ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ট্রাভেলার্স নোটবুক

লালনের আখড়ায় একদিন

ফজলে রেজওয়ান করিম, অতিথি লেখক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১৫৮ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১১, ২০১৪
লালনের আখড়ায় একদিন

ঢাকা থেকে কুষ্টিয়া যেতে যানবাহনের তেমন কষ্ট নেই। শুধু দূরত্বটাই বেশি।

একটা প্রবাদ আছে ‘কষ্ট করলে কেষ্ট মেলে’। এখানে পৌছানোর পর ঠিক তাই মনে হবে। ছিমছাম একটা শহর।

0_1_81

শহর থেকে একটু দূরে, প্রকৃতির ছায়া ঘেরা গ্রাম ছেঁউড়িয়া। যেখানে লালন ফকিরের আখড়া। রিকশা বা অটোরিকশায় খুব সহজেই যেতে পারেন এখানে। যাওয়ার পথে অনেক পুরাতন বাড়ি (ব্রিটিশ আমল ও তার পরের) ছাড়াও দেখতে পাবেন মোহিনী মিল।

2_3_4_

আখড়া এলাকায় পৌঁছানোর পর কাউকে বলে দিতে হবে না, আপনি কোন দিকে যাবেন। শুনতে পাবেন কাছেই কোথাও বাজছে একতারা, দো'তারা, ঢোল ও বাঁশি। আর সেই বাদ্যযন্ত্রের সুরের মধ্য দিয়ে অদেখা দেখার আকাঙ্খা ব্যক্ত করছে কোন ফকির। ফকির বললাম এই জন্য, লালন সংগীত যারা গান, তারা নিজেদেরকে বাউল বলেন না, ফকির বলতেই সাচ্ছন্দ বোধ করেন।

5_6_7

ছফেদ রঙের প্রধান ফটক দিয়ে ঢুকতেই আপনার প্রথমে চোখে পড়বে, “মানুষ ভজলে সোনার মানুষ হবি”। ধূপমান নেশাকে নিরুৎসাহিত করে লালন ফকিরের একটি বানী ‘গাজায় দম চড়িয়ে মনা/ বোমা কালী আর বলিস নারে’।

8_1_
প্রতীক্ষিত লালনের মাজার দেখতে আর বেশি অপেক্ষা করতে হবে না, ঢুকতেই দৃষ্টিগোচর হবে।

9_10

সেখানে লালন শাহের মূল মাজারের আঙিনায় আরো অনেক ফকিরের মাজার আছে। লালনের মাজার ঘরটা ভেতরে। যার এক পাশে তাঁর, আর অন্য পাশে পালক মাতার কবর, আর বাইরে তার পালক পিতা মওলানা মলম শাহ, দাসী ও অণ্য আরো কয়েকজন মুরিদের কবর।

11_12_13_14

তার পাশেই দেখবেন একাডেমিক ভবন, পাঠাগার, রিসার্স সেন্টার ও অডিটরিয়াম। তবে অনেক ফকির (লালনের অনুসারী) সেই অডিটরিয়ামে উঠেন না। আমি এক ফকিরকে জিজ্ঞেস করলাম কেন ওপরে উঠেন না। তিনি বললেন, আমার গুরু নিচে শুয়ে আর আমি তার উপরে উঠব? গুরুর প্রতি তার ভক্তি দেখে আমি বিমোহিত হলাম।

16_17_17.1

কিছু কবরের সামনে লালনের নিজ হস্তে মুরিদ লেখা দেখে আমি ওই ফকিরকে বললাম, আপনারা কি সবাই মুরিদ? মানে লালনের যারা ভক্ত তাদেরকেই কি মুরিদ বলে?

তার জবাব না, লালন সাঁই সবাকে মুরিদ করতেন না। এ প্রসঙ্গে উনি একটি কাহিনী বললেন, "লালনের জীবদ্দশায় একবার ভারত থেকে কিছু লোক এসেছিলেন তার মুরিদ হতে, মানে শিষ্যত্ব গ্রহণ করতে। তারা জানতো লালনের কিছু আধ্যাত্মিক শক্তি ছিলো। তাই তারা কিছু চুন এনেছিল কি রকম আধ্যাত্মিক শক্তি আছে তা তা পরখ করার জন্য। লালন তাদেরকে শরবত দিয়ে আপ্যায়ন করলে তারা তা পান করে বলেছিল আমরা আপনার জন্য কিছু চুন এনেছি যা আমরা শরবত হিসাবে সব সময়ই খায়।

লালন বললেন ঠিক আছে, আমি খাচ্চি তবে তোমরাও এ থেকে কিছু পান কর। তারা না না করছিল আর বলছিল, যে আপনি গুরু আপনার সামনে খাবনা। শেষমেশ তারা খেতে অপারগতা প্রকাশ করে।

লালন তাঁর ভক্তদের বলে খাও, তারা কোন রকম দ্বিধা না করে ঢক ঢক করে পান করা শুরু করে দেয়। তখন লালন বলেন, দেখ এরাই আমার প্রকৃত ভক্ত ।
15_1

একাডেমিক ভবনের নিচতলায় লালন জাদুঘর। প্রবেশ করতে টিকেট কাটতে হয়। মূল্য মাত্র ২ টাকা। সেখানে ফকিরদের ব্যবহার্য জিনিসপত্র ছাড়াও কিছু পেইন্টিং আছে।

18_19_20

এবার ফেরার পালা। কিন্তু গেটের পাশেই রাস্তার ওপারে দেখবেন, অনেক কুটির শিল্পের দোকান। একতারা দোতারা, বাউল শোপিস।

21_22_23_9

আর তারপরই বিশাল খোলা মাঠে লালনের একটি প্রতিকৃতি। এখানে গানে আসর হয় কিংবা যারা পিকনিকে আসেন তারা রান্নাবান্না করে।

24_1

আখড়াবাড়ি দর্শন শেষে যদি একটু প্রকৃতির শীতল পরশ পেতে চান, যেতে পারেন গড়াই এর তীরে। যেখানে গেলে রবীন্দ্রনাথের একটা কবিতা মনে পড়বেই।

25_1_

Writer_Fazle

আমাদের ছোট নদী চলে একে বেঁকে/ বৈশাখ মাসে তার হাঁটু জল থাকে


ফজলে রেজওয়ান করিম: নিউজ রুম এডিটর, মোহনা টেলিভিশন

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।