয়ে যাচ্ছে একটু পরপরই। আর অল্প পা চালাতেই হাটিকুমরুল। যমুনা সেতুর পর থেকেই উত্তরবঙ্গের সব বাসের রুট হাটিকুমরুল পর্যন্ত একই। এখান থেকেই বিভাজনের শুরু। হাতের বামের রাস্তা এগিয়েছে বগুড়া, রংপুরের দিকে। উল্লাপাড়া, শাহজাদপুর, পাবনার রাস্তা হাতের ডান দিকে। আর আমরা যে মুখী হয়ে আছি তার উল্টোদিকেই ঈশ্বরদী, নাটোর, রাজশাহীর রাস্তা। ফুড ভিলেজের সামনেই এক চায়ের দোকানে বসেছিলাম খানিকক্ষণ। ভিক্ষা চাইতে আসা এক ভিখারিণী আমাকে দেখে চেহারা-সুরুত পাগলের লাহান বলে চলে গেলো।

খড় বোঝাই ভ্যান।  ছবি: বাংলানিউজ

হাটিকুমরুল পার হতেই রাস্তা হয়ে উঠলো ভয়ানক ব্যস্ত। উত্তরবঙ্গের ষোলটা জেলার সঙ্গে কুষ্টিয়া-মেহেরপুরের বাসও চলাচল করে এদিকে। প্রতি বিশ-ত্রিশ সেকেন্ড অন্তর অন্তর অন্তরাত্মা কাঁপিয়ে হর্ন বাজাতে বাজাতে ছুটে যাচ্ছে যাত্রীবাহী বাস। জুতা নিয়ে বেশ পেরেশানিতে পড়েছেন ফরহান ভাই। বেচারা কুয়াকাটা থেকে এদিকে চলে আসায় ওইভাবে প্রস্তুতি নিয়ে আসতে পারেননি। ঢাকা হয়ে এদিকে আসার সময় জিতুর কাছ থেকে ওর রানিংয়ের জুতাটা নিয়ে এসেছেন। নতুন জুতা হওয়ায় পায়ে বেশ ব্যথাও অনুভব করছিলেন। এরমধ্যেই ওনার অধুনা হাফ ম্যারাথনপ্রীতিকে উসকে দিয়ে বাকিটা পথ দৌড়ে যাওয়ার জন্য নিয়মিত বিরতিতে উসকে দিয়ে যাচ্ছেন আরিফ ভাই। ধোপাকান্দি, পাঁচলিয়াপার হতেই রাস্তা সম্প্রসারণের কাজ চোখে পড়লো। বাংলাদেশের রাস্তা উন্নয়নের বাই প্রোডাক্ট হিসেবে চলে আসা ধুলার সাগর তো আছেই। একই সঙ্গে এদেশের যেকোনো উন্নয়ন কাজ শুরুর মূল শর্ত হিসেবে গাছ কাটার তোড়জোড়ও চোখ এড়ালো না।

ফুলজোড় নদী।  ছবি: বাংলানিউজ

ফুলজোড় নদীর উপর নির্মিত নলকা সেতু পেরিয়ে কামারখন্দ উপজেলা। এদিকে রাস্তা ফোর লেনে উন্নীত করার কাজ চলছে আরো জোরেশোরে। সন্ধ্যার একটু আগে দারুণ একটা রেললাইন পেরোলাম সেতুর উপর দিয়ে। দৃষ্টিসীমা পর্যন্ত বিস্তৃত রেললাইনের পাত দুটো। দ্রুত পা চালিয়ে কড্ডার মোড়ে পৌঁছে দেখি শেষ কিলোমিটারখানেক দৌড়ে পাড়ি দেওয়া ফরহান ভাই এই অন্ধকারে রাস্তার ডিভাইডারের পাশঘেঁষে বসা। হাঁটার পরিসমাপ্তি আজ এখানেই।

ইমরানকে বিদায় দিতেই ও নিল উল্লাপাড়ার পথ। রাস্তা পেরিয়ে সিরাজগঞ্জ শহরের পথ ধরলাম আমরা। এর মধ্যেই বেশ ক'বার ফোন দিয়েছেন পাভেল ভাইয়ের শ্বশুর। আজকের রাত্রিযাপন ওনার বাড়িতেই৷ আরিফ ভাইদের ড্রপ করে মাড়োয়ারী পট্টি পেরিয়ে পৌঁছে গেলাম শহরের ব্যাংক পাড়ার ট্রান্সমিটারের কাছেই অবস্থিত ডুপ্লেক্স বাড়িটাতে।

চলবে…

আরও পড়ুন>>

পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-১৮)

পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-১৭)

পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-১৬)

পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-১৫)

পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-১৪)

পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-১৩)

পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-১২)

পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-১১)

পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-১০)

পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৯)

পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৮)

পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৭)

পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৬)

পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৫)

পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৪)

পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (দিনাজপুর-৩)

পায়ে পায়ে ৬৪ জেলা (ঠাকুরগাঁও-২)

পায়ে পায়ে ৬৪ জেলা (পঞ্চগড়-১)

বাংলাদেশ সময়: ১৫৫৮ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৪, ২০২০
এএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।