ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ট্রাভেলার্স নোটবুক

সাগর পানে সাগর টানে

বাংলানিউজ ট্রাভেল টিম | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯১৮ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১, ২০১৪
সাগর পানে সাগর টানে ছবি: দেলোয়ার হোসেন বাদল/বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

সর্ববৃহৎ সমুদ্র সৈকত (কক্সবাজার) থেকে: কলাতলীর পাহাড়সম উঁচু সড়ক বেয়ে বাহন যখন কক্সবাজারের সৈকতগামী এলাকার দিকে নামতে থাকবে তখন সমুদ্রপৃষ্ঠের অবস্থান দেখে যে কারোরই চক্ষুচড়ক গাছ হতে পারে! মনে হতে পারে, সাগরের বুক আর পাহাড়ের চূড়া প্রায় সমানে সমান। কেবল মাঝখানে বিস্ময়করভাবে সৈকতটিই নিচু হয়ে পড়ে রয়েছে।



শত কিলোমিটার দূরের প্রকৃতিপ্রেমীদের ডেকে যে সাগরের ঢেউ বিশ্বের সর্ববৃহৎ সৈকতে নিয়ে এসেছে, কলাতলীর উঁচু সড়কে আসতেই সেই ঢেউয়ের আহ্বান-আবেদন যেন হাজারো গুণ বেড়ে গেল। কয়েকজনের তো তর সইছিল না, যেন ব্যাগপত্র নিয়েই সৈকতে ঝাঁপিয়ে পড়ে!

দ্রুত হোটেলে ফিরে ব্যাগপত্র রেখে পেটে কিয়ৎ খাবার চালান করেই ছুট সৈকতে। যতোই চির যৌবনবতী সমুদ্রের দিকে এগোতে থাকলাম এর গর্জনি আবেদন ততই জোরালো হচ্ছিল। যতই গর্জনি আবেদনে তাড়াতাড়ি সাড়া দিতে দৌড়োতে থাকলাম ততই ভারত মহাসাগর থেকে বঙ্গোপসাগর হয়ে আসা কয়েকফুট উঁচু ঢেউগুলির আবেদন বাড়তে থাকলো। ছুটছি তো ছুটছি। ঝাউবন পেরিয়ে বালির পথ মাড়িয়ে একসময় কাঙ্ক্ষিত সৈকতে পৌঁছুলাম। শরীর ছুঁয়ে দিল সাগরের ঠাণ্ডা লোনা জল।

সাগরের ঘনিষ্ঠ হয়ে গোসল করার পরিকল্পনা অনুযায়ী পোশাক পরিহিত ছিল বিধায় সবাই জুতো জোড়াকে ভাড়া ছাউনির নিচে রেখে ঢেউয়ের সঙ্গে উচ্ছ্বাসে মাততে দৌড় দিলো।

সাদা ফ্যানা তোলা একেবারে ছোট ঢেউ, হাঁটু ভিজিয়ে দেওয়া মাঝারি ঢেউ, কোমর নাড়িয়ে দেওয়া বড় ঢেউ আর পুরো গোসল সারিয়ে দেওয়া বড় বড় উঁচু ঢেউয়ের সঙ্গে রীতিমত খেলায় মাততে থাকলো সবাই।

দুধেল সাদা ফ্যানা তোলা ঢেউ যখন ছুটে আসছিল কেউ তখন সেই ঢেউয়ের সঙ্গে গোল্লাছুট খেলাচ্ছলে উপরের দিকে ছুটতে লাগলো, আবার বড় বড় উঁচু ঢেউগুলো যখন গোসল করিয়ে দিচ্ছিলো তখন কেউ সেই ঢেউয়ে ভেসে যেতে চাইছিল ভীষণ উচ্ছ্বাসে।

সাগরের হাতছানি ভয়ংকর। যে কোনো দিন সাঁতার কাটেনি সেও যেন কোনো বাঁধ মানে না কয়েক ফুট উঁচু ঢেউয়ের। ভয়কে জয় করার জন্য যেন উদগ্রীব।

গোপন মিতালি করে কেউ আবার সমুদ্রকন্যার অনেক বেশি ঘনিষ্ঠ হতে চাইলে সদা তৎপর লাইফ গার্ডদের বাঁশিতে ঘোর ভাঙে। কেউ আবার বালির বিছানায় একান্তে সমুদ্রবালিকার সুখ-দুঃখের গল্প শুনতে চাইলে আছড়ে পড়া ঢেউ ব্যাঘাত ঘটায় সেই প্রেমে।

ঢেউয়ের সঙ্গে বর্ণিল এ উন্মাদনার খেলায় পিছিয়ে পড়ছিল না সৈকত ভ্রমণে আসা শিশু, কিশোর, তরুণ-তরুণী, নবদম্পতি, যুগল এমনকি মধ্য বয়সী কিংবা বয়োবৃদ্ধরাও।

আবার ঢেউয়েরাও খেলা করে ঢেউয়ের সঙ্গে। ছোট ঢেউ বড় ঢেউয়ের সঙ্গে। আবার বড়রা সবসময় যেন গ্রাস করছে তার ছোট সন্তানকে। এমনি করে জীবন কাটে ঢেউগুলোর। প্রতি মূহূর্তে অস্তিত্ব হারিয়ে ফের অস্তিত্বে ফেরা।
 
ভোরবিহানে পাখিদের ডাকে সাগরের বুক ফুঁড়ে ওঠে রক্তরাঙা সূর্য, আবার পাখিদেরই ঘরে ফেরার ডাকে সৈকতপ্রেমীদের গোধূলি উপহার দিয়ে সাগরের বুকে ঘুমিয়ে পড়ে আলোদেবতা। কিন্তু ঘুমোয় না চিরযৌবনা সমুদ্রবালিকা। হাজার বছর ধরে সৈকতের বাজারে প্রিয়জনদের তৃষ্ণা মিটিয়ে চলে সে!

** প্রেমের অমর সাক্ষী মাথিনের কূপ
** খেতে ভুলবেন না আইনচি
** সোনাদিয়া, সম্ভাবনাময় সোনার দ্বীপ
** মিষ্টি পানের সবুজ দ্বীপ
** খাবারের সন্ধানে সাঁতারু গাভী!
** অটল পাহাড়ের বুকে উদ্দাম সাগর
** শারদ মেঘের দেশে, পাখির ডানায় ভেসে
** গরম গরম ফিশ ফ্রাই
** মহাপতঙ্গের পেটে একঘণ্টা!
** রিজেন্টে ফ্রি কক্সবাজার দর্শন

 
বাংলাদেশ সময়: ১৯০৪ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।